অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেছে। আজ সোমবার দুপুর ৩টায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট পেশ করা শুরু করেন। সংসদ না থাকায় এবারের বাজেট রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হয়েছে।
এবারের অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কিছু পণ্যের শুল্ক-কর বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। এটি দেশের ৫৪তম বাজেট এবং অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট।
বাজেটের শুল্ক-কর প্রস্তাব তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়। ফলে শুল্ককর বাড়লে দাম বেড়ে যেতে পারে। এবারের বাজেট বক্তব্য ঘেটে দেখা যায়, বেশ কিছু পণ্যের ওপর শুল্ককর বাড়ানো হয়েছে।
যেসব দাম বাড়তে পারে
মুঠোফোন
বাজেটে মুঠোফোন উৎপাদন ও সংযোজনে মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমানো হয়েছে। এছাড়াও বাজেটে অব্যাহতির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কমানোয় বাড়তে পারে মুঠোফোনের দাম।
প্লাস্টিকের তৈজসপত্র
থালাবাসনসহ প্লাস্টিকের তৈজসপত্র, গৃহস্থালি সামগ্রী ও সমজাতীয় পণ্যে ভ্যাটের হার দ্বিগুণ, অর্থাৎ ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব তৈজসপত্রে ভ্যাট ছাড় দেওয়া হয়েছে।
ওয়াশিং মেশিন, ব্লেন্ডার
এবারের বাজেটে ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ব্লেন্ডার, জুসার, আয়রন, রাইস কুকার, প্রেসার কুকার ইত্যাদি উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমানো হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
বিদেশি চকলেট
প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু পণ্যের শুল্কায়ন মূল্য বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিদেশি চকলেট। ইউনিটপ্রতি ৪ ডলারের বদলে এখন ১০ ডলার ধরে শুল্কায়ন হবে। এর ফলে আমদানিতে খরচ বাড়বে।
এলপিজি সিলিন্ডার
তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সিলিন্ডারে স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা কিছুটা কমিয়ে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এতে এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বাড়তে পারে।
লিপস্টিক
প্রস্তাবিত বাজেটে ঠোঁট, চোখ ও মুখমণ্ডলে ব্যবহৃত প্রসাধন আমদানিতে শুল্কায়ন মূল্য অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। ফলে এসব পণ্য আমদানি থেকে বাড়তি কর আদায় হবে। দামও বেড়ে যেতে পারে।
ব্লেড
দাঁড়ি কাটার খরচ বাড়বে। কারণ দেশে ব্লেড উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
প্রতিবছর জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করা হলেও এবার সংসদ না থাকায় তা ঘোষণা করা হচ্ছে বেতার-টেলিভিশনের মাধ্যমে। এবারের বাজেটের সম্ভাব্য আকার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। যা গত অর্থ বছরের তুলনায় সাত হাজার কোটি টাকা কম। এর আগে আজ দুপুরে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব জ ট ২০২৫ ২৬ প রস ত ব ত
এছাড়াও পড়ুন:
বাজেটে পুঁজিবাজার উন্নয়নে সহায়ক নীতিমালা রয়েছে: ডিএসই
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে পুঁজিবাজারবান্ধব বলে অভিহিত করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তপক্ষ।
ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, এবারের বাজেটে দেশের পুঁজিবাজার উন্নয়নে সহায়ক নীতিমালা রয়েছে। এসব প্রস্তাব পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ জন্য অর্থ উপদেষ্টাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
ডিএসই পাঠানো প্রাথমিক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় তিনি এই অভিমত তুলে ধরেন।
সোমবার (২ জুন) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেন। এতে তিনি পুঁজিবাজারের জন্য কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারের মধ্যে ব্যবধান বাড়ানো, ব্রোকারহাউজের লেনদেনে উৎস কর ও মার্চেন্ট ব্যাংকের আয়করের হার কমানো।
ডিএসই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২৫-২৬ সালের বাজেটে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করহারের ব্যবধান বৃদ্ধি, মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার হ্রাস এবং লেনদেনের উপর উৎসে কর হ্রাস ইত্যাদি পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বিনিয়োগকারীদের বিও অ্যাকাউন্টের উপর ধার্য অ্যানুয়াল মেইনটেন্যান্স ফি ৪৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫০ টাকা করেছে এবং সিসি একাউট-এ অর্জিত সুদের ২৫ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ব্যয়ের জন্য ইনভেস্টর্স প্রটেকশন ফান্ডে জমার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এছাড়া, গত বছরের ৪ নভেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে অর্জিত ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত মূলধনী আয় সম্পূর্ণ করমুক্ত রাখার বিধান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ৫০ লাখ টাকার উপরে মূলধনী আয়ের উপর কর ১৫ শতাংশে হ্রাস পুঁজিবাজারের উন্নয়নসহায়ক এসকল নীতিমালা পুঁজিবাজার উন্নয়নে সরকারের দৃড় প্রতিশ্রুতির পরিচায়ক বলে মন্তব্য করেন ডিএসই চেয়ারম্যান।
বাজেট প্রস্তাবনায় সরকারের মালিকানা রয়েছে এমন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে সরকারের শেয়ার কমিয়ে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, লাভজনক সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তকরণ, বেসরকারি খাতের দেশীয় বড় কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করতে প্রণোদনাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এ বাজারের গভীরতা বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি জানান, পুঁজিবাজারকে ঘিরে সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেশের ক্রমবিকাশমান পুঁজিবাজার দীর্ঘমেয়াদে শক্তিশালী ও টেকসই হওয়ার পথে এগিয়ে যাবে বলে ডিএসই বিশ্বাস করে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ও দক্ষতাকে পুঁজি করে আগামী প্রজন্মের জন্য একটা টেকসই পুঁজিবাজার গড়ে তোলায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷
ঢাকা/এনটি/ইভা