ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে বিআরটিসি পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসের চাপায় তিন চাকার যান মাহেন্দ্রের তিনজন যাত্রী নিহত হয়েছেন। আজ বুধবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের দত্তপাড়া এলাকায় ১ নম্বর মোড়সংলগ্ন এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ছয়জন।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের পাইকুরা গ্রামের আবদুস ছোবান (৬০) ও তাঁর ছেলে সবুজ মিয়া (৩২) এবং অপর যাত্রী দড়িপাঁচাশি গ্রামের মৃত আহাম্মদ আলীর মেয়ে কহিনুর সুলতানা (৩৫)। তাঁরা তিনজনই মাহেন্দ্রর যাত্রী ছিলেন।

আহত ব্যক্তিরা হলেন সাব্বির মিয়া (২৭), শিউলি বেগম (২৮), রফিকুল ইসলাম (৩০), আবদুল গণি (৫০), রমজান আলী (২৩), শাহীন মিয়া (২০)। তাঁরা সবাই মাহেন্দ্রের যাত্রী ছিলেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চারজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহ থেকে কয়েকজন যাত্রী নিয়ে একটি মাহেন্দ্র ঈশ্বরগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। পৌর এলাকার দত্তপাড়া গ্রামের ১ নম্বর মোড়ে যেতেই দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশার সঙ্গে ধাক্কা লেগে মাহেন্দ্রটির পেছনের অংশ মহাসড়কের ওপর উঠে যায়। এ সময় কিশোরগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহগামী একটি বিআরটিসি বাস এসে মাহেন্দ্রকে চাপা দেয়। এতে মাহেন্দ্রতে থাকা বাবা-ছেলেসহ তিনজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘বাসের চাপায় ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ছয়জন। নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ আমাদের হেফাজতে রয়েছে। বিআরটিসি বাসটি আটক করা হলেও চালক ও সহকারী পালিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব আরট স

এছাড়াও পড়ুন:

বেপরোয়া গতির যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

ময়মনসিংহের সড়ক-মহাসড়কে সাড়ে তিন বছরে ৭৭২ জনের মৃত্যু—এই ভয়াবহ পরিসংখ্যান কেবল সংখ্যা নয়, বরং প্রতিদিনের রূঢ় বাস্তবতা। প্রতিটি প্রাণহানি একটি পরিবারকে শোকে নিমজ্জিত করেছে, অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিয়েছে। একই সময়ে গুরুতর আহত ও অঙ্গহানির শিকার হয়েছেন প্রায় এক হাজার মানুষ। এই পরিস্থিতি আমাদের সড়কব্যবস্থার নৈরাজ্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ দুরবস্থা তুলে ধরে।

বিআরটিএর তথ্য বলছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং ময়মনসিংহ-হালুয়াঘাট আঞ্চলিক সড়ক দুর্ঘটনার ‘হটস্পট’। বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিং, আঁকাবাঁকা সড়ক এবং থ্রি-হুইলারের অবাধ চলাচল—সব মিলিয়ে এই সড়কগুলোকে মৃত্যুকূপে পরিণত করেছে। চার লেনের মহাসড়ক হলেও উল্টো পথে গাড়ি চলা, গতিসীমা অমান্য করা এবং হাইওয়েতে ধীরগতির থ্রি-হুইলার চলাচল পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক করছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে সতর্কবার্তা ও গতিসীমা নির্ধারণ করেছে, কিন্তু চালকদের অনিয়ম ও বেপরোয়া গতির কারণে তা কোনো কাজে আসছে না। অনেক চালক মনে করেন, ভালো রাস্তা মানেই বেশি গতি। এই মানসিকতা ভাঙতে কঠোর নজরদারি ও শাস্তির বিকল্প নেই।

প্রশ্ন হচ্ছে, এই মৃত্যুর মিছিল থামাতে প্রশাসনের ভূমিকা কোথায়? সড়কে নিয়ম ভাঙা, বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিং রোধে কেন কঠোর নজরদারি ও শাস্তি নেই? জাতীয় মহাসড়কে থ্রি–হুইলার নিষিদ্ধ থাকলেও বিকল্প পরিবহন না থাকায় এবং দুর্বল নজরদারির কারণে সেগুলো নির্বিঘ্নে চলছে।

ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় প্রশাসন দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজে সক্রিয় হলেও প্রতিরোধমূলক উদ্যোগের ঘাটতি প্রকট। শুধু দুর্ঘটনার পর উদ্ধার নয়, দুর্ঘটনা প্রতিরোধই হতে হবে মূল লক্ষ্য। এ জন্য বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে হাইওয়ে পুলিশের উপস্থিতি ও নজরদারি বাড়ানো এবং দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্পিড ক্যামেরা বসানো জরুরি।

এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উপেক্ষিত হচ্ছে—জনসচেতনতা ও চালকের প্রশিক্ষণ। অধিকাংশ দুর্ঘটনা চালকদের অসতর্কতা, অভ্যাসগত আইন ভাঙা এবং প্রতিযোগিতামূলক গতির কারণে ঘটছে। যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে, যাতে তাঁরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে চালকদের বাধ্য না করেন। পাশাপাশি থ্রি-হুইলারের বিকল্প হিসেবে নির্ভরযোগ্য লোকাল পরিবহনব্যবস্থা চালু না করলে এসব দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে না।

বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনাগুলোকে নিছক দুর্ঘটনা বলা যায় না; এগুলো একধরনের ‘কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড’। দায়িত্বশীলদের গাফিলতি ও অবহেলার কারণে আর কোনো প্রাণ যেন সড়কে না ঝরে—এখনই সেই দাবি তুলতে হবে এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করতে হবে। ময়মনসিংহের সড়কগুলোতে বেপরোয়া গতির যানবাহনের বিরুদ্ধে পুলিশকে অবশ্যই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টাঙ্গাইলে কুকুরের কামড়ে ২৫ জন আহত
  • চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা, ভারী বর্ষণের আশঙ্কা
  • জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
  • ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ছেলের মুক্তি চেয়ে কাঁদলেন মা
  • ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি, আজও বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস
  • পার্বতীপুরে যুবদল-এনসিপির সংঘর্ষে ছয়জন আহত
  • এনসিপির নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি হচ্ছে: হাসনাত
  • প্রাইভেট কারে ঘুরে ফাঁদ পেতে চুরি করতেন অটোরিকশা, আটক ৪
  • বিকেলে এনপিপির পদযাত্রা-সমাবেশ, প্রস্তুত ময়মনসিংহ
  • বেপরোয়া গতির যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন