দুপুর থেকে গোটা কাওরানবাজার এলাকাটি  স্থবির হয়ে আছে। কোনো গাড়ি চলছে না। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চললেও একটু এগোচ্ছে তো, আবার থেমে যাচ্ছে। প্রখর রোদ ও প্রচণ্ড গরমে গণপরিবহনের ভেতরে মানুষ ঘেমেনেয়ে একাকার। অনেকে যানবাহন থেকে নেমে হাঁটা ধরেছে।

কাওরানবাজারের পূর্ব দিকে হাতিরঝিলের মুখের সামান্য আগে নেমেছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। সেখান থেকে শুরু করে মগবাজার এলাকায়ও একই পরিস্থিতি; বরং আগে যে পরিস্থিতি কখনো দেখা যায়নি, তা হলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপরে পার্কিং করে রাখা বাস। মূলত যানজটের কারণে বাসগুলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপরেই আটকে পড়েছিল। যাই হোক, ফলে কয়েক ঘণ্টা ধরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটিও অনেকটা স্থবির হয়ে যায়।

রাজধানী ঢাকা শহর কখন কী কারণে এমন স্থবির হয়ে যায়, রাস্তায় নামা ছাড়া তা বোঝা মুশকিল। তবে যে কেউ ধারণা করে নেন যে হয়তো কোথাও আন্দোলন-মিছিল বা দাবি আদায়ের কর্মসূচিতে রাস্তা আটকে রাখা হয়েছে। এটিই যেন এ শহরের ‘স্বাভাবিক’ চিত্র। এ কারণে যে দিনের পর দিন দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয় ঢাকাবাসীকে, তা–ও যেন গা–সওয়া হয়ে গেছে বলা যায়; কিন্তু কথা হচ্ছে, এভাবে একটি রাজধানী শহর কীভাবে চলতে পারে?

আজকের পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, সকালে জামায়াতে ইসলামী নেতা আজহারুল ইসলামের মুক্তির পর জামায়াতের সমাবেশ ছিল। সেখানে দলটির বিপুলসংখ্যক নেতা–কর্মী জড়ো হয়েছিলেন। ফলে শাহবাগ ও আশপাশের এলাকায় যানজট তৈরি হয়। তবে বেলা গড়াতে না গড়াতে সেই যানজটের তীব্রতা মিরপুর ও উত্তরার কিছু এলাকা ছাড়া গোটা রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়ে মূলত বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশের কারণে।

আয়োজকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী এই সমাবেশে ঢাকা, সিলেট, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ থেকে ১৫ লাখ তরুণের জমায়েত হওয়ার কথা। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপর আটকে থাকা গাড়িগুলো মূলত বিএনপির সমাবেশে কর্মীদের নিয়ে আসা বাস। সারি সারি বাসগুলো থেকে বিএনপি কর্মীরা নেমে পড়ছেন এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ধরে হেঁটেই নেমে আসছেন মূল রাস্তায়।

এ লেখা যখন লিখছি, তখন কার্যদিবস শেষ। মানুষ অফিস থেকে বের হয়ে আসছেন। এর মধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কাওরানবাজার এলাকা তখনো অনেকটা স্থবির। জামায়াতের সমাবেশ শেষ দুপুরের আগে, অর্থাৎ সকাল সাড়ে ১০টার আগেই; আর বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশ শুরু হয়েছে বেলা দুইটার পর। বিকেল পাঁচটায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ধারণা করি প্রায় সন্ধ্যাই হবে। এরই মধ্যে সমাবেশে আগত লাখ লাখ মানুষ ফিরতে শুরু করবেন। একই সময়ে রাজধানীর লাখ লাখ কর্মজীবীর ঘরে ফিরবেন। স্বাভাবিক কর্মদিবসেই যানজটের কারণে অনেক কর্মজীবীই ঠিক সময়ে ঘরে ফিরতে পারেন না। আর আজকের কথা ভাবুন তো!

বিষয়টি এমন নয় যে বিএনপির কারণে রাজধানীবাসী আজ সারা দিন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন, সেই করুণ অবস্থা চিত্রায়িত করতেই এ লেখার উদ্দেশ্য। এটি শুধু বিএনপি বা জামায়াতের সমাবেশের বিষয় নয়; এটি আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিষয়।

গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপি-জামায়াত বা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সভা-সমাবেশে নানা বাধার মুখে পড়তে হতো। সে সময় সমাবেশের অনুমতি নিতে কী পরিমাণ টালবাহানার শিকার হতে হয়েছে আমরা দেখেছি!

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আগের মাসে ডিসেম্বরে বিএনপি পল্টন ময়দানে মহাসমাবেশের কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল। পল্টনে সেই সমাবেশ তো করতে দেয়নি আওয়ামী লীগ সরকার, তার আগেই পুলিশের বাধা ও বিএনপি নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন বিএনপির কর্মী নিহত হয়েছিলেন। এরপর গোলাপবাগে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল ২৬টি শর্তে। চারদিক থেকে সরকারের তীব্র বাধা সত্ত্বেও সমাবেশের আগের দিন রাতেই গোলাপবাগ মাঠ ভরে গিয়েছিল বিএনপির নেতা–কর্মীতে। আর পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী মহাসমাবেশ তো হলোই। সেদিন ছিল শনিবার।

হ্যাঁ, সবার স্মরণে থাকার কথা। বিএনপি তখন ভোটের অধিকার রক্ষা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলন শুরু করেছিল দেশজুড়ে। রাজধানীতে একের পর এক মহাসমাবেশের ডাক দিয়ে যাচ্ছিল। সেসব কর্মসূচি থাকত হয় শুক্রবার, নয়তো শনিবার। ২০২৩ সালের ১২ জুলাই, ২৭ জুলাই, ২৮ অক্টোবর এবং এরপর ১০ ডিসেম্বর—এসব তারিখে আয়োজিত প্রতিটি মহাসমাবেশে রাজনৈতিক জোয়ার ফিরে পেয়েছিল বিএনপি। এসব তারিখের প্রতিটি দিন ছিল শুক্রবার বা শনিবার। পাঠক, পুরোনো ক্যালেন্ডার ধরে তারিখ ঘেঁটে দেখতে পারেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের চাপ ছাড়াও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কর্মসূচি ফেলার বিএনপির একটি উদ্দেশ্য ছিল সমাবেশে দলীয় নেতা–কর্মী ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করা, অফিস বা ব্যবসার ব্যস্ততা ছাড়াই ছুটির দিনে সবাই যেন সমাবেশে যোগ দিতে পারেন; সেই সঙ্গে কর্মদিবসে সমাবেশের আয়োজন করে মানুষকে দুর্ভোগের মুখে না ফেলা। বিএনপি মনে করেছিল, কর্মদিবসে কর্মসূচি করলে তারা সাধারণ মানুষের সহানুভূতি হারাতে পারে। তা ছাড়া আওয়ামী লীগের কাছেও সেটি হতো তখন রাজনৈতিক প্রচারণার হাতিয়ার। সে সময় আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বক্তব্যগুলো খেয়াল করলেও সেটি স্পষ্ট হয়।

এখন রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ আয়োজনে কোনো বাধানিষেধ নেই; কিন্তু বিএনপি রাজনৈতিক সংস্কৃতির যে সুন্দর চর্চা তৈরি করেছিল, সেটি থেকে কেন বিচ্যুত হলো? এ মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় দল হিসেবে বিএনপি যদি এই চর্চা অব্যাহত রাখত, বাকি দলগুলোর মধ্যেও বিষয়টি অনুসরণীয় হতো নিঃসন্দেহে। রাজনৈতিক দলগুলোরই তো সবচেয়ে বেশি উপলব্ধি করার কথা—মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে তো আসলে রাজনীতি হয় না। মানুষও সেই রাজনীতি কখনো পছন্দ করে না।

রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করা যেকোনো রাজনৈতিক দলের অধিকার। সংবিধানেও সেই অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে সেখানে জনশৃঙ্খলা ও জনস্বাস্থ্যের স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় রাখার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ জন্য কর্মসূচির আগে প্রশাসন বা পুলিশ থেকে অনুমতি নেওয়ারও একটি নিয়ম আছে। সরকার নিজ থেকে বাধা তৈরি না করলে সাধারণত সেই অনুমতি খুব একটা সমস্যা হয় না কারও।

আর আমরা এ–ও চাই না, সরকার বা পুলিশ কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির আয়োজনে বাধা দেবে বা অনুমতি দেবে না; কিন্তু জনশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে তারা চাইলে কর্মদিবসে বড় সভা-সমাবেশ করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিরুৎসাহিত করতে পারে।

আর রাজনৈতিক দলগুলো তো বলেই থাকে, তারা রাজনীতি করে মানুষের কল্যাণের স্বার্থে। তো, তারাও কেন কর্মদিবসের ক্ষেত্রে বড় কর্মসূচির ঘোষণা করতে সেই বিবেচনা করবে না?

রাফসান গালিব প্রথম আলোর সম্পাদকীয় সহকারী। ই–মেইল: [email protected]

(মতামত লেখকের নিজস্ব)

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক স ব এনপ র র এল ক র কর ম ব র হয় আওয় ম সরক র য নজট

এছাড়াও পড়ুন:

সার্চ দুনিয়ার নতুন দিগন্ত জিইও: দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কী প্

ইন্টারনেট সার্চ দুনিয়ায় চলছে নীরব এক বিপ্লব। তথ্য খোঁজার ধরন বদলে যাচ্ছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত। আগে যেখানে গুগলে উচ্চ র‌্যাংকিং মানেই ছিল সাফল্য, এখন সেই জায়গা নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-নির্ভর সার্চ টুল।

সার্চ জগতের নতুন চ্যালেঞ্জ

চ্যাটজিপিটি, গুগল জেমিনি, মাইক্রোসফট কপিলট কিংবা পারপ্লেক্সিটি এআই-এগুলো আর শুধু সার্চ ইঞ্জিন নয়, বরং উত্তর তৈরিকারক ইঞ্জিন। ব্যবহারকারী এখন শুধু ‘লিংক’ নয়, বরং সরাসরি উত্তর পেতে চায়। আর এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যই এসেছে নতুন এক কৌশল- জিইও বা জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।

জিইও কী?

জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে আপনার ওয়েবসাইট ও কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো হয় যাতে এআই-চালিত সার্চ ইঞ্জিন সহজেই আপনার তথ্য চিনতে, বুঝতে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে সেটি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।

আগে ব্র্যান্ডগুলোর ফোকাস ছিল গুগলের প্রথম পাতায় জায়গা করে নেওয়া। কিন্তু এখন গুরুত্ব পাচ্ছে- চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-এর উত্তরে আপনার ব্র্যান্ডের নাম আসছে কি না!

এসইও বনাম জিইও: সার্চ দুনিয়ার নতুন যুগের পালাবদল

অনেকেই এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এবং জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এক মনে করেন, কিন্তু এদের মধ্যে মূলত লক্ষ্য ও কৌশল ভিন্ন। এসইও হচ্ছে পুরোনো পদ্ধতি, অন্যদিকে জিইও হচ্ছে নতুন পদ্ধতি।

* মূল লক্ষ্য
এসইও: সার্চ ইঞ্জিনে র‌্যাংক বাড়ানো
জিইও: এআই সার্চের উত্তরে দৃশ্যমান হওয়া

* কাজের ধরন
এসইও: কিওয়ার্ড ও ব্যাকলিংক ভিত্তিক
জিইও: কনটেক্সট, প্রাসঙ্গিকতা ও ব্র্যান্ড অথরিটি নির্ভর

* ফলাফল
এসইও: ক্লিক ও ট্রাফিক বৃদ্ধি
জিইও: ব্র্যান্ড উল্লেখ ও আস্থা বৃদ্ধি

* প্ল্যাটফর্ম
এসইও: গুগল, বিং ইত্যাদি সার্চ ইঞ্জিন
জিইও: চ্যাটজিপিটি, জেমিনি, পারপ্লেক্সিটি, এসজিই ইত্যাদি এআই সার্চ

এসইও এখনও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ভবিষ্যতের সার্চ ইকোসিস্টেমে জিইও সমান অপরিহার্য হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশি ব্যবসার জন্য জিইও-এর গুরুত্ব

বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিক্ষা, ট্রাভেল, স্বাস্থ্যসেবা, ই-কমার্স, রিয়েল এস্টেট- প্রায় প্রতিটি খাতেই ব্যবসা অনলাইনে আরো দৃশ্যমান হতে চাচ্ছে। কিন্তু বদলেছে মানুষের সার্চ করার ধরন। এখন তারা শুধু গুগলে সার্চ করেই সন্তুষ্ট থাকছে না, তারা এআই-চালিত সার্চ টুলগুলো যেমন চ্যাটজিপিটি, জেমিনি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মাধ্যমে সরাসরি উত্তর খুঁজছে। 

গার্টনারের এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ ভলিউম প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যাবে- কারণ ব্যবহারকারীরা দ্রুতই এআই-চালিত সার্চ ও চ্যাটবটের দিকে ঝুঁকছে। (তথ্যসূত্র: Gartner, “Search Engine Volume Will Drop 25% by 2026, Due to AI Chatbots and Other Virtual Agents)

তবে এই পরিবর্তনের প্রভাব ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, কেউ চ্যাটজিপিটি-তে লিখল, ‘ঢাকায় সেরা অ্যাকাউন্টিং ফার্ম কোনটি?’ যদি আপনার কোম্পানির নাম বা কনটেন্ট এআই-এর তৈরি উত্তরে না আসে, তাহলে সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট ও ব্যবসার সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে।

মূলত এখানেই জিইও-এর গুরুত্ব উঠে আসে। জিইও ব্যবহার করে কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো যায় যাতে এআই সার্চ সিস্টেম আপনার ব্র্যান্ডকে সহজেই চিনতে পারে, বুঝতে পারে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ করে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যবসা যদি এআই-এর দুনিয়ায় দৃশ্যমান থাকতে চায়, জিইও’র সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এখন আর বিকল্প নয়- এটি একান্ত প্রয়োজন।

জিইও’র জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?

জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) কোনো একদিনে শেখার মতো বিষয় না- এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যবসাগুলোকে নিজেদের কনটেন্ট, উপস্থিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা এআই-বান্ধব করে গড়ে তুলতে হয়। নিচে ধাপে ধাপে দেখা যাক, কীভাবে আপনি জিইও’র পথে প্রস্তুত হতে পারবেন।

১. অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করুন

জিইও’র প্রথম ধাপ হলো আপনার ব্যবসা বা ব্র্যান্ডের বর্তমান অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করা। চ্যাটজিপিটি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মতো এআই-চালিত সার্চ টুলে সার্চ দিন ‘বাংলাদেশে সেরা (আপনার ইন্ডাস্ট্রি)-এর কোম্পানিগুলো কোনগুলো?’

যদি সার্চের উত্তরে আপনার নাম না আসে, বোঝা যাবে যে আপনার এআই-দৃশ্যমানতা এখনও সীমিত। এই ক্ষেত্রে আপনাকে জিইও অনুযায়ী কনটেন্ট ও অনলাইন উপস্থিতি বাড়াতে কাজ শুরু করতে হবে।

২. বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করুন

জেনারেটিভ এআই সার্চ সিস্টেম সেই উৎসকেই অগ্রাধিকার দেয়, যা নির্ভরযোগ্য ও যাচাইযোগ্য। তাই আপনার ওয়েবসাইটে ব্র্যান্ড, টিম, যোগাযোগ ও রিভিউসহ সব তথ্য সম্পূর্ণ ও স্বচ্ছ রাখুন।

গুগল বিজনেস প্রোফাইল নিয়মিত আপডেট করুন-  ঠিকানা, সময়, পোস্ট ও রিভিউসহ।

বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম ও ব্লগে ব্র্যান্ডের উল্লেখ বাড়ান।

E-E-A-T (Experience, Expertise, Authoritativeness, Trustworthiness) বজায় রাখুন।

এভাবেই এআই ও ব্যবহারকারীর কাছে আপনার ব্র্যান্ড একটি বিশ্বাসযোগ্য সোর্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে- যা জিইও সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

৩. কনভারসেশনাল কনটেন্ট লিখুন

এআই সার্চ এখন ব্যবহারকারীর প্রশ্নভিত্তিক অনুসন্ধানকে গুরুত্ব দেয়। তাই আপনার কনটেন্ট তৈরি করুন এমনভাবে যেন এটি প্রাকৃতিক প্রশ্ন ও কথোপকথনের মতো শোনায়। উদাহরণ: ‘Where can I find a trusted IELTS coaching center in Dhaka?’ ‘Where can I apply for a blue-collar job?’ এ ধরনের কনটেন্ট এআই-এর চোখে আরো সহজে বোঝার মতো হয় এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তর হিসেবে উল্লেখযোগ্য।

৪. বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থাকুন

এআই শুধু ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে না। এটি ফেসবুক, ইউটিউব, লিংকডইন, কোরা এবং অন্যান্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে। তাই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আপনার উপস্থিতি নিশ্চিত করা জিইও-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৫. এসইও এবং জিইও একসাথে ব্যবহার করুন

ডিজিটাল দুনিয়ায় এখন শুধু সার্চ র‌্যাংকই যথেষ্ট নয়। এসইও যেমন গুগল সার্চে আপনার কনটেন্টকে শীর্ষে নিয়ে আসে, তেমনি নতুন যুগের জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) আপনার ব্র্যান্ডকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সার্চে আরো দৃশ্যমান করে তোলে।

এসইও মূলত গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবসাইটের অবস্থান উন্নত করে, আর জিইও শেখায়- কীভাবে এআই মডেলগুলো আপনার ব্র্যান্ডকে চিনবে, উল্লেখ করবে এবং বিশ্বাস করবে।

দুটি কৌশল একসাথে প্রয়োগ করলে অনলাইন উপস্থিতি অনেক বেশি শক্তিশালী হয়। একদিকে সার্চে দৃশ্যমানতা বাড়ে, অন্যদিকে এআই-নির্ভর প্ল্যাটফর্মগুলোতেও আপনার ব্র্যান্ডের নাম উঠে আসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে।

ভবিষ্যতের সার্চ জগতে টিকে থাকতে হলে এখনই সময়- এসইও এবং জিইও-কে একসাথে কাজে লাগানোর।

বাংলাদেশের ব্যবসার জন্য জিইও’র নতুন সম্ভাবনা

জিইও বাংলাদেশের ব্যবসাগুলোর জন্য হতে পারে এক গেম চেঞ্জার। আগে যেখানে অনলাইন দৃশ্যমানতা মানেই ছিল গুগলে র‌্যাংক করা, এখন সেটি ধীরে ধীরে স্থান ছেড়ে দিচ্ছে এআই সার্চ ভিজিবিলিটি–কে।

আজ যদি কোনো ব্যবহারকারী চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-তে জিজ্ঞেস করে- 

‘বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য অনলাইন বই বিক্রির সাইট কোনটা?’

অথবা, ‘ঢাকায় সেরা ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি কারা?’

যদি আপনার ব্র্যান্ডের নাম সেই উত্তরে উঠে আসে, সেটিই হবে প্রকৃত দৃশ্যমানতা- শুধু ক্লিক নয়, বরং আস্থা, প্রভাব ও ব্র্যান্ড অথরিটি–এর প্রতিফলন।

বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন শত শত নতুন অনলাইন ব্যবসা শুরু হচ্ছে- ই–কমার্স, এডুকেশন, হেলথটেক, রিয়েল এস্টেট, ফাইন্যান্স, এমনকি ছোট স্টার্টআপরাও দ্রুত ডিজিটাল হচ্ছে। কিন্তু একইসঙ্গে প্রতিযোগিতাও বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণে।

এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শুধু এসইও নয়, জিইও–কেন্দ্রিক কৌশলও অপরিহার্য।

জিইও’র ভবিষ্যৎ

খুব শিগগিরই এআই সার্চ টেক্সটের বাইরে গিয়ে ভয়েস, ভিডিও ও ইমেজ কনটেন্ট থেকেও উত্তর তৈরি করবে। তখন জিইও কেবল ওয়েবসাইট নয়, বরং ভিডিও, পডকাস্ট, সোশ্যাল প্রোফাইল, নিউজ রিপোর্ট- সবকিছুর মধ্যেই প্রভাব ফেলবে।

তাই এখন থেকেই যারা জিইও-কেন্দ্রিক কৌশল গ্রহণ করবে, ভবিষ্যতের সার্চ রেভোলিউশনে নেতৃত্ব দেবে তারাই।

উপসংহার

জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) শুধু নতুন ট্রেন্ড নয়- এটি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পরবর্তী অধ্যায়।

এসইও যেমন আপনাকে সার্চ রেজাল্টে নিয়ে যায়, জিইও তেমনি আপনাকে নিয়ে যাবে এআই–এর উত্তরে।

‘ভবিষ্যতের সার্চে র‌্যাংক নয়, ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতাই হবে সাফল্যের আসল মাপকাঠি।’

লেখক: হেড অব ওয়েব অ্যানালাইসিস অ্যান্ড এসইও ডিরেক্টর, ইন্টেলেক আইটি এলএলসি (ইউএসএ অ্যান্ড বাংলাদেশ)

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ