উমর (রা.)-এর নেতৃত্বের ৪ অনন্য গুণ
Published: 1st, June 2025 GMT
ইসলামের ইতিহাসে উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) এমন এক নাম, যিনি নেতৃত্বের এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত। তিনি ছিলেন মুমিনদের আমির (আমিরুল মুমিনিন)। তিনি দ্বিতীয় খলিফা হিসেবে ইসলামি রাষ্ট্রকে শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করেছিলেন। যখন আবু বকর (রা.) তাঁর মৃত্যুশয্যায় খলিফা নির্বাচনের জন্য পরামর্শ চান, তিনি উমর (রা.)-কে বেছে নেন। কেন এই পছন্দ? কারণ, হজরত উমর ছিলেন রাসুল (সা.
১. শক্তিমত্তা: সত্যের পথে অবিচলতা
উমর (রা.) ছিলেন অবিচল চরিত্রের অধিকারী। তিনি সত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কখনো আপস করতেন না। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে কঠোরভাবে আল্লাহর দ্বীন মেনে চলেন উমর’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৫৮)।
আবু বকর (রা.) তাঁর মৃত্যুশয্যায় খলিফা হিসেবে উমর (রা.)-কে বেছে নেন। কেন এই পছন্দ? কারণ, তিনি ছিলেন রাসুল (সা.)-এর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী, তাঁর শ্বশুর এবং অসাধারণ নেতৃত্বের গুণে সমৃদ্ধ।ইসলাম গ্রহণ করার পর তিনি মক্কার কাফিরদের ভয়ে লুকিয়ে থাকেননি। তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন, ‘আমি মুসলিম হয়েছি।’ এমনকি হিজরতের সময়ও তিনি গোপনে মদিনায় যাননি। তিনি মক্কার নেতাদের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমি মদিনায় যাচ্ছি।’ তাঁর এই শারীরিক ও মানসিক শক্তি মক্কার নেতাদের মনে ভয় জাগিয়েছিল।
রাসুল (সা.) তাঁর ইমানের শক্তি প্রশংসা করে বলেছেন, ‘খাত্তাবের পুত্র, যে পথে তুমি যাও, শয়তান সে পথ ছেড়ে অন্য পথে চলে যায়’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৬৮৩)। এই শক্তি একজন নেতার জন্য অপরিহার্য। উমর (রা.) প্রমাণ করেছেন, একজন নেতা ভয় বা বাধাকে পরোয়া না করে সঠিক পথে অটল থাকেন।
২. দায়িত্ববোধ: জনগণের প্রতি নিবেদন
তাঁর দায়িত্ববোধ ছিল অতুলনীয়। একদিন আলী (রা.) তাঁকে দ্রুত কোথাও যেতে দেখে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কোথায় যাচ্ছেন?’ তিনি উত্তর দেন, ‘দানের একটি উট পালিয়ে গেছে, আমি সেটা ধরতে যাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি ফোরাত নদীর তীরে একটি ছাগলও হারায়, কিয়ামতের দিন উমরকে তার জন্য জবাবদিহি করতে হবে’ (ইবনে জাওযি, মানাকিবে উমর)।
রাসুল (সা.) তাঁর ইমানের শক্তি প্রশংসা করে বলেছেন, ‘খাত্তাবের পুত্র, যে পথে তুমি যাও, শয়তান সে পথ ছেড়ে অন্য পথে চলে যায়।’(সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৬৮৩)তিনি মদিনার রাস্তায় ছদ্মবেশে ঘুরে জনগণের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতেন। তাঁর শাসনকালে তিনি একটি উন্মুক্ত নীতি প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে যে কেউ তাঁর কাছে অভিযোগ নিয়ে আসতে পারত। তিনি প্রায়ই অধীন রাজ্যগুলো পরিদর্শন করতেন, যাতে জনগণের সমস্যা সরাসরি জানতে পারেন। এই দায়িত্ববোধ তাঁকে জনগণের কাছে প্রিয় করে তুলেছিল।
আরও পড়ুনহজরত উমর (রা.) কন্যা হাফসা (রা.)–র জীবনী১৬ মার্চ ২০২৫৩. জ্ঞান: নেতৃত্বের ভিত্তি
তিনি ছিলেন গভীর জ্ঞানের অধিকারী। নবীজি একটি স্বপ্নের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘স্বপ্নে দেখলাম, আমি দুধ পান করছি, এতটাই তৃপ্ত হলাম যে দুধ আমার নখ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। তারপর আমি সেই দুধ উমরকে দিলাম।’ সাহাবিরা জিজ্ঞেস করেন, ‘এর ব্যাখ্যা কী?’ নবীজি বলেন, ‘জ্ঞান’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৬৮১)।
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, উমর (রা.)-এর জ্ঞান ছিল তাঁর নেতৃত্বের মূল ভিত্তি। তিনি শুধু ধর্মীয় জ্ঞানেই পারদর্শী ছিলেন না, রাষ্ট্র পরিচালনা, বিচারব্যবস্থা এবং সমাজকল্যাণেও তাঁর জ্ঞানের প্রয়োগ ছিল অতুলনীয়। তিনি ইসলামি শাসনব্যবস্থায় বহু প্রশাসনিক সংস্কার প্রবর্তন করেন, যা আজও অনুকরণীয়।
রাসুল (সা.) তাঁর জন্য দোয়া করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ, আবু জাহেল বা উমরের মাধ্যমে ইসলামকে সম্মান দান করো।’ উমর (রা.) ইসলাম গ্রহণ করে সেই দোয়া পূরণ করেছেন।৪. প্রতিভা ও দুর্বলতা বোঝার ক্ষমতা
উমর (রা.) মানুষের প্রকৃতি বোঝার অসাধারণ ক্ষমতা রাখতেন। তিনি তাঁর শাসনকালে বিভিন্ন সেনাপতি ও গভর্নর নিয়োগের সময় এই গুণ প্রয়োগ করতেন। তিনি মদিনায় অভিজ্ঞ সাহাবিদের উপদেষ্টা হিসেবে রাখতেন, কিন্তু তরুণ মুসলিমদের সঙ্গেও পরামর্শ করতেন। তিনি বলতেন, ‘তরুণদের মন তীক্ষ্ণ, তারা নতুন ধারণা দিতে পারে।’ এমনকি তিনি শত্রুদের সঙ্গেও পরামর্শ করতেন, যদি তা জনগণের কল্যাণে হতো। এই গুণই উমরকে (রা.) একজন ব্যতিক্রমী নেতা করেছে।
তিনি তাঁর অধীনস্থদের দুর্বলতাও বুঝতেন এবং তাঁদের সংশোধনের জন্য সঠিক পদক্ষেপ নিতেন। এই ক্ষমতা তাঁর শাসনকে ন্যায়পরায়ণ ও সুষ্ঠু করেছিল।
রাসুল (সা.) তাঁর জন্য দোয়া করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ, আবু জাহেল বা উমরের মাধ্যমে ইসলামকে সম্মান দান করো।’ উমর (রা.) ইসলাম গ্রহণ করে সেই দোয়া পূরণ করেছেন। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি তোমাদের মধ্য থেকে নেতা নিযুক্ত করব এবং তাদের ওপরে ওঠাব যারা আমার পথে সংগ্রাম করে’ (সুরা সাজদা: ২৪)।
যাঁরা ভবিষ্যৎ নেতা হতে চান, তাঁদের জন্য উমরের (রা.) গুণাবলি একটি আদর্শ। তাঁরা যদি ধর্মীয় ও আধুনিক জ্ঞানে নিজেদের সমৃদ্ধ করে, তবে তাঁরা দেশের জন্য কার্যকর নেতৃত্ব দিতে পারবে।
সূত্র: অ্যাবাউট ইসলাম ডটনেট
আরও পড়ুনকাবাঘরের চাবি কী দিয়ে তৈরি, কার কাছে থাকে১৫ মে ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ য় ত বব ধ জনগণ র আল ল হ র জন য কর ছ ল ক ষমত করত ন ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের পর জন্ম হওয়া দলগুলোই শুধু নির্বাচন চায় না: আমীর খসরু
চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ৫ আগস্টের পর যেসব দলের জন্ম হয়েছে, শুধু সেসব দলই নির্বাচন চায় না।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় আমীর খসরু এ কথা বলেন। আজ শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জিয়া পরিষদ নামের একটি সংগঠন এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের বার্তা জনগণ আর কীভাবে দেবে, এমন প্রশ্ন রেখে আমীর খসরু বলেন, নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে অবশ্যই হতে হবে। দেশের ভেতর ও বাইরের বিনিয়োগকারীরা জিজ্ঞাসা করে, নির্বাচন কবে? অন্যান্য যারা আছে, তারাও সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। সবাই বলছে নির্বাচন কবে?
শুধু একটি নয়, কমপক্ষে ৫২টি দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায় দাবি করে আমীর খসরু বলেন, ‘যদি কেউ বলে, শুধু একটি দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়, এটা কি সত্য কথা? তাহলে এ ধরনের একটা মন্তব্য কি আমাদের (বিএনপির) উদ্দেশে করা হয়েছে? এটা কী অর্থ বহন করে?’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে চায় না কারা, হাতে গোনা চার-পাঁচটি দল। তাদের সমর্থনের ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই না, এটা জনগণ বুঝে নেবে। এরা এখনো নিবন্ধিত দলও নয়। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে এদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
গণতন্ত্রের উত্তরণের পথে বাধা তৈরিতে ওয়ান-ইলেভেনের পরও কিংস পার্টি নামক এ ধরনের দল সৃষ্টি করা হয়েছিল মন্তব্য করে আমীর খসরু বলেন, ‘তাহলে আমরা কি আবার ওই লাইনে চলছি নাকি? ৫ আগস্টের পর যেসব দলের জন্ম হয়েছে, শুধু সেসব দলই নির্বাচন চায় না।’
অন্তর্বর্তী সরকার ও জনগণের মধ্যে কোনো যোগসূত্র নেই মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, এ জন্য যার যা ইচ্ছা, সে করছে। আরও করবে, আরও ক্ষতি হবে। এটা চলতে পারে না।
আমীর খসরু বলেন, এখান থেকে মুক্ত হওয়ার পথ একটাই—একটা নির্বাচিত সংসদ, যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে, জবাবদিহি থাকবে। এ সময় শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্রের উত্তরণ ও ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ সুগম করার কথা এক সুরে এ দাবি অন্তর্বর্তী সরকারকে জানিয়ে দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এই নেতা বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে অনেক বড় পরিবর্তন এসেছে। এটা যে রাজনীতিবিদ, যে রাজনৈতিক দল অনুধাবন করতে পারবে না, বাংলাদেশে তাদের ভবিষ্যৎ নেই।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ফ্যাসিস্ট আমলের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, এমন অনুরোধ জানিয়ে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আমীর খসরু বলেন, বিরোধী দলে থাকার সময় নেতা-কর্মীরা যেভাবে একটা স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিতাড়িত করে নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে যুদ্ধ করেছেন, সেটা যেন বিএনপি ক্ষমতায় গেলেও সমুন্নত রাখেন।
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রতিটি রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে জনগণকে সম্পৃক্ত করেছেন উল্লেখ করে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আমীর খসরু আরও বলেন, দেশের মানুষ, নতুন প্রজন্ম ভবিষ্যৎ দেখতে চায়। তাদের স্বপ্ন দেখাতে হবে, তা বাস্তবায়ন করে দেখাতে হবে। জনগণের আস্থা অর্জন করত হবে।
জিয়া পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার।