ঈদুল আজহার আগে গার্মেন্টস শ্রমিকদের পূর্ণ বোনাস ও মে মাসের পুরো বেতন দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের নেতারা। শুক্রবার বিকেলে সংগঠনের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা আয়োজিত মানববন্ধনে এ দাবি জানান তারা। এ সময় বক্তারা আসন্ন বাজেটে শ্রমিকের জন্য রেশন, আবাসন, বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য বিশেষ বরাদ্দ ও বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিলের দাবি ওঠে। 

নগরীর ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় আয়োজিত কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ক্রমাগত নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে শ্রমজীবী মানুষের জীবন দুর্বিষহ। দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ ঈদেই কেবল ভাবতে পারেন পরিবার-পরিজনের জন্য কিছু ভালো খাবার ও কিছু জামাকাপড় কেনার কথা। এমনিতেই শ্রমিকের মজুরি কম। তাই ঈদের আগে তারা আয় বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত কাজ করেন। কিন্তু মালিকরা এই সময়ে বেতন-বোনাস নিয়ে কারখানাগুলোতে সংকট তৈরি করেন। 

তারা বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে মূল বেতনের সমান উৎসব ভাতা (বোনাস) দেওয়া হয়। অথচ যাদের উৎপাদনে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আসে, তাদের ঠিকমতো বোনাস দেওয়া হয় না। কিছু বড় ফ্যাক্টরি বাদে অন্যান্য কারখানায় শ্রমিকেরা মূল বেতনের অর্ধেক বোনাস পান। কোথাও বোনাস না দিয়ে বকশিশ দেওয়া হয়। সরকার মে মাসের মধ্যে বোনাস পরিশোধের নির্দেশ দিলেও এখনও বহু গার্মেন্টসে বোনাস দেওয়া হয়নি। এ সংকট নিরসনে শ্রমিকদের সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো পূর্ণ বোনাস দিতে আইন করার আহ্বান জানান তারা। 

বক্তারা সেখানে সংগঠনের সভাপতি সেলিম মাহমুদ, রবিনটেক্স শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সীমা আক্তারসহ নেতাদের নামে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। সংগঠনের জেলার সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লবের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের জেলা সভাপতি সেলিম মাহমুদ, জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ, সহসাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সোহাগ, রি-রোলিং স্টিল মিলস শ্রমিক ফ্রন্টের জেলা সভাপতি জামাল হোসেন প্রমুখ। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

পবিত্র ঈদুল আজহার দিন চারটি কর্তব্য

প্রতিবছর জিলহজ মাসের দশম দিনে মুসলিম বিশ্বে উদ্‌যাপিত হয় ইসলামের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। এই দিন কেবল আনন্দের নয়; বরং কোরবানির ত্যাগ ও আত্মশুদ্ধির অপূর্ব মিলনবিন্দু। একই সময় আসে হজের মৌসুম, লাখো ধর্মপ্রাণ মানুষ হজের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন।

নামের তাৎপর্য

বিভিন্ন সংস্কৃতিতে পবিত্র ঈদুল আজহার ভিন্ন ভিন্ন নাম। মাগরিব (উত্তর আফ্রিকা) অঞ্চলে এটি ‘ঈদুল কাবির’ বা বড় উৎসব নামে পরিচিত। সিরিয়া ও ইরাকের কিছু এলাকায় এটি ‘ঈদুল হাজ্জাজ’ ও তুরস্ক, ইরানসহ এশিয়ার কিছু মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে এটি ‘ঈদুল কোরবান’ নামে পরিচিত। আরবি শব্দ ‘ঈদ’ অর্থ যা নিয়মিত ফিরে আসে। ইসলামে বছরে মাত্র দুটি ঈদের বিধান দেওয়া হয়েছে—পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। এই দুটি উৎসব ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রোজা ও হজের সঙ্গে সংযুক্ত।

কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করে নিজে খাওয়া, আত্মীয়দের মধ্যে বিতরণ ও গরিব–দুঃখীদের দান করা সুন্নাহ।

এই অতুলনীয় ত্যাগ ও আনুগত্যের প্রতিদান হিসেবে আল্লাহ একটি দুম্বা পাঠান, ইসমাইল (আ.)–এর পরিবর্তে যা ইবরাহিম (আ.) কোরবানি করেন।

আরও পড়ুনযে আমলে রিজিক বাড়ে ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে কর্তব্য

পবিত্র ঈদুল আজহার প্রধান আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে রয়েছে তাকবির, ঈদের নামাজ, কোরবানি ও আনন্দ ভাগাভাগি।

১. তাকবির: আরাফার দিন ফজর থেকে তাশরিকের শেষ দিন (জিলহজের ১৩তম দিন) পর্যন্ত ঘরে–বাইরে, মসজিদে ও বাজারে তাকবির ধ্বনিত হয়। সবচেয়ে প্রচলিত তাকবির হলো, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ’। এটি আল্লাহর মহিমা ঘোষণা ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি মাধ্যম।

কোরবানির সময় ঈদের নামাজের পর থেকে তাশরিকের শেষ দিন পর্যন্ত। একটি হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি নামাজের আগে কোরবানি করেছে, সে যেন আরেকটি কোরবানি করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৯৬০)

২. ঈদের নামাজ: ঈদের নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এটি দুই রাকাত, যেখানে প্রথম রাকাতে তিনটি ও দ্বিতীয় রাকাতে তিনটি অতিরিক্ত তাকবির দিতে হয়। এ জন্য আজান বা ইকামতের প্রয়োজন নেই। নামাজের পর খুতবা দেওয়া হয়, যা শোনা মুস্তাহাব। রাসুল (সা.)–এর সুন্নাহ অনুযায়ী, নামাজে যাওয়ার পথে এক রাস্তা ও ফেরার পথে অন্য রাস্তা ব্যবহার করা উত্তম।

৩. কোরবানি: কোরবানি পবিত্র ঈদুল আজহার অন্যতম প্রধান আনুষ্ঠানিকতা। এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদা। কোরবানির জন্য উট, গরু, ছাগল বা ভেড়া নির্দিষ্ট বয়স ও শারীরিক শর্ত পূরণ করতে হবে। রাসুল (সা.) দুটি সাদা–কালো মোটা ও শিংওয়ালা দুম্বা কোরবানি করেছিলেন (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,৫৫৩)। কোরবানির সময় ঈদের নামাজের পর থেকে তাশরিকের শেষ দিন পর্যন্ত। একটি হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি নামাজের আগে কোরবানি করেছে, সে যেন আরেকটি কোরবানি করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৯৬০)

কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করে নিজে খাওয়া, আত্মীয়দের মধ্যে বিতরণ ও গরিব–দুঃখীদের দান করা সুন্নাহ।

৪. আনন্দ ও শুভেচ্ছা বিনিময়: ঈদের দিন আনন্দ প্রকাশ, নতুন পোশাক পরা, আত্মীয়–বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা ও শুভেচ্ছা বিনিময় করা ইসলামের শিক্ষা। সাহাবিরা ঈদের দিন একে অপরকে বলতেন, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম’ (আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের থেকে কবুল করুন)। এই শুভেচ্ছা সমাজে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির বন্ধনকে আরও মজবুত করে।

সূত্র: আল–জাজিরা ডটনেট

আরও পড়ুনমক্কার জমজম কূপের উৎপত্তি০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ