নতুন বাংলাদেশ গড়তে জাপানের সর্বাত্মক সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা
Published: 30th, May 2025 GMT
নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে জাপানের সর্বাত্মক সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ শুক্রবার টোকিওর জেট্রো সদর দপ্তরে আয়োজিত সেমিনারে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি, আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে।’ জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো) এবং জাইকা যৌথভাবে ‘বাংলাদেশ বিজনেস সেমিনারে’র আয়োজন করে। খবর বাসসের
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা বড় বিপদের মধ্যে আছি। আক্ষরিক অর্থেই বাংলাদেশ ১৬ বছরের একটি ভূমিকম্প পার করেছে। সবকিছু ভেঙে পড়েছে। আমরা এখন টুকরো টুকরো করে গুছিয়ে তোলার চেষ্টা করছি।’
জাপানকে বাংলাদেশের বন্ধু আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন ভালো বন্ধু কঠিন সময়ে পাশে দাঁড়ায় এবং জাপান সেই বন্ধু।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাজ হলো অসম্ভবকে সম্ভব করা এবং আপনি আমাদের সঙ্গী ও বন্ধু। এটি বাস্তবে রূপ দিন।’
নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা একটি ঐতিহাসিক চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা ইতিহাসকে দেখাতে চাই যে, এটি সম্ভব হয়েছে, তা-ও নিখুঁতভাবে।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘অন্য একটি বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপন করুন, যাকে আমরা নতুন বাংলাদেশ বলি। তাই আমাদের কাজ হচ্ছে একসঙ্গে সেই নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করা।’ তিনি বলেন, ‘আপনাদের সহযোগিতায় এটি বাস্তবায়নযোগ্য এবং আমরা ইতোমধ্যে তার ভিত্তি স্থাপন করেছি।’
মাতারবাড়ি উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য জাপানকে ধন্যবাদ জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, এটি পিছিয়ে থাকা একটি দেশের অর্থনীতির ভিত্তি গড়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি কেবল অর্থ উপার্জনের বিষয় নয়। এটি মানুষের জীবন বদলে দেওয়ার ব্যাপার।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ আরও বহু মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষের জন্য দরজার মতু যেমন নেপাল, ভুটান এবং ভারতের সাতটি উত্তরপূর্ব রাজ্যের মানুষ সমুদ্রের পথ পেতে পারে বাংলাদেশ হয়ে।’ তিনি বলেন, ‘মাতারবাড়ি হচ্ছে বাকি বিশ্বের জন্য দরজা। আমরা তাদের জন্য এই দরজা খোলা রাখবো।’
জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্পবিষয়ক পার্লামেন্টারি ভাইস মিনিস্টার তাকেউচি শিনজি বলেন, বাংলাদেশ হলো একটি কৌশলগত বিন্দু, যা এশিয়াকে সংযুক্ত করে এবং এই অঞ্চলের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে জাপান দেশটির উন্নয়নে সহায়তা করে আসছে।
শিনজি আরও বলেন, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশকে একটি কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেখতে চায় জাপান সরকার।
জাপানি সরকার দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে বাংলাদেশে, জাপানি কোম্পানিগুলোকে বিনিয়োগে উৎসাহ দিচ্ছে বলেও জানান তাকেউচি।
ড.
বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য মূলত টেক্সটাইল শিল্পভিত্তিক উল্লেখ করে তিনি আরও বিস্তৃত খাতে বিনিয়োগ বৈচিত্র্য আনার আহ্বান জানান।
সভায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, প্রধান উপদেষ্টার এসডিজিবিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং টোকিওর বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নত ন ব র জন য ইউন স আরও ব সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়ে ৬০ হাজার কোটি টাকা
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বের শুরুর দিকে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ ছিল খুব সামান্য। দিন যত যাচ্ছে, ঋণ বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের ২১ মে পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। গত জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থবছরের ৭ মাসে যেখানে ছিল মাত্র ১৩ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। আশানুরূপ রাজস্ব আদায় না হওয়া, সঞ্চয়পত্রে ঋণ না বেড়ে উল্টো কমে যাওয়া এবং বিদেশি উৎস থেকে ঋণ ছাড় কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে শেষ সময়ে ব্যাংক ঋণ বাড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে আগামী অর্থবছরের জন্য সরকার চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ঋণ লক্ষ্যমাত্রা ২৫ শতাংশের মতো কমিয়ে এক লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা করতে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকা করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি জানিয়েছেন, ব্যাংক খাতের বর্তমান বাস্তবতায় সরকারের ঋণ চলতি অর্থবছরে ৯০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে সীমিত রাখা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গত ২১ মে পর্যন্ত সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে এক লাখ ১৬ হাজার ২১ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আগের দেনা শোধ করেছে ৫৬ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা। এতে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। গত জুন শেষে যা ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। জানা গেছে, বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমাতে ট্রেজারি বিল, বন্ডের বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগের দায় শোধ করা হচ্ছে। এতে টানাটানিতে থাকা ব্যাংকের টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যাচ্ছে। অবশ্য এ সময় দুর্বল ব্যাংকগুলোকে টাকা ছাপিয়ে ২৯ হাজার ৪১০ কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, অর্থবছরের শেষ সময়ে এমনিতেই সরকারের ঋণ বেড়ে থাকে। বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের বিল পরিশোধের একটা তোড়জোড় থাকে। অবশ্য ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার এখন পর্যন্ত যে ঋণ নিয়েছে, সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় তা অনেক কম।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান সরকার ব্যয় সংকোচন নীতিতে চলছে। তবে আগের বকেয়া ঋণ ও সুদ পরিশোধ অনেক বেড়েছে। আবার বেতন-ভাতাসহ সরকারের চলতি ব্যয় প্রতিবছর বেড়ে থাকে। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব আয় মাত্র ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়ে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় যা অনেক কম। আবার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ পাচ্ছে না। উল্টো গত জানুয়ারি পর্যন্ত ৭ হাজার ১৩ কোটি টাকা কমে তিন লাখ ৩৯ হাজার ২৫৬ কোটি টাকায় নেমেছে। বিদেশি উৎস থেকে ঋণছাড় কমেছে। সব মিলিয়ে সরকারের ব্যাংক ঋণ বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, মূল্যস্ফীতি কমাতে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমানোসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। চলতি অর্থবছরের জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামানোর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর আগামী অর্থবছরে ৬ শতাংশের নিচে নামানো হবে। গত এপ্রিল শেষে গড় মূল্যস্ফীতি নেমেছে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে। মূল্যস্ফীতি বেশি হলে সাধারণভাবে মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা কমে। সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমার পাশাপাশি গত বছর ব্যাংকের আমানত প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ।