শিক্ষায় বাজেট বৃদ্ধি ও সংস্কার কমিশন গঠনের দাবিতে ঢাকা জেলার শিক্ষা কর্মকর্তাকে স্মারকলিপি
Published: 28th, May 2025 GMT
শিক্ষায় বাজেট বৃদ্ধি, কার্যকর সংস্কার ও শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের দাবিতে ঢাকা জেলার শিক্ষা কর্মকর্তাকে স্মারকলিপি দিয়েছে ছাত্র ফেডারেশন। আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা খাতে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
আজ বুধবার ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা মহানগর শাখার নেতা–কর্মীরা ঢাকা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো.
পরে ছাত্র ফেডারেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্মারকলিপি দেওয়ার সময় সংগঠনের নেতারা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলেছেন, ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনে বাংলাদেশের সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। তাই রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরও ফ্যাসিবাদবিরোধী দীর্ঘ লড়াইয়ে জনগণের প্রধান এজেন্ডায় পরিণত হয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তুলতে সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে কোনো ‘সংস্কার কমিশন’ গঠন করা হয়নি। কিন্তু জাতি গঠনে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার গুণগত পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি।’
শিক্ষা কর্মকর্তাকে ছাত্র ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, তারা আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ, কার্যকর সংস্কার ও শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের দাবিতে সারা দেশে শিক্ষক–শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের কাছ থেকে স্বাক্ষর সংগ্রহ ও শিক্ষা সংলাপের আয়োজন করেছে। নিজেদের প্রস্তাবিত আশু ও দীর্ঘমেয়াদি দাবিগুলো বাস্তবায়নে সরকারের উদ্যোগী ভূমিকা প্রত্যাশা করেন ছাত্র ফেডারেশনের নেতারা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত ক গঠন র
এছাড়াও পড়ুন:
বৈষম্য নিরসন ও নারীর ক্ষমতায়নে বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দাবি
নারীকে বৈষম্য-নির্যাতন থেকে সুরক্ষা দেওয়া ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত আইন, নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিতকরাসহ ১৬ দফা সুপারিশ জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) কর্তৃক ‘নারীর ক্ষমতায়নে বরাদ্দ করা জেন্ডার বাজেটের কার্যকর বণ্টন, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন চাই’ শীর্ষক বৈঠকে এসব সুপারিশ জানানো হয়।
গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনোমিক মডেলিংয়ের (সানেম) উপ-পরিচালক ইশরাত শারমীন।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, জেন্ডার বাজেট নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের সঙ্গে যুক্ত। বাজেটে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ না থাকলে কোনও নীতিমালাই নারীর ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়ায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না।
প্রবন্ধে জেন্ডার বাজেট ও বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ৪৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য চতুর্দশতম জেন্ডার বাজেট পেশ করা হয় এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নারী উন্নয়নে ২ লাখ ২৯ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকার জেন্ডার বাজেট পেশ করা হয়। এই বরাদ্দ আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩০ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা বেশি ছিল। ওই বাজেটের উল্লেখযোগ্য দিক ছিল, জেন্ডার বাজেটকে তিনটি থিমেটিক এরিয়ায় ভাগ করে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রথম অংশে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল 'নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি' খাতে। এ খাতে নারী উন্নয়নে ৪১ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়। 'উৎপাদন, শ্রমবাজার ও আয়বর্ধক কাজে নারীর অধিকতর অংশগ্রহণ' খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ৭ শতাংশ। দ্বিতীয় অংশে 'উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শ্রমবাজার ও আয়বর্ধক কাজে নারীর অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা'র লক্ষ্যে ৯টি মন্ত্রণালয় ও দুইটি বিভাগের জন্য বাজেট প্রস্তাব করা হয়। জেন্ডার বাজেটের তৃতীয় অংশে সরকারি সেবা প্রাপ্তিতে নারীর সুযোগ বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়। এতে দেখানো হয়, 'সরকারি সেবা প্রাপ্তিতে নারীর সুযোগ বৃদ্ধি' খাতে সর্বোচ্চ ৫২ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বাজেটে ১২টি মন্ত্রণালয় ও ৯টি বিভাগের জন্য জেন্ডার বাজেটের প্রস্তাব করা হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নারী উন্নয়নে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়, যা আগের বছরের তুলনায় ৩২ হাজার ১১০ কোটি টাকা বাড়লেও মন্ত্রণালয় ও বিভাগভিত্তিক বণ্টন একই থেকে যায়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ অনুসরণে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়ন, জেন্ডার বৈষম্য দূরীকরণ, শিশুর অধিকার, নারীর জন্য কর্ম, নারীর নিরাপত্তা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নারীর ক্ষমতায়নকে জোরদার করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছিল।
সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য ৫ হাজার ২২২ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, যেখানে ২০২৩-২৪ সালে অর্থবছরে ছিল ৪ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা। এছাড়া 'সমতার পথে অগ্রযাত্রা' শিরোনামে জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন ২০২৪-২৫ প্রকাশ করা হয়।
এসময় বক্তারা বলেন, বাজেটে বরাদ্দ বাড়লেও যে প্রক্রিয়ায় বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন হচ্ছে, তা নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক হচ্ছে কি না, এ প্রশ্ন থেকেই যায়। সরকার জেন্ডারবান্ধব বাজেট করলেও বাস্তব অগ্রগতি নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোনও পর্যালোচনা বা সমীক্ষা পাওয়া যায় না। পর্যবেক্ষণের অভাবে বাজেটে বরাদ্দের কতটুকু নারীর জীবনের কোন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বয়ে আনলো, সে বিষয়ে কোনও তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় না।
এ সময় তাদের ১৬ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো—
বরাদ্দকৃত বাজেটের মাধ্যমে নারীর জীবনের কোন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলো, সে বিষয়ক তথ্য-উপাত্ত/খতিয়ান আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপনের সময় উত্থাপন করতে হবে; মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর বরাদ্দ করা জেন্ডার বাজেটের কার্যক্রমগুলো কীভাবে সরাসরি নারীর ক্ষমতায়ন ও জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালার কর্মপরিকল্পনার সাথে সম্পর্কিত, তার অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রতি বছর তৈরি ও জনসমক্ষে পেশ করতে হবে; নারীর ক্ষমতায়নের জন্য নেওয়া কৌশলগুলো কতটুকু জেন্ডার চাহিদা পূরণ করছে এবং এর অগ্রগতি কতটুকু সে বিষয়ক সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের পাশাপাশি গুণগত বিশ্লেষণের পরিমাপক নির্ধারণ করতে হবে; প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের জেন্ডার বাজেট বিষয়ে ধারণাগত স্পষ্টতা এবং পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জেন্ডার বাজেট ফোকাল পয়েন্টদের তথ্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে থাকতে হবে; লিড মন্ত্রণালয় হিসেবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জেন্ডার বাজেট বিষয়ে ধারণাগত এবং মনিটরিং দক্ষতা বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে; সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের জেন্ডার ও জেন্ডার বাজেট বিষয়ক প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে এবং জেন্ডার সংবেদনশীল পরিবেশ নিশ্চিত করে তাদের সেবাদানের দক্ষতাকে বাৎসরিক কর্মমূল্যায়নের সাথে যুক্ত করতে হবে; নারীর জন্য জামানতমুক্ত ঋণ সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি উত্তরাধিকার আইনে পরিবর্তন আনতে হবে; সহিংসতার শিকার নারীদের জন্য সেবা বাড়ানো বিশেষ করে আইনি সহায়তা প্রদান, শেল্টার হোম তৈরি করা এবং সেখানে রেখে তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণসহ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
সুপারিশে আরও বলা হয়, জেন্ডার বাজেট বিষয়ক গবেষণার উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে বিআইডিএসসহ গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জেন্ডার বাজেট বিশ্লেষণের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা যেতে পারে; নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রান্তিকতা, নারীর চাহিদা, বর্তমান বাজার বিবেচনায় উপবৃত্তি, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতার পরিমাণ বাড়াতে হবে; কৃষক নারীদের 'কৃষক' হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানসহ তাদের সহজশর্তে ঋণ প্রদানে ব্যবস্থা থাকতে হবে; সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের জেন্ডার সংবেদনশীলতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ লোকবল বাড়াতে হবে; সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নারীবিদ্বেষী ঘৃণ্য বক্তব্য প্রচার বন্ধে বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে; প্রান্তিক নারীদের উপার্জনমূলক কাজে যুক্ত করবার জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখতে হবে; এবং নারীকে বৈষম্য-নির্যাতন থেকে সুরক্ষা দেওয়া ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত আইন, নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।
আয়োজক সংগঠনের সহ-সভাপতি ডা. মাখদুমা নার্গিস রত্নার সভাপতিত্বে ও উপ-পরিচালক শাহনাজ সুমীর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ লিড-উইমেন রাইটস অ্যান্ড জেন্ডার ইকুইটি মরিয়মনেসা, জেন্ডার বাজেট ও প্লানিং বিশেষজ্ঞ নিলুফার করীম, প্রাগ্রসরের নির্বাহী পরিচালক ফৌজিয়া খন্দকার ইভা, আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের (উই ক্যান) প্রধান নির্বাহী জিনাত আরা হক প্রমুখ।