বৃষ্টি ভোগাচ্ছে ঈদযাত্রায়, এসি বাসে ভাড়া গরম
Published: 1st, June 2025 GMT
যাত্রীর চাপ বৃদ্ধির আগেই ঈদযাত্রায় ভোগান্তি হচ্ছে টানা বৃষ্টিতে। উত্তরবঙ্গের প্রবেশ দুয়ার খ্যাত গাজীপুরের চন্দ্রায় প্রায় ছয় কিলোমিটার পথ জুড়ে যানজট হয়েছে। গাড়ির চাপ এবং বৃষ্টিতে সড়কে খানাখন্দ সৃষ্টি হওয়ায় ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে ছিল ধীরগতি। ঈদযাত্রায় বেড়েছে এসি বাসের ভাড়া। কোন কোন পরিবহনে এসি বাসের ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সরকার সাধারণ বাসের ভাড়া নির্ধারণ করলেও, এসি বাসে তা ঠিক করেন মালিকরা।
নন-এসি বাসের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে কৌশলে। এসব বাসে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু ঈদের সময়ে শেষ গন্তব্যের সরকার নির্ধারিত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। যেমন ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের সরকার নির্ধারিত ভাড়া ৩১০ টাকা হলেও, সাধারণ সময়ে ‘আলম এশিয়া’, ‘ইমাম’সহ বিভিন্ন বাসে ২০০ টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু রোববার থেকে নেওয়া হচ্ছে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত। যাত্রী যেখানেই নামুন, ‘ইমাম’ শেষ গন্তব্য হালুয়াটের ভাড়া নিচ্ছে।
একই চিত্র গাবতলী টার্মিনাল এলাকায়। রংপুরগামী এসি বাসের ভাড়া ছিল হাজার টাকা। ঈদে তা এক হাজার ৬০০ টাকাও নেওয়া হয়েছে। একই অবস্থা খুলনা, রাজশাহীর বাসেও। রংপুরের যাত্রী আসাদুজ্জামান মিলন সমকালকে বলেছেন, নন-এসি বাসের ভাড়া ছিল ৫০০ টাকা। কিন্তু টিকিট নেই। এসি বাসে এক হাজার ৬০০ টাকা চাইছে। এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৮০০ টাকা। শ্যামলী এন আর ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভঙ্কর ঘোষ বলেন, এসি বাসের ভাড়ায় সরকারকে ভ্যাট দিতে হয়। বিলাসবহুল বাস, তাই ভাড়াও বেশি। ঈদের সময়ে ফিরতি যাত্রায় বাস খালি ফেরে। তাই খরচ পোষাতে ভাড়া বৃদ্ধি করতে হয়। কিন্ত নন-এসি বাসের সবাড়া বাড়ে নি।
রোববার ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিনেও রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকেও প্রায় সব ট্রেন নির্ধারিত সময়ে যাত্রা করেছে। তিন স্তরের তল্লাশি থাকায় বিনাটিকিটে যাত্রী স্টেশনে প্রবেশ করতে পারছে না, ফলে ভিড় নেই। তবে প্রতি বছরই ঈদের আগে দিন কড়াকড়ি ভেঙে পড়ে। উপচেপড়া ভিড় হয় ট্রেনে।
আগামী ৫ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত টানা ১০ দিন ঈদের ছুটি। ঈদ হবে ৭ জুন। এ হিসেবে ঈদের আগে ছুটি মাত্র দুইদিন, ৫ জুন বৃহস্পতিবার এবং ৬ জুন শুক্রবার। ৪ জুন বুধবার শেষ কর্মদিবস। অধিকাংশ যাত্রী এই দুই দিনে যাত্রা করবেন। ঈদের আগের স্বল্প ছুটি এবং বৃষ্টির কারণে এবারের ঈদযাত্রায় ব্যাপক ভোগান্তির শঙ্কা রয়েছে। রাজধানীমুখী পশুবাহী গাড়ির ভিড়, মহাসড়কের আশেপাশের হাটও হবে ভোগান্তির কারণ।
আগামী ৪ জুন অফিস, আদালত, কলকারখানাসহ প্রায় সব প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে ছুটি হবে। যাত্রী ঢলে যান সঙ্কট এবং শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে ব্যাপক ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঈদয ত র ঈদয ত র য় সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।
গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’
২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।
থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।
জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’