সীতাকুণ্ডে ভারী বৃষ্টিতে ডুবেছে ৭ গ্রামের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি
Published: 1st, June 2025 GMT
ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের পাঁচটি ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম। এসব গ্রামের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমির বড় অংশই এখন পানির নিচে। ঘরে পানি ওঠায় অনেক পরিবার চুলা জ্বালাতে পারেনি।
সীতাকুণ্ড আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইমরান প্রথম আলোকে বলেন, আজ রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সীতাকুণ্ডে ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলে অতি ভারী বর্ষণ বলা হয়। আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত এমন বৃষ্টি থাকতে পারে বলে জানান তিনি।
গত তিন দিনের প্রবল বৃষ্টিতে উপজেলার ভাটিয়ারি ইউনিয়নের জঙ্গল ভাটিয়ারি, বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের লালানগর, টেরিয়াইল, সৈয়দপুর ইউনিয়নের বগাচতর, কুমিরা ইউনিয়নের আলেকদিয়া, উত্তর মছজিদ্দা ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ঘোড়ামরা গ্রামের অনেক এলাকা তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে বারৈয়ারঢালা, সৈয়দপুর ও মুরাদপুর ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হেক্টর সবজিখেত পানির নিচে তলিয়ে যায়। এ ছাড়া কুমিরা ও সোনাইছড়ির যেসব এলাকায় বেড়িবাঁধ, সেখানে প্রায় ৬ হেক্টর জমিতে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়েছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা মো.
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের উত্তর মছজিদ্দা গ্রামের ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক লাগোয়া এলাকায় প্রায় কোমরসমান পানি। এই এলাকায় অনন্ত শ খানেক বসতঘর ডুবে গেছে। অনেক পরিবারেই রান্না হয়নি। ডুবে যাওয়া সড়কে অনেককে জাল ফেলে মাছ ধরতেও দেখা গেছে। এই এলাকায় প্রায় ১০০টি বসতঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে, সড়ক, বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। উপজেলার দত্তপাড়া এলাকায় আজ দুপুরে তোলাউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নালিতাবাড়ীতে বন্য হাতির আক্রমণে ৩০ বসতবাড়ি ভাঙচুর, ধান-চাল খেয়ে সাবাড়
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী বাতকুচি টিলার ঢালে গতকাল শুক্রবার রাতে ৩০টি বাড়িতে হানা দিয়েছে ৩৫ থেকে ৪০টি বন্য হাতির পাল। এ সময় ঘর ভেঙে ঘরে থাকা ধান-চাল খেয়ে আসবাব তছনছ করেছে হাতির পালটি।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে একই এলাকায় হাতির আক্রমণে সুরতন নেছা (৬০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া পাশের কায়াটাবাড়ি এলাকায় বন বিভাগের বিট কার্যালয়সহ ছয়টি ঘর ভেঙে তছনছ করে হাতির দল।
বন বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার দাওধারা-কাটাবাড়ি পাহাড়ের টিলায় এক সপ্তাহ ধরে ৩৫ থেকে ৪০টি বন্য হাতি দল বেঁধে অবস্থান করছে। গত কয়েক দিনে হাতির আক্রমণে বাতকুচি বিট কার্যালয়, দাওধারা-কাটাবাড়ি ছয়টি বসতঘরে হামলার পাশাপাশি গত বুধবার রাতে মধুটিলা ইকো পার্কের ক্যানটিনে হামলার ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার রাত তিনটার দিকে বৃষ্টির মধ্যে হাতির পালটি বাতকুচি নামাপাড়া এলাকায় সুরতন নেছার ঘরে হানা দেয়। এ সময় হাতির আক্রমণে তাঁর মৃত্যু হয়। এর পর থেকে হাতির পালটি বাতকুচি পাহাড়ের টিলায় অবস্থান করছে।
আরও পড়ুনগভীর রাতে লোকালয়ে ফিরে এল হাতির পাল, বাড়িতে হামলায় নারীর মৃত্যু৩০ মে ২০২৫গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে হাতির পালটি জঙ্গল ছেড়ে বাতকুচি এলাকায় নেমে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু বন বিভাগের কর্মকর্তা, এলাকাবাসী ও এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যরা রাত ১১টা পর্যন্ত মশাল জ্বালিয়ে হইহুল্লোড় করে হাতির দলকে বাতকুচি জঙ্গলের দিকে ফিরিয়ে দেয়। পরে হাতির দলটি বাতকুচি নামাপাড়া এলাকায় হানা দেয়। এ সময় হাতির আক্রমণের ভয়ে পরিবারের লোকজন নিরাপদ দূরত্বে সরে পড়েন। এ সময় ৩০টি বসতঘর ভেঙে ঘরে থাকা ধান-চাল খেয়ে আসবাব তছনছ করে দেয়। শেষ রাতে দলটি বাতকুচি জঙ্গলে ফিরে যায়।
আরও পড়ুননালিতাবাড়ী সীমান্তে ৬ বসতঘর ভেঙে ধান-চাল খেয়ে গেল বন্য হাতির দল২৭ মে ২০২৫ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক হোসেন আলী (৪৫) বলেন, ২৩টি পরিবারের ৩০টির বেশি বসতঘর ও আসবাব ভেঙে তছনছ করেছে বন্য হাতির দল। ঘরে থাকা ধান-চাল খেয়ে সাবাড় করেছে। এখন ধান-চাল দূরের কথা একমুঠো শর্ষেও ঘরে নেই। হাতির আক্রমণে পরিবারগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুনশেরপুরে বন বিভাগের কার্যালয়ে বন্য হাতির হানা, আসবাব তছনছ২৭ মে ২০২৫বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল মশাল জ্বালিয়ে হাতির দলকে বাতকুচি জঙ্গলের দিকে ফেরাতে তাঁরা রাত ১১টা পর্যন্ত চেষ্টা করেন। পরে রাত ১২টার দিকে হাতির দল বাতকুচি নামাপাড়া এলাকায় বসতঘর ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ পেতে আবেদন করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, হাতির দলটি এখন বাতকুচি এলাকার জঙ্গলে অবস্থান করছে। এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুনহাতির আক্রমণে মৃত্যু: উপার্জনক্ষম দুজনকে হারিয়ে দিশেহারা দুটি পরিবার২৪ মে ২০২৫