দুই পাশের সংযোগ সড়ক না থাকায় বরগুনার আমতলী উপজেলায় একটি সেতু কাজে আসছে না। দুর্ভোগও শেষ হচ্ছে না ২০ গ্রামের ৪০ হাজার মানুষের। বেশি ভোগান্তি পোহাচ্ছেন বয়স্ক মানুষ ও শিক্ষার্থীরা। বাঁশের চওড়া মই বেয়ে ঝুঁকি নিয়ে সেতুটি পারাপার হতে হচ্ছে তাদের। 
সংশ্লিষ্টরা জানান, সেতুর উচ্চতা অনুযায়ী সংযোগ সড়ক করতে হলে একটি সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। তাই সড়কটি ঠিক রাখার জন্য আন্ডারপাস করা হবে। এ জন্য খরচও বাড়বে। নতুন করে নকশা ও বাজেট করে প্রকল্প পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে। এখনও বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। 
জানতে চাইলে এলজিইডির প্রকৌশলী মো.

ইদ্রিস জানান, সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রক্রিয়া চলমান। প্রকল্প পাস হলেই দরপত্র আহ্বান করে দ্রুত সংযোগ সড়কের কাজ ধরা হবে। 
সরেজমিন দেখা গেছে, সেতুটির পশ্চিম পারে গাছের তৈরি মই বানিয়ে কোনো রকমে যাতায়াতের উপযোগী করা হয়েছে। এই মই বেয়ে বয়স্ক ও শিশুরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। বৃষ্টিতে তাদের দুর্ভোগের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।  
কথা হয় পূর্ব খেকুয়ানী গ্রামের ষাটোর্ধ্ব 
আলেয়া বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ডাক্তার দেহাইতে আমতলী গেছিলাম। এই ব্রিজটা পাড়াইতে মোর ব্যামালা কষ্ট অইছে। ওঠতে আর নামতে ঠ্যাং (পা) কাঁপে।
বাইনবুনিয়া গ্রামের তালেব আলী জানান, আমড়াগাছিয়া বাজারে কাম আছিল। হেই লইগ্যা এইহান দিয়া আইছি। ব্রিজে রাস্তা নাই; ওঠতে হোয়স (শ্বাস) গরম অইয়া যায়।
উপজেলার গুলিশাখালী, কুকুয়া ও চাওড়া ইউনিয়নের সংযোগস্থল আমড়াগাছিয়া বাজার। এ বাজারের পশ্চিম পাশের গুলিশাখালী খালের ওপর ৬৬ মিটার দৈর্ঘ্য ৬.৭৭ মিটার প্রস্থের গার্ডার সেতু নির্মাণের জন্য ২০২৩ সালে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ৬ কোটি ২২ লাখ ৫৮ হাজার ৩২৩ টাকার কাজটি পায় বরিশালের মেসার্স কহিনুর এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ত্রিপুরা জেভি নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ১৯ মে কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২৪ সালের জুন মাসে মূল সেতুর কাজ শেষ হলেও বিপত্তি বাধে সংযোগ সড়ক নির্মাণ নিয়ে। সেতুর পশ্চিম পাশের ঢালের ৫ ফুটের মধ্যে রয়েছে পূর্ব খেকুয়ানী গুচ্ছগ্রামের চলাচলের কার্পেটিং সড়ক। সেতুর নকশা ও উচ্চতা অনুযায়ী সংযোগ সড়ক নির্মাণ করলে সড়কটি বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে সংযোগ সড়কের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। 
এই সেতু পার হয়ে গুলিশাখালী ইউনিয়নের পূর্ব খেকুয়ানী, গুলিশাখালী, ডালাচারা, বাইবুনিয়া, কলাগাছিয়া গ্রামের শত শত মানুষ আমতলী সদর, বরিশাল, ঢাকাসহ সারাদেশে চলাচল করে। চাওড়া ও কুকুয়া ইউনিয়নের মানুষও এই সেতু পার হয়ে গুলিশাখালী ইউনিয়নে যাতায়াত করেন। 
ঠিকাদার কাওছার মিয়া বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মূল সেতু নির্মাণের কাজ শেষ করেছি। সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য আলাদা দরপত্র হবে। যারা কাজ পাবে তারা করবে। তিনি আরও বলেন, নকশা বদল হওয়ায় কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই। 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স য গ সড়ক ন র ম ণ

এছাড়াও পড়ুন:

কার্যাদেশ নওগাঁর, কাজ হচ্ছে রাজশাহীতে

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) এক প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নওগাঁর একটি খাল সংস্কারের কাজ বাস্তবায়ন না করে একই কার্যাদেশে একই ঠিকাদারকে দিয়ে রাজশাহীতে একটি খাল সংস্কারের কাজ করাচ্ছেন।

নওগাঁর খালটির দৈর্ঘ্য ছিল ৭০০ মিটার। রাজশাহীর খালের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৬০০ মিটার। তবে বরাদ্দ একই। নওগাঁর কার্যাদেশে রাজশাহীতে কাজ করানো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিএমডিএ সূত্র জানায়, কাজটি করাচ্ছেন বরেন্দ্র এলাকায় খালে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) পরিচালক নাজিরুল ইসলাম। কাজটি করছে ঠাকুরগাঁওয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরআর এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী রুহুল আমিন ঠাকুরগাঁও পৌর বিএনপির সহসভাপতি।

প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, গত ২০ জানুয়ারি পিডি নাজিরুল ইসলাম নওগাঁর মহাদেবপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় খাল সংস্কার ও পাইপলাইন স্থাপনের কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করেন। দরপত্র জমার শেষ তারিখ ছিল ৪ ফেব্রুয়ারি। এরপর ১৭ এপ্রিল আরআর এন্টারপ্রাইজকে মহাদেবপুর উপজেলার বুজরুক কান্তিপুর খাড়ি সংস্কারের কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ব্যয় ধরা হয় ২১ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।

প্রকল্প এলাকার লোকজন ও বিএমডিএ সূত্র জানায়, মহাদেবপুরের খাড়িতে পানি থাকায় কাজটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু কাজ বাতিল না করে বা নতুন কোনো দরপত্র আহ্বান না করে একই প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে কাজ করতে দেওয়া হয়। বর্তমানে গোদাগাড়ীর ঘনশ্যামপুর থেকে হঠাৎপাড়া পর্যন্ত খাল খননের কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। ইতিমধ্যে প্রায় ৬০০ মিটার খাল খননের কাজ শেষ হয়েছে। সম্প্রতি ঘনশ্যামপুর সেতুর কাছে দুটি খননযন্ত্র দিয়ে কাজ চলতে দেখা যায়।

বিএমডিএর একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, মহাদেবপুরে ৭০০ মিটার খাল সংস্কারের জন্য ২১ লাখ ৯৯ হাজার টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হলেও সেই কাজ বাস্তবায়ন হয়নি। সেই একই অর্থে এখন গোদাগাড়ীতে ১ হাজার ৬০০ মিটার খাল সংস্কারের কাজ করানো হচ্ছে। এতে প্রমাণ হয়, প্রথম কাজের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় ধরা হয়েছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিডি নাজিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাইট চেঞ্জ করলে কোনো দিনই অনিয়ম হয় না। লোকজন না জেনে শুধু পিছে লাগে।’ নওগাঁর ৭০০ মিটার খাল খননের বরাদ্দে কীভাবে রাজশাহীর ১ হাজার ৬০০ মিটার খাল সংস্কার করা হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওখানকার খাল যদি প্রশস্ত বেশি হয়। আর রাজশাহীতে কম হলে হতেই পারে। আলাদা ডিজাইনে কাজ হবে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএমডিএর আরেকজন পিডি বলেন, ‘কার্যাদেশ দেওয়ার পরও যদি কাজ করা সম্ভব না হয়, তাহলে সেটি বাতিল বা স্থগিত করতে হয়। সেই ঠিকাদারকে খুশি করতে অন্য কোনো স্থানের কাজ দেওয়া অনিয়ম। কারণ, প্রতিটি কাজের দৈর্ঘ্য, মাটি খননের ধরন, পরিবহন ও শ্রমিক খরচ আলাদা হয়।’

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী রুহুল আমিন বলেন, ‘আমি কীভাবে কাজ পেলাম, সেটা বিএমডিএ জানে। তারা কাজ দিয়েছে, আমি করছি। এখন কাজ শেষের দিকে। আর এক কিলোমিটারের মতো বাকি আছে।’

জানতে চাইলে বিএমডিএর ভারপ্রাপ্ত সচিব এনামুল কাদির প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা আমার জানা নেই। যদি কেউ অভিযোগ করেন, তাহলে কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে দেখবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যেখানে মুখ থুবড়ে পড়ে সব উন্নয়নের গল্প
  • ঈদযাত্রায় ভোগান্তি ৮০ মিটারে
  • নির্মাণের দুই মাসেই কেন সীতাকুণ্ডের ফেরিঘাট সড়কের এই হাল
  • চট্টগ্রামে ভূমিধসের শঙ্কায় বায়েজিদ সংযোগ সড়কের এক পাশ বন্ধ
  • কার্যাদেশ নওগাঁর, কাজ হচ্ছে রাজশাহীতে
  • বজ্রপাতে পাঁচ জেলায় নারীসহ নিহত ৫
  • বৃষ্টিতে লামা-সুয়ালক সড়কের ৩ স্থানে ভাঙন, যান চলাচল বন্ধ
  • মেঘনার ভাঙনে হুমকিতে রামগতি-বিবিরহাট সড়ক, আতঙ্কে এলাকাবাসী
  • ভারী বর্ষণে বিকল্প সড়ক ধসে ময়মনসিংহের ৩ উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন