জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসানের একটি বক্তব্যকে ঘিরে তীব্র আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

বক্তব্যে তিনি বলেছেন, “প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছেন আমাদের মাতা, গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়া। আর প্রথম শিশু মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছে শিশু তারেক, শিশু আরাফাত।”

শুক্রবার (৩০ মে) শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেওয়া তার এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। 

আরো পড়ুন:

সুনামগঞ্জে তালা ভেঙে শহীদ মিনারে ফুল দিলেন মুক্তিযোদ্ধারা

স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধ এবং আজকের বাংলাদেশ 

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে উপাচার্য বলেন, “২৫ মার্চ রাতে যখন জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে নিজের পরিবারকে অরক্ষিত রেখে তরুণ আরাফাত এবং তারেককে বেগম খালেদা জিয়ার হাতে তুলে দিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। সে প্রেক্ষিতে বলা যেতে পারে, দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং প্রথম শিশু মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন  শিশু তারেক ও শিশু আরাফাত।”

তিনি বলেন, “সেদিন জিয়াউর রহমান তার ব্যাটালিয়নের ৩০০ সৈনিককে নিয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন- আমরা স্বাধীনতা ঘোষণা করব এবং প্রাণ দেব দেশের জন্য। সেই ৩০০ সৈনিকের স্ত্রী এবং সন্তানদের মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় সর্বাগ্রে স্থান পাওয়া উচিৎ।”

এদিকে, বক্তব্যের একটি ক্লিপ সোশ্যালমিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে নেটিজেনরা উপাচার্য হিসেবে তার নিরপেক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

এ বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। উপাচার্যের বক্তব্যের নারী মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমানজনক উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮ ব্যাচের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা বলেন, “এই মন্তব্য নারী মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমানজনক। উপাচার্য হওয়ার পর তার দলীয় রাজনীতি থেকে সরে আসা উচিত ছিল। এখন তিনি শুধু এক মতাদর্শের প্রতিনিধি হিসেবে দাঁড়িয়েছেন, যা উপাচার্য পদকে ছোট করে।”

একই ব্যাচের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “শিক্ষকরা রাজনৈতিক অবস্থান নিতে পারেন। কিন্তু উপাচার্য হিসেবে দলীয় আনুগত্য প্রদর্শন করা অপ্রত্যাশিত। তিনি এখন এমন একটি পদে, যেখানে সব ভিন্নমতের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমানভাবে আচরণ করতে হয়। কিন্তু তার বক্তব্য দলীয় পক্ষপাতেরই প্রতিফলন।”

গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তির বক্তব্য কেবল ব্যক্তিগত মতপ্রকাশ হিসেবে বিবেচিত হয় না।  একজন উপাচার্যের দায়িত্ব শুধু প্রশাসনিক নয়, তার প্রত্যেকটি বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের প্রতি একটি আদর্শ ও নৈতিক দৃষ্টান্ত স্থাপনের গুরুত্ব নিহিত থাকে।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায়। এটি ছিল সামরিক, রাজনৈতিক ও সাধারণ জনগণের সম্মিলিত আত্মত্যাগের এক অবিস্মরণীয় সংগ্রাম। এ প্রেক্ষাপটে, উপাচার্যের বেগম খালেদা জিয়াকে প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা এবং তার শিশু সন্তানদের প্রথম শিশু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অভিহিত করা বক্তব্যটি ইতিহাসের সঙ্গে কিছুটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”

উপাচার্যের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি আরো বলেন, “একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যখন এমন  মন্তব্য করেন, তখন তার নিরপেক্ষতা, পেশাদারিত্ব এবং শিক্ষাবিদ হিসেবে তার অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের এমন মন্তব্য পরিহার করা উচিত।”

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “আমার পুরো বক্তব্যের খণ্ডিত একটি অংশ প্রচার করে ন্যারেটিভ তৈরি করা হচ্ছে। এই জাতির পরিবর্তন হবে কিভাবে? বক্তব্যের পুরোটা শুনে মন্তব্য করা উচিৎ। শুধু রহমান পরিবারকে নিয়ে নয়, তার সঙ্গে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের আরো ৩০০ সৈনিকও জীবন বাজি রেখে যুদ্দে যোগ দিয়েছিলেন। তারাও স্ত্রী, সন্তান, পরিজন নিয়ে ভালনারেবল ছিলেন। তাদের কথাও বলেছি।”

তিনি বলেন, “তাদের (ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৩০০ সৈনিক) সবাইকে যথাযোগ্য মর্যাদায় স্মরণ করা উচিৎ। আমি নির্মোহভাবেই সবার কথা স্মরণ করে বক্তব্য রেখেছি। বক্তব্যের কোনো অংশ কারো পছন্দ নাও হতে পারে। সেজন্য সমালোচনা হতেই পারে। কিন্তু সমালোচনা এবং কুৎসা রটনা ভিন্ন জিনিস। আমার ক্ষেত্রে সমালোচনার দ্বার সবার জন্য উন্মুক্ত।”

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপ চ র য র ব গম খ ল দ ৩০০ স ন ক র জন য র জন ত রহম ন প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ, আদালতে স্বীকারোক্তি প্রধান আসামির

সিরাজগঞ্জে তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলায় হাসান ইমাম রাসেলকে প্রধান আসামি ও তার সহযোগী সোহাগসহ চারজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। হাসান ইমাম রাসেল সদর উপজেলার বাগবাটি ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলামের ছেলে। 

এদিকে মামলার আসামিদের মধ্যে হাসান ইমাম রাসেলকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে সোহাগসহ বাকি তিনজন পলাতক রয়েছে।

সিরাজগঞ্জ কোর্ট ইন্সপেক্টর আব্দুল হাই জানান, ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধ স্বীকার করে রোববার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে হাসান ইমাম রাসেল। গতকাল বিকেলে সিরাজগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (২) আদালতের বিচারক রাসেল মাহমুদ তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এর আগে স্থানীয়দের সহায়তায় রোববার ভোরে নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আহসানুজ্জামান বলেন, ‘তিন মাস আগে মোবাইলে প্রেমের ফাঁদে ফেলে সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের বাঐতারা গ্রামের ২০ বছর বয়সী তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে হাসান ইমাম। শুক্রবার বিকেলে নানা ছলে তরুণীকে ডেকে আনে এবং হরিনা বাগবাটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের এক বাড়িতে নিয়ে হাসান ও সোহাগ নামে দুই যুবক তাকে ধর্ষণ করে। আশপাশের লোকজন বিষয়টি টের পেলে ওই তরুণীকে রেখে পালিয়ে যায় হাসান ও সোহাগ।’

পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘শনিবার সন্ধ্যায় ওই তরুণী থানায় এসে অভিযুক্ত দুই যুবক এবং সহযোগিতার অভিযোগে ওই বাড়ির দুইজন মিলে মোট চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পরদিন রোববার ভোরে নিজ বাড়ি থেকে মামলার প্রধান আসামি হাসান ইমামকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। সোহাগসহ বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ