কলেজছাত্রের খুনিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে আড়াই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ
Published: 28th, May 2025 GMT
নোয়াখালী সদর উপজেলার অশ্বদিয়া ইউনিয়নে কলেজছাত্র আবুল হোসেনকে (১৮) খুনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তির গ্রেপ্তার চেয়ে আড়াই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করা হয়েছে। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত উপজেলার বাল্লাকোট্টা চান মিয়ার মোড়ে সোনাপুর-কবিরহাট-কোম্পানীগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
কর্মসূচি চলাকালে সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধকারীরা বিক্ষোভ করতে থাকেন। অবরোধ কর্মসূচির কারণে সড়কের দুই দিকে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে। এতে যাত্রী ও চালকেরা ভোগান্তিতে পড়েন। পরে সুধারাম থানা–পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি দল অবরোধকারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
নিহত কলেজছাত্র আবুল হোসেন অশ্বদিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের অলিপুর গ্রামের আবুল কালাম ওরফে আজাদের ছেলে। তিনি কবিরহাট সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র এবং ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ২২ মে ছুরিকাঘাতে তিনি নিহত হন। স্থানীয় এক পল্লিচিকিৎসক কথা-কাটাকাটির জেরে তাঁকে ছুরিকাঘাত করেন বলে এ ঘটনায় হওয়া মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযুক্ত পল্লিচিকিৎসক বর্তমানে পলাতক।
জানতে চাইলে সড়ক অবরোধের বিষয়টি নিশ্চিত করেন সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, আবুল হোসেনের হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তারে পুলিশের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আসামি বারবার অবস্থান পরিবর্তন করায় অভিযানে এখনো সফলতা পাওয়া যায়নি। আশা করা যায়, শিগগিরই তিনি ধরা পড়বেন।
এর আগে আবুল হোসেনের হত্যাকারীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে গত রোববার দুপুরে নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন অশ্বদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীরা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সড়ক অবর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
একাই মাসে শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তৈয়বুর
সুনামগঞ্জে জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে যাঁদের নাম প্রথমেই মনে আসে, তাঁদের একজন তৈয়বুর রহমান (২৬)। তিনি নিজে নিয়মিত রক্ত দেন, রক্ত সংগ্রহ করে দেন এবং মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করেন। রক্তের টানে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতেই তাঁর আনন্দ।
একটি বেসরকারি ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রক্তদানের এই মানবিক কাজকে নিজের করে নিয়েছেন তিনি। কয়েক বছর আগে একাই মানুষের জন্য রক্ত জোগাড় করতেন। এখন তিনি ব্লাড লিংক সুনামগঞ্জ নামের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে কাজের পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ। মাসে একাই শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আড়াই হাজারের বেশি রোগীর জন্য রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে আছে প্রায় এক হাজার রক্তদাতার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও যোগাযোগের তালিকা। সুনামগঞ্জে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ও সংগঠকেরাও তাঁকে সহযোগিতা করেন।
তৈয়বুর রহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। তিনি ইসলামী ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। রক্তের প্রয়োজনে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, পরিবহন বা দৌড়ঝাঁপ—সবকিছুর ব্যয়ই মেটান নিজের স্বল্প বেতন থেকে।
রক্তদানের শুরুর স্মৃতি বলতে গিয়ে তৈয়বুর রহমান জানান, ২০২০ সালে তিনি তখন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন। এক সহকর্মীর অনুরোধে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য রক্ত দিতে ছুটে যান চাষাড়া এলাকায়। কিন্তু ওজন কম থাকায় রক্ত দিতে পারেননি। পরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর জন্য আবার হাসপাতালে যান এবং এবার রক্ত দিতে সক্ষম হন। প্রথমে কিছুটা ভয় ভয় ছিল তাঁর। পরে এটা কেটে যায়।
সুনামগঞ্জে বদলি হয়ে ফিরে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে থাকেন বলে জানান তৈয়বুর রহমান। নিজের এলাকায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার আয়োজন ও সচেতনতা ক্যাম্পেইনও করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন। অধিকাংশই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য। ঈদের দিনও রক্ত দিয়েছেন তিনি। জেলা সদর হাসপাতাল ও শহরের সব বেসরকারি ক্লিনিকেই তাঁর নম্বর আছে। কোনো রোগীর জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে সেখান থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো রোগীর জন্য উপযুক্ত রক্তদাতা খুঁজে বের করা।
তৈয়বুর রহমান বলেন, রক্তদানের পর কিছু পরিবার এখনো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, খবর নেয়। আবার কেউ কেউ রক্ত সংগ্রহে একটু দেরি হলে মনঃক্ষুণ্ন হন। কেউ রক্ত পেয়ে ধন্যবাদ দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেন না। তবু মন খারাপ করেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে তাহিরপুর উপজেলার এক প্রসূতি বোনকে রক্ত দিয়েছিলাম। এখনো ওই পরিবার যোগাযোগ রাখে। সময়-অসময় খোঁজ নেয়। এটা ভালো লাগে, এটা অন্য রকম রক্তের সম্পর্ক। এই কাজ করে আনন্দ পাই, তৃপ্তি পাই। যত দিন পারি, এই কাজ করে যাব।’
এখন পর্যন্ত ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন তৈয়বুর রহমান