চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার পদ্মা নদী থেকে উদ্ধার হওয়া ভারতীয় নাগরিক সামিরুল ইসলামের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বুধবার (২৮ মে) দুপুুরে সদর উপজেলার বাথানপাড়া সীমান্ত দিয়ে পরিবারের কাছে মরদেহটি বুঝিয়ে দেয় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
মরদেহ হস্তান্তরের সময় বাংলাদেশ ও ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ১৮ বছর বয়সী সামিরুল ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলা-রামচন্দ্রপুর এলাকার মো.
আরো পড়ুন:
গাছে ঝুলছিল যুবকের মরদেহ
পদ্মায় ভাসছিল ভারতীয় নাগরিকের মরদেহ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ওসি মতিউর রহমান বলেন, “গত ২৫ মে বন্ধুদের সঙ্গে গোসলে করতে সামিরুল গঙ্গায় নামেন। এসময় তিনি পানিতে তলিয়ে যান। গত মঙ্গলবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার শাজাহানপুর ইউনিয়নের মোহনা পার্ক এলাকার পদ্মা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার হয়। আইনানুগ ব্যবস্থা শেষে আজ বুধবার তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”
ঢাকা/মেহেদী/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মরদ হ র মরদ হ
এছাড়াও পড়ুন:
কার্যকর পদক্ষেপের কোনো বিকল্প নেই
গণ–অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। শুরু থেকেই সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল করা এবং আইনশৃঙ্খলার উন্নতি ঘটানো। সাড়ে ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও সরকার সেই চ্যালেঞ্জ ঠিকমতো মোকাবিলা করতে পারছে না।
গত কয়েক দিনে রাজনৈতিক উত্তাপ–উত্তেজনার সুযোগে রাজধানী ঢাকায় যেভাবে অপরাধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক ও বিপজ্জনক। মেট্রোস্টেশনের নিচে, জনবহুল সড়কে বা আবাসিক এলাকার গলিতে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। ছিনতাই, ডাকাতি, খুন—এমনকি প্রকাশ্য দিবালোকে চাপাতি ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালানোর মতো ঘটনা ঘটেছে, যা আমাদের উদ্বিগ্ন করে।
সাম্প্রতিক সময়ে পল্লবী, মগবাজার, বনশ্রী, বাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘটে যাওয়া ছিনতাই ও ডাকাতির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এসব ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, অপরাধীরা সংগঠিত, বেপরোয়া ও সশস্ত্র। অথচ ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করার পরও পুলিশের সাড়া না পাওয়া এবং অপরাধীদের শনাক্ত করতে বিলম্ব হওয়াই যেন এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। ঢাকার বাড্ডায় বিএনপি নেতা খুনের ঘটনায় সোমবার দুপুর পর্যন্ত কোনো মামলা না হওয়ার খবরটি আমাদের বিস্মিত করেছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ছিনতাই ও ডাকাতির সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকাভেদে ভিন্ন ধরনের অপরাধী চক্র সক্রিয়। যেমন উত্তরায় কিশোর গ্যাং, গুলিস্তানে পেশাদার ছিনতাইকারী, ধানমন্ডিতে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সক্রিয়তা। ফলে শহরজুড়ে একধরনের ছায়াযুদ্ধ চলছে, যেখানে নাগরিকেরা বিপর্যস্ত এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভ্রান্ত। খিলগাঁও, মগবাজার, বাড্ডা ও মহাখালী এলাকায় আবার পেশাদার অপরাধীদের পাশাপাশি মৌসুমি অপরাধীদের তৎপরতা বেশি পেয়েছে পুলিশ।
অপরাধ পরিস্থিতির উন্নতির অন্যতম নির্দেশক হলো মানুষ ঘরে–বাইরে কিংবা চলাচলে নিরাপদ বোধ করছে কি না, সেই প্রশ্নটি। ঢাকা শহরের মানুষ এখন নিরাপদ বোধ করছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। অপরাধীদের দ্রুত জামিনে মুক্তি এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। যারা গ্রেপ্তার হয়, তারাও কয়েক দিনের মধ্যে ছাড়া পেয়ে আবার অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই পুলিশের মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের অভাব দেখা যাচ্ছে। সেই সময় পুলিশে অনেক বদলি–পদায়ন করা হয়। নতুন দায়িত্ব পাওয়া অনেক পুলিশ সদস্যের ঢাকায় অপরাধসংক্রান্ত অভিজ্ঞতা না থাকায় এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা দেখা দিয়েছে। আবার পুলিশ কর্মকর্তারা নিজেরাও বলছেন, নানা রকম রাজনৈতিক বিবেচনা তাঁদের নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে। ফলে অপরাধীরা পুলিশকে ভয় পায় না, বরং পুলিশের দুর্বলতা তাদের সাহসী করে তুলেছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে অপরাধ মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি—১. পুলিশ বাহিনীর দক্ষতা ও মনোবল পুনর্গঠন, ২. তদন্ত ও নজরদারিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো, ৩. দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে চিহ্নিত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা এবং ৪. সামাজিক সচেতনতা ও কমিউনিটি পুলিশিং কার্যকরভাবে চালু করা।
রাজধানীর বাসিন্দাদের অন্যতম চাহিদা নিরাপত্তা, সেই জননিরাপত্তা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। একটি সমাজের আইনশৃঙ্খলার হাল যদি এভাবে নড়বড়ে হয়ে পড়ে, তবে শুধু রাজধানী নয়; সমগ্র রাষ্ট্রব্যবস্থাই ভঙ্গুর হয়ে পড়তে পারে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে জনগণ এখনই কার্যকর পদক্ষেপ আশা করে। এর ব্যত্যয় হলে জনগণের আস্থা হারানোর পাশাপাশি দেশে দীর্ঘ মেয়াদে অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা কোনোভাবেই আমাদের কাম্য নয়।