ফিরলেন মেসি, তিন চমক নিয়ে আর্জেন্টিনার স্কোয়াড ঘোষণা
Published: 31st, May 2025 GMT
২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের জুনের দুটি ম্যাচকে সামনে রেখে ২৮ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে আর্জেন্টিনা। কোচ লিওনেল স্কালোনির দলে সবচেয়ে বড় খবর—ফিরেছেন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। ইনজুরির কারণে মার্চের ম্যাচগুলোতে খেলতে না পারলেও, ইন্টার মায়ামির হয়ে ফের ছন্দে ফিরেছেন এবং এখন পুরোপুরি ফিট।
দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চল থেকে ইতোমধ্যেই বিশ্বকাপ নিশ্চিত করা একমাত্র দল আর্জেন্টিনা। ১৪ ম্যাচে ৩১ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে থাকা আলবিসেলেস্তেরা আগামী ৬ জুন চিলির মাঠে এবং ১১ জুন ঘরের মাঠে কলম্বিয়ার বিপক্ষে খেলবে।
ভিন্নধর্মী কায়দায় এবারের দল ঘোষণা করেছে আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন (এএফএ)। গত মার্চে তীব্র ঝড়ে বিধ্বস্ত বাহিয়া ব্ল্যাঙ্কা শহরের বাসিন্দাদের মুখেই খেলোয়াড়দের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। স্কোয়াডে সবচেয়ে আলোচিত নাম ১৭ বছর বয়সী অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ফ্র্যাঙ্কো মাস্তানতুয়োনো। প্রথমবার জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন এই বিস্ময় বালক। এছাড়াও আছেন আরও দুই নতুন মুখ। ২১ বছর বয়সী সেন্টারব্যাক মারিয়ানো ত্রোইলো ও ২৩ বছর বয়সী সেন্টারব্যাক কেভিন লোমোনাকো। মিডফিল্ডে জায়গা পেয়েছেন ২৪ বছর বয়সী এনসো বারেনেচিয়া, যিনি আগেও জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পেলেও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি।
এর আগে আর্জেন্টিনা সর্বশেষ বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলেছিলেন মার্চে। সে সময় উরুগুয়ে ও ব্রাজিলের বিপক্ষে খেলা স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েছেন নিকোলাস দমিঙ্গেস, আলেহান্দ্রো গারনাচো, অ্যালেক্সিস ম্যাকঅ্যালিস্টার ও ভ্যালেন্তিন কাস্তেয়ানোসের মতো তারকারা।
এর মধ্যে নটিংহাম ফরেস্ট তারকা দমিঙ্গেস মেনিসকাসের চোটে ভুগছেন। গারনাচো ও কাস্তেয়ানোসকে কৌশলগত কারণে বাদ দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছে আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম মুন্দো আলবিসেলেস্তে। আর ম্যাকঅ্যালিস্টার কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে লিভারপুলের সর্বশেষ দুই ম্যাচ খেলেছেন। এ কারণে এবার স্কালোনির দলে রাখা হয়নি এ মিডফিল্ডারকে।
আর্জেন্টিনার স্কোয়াড:
গোলকিপার: এমিলিয়ানো মার্টিনেজ, ওয়াল্টার বেনিতেস, হেরোনিমো রুইয়ি।
ডিফেন্ডার: ক্রিস্টিয়ান রোমেরো, নিকোলাস ওতামেন্দি, মারিয়ানো ত্রোইলো, নাহুয়েল মলিনা, লিওনার্দো বালেরদি, ভ্যালেন্তিন বার্কো, হুয়ান ফয়েথ, কেভিন লোমোনাকো, নিকোলাস তাগলিয়াফিকো, ফাকুন্দো মেদিনা।
মিডফিল্ডার: লেয়ান্দ্রো পারেদেস, এনসো বারেনেচিয়া, এনসো ফের্নান্দেস, এক্সেকুইয়েল পালাসিওস, থিয়াগো আলমাদা, নিকো পাস, রদ্রিগো ডি পল, জিওভান্নি লো সেলসো।
ফরোয়ার্ড: লিওনেল মেসি, হুলিয়ান আলভারেজ, লাওতারো মার্টিনেজ, নিকোলাস গনসালেস, আনহোল কোরেয়া, জুলিয়ানো সিমিওনে, ফ্র্যাঙ্কো মাস্তানতুয়োনো।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আর জ ন ট ন আর জ ন ট ন বছর বয়স
এছাড়াও পড়ুন:
ঘুমের মধ্যেই শেষ রিয়াজ রহিমার গোটা পরিবার
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সিলেটসহ উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জনজীবন চরম দুর্ভোগে পড়েছে। সিলেটের গোলাপগঞ্জে গভীর রাতে টিলাধসে একই পরিবারের চারজন মারা গেছেন। চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে জলাবদ্ধতা, পাহাড়ধস ও সড়কধসের ঘটনায় থমকে গেছে স্বাভাবিক চলাচল। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। নদনদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সোমবার ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক স্থানে বৃষ্টি হতে পারে।
শনিবার রাত ২টার দিকে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মণাবন্দ ইউনিয়নের বখতিয়ারঘাট এলাকায় টিলা ধসে পড়ায় এক পরিবারের চারজন নিহত হন। টিলার পাদদেশে একটি আনারস বাগানের পাশের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন রিয়াজ উদ্দিন (৫৫), তাঁর স্ত্রী রহিমা বেগম, মেয়ে সামিয়া বেগম (১৪) ও ছেলে আলী আব্বাস (৯)। হঠাৎ বিকট শব্দে টিলা ধসে ঘরের ওপর পড়ে। মাটিচাপা পড়ে ঘুমন্ত অবস্থাতেই মারা যান তারা। ভোরে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস যৌথ অভিযানে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে।
পাশের ঘরে থাকা রিয়াজের প্রথম স্ত্রী ও মেয়ে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জানান, কয়েক দিন ধরে মাইকিং করে টিলাধসের আশঙ্কায় সতর্ক করা হচ্ছিল। নিহতদের পরিবারের আবেদনে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
একই রাতে গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকার আমুড়া-শিকাপুর সড়কে টিলাধসের কারণে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে বসতঘর, দোকান ও রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় কয়েক ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। ফইল্ল্যাতলী বাজারে মহেশখালের পাশের সড়কের প্রায় ১০০ মিটার ফেটে ও দেবে গেছে। কিছু এলাকায় স্থায়ীভাবে পানি জমে আছে। সেনাবাহিনীর টিম, সিটি করপোরেশন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করলেও বৃষ্টি থামছে না বলে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। চসিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নালাগুলো বালুতে ভরাট হয়ে থাকায় পানি নামতে পারছে না। বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানি মিশে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯৪ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগের দিন মৌসুমি বৃষ্টি হয় সর্বোচ্চ ২৩৮ মিলিমিটার।
রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই, বড়ইছড়ি, সাপছড়িসহ ১৬টি স্থানে পাহাড়ধসে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। নিম্নাঞ্চলে ঢুকে পড়া পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই শতাধিক পরিবার। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, দুর্গতদের উদ্ধার ও আশ্রয় দিতে নেওয়া হয়েছে প্রস্তুতি। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী ৬৭২ জনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার, ছাতক ও তাহিরপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে। মৌলভীবাজারের বড়লেখায় পৌর শহরসহ পাঁচটি ইউনিয়নের গ্রাম ডুবে গেছে। দোকানপাট ও বাড়িঘরে পানি ঢুকে ৪-৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
গতকাল সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ময়মনসিংহে ৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিতে সানকিপাড়া, চরপাড়া, রেললাইন বস্তি, নতুন বাজার, বলাশপুরসহ বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে যায়। সড়কে হাঁটুপানি জমে যাওয়ায় মানুষের চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে।
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে মেঘনায় ট্রলারডুবির এক দিন পর উদ্ধার করা হয়েছে ইউএনএইচসিআর স্বেচ্ছাসেবক হাসিনা খাতুনের মরদেহ। এখনও নিখোঁজ এক পুলিশ সদস্যসহ আরও দু’জন। হাতিয়ায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় নিঝুমদ্বীপে ভেসে এসেছে দুটি মৃত ডলফিন।
সুন্দরবনের ঢাংমারী, করমজল, সুপতি, কটকা ও দুবলারচরের ৬টি মিঠাপানির পুকুরে ঢুকে পড়েছে লবণাক্ত পানি। এতে বনে মিঠাপানির উৎস সাময়িক বন্ধ হয়ে গেছে। স্রোতে ভেসে মারা গেছে দুটি হরিণ।
ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টিতে দেশের ছয় জেলার নদনদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ফেনীতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী উদয় রায়হান জানান, সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই ও হালদা নদীর পানি সাতটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে বইছে। আগামী তিন দিন সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের নদনদীর পানি আরও বাড়তে পারে। ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ছে এবং তিস্তা সতর্কসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র বলছে, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, মনু, ধলাই, খোয়াই ও সোমেশ্বরী নদীর পানি আগামী তিন দিন বাড়তে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী নদীর পানি বাড়তে পারে। ফেনী জেলার মুহুরী নদী-সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে অবশ্য এসব নদীর পানি কমতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি আগামী তিন দিন বাড়তে পারে। কাল পর্যন্ত বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীগুলোতে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি উচ্চতায় জোয়ার হতে পারে।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যুরো, অফিস ও প্রতিনিধি)