সংস্কার কমিশনের সুপারিশের প্রতিফলন নেই স্বাস্থ্যের বাজেটে
Published: 2nd, June 2025 GMT
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশে বলেছে, জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ স্বাস্থ্য খাতে থাকা উচিত। অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৫–২৬ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রেখেছে জাতীয় বাজেটের ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার ও অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্য দেখা যাচ্ছে না।
আজ সোমবার বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেন। তাতে সালেহউদ্দিন বলেন, জাতীয় উন্নয়নে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব বিবেচনায় ২০২৫–২৬ অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য ৪১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতের কিছু পরিকল্পনা ও কর অব্যাহতির কথাও তিনি বলেছেন।
জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদেরা বহু বছর ধরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলে আসছেন। সর্বশেষ বলেছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন। তারা বলেছে, গুরুত্বপূর্ণ কোনো সংস্কার প্রস্তাবনাই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না যদি স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো না হয়। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ৪১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা; অর্থাৎ ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
২০২৪–২৫ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল জাতীয় বাজেটের ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। গত কয়েকটি বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ ৫ শতাংশের আশপাশে থেকেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকেও ব্যতিক্রমী, অর্থাৎ স্বাস্থ্যে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ বৃদ্ধি দেখা গেল না।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রুমানা হক প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্য খাতে গতানুগতিক বরাদ্দের বাইরে যেতে পারেনি সরকার। তবে ক্যানসারের ওষুধ ও এপিআইয়ের কাঁচামাল আমদানির কর অব্যাহতির প্রস্তাব ইতিবাচক। এর সুফল পাবেন মানুষ।
উল্লেখযোগ্য কী আছে
অর্থ উপদেষ্টা তাঁর বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ক্যানসার প্রতিরোধক ওষুধসহ সব ধরনের ওষুধশিল্পের কাঁচামাল এবং ওষুধের সক্রিয় উপাদান (এপিআই–অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট) তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক-কর অব্যাহতি–সুবিধা সম্প্রসারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে ক্যানসারের ওষুধসহ বেশ কিছু ওষুধের দাম কমে আসার সম্ভাবনা তৈরি হবে। পাশাপাশি দেশে এপিআই–শিল্প সমৃদ্ধ হবে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে ওষুধশিল্পে, দেশের ওষুধ–নিরাপত্তা জোরদার হবে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, চাকরিরত কর্মচারীদের কিডনি, লিভার, ক্যানসার ও হার্টের চিকিৎসার পাশাপাশি মস্তিস্কে অস্ত্রোপচার ও কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপন–সংক্রান্ত চিকিৎসা ব্যয় বাবদ প্রাপ্ত অর্থ করমুক্ত করা হয়েছে। দেশে উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রেফারেল হাসপাতালের পাশাপাশি ৫০ শয্যার বেশি হাসপাতাল স্থাপনের জন্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম আমদানিতে শুল্ক-কর হ্রাসের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া তিনি বাজেটে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে অতিরিক্ত ৪ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা এবং সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির জন্য ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করেছেন।
নতুন পরিকল্পনা
অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তৃতায় স্বাস্থ্য খাত নিয়ে নতুন কিছু পরিকল্পনার কথাও বলা হয়েছে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতের শূন্য পদ পূরণে চিকিৎসক, সেবিকা, টেকনিশিয়ান, ফার্মাসিস্ট ও স্বাস্থ্য সহকারীদের নিয়োগ ত্বরান্বিত করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টির সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি নার্সিং শিক্ষায় পিএইচডি কোর্স চালু এবং আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য একটি নার্স শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার বিষয় বিবেচনায় রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র প রস ত ব বর দ দ র র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
যুব ও ক্রীড়ায় বরাদ্দ বেড়েছে ৮৪২ কোটি টাকা
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জন্য ২ হাজার ৪২৩ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন। যা গত অর্থ বছরে পাশ হওয়া বাজেটের তুলনায় ৮৪২ কোটি ২১ লাখ টাকা বেশি।
এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে উন্নয়ন খাতে ১৪৪০ কোটি ৩৭ লাখ এবং পরিচালন খাতে ৯৮২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ৬২৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা উন্নয়ন খাতে এবং পরিচালন খাতে ৯৫২ কোটি ৮৩ লাখ ৩৭ হাজার টাকা পাশ হয়েছিল। সংশোধিত বাজেটে ক্রীড়া ও যুব মন্ত্রণালয় পেয়েছিল ১ হাজার ৫৮০ কোটি ৭৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতায় যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো উপজেলা পর্যায়ে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্ব) প্রকল্প, নড়াইলে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ স্টেডিয়াম ও টেবিল টেনিস ভবনের অধিকতর উন্নয়ন এবং ইনডোর স্টেডিয়াম ও ভলিবল স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্প।
এছাড়া বিকেএসপির প্রশিক্ষণ সুবিধাদির আধুনিকায়ন এবং ভৌত অবকাঠামোর সুবিধাদির উন্নয়ন প্রকল্প, দারিদ্র্য বিমোচনে প্রযুক্তিনির্ভর প্রকল্প (তৃতীয় পর্যায়), ৬৪টি জেলায় তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প, দেশের ৪৮টি জেলায় কর্মপ্রত্যাশী যুবকদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ প্রকল্প আছে।
এর বাইরে বাজেটে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন, অংশগ্রহণ ও জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রদান, ক্রীড়া ক্ষেত্রে প্রতিভা অন্বেষণ, গ্রামাঞ্চলে ক্রীড়া পরিবেশ সৃষ্টি ও দক্ষ ক্রীড়াবিদ তৈরি, বিভিন্ন ক্রীড়া সংস্থাকে অনুদান প্রদান ও অসচ্ছল ক্রীড়াবিদদের কল্যাণে অনুদান প্রদান এবং ক্রীড়া স্থাপনা নির্মাণ, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।