‘দেশের খাদ্য মজুত পরিস্থিতি সন্তোষজনক’
Published: 28th, May 2025 GMT
দেশের খাদ্য মজুত পরিস্থিতি অত্যন্ত সন্তোষজনক বলে দাবি করেছেন খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।
তিনি বলেছেন, ‘‘আজকের দিনে খাদ্য মজুত আছে ১৫ লক্ষ টন। যা গত বছরের চেয়ে তিন লক্ষ টন বেশি। আমরা সন্তোষজনক অবস্থানে কখনো ঠিক থাকতে পারি না। কারণ এটা ক্রমাগত খরচ হচ্ছে, আবার যোগ হচ্ছে।’’
বুধবার (২৮ মে) দুপুরে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে জেলা ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে চলতি মৌসুমের বোরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, মজুত ও বিতরণ নিয়ে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
ঢাবির সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থীদের দেখার কেউ নেই
সিকৃবিতে ক্যাফেটেরিয়ার খাবারে পোকার লার্ভা
খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম বলেন, ‘‘আমাদের দরকার পড়লে বিদেশ থেকে আমদানি করি। গত বছর বেশি আমদানি করতে হয়েছে। এবার বোরো আবাদ যেমন হয়েছে, আমনও যদি ভালো হয়; তাহলে বিদেশ থেকে চাল আমদানি করতে হবে না।’’
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদের সভাপতিত্বে ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার জেলা প্রশাসক, আঞ্চলিক ও জেলা খাদ্য কর্মকর্তা এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/মিলন/রাজীব
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ইভা নাফি নিহান বাঁচবে কীভাবে, বাবা-দাদার প্রাণ গেল সড়কে
প্রতিদিনই সন্তানদের জন্য কাজ শেষে কোনো না কোনো খাবার নিয়ে ফিরতেন সবুজ মিয়া। বুধবার রাতেও তার তিন সন্তান অপেক্ষায় ছিলেন বাবার। গরম ভাত-তরকারি নিয়ে স্বামীর অপেক্ষায় ছিলেন তাদের মা আকলিমা আক্তারও। কিন্তু তাদের অপেক্ষার প্রহর আর ফুরাবে না কোনোদিন।
বুধবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার দত্তপাড়ায় বাসচাপায় প্রাণ হারান সবুজ মিয়া (৩৬)। একই সঙ্গে মারা যান তার বাবা আব্দুস ছোবানও (৬৭)। এ দুর্ঘটনায় কহিনূর সুলতানা (৩৫) নামের আরেক নারীরও মৃত্যু হয়।
আজ বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজের পর উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের পাইকুরা গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন হয় বাবা-ছেলের। স্বজনেরা জানায়, পরিবারটিতে কর্মক্ষম মানুষ বলে দুইজনই ছিলেন। ছোবানের একমাত্র ছেলে সবুজ। তাঁর ছোট পাঁচ বোনের বিয়ে হয়েছে। একমাত্র অবিবাহিত ছোট বোন সীমা আক্তার (১৬) থাকেন মা নাছিমা আক্তারকে নিয়ে। স্বামী ও একমাত্র ছেলে হারিয়ে নাছিমা পাগলপ্রায়। সবুজের মেয়ে সানজিদা হুম ইভা (১২) একটি মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে। ছেলে নাফিউল ইসলাম (৯) মাদ্রাসার নূরানী বিভাগের ছাত্র। ছোট ছেলে ইফতিয়ার হাসান নিহানের বয়স সবে চার। ঠিকমতো কথাও বলতে পারে না সে।
এদিন দুপুরে স্বজনেরা গ্রামের বাড়িতে দু’জনের মরদেহের অপেক্ষায় ছিলেন। সেখানে কথা হয় আকলিমার সঙ্গে। বিলাপের সুরে তিনি বলেন, গরম ভাত-তরকারি রান্না করে স্বামীর অপেক্ষায় ছিলেন। সন্তানেরাও বাবার অপেক্ষায় ছিল। বাসায় আসার সময় ওদের বাবা হাতে করে খাবার নিয়ে আসেন। এমন সময় তারা সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী ও শ্বশুরের মৃত্যুর সংবাদ পান। আকলিমা বলেন, ‘খবরটা হুনার পরে আকাশটা মাথাত ভাইঙ্গা পড়ে। আমার ঝি-পুতগুলা তো এতিম অইয়া গেলো। আইজ তাইক্যা (থেকে) এরারে দেখনের কেউ রইলো না।’
সবুজ পেশায় স্যানিটারি মিস্ত্রি। তাঁর বাবা আব্দুস ছোবানও একই কাজ করেন। স্বজনেরা জানায়, ছোবান পাইকুরা গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। সবুজ স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে থাকেন ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার জয়বাংলা মোড় এলাকায়। ছোবান বুধবার সকাল ৮টার দিকে সেখানে আসেন। ছেলেকে নিয়ে ময়মনসিংহে যান। কাজ সেরে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক ধরে অটোরিকশায় (মাহেন্দ্রা) করে ফেরার পথে বাসচাপায় দু’জনই নিহত হন।
সবুজের ভগ্নিপতি মো. আব্দুল মোতালেব বলেন, দুটি পরিবারকে দেখভালের জন্য কোনো পুরুষই আর নেই। তাদের বাড়ির ভিটাটুকো ছাড়া চলার মতো সহায়সম্পদও নেই। বাবা-ছেলে গায়ে-গতরে খেটে সংসার চালাতেন। সবুজের ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যৎ পুরো অন্ধকার হয়ে গেলো।
ঈশ্বরগঞ্জের ইউএনও সানজিদা রহমান বলেন, দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলের এমন মৃত্যু খুবই মর্মান্তিক। বেশ কয়েকবার তাদের পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছেন তিনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন।
তিন জেলায় আরও পাঁচজন নিহত
এদিকে সড়কে বুধবার ও বৃহস্পতিবার আরও পাঁচজনের প্রাণ গেছে। ঝিনাইদহের মহেশপুরের সরিষাঘাটায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হন কলেজছাত্র সাইদুর রহমান (১৯)। তিনি উপজেলার শ্যামকুড় গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা যান তিনি। বুধবার রাতে সাতক্ষীরায় আমভর্তি ট্রাক উল্টে নিহত হয়েছেন ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম।
রাত ১১টার দিকে সদর উপজেলার বাইপাস সড়কের চিংড়িখালী এলাকায় এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। শহিদুলের বাড়ি যশোরের শার্শা উপজেলার কায়বা গ্রামে। সাতক্ষীরার কলারোয়া থেকে আম নিয়ে কালীগঞ্জের মৌতলা যাওয়ার পথে ওই ট্রাকটি দুর্ঘটনার শিকার হয়।
এদিকে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেলের আরোহী তিন তরুণ নিহত হয়েছেন। বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিরাজগঞ্জ-নলকা আঞ্চলিক সড়কের কুটিরচরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত তরুণেরা হলেন– উল্লাপাড়ার সলঙ্গা থানার নলকা সেনগাতীর জয়নাল আবেদীনের ছেলে জাহিদুল ইসলাম (২২), আব্দুল হাইয়ের ছেলে আব্দুল গাফফার (২২) ও তাড়াশ উপজেলার তেঘরি গ্রামের আব্দুল ওয়াদুদের ছেলে শোয়েব আলী (২০)।
উপজেলার ভদ্রঘাট এলাকায় এসিআই-গোদরেজ কারখানায় কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে তারা দুর্ঘটনার শিকার হন বলে পুলিশ জানিয়েছে। কামারখন্দ থানার ওসি আব্দুর রউফ বলেন, ওই তিনজনের পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ বৃহস্পতিবার সকালে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সিরাজগঞ্জ, ঝিনাইদহ ও শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি এবং ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা]