কমিটি নিয়ে ব্যস্ত বিএনপি, মাঠ গোছাচ্ছে জামায়াত, কার্যক্রম নেই এনসিপির
Published: 1st, June 2025 GMT
গাজীপুর জেলা বিএনপির কার্যালয়ে ও দলীয় কর্মসূচিতে যাঁদের আগে দেখা যায়নি, ৫ আগস্টের পর থেকে তাঁদের আনাগোনায় দলীয় কার্যালয় এখন জমজমাট। যাঁরা আগে ঝামেলা এড়াতে দলের কর্মসূচি থেকে দূরে থাকতেন, তাঁরাও এখন সক্রিয়। জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতারা এখন নতুন কমিটি গঠনে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এদিকে আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নীরবে মাঠ গোছাচ্ছে জেলা জামায়াতে ইসলামী। ইতিমধ্যে তারা জেলার পাঁচটি আসনে দলীয় প্রার্থীর নামও ঘোষণা করেছে। তবে গাজীপুরে এখন পর্যন্ত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কোনো কমিটি নেই। এর ফলে তাদের দৃশ্যমান কার্যক্রমও চোখে পড়ছে না।
সব মিলিয়ে গাজীপুর জেলার রাজনীতির মাঠে এখন বিএনপি আর জামায়াত বেশ সক্রিয়। দল দুটি সংগঠনকে গোছানোর পাশাপাশি জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভোটের মাঠও গোছাচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ নির্বাচনী আসনে বেশ সক্রিয়। সুযোগ পেলেই জনসংযোগের পাশাপাশি যোগ দিচ্ছেন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে।
কমিটি নিয়ে ব্যস্ত বিএনপিবিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, বিগত সরকারের সময়ে গাজীপুরে বিএনপিকে দমন করতে বিপুলসংখ্যক মামলা করা হয়েছিল। অধিকাংশই ছিল ‘গায়েবি’ মামলা। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছিল ১০ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে নেতারা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিলেন। গত ৫ আগস্ট আন্দোলনের পর থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। দলীয় কার্যালয়ে জমে উঠেছে কর্মসূচি। গত ১০ ফেব্রুয়ারি গাজীপুর জেলা বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। এতে আহ্বায়ক হন এ কে এম ফজলুল হক, যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম ও শাহ রিয়াজুল হান্নান এবং সদস্যসচিব চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকী।
এই কমিটি গত ২০ মে জেলার পাঁচটি উপজেলা ও তিনটি পৌর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে। এর পর থেকে নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শুরু হয়েছে দেনদরবারও। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ৫ মে কাপাসিয়া থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত চারটি সভা হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) কাজী ছাইয়েদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, জেলার রাজনীতি এখন নতুন কমিটি এবং কেন্দ্রীয় কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এগিয়ে যাচ্ছে। সামনে যেহেতু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তাই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুন কমিটি গঠন করা হবে। একই সঙ্গে দলকে আরও সুসংগঠিত করা হচ্ছে।
নীরবে মাঠ গোছাচ্ছে জামায়াত২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর গাজীপুরে প্রকাশ্যে সংগঠনের কার্যক্রম চালাতে পারেনি জামায়াতে ইসলামী। এখন রাজনৈতিক পরিবেশ কিছুটা বদলানোয় দলটি তৃণমূলে আবারও সভা-সমাবেশ করছে। নেতারা ধর্মীয় ও সামাজিক নানা আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন।
তাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের একটি দৃষ্টান্ত দেখা গেছে ২৯ মে গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে। দীর্ঘদিন পর সেখানে জামায়াতের প্রার্থীরা সভাপতি, সম্পাদকসহ পাঁচটি পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে গাজীপুরের পাঁচটি আসনের সব কটিতেই প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী। প্রাথমিকভাবে ঘোষিত প্রার্থীরা হলেন গাজীপুর-১ আসনে (কালিয়াকৈর ও সিটির একাংশ) সাবেক সচিব শাহ আলম বকশী, গাজীপুর-২ আসনে (গাজীপুর সিটির একাংশ ও টঙ্গী) মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য হোসেন আলী, গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর) আসনে গাজীপুর জেলা আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া ও সদর উপজেলা একাংশ) আসনে ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও মহানগরীর সদর থানার আমির সালাহউদ্দিন আইউবী, গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ ও সদর উপজেলার একাংশ) আসনে মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য খায়রুল হাসান।
জেলা জামায়াতের আমির জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দল জেলায় সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষের খেদমতে কাজে নিয়োজিত আছে। আশা করছি, দলের নিবন্ধন ফিরে পেলে আমাদের কার্যক্রম আরও বেগবান হবে।’
মহানগর জামায়াতের আমির অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, এরই মধ্যে গাজীপুরের পাঁচটি আসনের প্রাথমিকভাবে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁরা নিজ নিজ এলাকায় মানুষের সেবায় কাজ করছেন।
কার্যক্রম নেই এনসিপিরজেলায় এনসিপির কার্যক্রম নেই বললেই চলে। দেশের বিভিন্ন জেলায় দলটি কমিটি ঘোষণা করলেও গাজীপুরে এখনো কোনো কমিটি হয়নি। তবে জেলার কয়েকজন ছাত্রনেতা কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। গাজীপুরে দলটির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর ওপর হামলার ঘটনার সময় অনেক নেতা তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। হামলার প্রতিবাদও করতে দেখা গেছে।
ছাত্রনেতা ও এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) আবদুল্লাহ আল মোহিন প্রথম আলোকে বলেন, গাজীপুরে এনসিপির এখন পর্যন্ত কোনো কমিটি ঘোষণা করা হয়নি, যার কারণে কোনো কার্যক্রমও নেই। তবে ঈদের পর কমিটি দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা আত্মগোপনেগত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গাজীপুর শহরের জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে সেটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কার্যালয়ও ভাঙচুরের শিকার হয়।
আন্দোলনের সময় নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনায় জেলার ১৩টি থানায় অর্ধশতাধিক মামলা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। এর ফলে সম্প্রতি কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া দলটির নেতারা এখন আত্মগোপনে আছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র ক এনস প র উপজ ল র সময় ইসল ম সদস য গঠন ক
এছাড়াও পড়ুন:
‘শহীদ জিয়ার প্রথম চট্টগ্রাম, শেষ চট্টগ্রাম’ শীর্ষক আলোচনা সভা
চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকার উদ্যোগে ‘শহীদ জিয়ার প্রথম চট্টগ্রাম, শেষ চট্টগ্রাম’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী দোয়া, খতমে কুরআন, দুঃস্থদের মাঝে খিচুরি বিতরণ কর্মসূচি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানীর তোপখানা রোডে চট্টগ্রাম সমিতি ভবনের নিজস্ব মিলনায়তনে রোববার প্রথম দিন এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দিন সোমবার সকালে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা চট্টগ্রাম সমিতির আজীবন সদস্য আসলাম চৌধুরী। এতে সভাপতিত্ব করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎবার্ষিকী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক, চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকার আজীবন সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা মীর দোস্ত মোহাম্মদ খান। সভা পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম সমিতির আহ্বায়ক সাবেক ছাত্রনেতা এম এ হাশেম রাজু ও যুগ্ম আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন মিজান।
‘শহীদ জিয়ার প্রথম চট্টগ্রাম, শেষ চট্টগ্রাম’ শীর্ষক আলোচনা সভায় আসলাম চৌধুরী বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে ইসলামী মূল্যবোধ, জাতীয়তাবাদী চেতনার ক্ষণজন্মা গুটি কয়েকজনের মধ্যে জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম) অন্যতম। শহীদ জিয়ার জন্ম না হলে বাংলাদেশের মাটি-মানুষ-মানচিত্র ভারতীয় আধিপত্যবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদ থেকে রেহাই পেত না।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান মুসলিম বিশ্বের দরবারে যেখানে সংঘাত-সংঘর্ষ হয়েছে, সেখানেই শান্তির বার্তা নিয়ে ছুটে গিয়েছেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ইরাক-ইরানের ৮ বছর ব্যাপী যুদ্ধ শেষ হয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে তিনি সার্ক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জোরদার করতে তৎকালীন সময় ওআইসিকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রেখেছিলেন।
প্রধান বক্তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের অ্যাম্বাসেডর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, জিয়াউর রহমান আজও আমাদের স্মৃতিতে অম্লান। তিনি ছিলেন সততার প্রতীক, অন্তিম মুহূর্তে মুক্তির কান্ডারি, অকুতোভয় সেনা, বাংলার উন্নয়নের পথিকৃৎ। তিনি বাংলাদেশের প্রথম ব্যক্তি, যিনি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রবর্তন করেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, জাতীয়তাবাদ কখনো নৃতাত্তিক গোষ্ঠী, ভাষা বা ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ হতে পারে না। এ জন্য তিনি বাংলাদেশের মধ্যে যারা অবস্থান করে, বাংলাদেশের সত্ত্বায় যারা বিশ্বাস করে, তাদের সবাইকে বাংলাদেশি বলে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন।
চট্টগ্রাম সমিতির আজীবন সদস্য আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ আব্দুল মোমেন চৌধুরী বলেন, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের পটভূমিতে আইনের সুশাসন, বহুদলীয় গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার, সাম্য প্রতিষ্ঠায় ছিলেন আন্তরিক। তার প্রমাণ বিলুপ্ত আওয়ামী বাকশালকে পুনরায় রাজনীতির সুযোগ দেওয়া।
চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকার আহ্বায়ক সাবেক ছাত্রনেতা এম এ হাশেম রাজু বলেন, চট্টগ্রাম সমিতির ১১৫ বছরের ইতিহাসের এই প্রথম সমিতির উদ্যোগে স্বাধীনতার ঘোষক বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎবার্ষিকী উদযাপন করা হলো।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক কামরুজ্জামান বাবলু, কবি মাহমুদুল হাসান নিজামী, ডা. সেলিনা আক্তার, হেফাজতে ইসলামী নেতা মাওলানা জসিম উদ্দিন, ড. নুরুল আলম, ড. শামছুল হক, সমিতির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মুসা খান, যুগ্ম আহ্বায়ক গুলতাজ বেগম, অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন, মো. নাছির উদ্দিন, মো. ইকবাল হোসেন, সমন্বয়ক মোহাম্মদ মুবিনুল ইসলাম, যুগ্ম সচিব মনজুর মোর্শেদ মামুন, কে এম আক্কাস, সদস্য শাহজাহান মন্টু, ইঞ্জি. কে এম ইমতিয়াজ, মো. ইসমাঈল, এস এম ফরিদ, আব্দুল আউয়াল জাহেদ, হাজী আব্দুল গণি, মোস্তফা আল ইহযায প্রমুখ।