ইসলামের ইতিহাসে উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) এমন এক নাম, যিনি নেতৃত্বের এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত। তিনি ছিলেন মুমিনদের আমির (আমিরুল মুমিনিন)। তিনি দ্বিতীয় খলিফা হিসেবে ইসলামি রাষ্ট্রকে শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করেছিলেন। যখন আবু বকর (রা.) তাঁর মৃত্যুশয্যায় খলিফা নির্বাচনের জন্য পরামর্শ চান, তিনি উমর (রা.)-কে বেছে নেন। কেন এই পছন্দ? কারণ, হজরত উমর ছিলেন রাসুল (সা.

)-এর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী, তাঁর শ্বশুর এবং অসাধারণ নেতৃত্বের গুণে সমৃদ্ধ। শক্তিমত্তা, দায়িত্ববোধ, জ্ঞান এবং প্রতিভা ও দুর্বলতা বোঝার ক্ষমতা—উমর (রা.)-এর এই চারটি নেতৃত্বগুণ কীভাবে তাঁকে ইসলামের একজন শ্রেষ্ঠ নেতা করেছে, আসুন, সেই গল্প শুনি।

১. শক্তিমত্তা: সত্যের পথে অবিচলতা

উমর (রা.) ছিলেন অবিচল চরিত্রের অধিকারী। তিনি সত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কখনো আপস করতেন না। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে কঠোরভাবে আল্লাহর দ্বীন মেনে চলেন উমর’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৫৮)।

আবু বকর (রা.) তাঁর মৃত্যুশয্যায় খলিফা হিসেবে উমর (রা.)-কে বেছে নেন। কেন এই পছন্দ? কারণ, তিনি ছিলেন রাসুল (সা.)-এর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী, তাঁর শ্বশুর এবং অসাধারণ নেতৃত্বের গুণে সমৃদ্ধ।

ইসলাম গ্রহণ করার পর তিনি মক্কার কাফিরদের ভয়ে লুকিয়ে থাকেননি। তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন, ‘আমি মুসলিম হয়েছি।’ এমনকি হিজরতের সময়ও তিনি গোপনে মদিনায় যাননি। তিনি মক্কার নেতাদের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমি মদিনায় যাচ্ছি।’ তাঁর এই শারীরিক ও মানসিক শক্তি মক্কার নেতাদের মনে ভয় জাগিয়েছিল।

রাসুল (সা.) তাঁর ইমানের শক্তি প্রশংসা করে বলেছেন, ‘খাত্তাবের পুত্র, যে পথে তুমি যাও, শয়তান সে পথ ছেড়ে অন্য পথে চলে যায়’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৬৮৩)। এই শক্তি একজন নেতার জন্য অপরিহার্য। উমর (রা.) প্রমাণ করেছেন, একজন নেতা ভয় বা বাধাকে পরোয়া না করে সঠিক পথে অটল থাকেন।

২. দায়িত্ববোধ: জনগণের প্রতি নিবেদন

তাঁর দায়িত্ববোধ ছিল অতুলনীয়। একদিন আলী (রা.) তাঁকে দ্রুত কোথাও যেতে দেখে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কোথায় যাচ্ছেন?’ তিনি উত্তর দেন, ‘দানের একটি উট পালিয়ে গেছে, আমি সেটা ধরতে যাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি ফোরাত নদীর তীরে একটি ছাগলও হারায়, কিয়ামতের দিন উমরকে তার জন্য জবাবদিহি করতে হবে’ (ইবনে জাওযি, মানাকিবে উমর)।

রাসুল (সা.) তাঁর ইমানের শক্তি প্রশংসা করে বলেছেন, ‘খাত্তাবের পুত্র, যে পথে তুমি যাও, শয়তান সে পথ ছেড়ে অন্য পথে চলে যায়।’(সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৬৮৩)

তিনি মদিনার রাস্তায় ছদ্মবেশে ঘুরে জনগণের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতেন। তাঁর শাসনকালে তিনি একটি উন্মুক্ত নীতি প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে যে কেউ তাঁর কাছে অভিযোগ নিয়ে আসতে পারত। তিনি প্রায়ই অধীন রাজ্যগুলো পরিদর্শন করতেন, যাতে জনগণের সমস্যা সরাসরি জানতে পারেন। এই দায়িত্ববোধ তাঁকে জনগণের কাছে প্রিয় করে তুলেছিল।

আরও পড়ুনহজরত উমর (রা.) কন্যা হাফসা (রা.)–র জীবনী১৬ মার্চ ২০২৫

৩. জ্ঞান: নেতৃত্বের ভিত্তি

তিনি ছিলেন গভীর জ্ঞানের অধিকারী। নবীজি একটি স্বপ্নের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘স্বপ্নে দেখলাম, আমি দুধ পান করছি, এতটাই তৃপ্ত হলাম যে দুধ আমার নখ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। তারপর আমি সেই দুধ উমরকে দিলাম।’ সাহাবিরা জিজ্ঞেস করেন, ‘এর ব্যাখ্যা কী?’ নবীজি বলেন, ‘জ্ঞান’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৬৮১)।

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, উমর (রা.)-এর জ্ঞান ছিল তাঁর নেতৃত্বের মূল ভিত্তি। তিনি শুধু ধর্মীয় জ্ঞানেই পারদর্শী ছিলেন না, রাষ্ট্র পরিচালনা, বিচারব্যবস্থা এবং সমাজকল্যাণেও তাঁর জ্ঞানের প্রয়োগ ছিল অতুলনীয়। তিনি ইসলামি শাসনব্যবস্থায় বহু প্রশাসনিক সংস্কার প্রবর্তন করেন, যা আজও অনুকরণীয়।

রাসুল (সা.) তাঁর জন্য দোয়া করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ, আবু জাহেল বা উমরের মাধ্যমে ইসলামকে সম্মান দান করো।’ উমর (রা.) ইসলাম গ্রহণ করে সেই দোয়া পূরণ করেছেন।

৪. প্রতিভা ও দুর্বলতা বোঝার ক্ষমতা

উমর (রা.) মানুষের প্রকৃতি বোঝার অসাধারণ ক্ষমতা রাখতেন। তিনি তাঁর শাসনকালে বিভিন্ন সেনাপতি ও গভর্নর নিয়োগের সময় এই গুণ প্রয়োগ করতেন। তিনি মদিনায় অভিজ্ঞ সাহাবিদের উপদেষ্টা হিসেবে রাখতেন, কিন্তু তরুণ মুসলিমদের সঙ্গেও পরামর্শ করতেন। তিনি বলতেন, ‘তরুণদের মন তীক্ষ্ণ, তারা নতুন ধারণা দিতে পারে।’ এমনকি তিনি শত্রুদের সঙ্গেও পরামর্শ করতেন, যদি তা জনগণের কল্যাণে হতো। এই গুণই উমরকে (রা.) একজন ব্যতিক্রমী নেতা করেছে।

তিনি তাঁর অধীনস্থদের দুর্বলতাও বুঝতেন এবং তাঁদের সংশোধনের জন্য সঠিক পদক্ষেপ নিতেন। এই ক্ষমতা তাঁর শাসনকে ন্যায়পরায়ণ ও সুষ্ঠু করেছিল।

রাসুল (সা.) তাঁর জন্য দোয়া করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ, আবু জাহেল বা উমরের মাধ্যমে ইসলামকে সম্মান দান করো।’ উমর (রা.) ইসলাম গ্রহণ করে সেই দোয়া পূরণ করেছেন। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি তোমাদের মধ্য থেকে নেতা নিযুক্ত করব এবং তাদের ওপরে ওঠাব যারা আমার পথে সংগ্রাম করে’ (সুরা সাজদা: ২৪)।

যাঁরা ভবিষ্যৎ নেতা হতে চান, তাঁদের জন্য উমরের (রা.) গুণাবলি একটি আদর্শ। তাঁরা যদি ধর্মীয় ও আধুনিক জ্ঞানে নিজেদের সমৃদ্ধ করে, তবে তাঁরা দেশের জন্য কার্যকর নেতৃত্ব দিতে পারবে।

সূত্র: অ্যাবাউট ইসলাম ডটনেট

আরও পড়ুনকাবাঘরের চাবি কী দিয়ে তৈরি, কার কাছে থাকে১৫ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ য় ত বব ধ জনগণ র আল ল হ র জন য কর ছ ল ক ষমত করত ন ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি নেতাকর্মীদের জনবান্ধব হতে হবে : সাখাওয়াত

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, “বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীকে জনবান্ধব হতে হবে, জনগণের স্বার্থেই কাজ করতে হবে। জনগণের পাশে থেকে তাদের আস্থা অর্জন করতে হবে, তাহলেই আগামী দিনে আমাদের বিজয় নিশ্চিত হবে।”

বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেল ৪টায় কলাগাছিয়া ইউনিয়নের আলতাফ কমিউনিটি সেন্টারে ইউনিয়ন বিএনপির প্রাথমিক সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য ফরম বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, “শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নবজাগরণের সূচনা করেছিলেন। তিনি দেশকে একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে রূপান্তরের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। আজ তার গড়া দল, যার রক্ত তার শরীরের সেই তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি দেশের সবচেয়ে সংগঠিত ও শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। এই দলে থেকে আমরা গর্বিত।”

সাখাওয়াত হোসেন খান আরও বলেন, “গত ১৫ বছর ধরে বিএনপি নেতাকর্মীরা মামলা-হামলা, জেল-জুলুম, খুন-গুমের মতো কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে থেকেও দলের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। বিএনপি, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতি আস্থা রেখেই আমরা বিএনপির ছায়াতলে অবিচল থেকেছি।”

তিনি আরও জানান, “বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আজকের বৈঠকে তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন— বিএনপির কেউ যেন জনস্বার্থবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে যুক্ত না হয়। আমাদের বিরুদ্ধে কেউ বাজে কথা বললে পাল্টা জবাব না দিয়ে ভালো কাজের মাধ্যমে জবাব দিতে হবে। আমরা ভোট চাইবো জনগণের কাছে, তাই আমাদের কাজের মাধ্যমেই জনগণকে সন্তুষ্ট করতে হবে।”

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “যদি কোনো বিএনপি নেতাকর্মী দলের নাম ব্যবহার করে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, জমি দখল বা মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে তার কোনো স্থান বিএনপিতে থাকবে না।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা রাজনীতি করি জনগণের কল্যাণে, তাদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার জন্য। সেলিম ওসমান, শামীম ওসমান ও মেয়র আইভী জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

আজ তাদের অবস্থা দেশবাসী দেখছে। তাদের থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে, যেন আমরা একই পথে না হাঁটি। দলের নির্দেশনাকেই আমাদের পথনির্দেশ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।”

কলাগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহাদুল্লাহ মুকুলের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু, বিশেষ অতিথি নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এড. জাকির হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক এড. সরকার হুমায়ূন কবির, যুগ্ম আহ্বায়ক ফতেহ মোহাম্মদ রেজা রিপন, বন্দর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাজী নুরউদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির সভাপতি মাসুদ রানা, বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ, সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ লিটন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হুমায়ূন কবির, বন্দর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মহি উদ্দিন শিশির, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি এড. মতিউর রহমান মতিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফরিদ হোসেন।

এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন, বন্দর থানা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নুর মোহাম্মদ পনেজ, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি হুমায়ূন কবির, সহ- সভাপতি দিদার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দ্বীন ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক সজিব খন্দকার, বন্দর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সোহেল প্রধানসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভবিষ্যতে কেউ স্বৈরাচার হলে পরিণতি শেখ হাসিনার মতো হবে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
  • প্রতিনিধিত্ব করার ‘প্রতীকহীন’ সুযোগ 
  • ১০ হাজার বছর আগের এক নারীর প্রতিকৃতি বানালেন গবেষকেরা
  • সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে দেশে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিতে পারে: তারেক রহমান
  • বিএনপি নেতাকর্মীদের জনবান্ধব হতে হবে : সাখাওয়াত
  • সরকারের একটি অংশ অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে: তারেক রহমান
  • ট্রাম্পের প্রতি মার্কিন জনগণের সমর্থন ৪০ শতাংশে ঠেকেছে
  • জাতিসংঘে সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশ-পাকিস্তান বৈঠক, ফিলিস্তিন ইস্যুতে উদ্বেগ
  • মনোনয়ন নিয়ে চিন্তা করবেন না, জনগণের পাশে থাকুন : আজাদ 
  • নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাথে মিজান খন্দকারের মতবিনিময়