ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন, এমন ১৭১টি ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। আসামের মানবাধিকার কমিশনকে আজ বুধবার এই নির্দেশ দিয়ে আদালত বলেছেন, দ্রুত ও স্বাধীনভাবে এই তদন্ত শেষ করতে হবে। আবেদনকারীদের তরফে এসব ‘বন্দুকযুদ্ধ’কে ভুয়া বলে দাবি করা হয়েছিল।

আবেদনকারীদের তরফে আইনজীবী আসিফ জোয়াদ্দার প্রথম আলোকে বলেন, আসামে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ব্যক্তিদের অধিকাংশই আদিবাসী বা সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ।

সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, আবেদনটিকে ‘বিষয়টির যৌক্তিক উপসংহারে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজ্য মানবাধিকার কমিশনকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া’ হচ্ছে। অভিযোগের প্রয়োজনীয় তদন্তের জন্য কমিশনকে তার বোর্ডে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে আইন অনুযায়ী ‘স্বাধীন ও দ্রুত’ কাজ শেষ করতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং এন কতিশ্বর সিংয়ের আদালত এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা রাজ্য মানবাধিকার কমিশনকে নির্দেশ দিচ্ছি, ভুক্তভোগী বা তাদের পরিবারের সদস্যদের সুযোগ দিতে এবং তাদের কথা নিরপেক্ষ ও যথাযথভাবে শুনতে। প্রকাশ্যে নোটিশ দিয়ে সেসব ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে, যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। একই সঙ্গে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পরিচয় গোপন রাখতে হবে। একইভাবে যাঁরা কমিশনের কাছে আসতে চাইবেন, সেসব ব্যক্তির পরিচয় গোপন রাখতে হবে।’

এর আগে মামলাটি আসাম হাইকোর্টে খারিজ হয়ে যাওয়ার পরে ২০২৩ সালে আরিফ জোয়াদ্দার সুপ্রিম কোর্টে স্পেশাল লিভ পিটিশন ফাইল করে আবার তদন্তের আবেদন করেন।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আরও বলেছেন, ১৭১টি ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলোর কিছুও যদি ভুয়া বলে চিহ্নিত হয়, তাহলে ভারতের সংবিধানের ২১ ধারায় সেটি ‘রাইট টু লাইফ’ বা বাঁচার অধিকারের এক ভয়ানক বিরুদ্ধাচরণ বলে স্বীকৃত হবে।

সুপ্রিম কোর্ট এ কথাও বলেছেন, ‘স্বাধীন ও নিরপেক্ষ’ তদন্তের পরে এটা দেখা যেতে পারে, বেশ কিছু ঘটনার ক্ষেত্রে যা হয়েছে, তার প্রয়োজন ছিল অথবা তা আইনগতভাবে সঠিক। এই তফাত করাটা গুরুত্বপূর্ণ।

সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর সরকারপক্ষের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। অভিযোগকারীকে আইনি সহায়তা দিতে আবেদনকারীকে দেওয়া স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এটি ব্ল্যাকমেলিংকে উৎসাহিত করতে পারে। এর ফলে কিছু জিনিস ভবিষ্যতে একেবারে স্বাভাবিক মনে হতে পারে, যা আমি বলতে চাই না।’

তবে বিচারপতি সূর্য কান্ত আদেশ পরিবর্তন করতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে…যদি কেউ এ বিষয়ে অন্য কিছু বলতে চান, তবে তারা তা বলতে পারেন।’

সম্প্রতি মধ্য ভারতের দক্ষিণ ছত্তিশগড়ের বস্তার অঞ্চলে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সশস্ত্র মাওবাদীসহ কয়েক শ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন বলে দাবি করেছেন মানবাধিকারকর্মীরা। সুপ্রিম কোর্টের আজকের এই রায় ভবিষ্যতে তাদের সাহায্য করবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: তদন ত র বল ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

আসামের ১৭১ ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা তদন্তের নির্দেশ ভারতের সুপ্রিম কোর্টের

ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন, এমন ১৭১টি ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। আসামের মানবাধিকার কমিশনকে আজ বুধবার এই নির্দেশ দিয়ে আদালত বলেছেন, দ্রুত ও স্বাধীনভাবে এই তদন্ত শেষ করতে হবে। আবেদনকারীদের তরফে এসব ‘বন্দুকযুদ্ধ’কে ভুয়া বলে দাবি করা হয়েছিল।

আবেদনকারীদের তরফে আইনজীবী আসিফ জোয়াদ্দার প্রথম আলোকে বলেন, আসামে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ব্যক্তিদের অধিকাংশই আদিবাসী বা সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ।

সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, আবেদনটিকে ‘বিষয়টির যৌক্তিক উপসংহারে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজ্য মানবাধিকার কমিশনকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া’ হচ্ছে। অভিযোগের প্রয়োজনীয় তদন্তের জন্য কমিশনকে তার বোর্ডে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে আইন অনুযায়ী ‘স্বাধীন ও দ্রুত’ কাজ শেষ করতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং এন কতিশ্বর সিংয়ের আদালত এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা রাজ্য মানবাধিকার কমিশনকে নির্দেশ দিচ্ছি, ভুক্তভোগী বা তাদের পরিবারের সদস্যদের সুযোগ দিতে এবং তাদের কথা নিরপেক্ষ ও যথাযথভাবে শুনতে। প্রকাশ্যে নোটিশ দিয়ে সেসব ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে, যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। একই সঙ্গে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পরিচয় গোপন রাখতে হবে। একইভাবে যাঁরা কমিশনের কাছে আসতে চাইবেন, সেসব ব্যক্তির পরিচয় গোপন রাখতে হবে।’

এর আগে মামলাটি আসাম হাইকোর্টে খারিজ হয়ে যাওয়ার পরে ২০২৩ সালে আরিফ জোয়াদ্দার সুপ্রিম কোর্টে স্পেশাল লিভ পিটিশন ফাইল করে আবার তদন্তের আবেদন করেন।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আরও বলেছেন, ১৭১টি ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলোর কিছুও যদি ভুয়া বলে চিহ্নিত হয়, তাহলে ভারতের সংবিধানের ২১ ধারায় সেটি ‘রাইট টু লাইফ’ বা বাঁচার অধিকারের এক ভয়ানক বিরুদ্ধাচরণ বলে স্বীকৃত হবে।

সুপ্রিম কোর্ট এ কথাও বলেছেন, ‘স্বাধীন ও নিরপেক্ষ’ তদন্তের পরে এটা দেখা যেতে পারে, বেশ কিছু ঘটনার ক্ষেত্রে যা হয়েছে, তার প্রয়োজন ছিল অথবা তা আইনগতভাবে সঠিক। এই তফাত করাটা গুরুত্বপূর্ণ।

সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর সরকারপক্ষের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। অভিযোগকারীকে আইনি সহায়তা দিতে আবেদনকারীকে দেওয়া স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এটি ব্ল্যাকমেলিংকে উৎসাহিত করতে পারে। এর ফলে কিছু জিনিস ভবিষ্যতে একেবারে স্বাভাবিক মনে হতে পারে, যা আমি বলতে চাই না।’

তবে বিচারপতি সূর্য কান্ত আদেশ পরিবর্তন করতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে…যদি কেউ এ বিষয়ে অন্য কিছু বলতে চান, তবে তারা তা বলতে পারেন।’

সম্প্রতি মধ্য ভারতের দক্ষিণ ছত্তিশগড়ের বস্তার অঞ্চলে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সশস্ত্র মাওবাদীসহ কয়েক শ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন বলে দাবি করেছেন মানবাধিকারকর্মীরা। সুপ্রিম কোর্টের আজকের এই রায় ভবিষ্যতে তাদের সাহায্য করবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ