ক্রিজে তখন বিভ্রান্ত্র ব্যাটার তাওহীদ হৃদয়। ব্যাট চালাতে পারছেন না, আবার আউটও হচ্ছেন না! তাঁর ব্যাটিং দেখে উইকেটের পেছনে থাকা মোহাম্মদ হারিসের টিপ্পনি– ‘মারতে পারছে না... ক্লান্ত হয়ে গেছে...’।

স্টাম্পের নিচের মাইক্রোফোনে পাকিস্তান উইকেট কিপারের এ কথা স্পষ্ট শোনা যায় ব্রডকাস্টে। সেই ওভারেই খুশদিলের বলে হৃদয় এলবিডব্লিউ। দল যেখানে ২০২ রানের লক্ষ্যে নেমেছে, সেখানে হৃদয়ের ৭৭.

২৭ স্ট্রাইক রেটের ব্যাটিং আশির দশকের ওয়ানডে ব্যাটিংয়ের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল।

লাহোরের এ মাঠেই পিএসএলের ফাইনালে দুইশর বেশি রান তাড়া করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কালান্দার্স। বুধবার পাকিস্তান দলও শুরুতে ধাক্কা খেয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০১ রান তুলেছে, সেখানে বাংলাদেশ কিনা ১৬৪ রানে অলআউট। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হয়ে এসেছিলেন স্পিন বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদ। তাঁর কাছে পাকিস্তান সাংবাদিকরা জানতে চান বাংলাদেশের এই দলের কি দুইশ রান করার সামর্থ্য আছে?

উত্তরে মুশতাক, ‘অবশ্যই আছে। কৌশলগতভাবে আমরা এখানে কিছুটা পিছিয়ে ছিলাম। এর মানে এই নয় যে আমাদের ব্যাটারদের সামর্থ্য নেই ২০০ রান করার।’

অধিনায়ক লিটন দাসও ম্যাচ শেষে একই ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন। তিনিও উত্তর দিয়েছেন একই সুরে। ‘আমি নিশ্চিত এই মাঠে ২০০ রান তাড়া করা সম্ভব। মাঠটা খুবই গতিময়, উইকেটও ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো। তবে এদিন আমরা ভালো ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং করতে পারিনি। তবে আমাদের শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এখনও দুটি ম্যাচ বাকি আছে।’ সিরিজ বাঁচাতে আজ দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচে নামছেন তারা।

তবে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ম্যাচ জিততে হলে যে দুইশ রান মাথায় রাখতে হয়, তা সদ্য সমাপ্ত পিএসএলেই প্রমাণ হয়ে গেছে। পাকিস্তানের এই টি২০ ফ্রাঞ্চাইজি লিগে ছয় ম্যাচে দুইশর বেশি রান হয়েছে। তাই এখানে এসে তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাটিং স্টাইল চলে না। পাওয়ার প্লের ৪.৩ ওভারে চার নম্বরে নামেন তিনি। বিদায় নেন ১২.৪ ওভারে খুশদিলের বলে । ইনিংসের গুরুত্বপূর্ণ এ সময়ের মধ্যে ২২ বল খেলে রান করেছেন মাত্র ১৭! তাতে ছিল একটি বাউন্ডারি। তাঁর মতো লিটনও শুরুটা দেখেশুনে এগোচ্ছিলেন। একসময় ১১ রান ছিল তাঁর ১২ বলে, আট ওভার থেকেই মারতে শুরু করেন তিনি।

সাদাব খানের বলে তিন-তিনটি ছক্কা হাঁকান। ৩০ বলে ১৬০ স্ট্রাইক রেটে ৪৮ রানে শেষ হয় তাঁর ইনিংস। হাফসেঞ্চুরির জন্য দুটো সিঙ্গেল নেওয়ার চেষ্টা তিনি করেননি। জাকের আলী ১৮০ স্ট্রাইক রেটে ২০ বলে ৩৬ রান করেন। বাকিরা কেউই দুইশ রান তাড়া করার গতিতে ছিলেন না। ‘আপনি যখন দুইশ রান তাড়া করছেন, তখন চাইবেন না যাতে ওভারপ্রতি আস্কিং রেট ১৩ রানের বেশি হয়ে যায়। লিটন যখন শুরু করে মনে হয়েছে আমাদের পক্ষে ছিল। তবে ১৩-১৪ রান রেট অনেক বেশি। কোচ হিসেবে আমাদের তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে যেন ব্যাটিংয়ে ইনটেন্টটা থাকে।’

মুশতাক আহমেদ মনে করিয়ে দেন ম্যাচে দলের দুই সেরা পেসার মুস্তাফিজ ও তাসকিন ছিলেন না। তবে এটাও স্বীকার করেন ডেথ ওভারে বাংলাদেশি বোলাররা ৪৩ রান দিয়েছেন। এখানেও শোধরানোর ব্যাপার আছে তাদের।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ট ২০ স র জ র ন কর আম দ র উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

বারসিকের গবেষণা: রাজশাহীর ৯৯ ভাগ দোকানেই মিলছে নিষিদ্ধ কীটনাশক

রাজশাহীর ৯৯ ভাগ কীটনাশকের দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে নিষিদ্ধ কীটনাশক ও বালাইনাশক। সরকার নিষিদ্ধ করে রাখলেও নানা নামে এসব কীটনাশক বাজারজাত করা হচ্ছে। ফলে পরিবেশ, প্রকৃতি ও জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে। শতকরা ৯৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ ব্যবহারকারীই জানেন না এগুলো নিষিদ্ধ এবং বিপজ্জনক।

চলতি বছর রাজশাহীতে ‘জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব বিষয়ক মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধানমূলক সমীক্ষা’ শীর্ষক এক গবেষণায় এমন চিত্র উঠে এসেছে। সমীক্ষাটি করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক। 

বুধবার (৩০ জুলাই) সকালে রাজশাহী নগরের একটি হোটেলের কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলন করে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়ক শহিদুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজশাহীর আটটি উপজেলার ১৯টি কৃষিপ্রধান গ্রামাঞ্চলে মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ, ভুক্তভোগীদের কেস স্টাডি, স্থানীয় কীটনাশক ডিলার, দোকানদার, পরিবেশক এবং উপজেলা পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে সমীক্ষাটি করা হয়েছে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, নিষিদ্ধ কীটনাশক ব্যবহার করে শতকরা ৬৮ শতাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আর কীটনাশকের ৯৯ ভাগ দোকানেই দেশে নিষিদ্ধ কীটনাশক পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন নামে। এসব নাম দেখে বোঝার উপায় নেই এটি নিষিদ্ধ, বোতলের গায়ে নিচের দিকে জেনেরিক নাম খুব ছোট করে লেখা থাকে। 

বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ যেসব কীটনাশক এখনো পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো হলো- জিরো হার্ব ২০ এসএল (প্যারাকোয়াট), ফুরাডান ৫জি (কার্বোরাইল), এরোক্সান ২০ এসএল (প্যারাকোয়াট), গ্যাস ট্যাবলেট (অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড), কার্বোফোরান ৩ জিএসিআই (কার্বোফোরান), ইঁদুর মারা বিষ (বডিফ্যাকোয়াম) ও তালাফ ২০ এসএল (প্যারাকোয়াট)। এই প্যারাকোয়াট বা ঘাস মারা বিষ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অনেকে এগুলো আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে পান করেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে কিডনি নষ্ট হয়ে তারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাজারে অহরহ এসব নিষিদ্ধ কীটনাশক পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু সরকারের কোনো তদারকি নেই। এসব নিষিদ্ধ কীটনাশক ব্যবহার করে কৃষক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। নিষিদ্ধ কীটনাশক কীভাবে বাজারে বিক্রি হয়, কৃষি বিভাগের দায়িত্ব কী সে বিষয়েও সংবাদ সম্মেলন থেকে প্রশ্ন তোলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে নিষিদ্ধ কিছু কীটনাশকও আনা হয়। এগুলো যে দোকান থেকে কেনা হয়েছে তার রশিদও দেখানো হয়। এসব দেখিয়ে বারসিকের নির্বাহী পরিচালক পাভেল পার্থ বলেন, “এগুলো তো বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। আমরা কিনেছি। রশিদও আছে। এগুলো নিষিদ্ধ। আমরা এগুলো হাজির করতে বাধ্য হয়েছি। এই গবেষণা একটি ফৌজদারি অপরাধকে খুঁজে পেয়েছে।”

সংবাদ সম্মেলনে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে নিষিদ্ধ কীটনাশকের ব্যবহার কঠোরভাবে বন্ধ করা,  কীটনাশক আইন ও বিধি প্রয়োগ করা, কীটনাশক সম্পর্কিত স্বাস্থ্য তথ্য নিবন্ধন করা, কীটনাশকের ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণের জন্য তহবিল গঠন করার সুপারিশ করা হয়।

ঢাকা/কেয়া/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বারসিকের গবেষণা: রাজশাহীর ৯৯ ভাগ দোকানেই মিলছে নিষিদ্ধ কীটনাশক