বাজেট ইতিবাচক, তবে মূল্যস্ফীতি বাড়বে: রংপুর চেম্বার সভাপতি
Published: 2nd, June 2025 GMT
প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট নিয়ে এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আকবর আলী বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিতকরণ, সরকারি ব্যয় সংকোচন, নিত্যপণ্যের ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ, বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন, অযৌক্তিক ব্যয় কমানোর দিকনির্দেশনা, পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়ন, দেশীয় শিল্প সুরক্ষা, প্রবৃদ্ধি অর্জন, ক্ষুদ্র আমানতকারী এবং ঋণগ্রহীতার আবগারি শুল্ক ছাড়, জমি কেনাবেচায় করছাড়, এলএনজি ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিতে শুল্ক হ্রাস, ওষুধের কাঁচামাল ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ওপর শুল্ক হ্রাস, সামাজিক নিরাপত্তা ও বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধিসহ সামাজিক সুরক্ষা ও অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই বাজেট ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরবহির্ভূত কর এবং কর ছাড়া রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ৬৫ হাজার কোটি টাকা। বাকি ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এনবিআরকে আদায় করতে হবে। এর ফলে সরকার রাজস্ব বাড়াতে মূল্য সংযোজন কর এবং আয়করে বাড়তি নজর দেবে। তবে দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে আয়কর খাতে রাজস্ব বাড়ানো চ্যালেঞ্জিং হওয়ায় খড়গ গিয়ে পড়বে ভ্যাটে। এতে করে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে, সাধারণ মানুষ কষ্টে ভূগবে বলে রংপুর চেম্বার মনে করে।
প্রস্তাবিত বাজেটে করছাড় তুলে দেওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি উসকে দিতে পারে। করপোরেট কর হার বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় গৃহস্থালী অনেক পণ্যের ভ্যাট বাড়ানো, শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কহার বৃদ্ধি, দেশীয় অনেক শিল্পের জন্য প্রতিরক্ষণ না রাখা, ক্ষেত্রবিশেষে দেশীয় পণ্যকে আমদানি পণ্যের বিপরীতে চ্যলেঞ্জের মুখে ফেলা, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানি বাড়াতে ব্যাপক শুল্ক ছাড়, বৈষম্যমূলক ব্যক্তি শ্রেণির কর হার, উচ্চবিত্তকে সুবিধা দিতে সারচার্জ অপরিবর্তিত রাখা, টার্নওভার করহার বৃদ্ধির চাপ বাড়বে ব্যবসায়ীদের ওপর। তাই রংপুর চেম্বার প্রস্তাবিত বাজেটকে ব্যবসায়ীদের চাপের বাজেট বলে মনে করে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সরববরাহ মূল্যের ওপর উৎসে কর কর্তনের হার ১ শতাংশের পরিবর্তে শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমবে বলে রংপুর চেম্বার মনে করে। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে এসি, ফ্রিজ, দেশীয় মোবাইল, মোটর সাইকেল, সিমেন্ট শীট, বিভিন্ন রকমের প্লাস্টিক পণ্য, ব্লেন্ডার, রাইস কুকার, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ফ্রিজ, এসিসহ বিভিন্ন গ্রহস্থালি ইলেকট্রনিক্স পণ্যের উৎপাদন পর্যায়ে খরচ বাড়বে। এর ফলে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ অতিরিক্ত ব্যয়ের চাপে পড়বে বলে রংপুর চেম্বার আশংকা প্রকাশ করে।
তবে রংপুর চেম্বারের সভাপতি আকবর আলী প্রস্তাবিত বাজেটে বিড়ির ওপর মাত্রাতিরিক্ত করারোপ করায় বিড়ি শিল্প ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে উপনীত হবে বলে মনে করেন। তাই কর না বাড়িয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে ব্যান্ডরোল বিহীন নকল বিড়ি বাজারজাত করতে না পারে সে দিকে নজর দেওয়া জরুরি। ব্যান্ডরোল বিহীন বিড়ির কারণে সরকার বিড়ি খাত থেকে প্রতি বছর ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে বলে রংপুর চেম্বার মনে করে। তাই রংপুর চেম্বার সংশোধিত বাজেটে বিড়ি শিল্পের ওপর যৌক্তিক কর নির্ধারণপূর্বক ব্যান্ডরোল বিহীন নকল বিড়ি উৎপাদন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। এছাড়া তিনি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে প্রবৃদ্ধির পথ যাতে সংকুচিত না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার পাশাপাশি চাপে থাকা সামষ্টিক অর্থনীতি ও বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বেসরকারি বিনিয়োগে কিভাবে প্রাণ ফেরানো যায় সে ব্যাপারে সংশোধিত বাজেট পদক্ষেপ গ্রণের আহ্বান জানান। এছাড়া তিনি ব্যবসা সহজীকরণ সূচক, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ব্যাংক ঋণ ও গ্যাস-বিদ্যুতের সহজলভ্যতার বিষয়গুলো মেটাতে না পারলে বিনিয়োগ কখনোই বাড়বে না বলে মতামত ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ভিত্তি মজবুত না হলে অর্থনীতি কোনদিন টেকসই হবে না। তাই তিনি সংশোধিত বাজেটে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উদ্যোক্তার জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখার আহ্বান জানান। সামান্য ছাড় দিয়ে ব্যবসায়ীদের উৎসাহ দিলে চলবে না-আর শুধুমাত্র অর্থ বরাদ্দ রাখলেই হবে না, বরাদ্দকৃত অর্থ যাতে সুষ্ঠু ও সুষমভাবে বণ্টন হয় সেদিকে নজরদারি ও সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা রাখা অত্যন্ত জরুরি বলে রংপুর চেম্বার মনে করে।
প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া রংপুর অঞ্চলের দারিদ্র নিরসন ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য রংপুরে প্রস্তাবিত স্পেশাল ইকোনমিক জোন স্থাপনসহ উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নের স্বার্থে ‘নর্থ বেঙ্গল ডেভেলপমেন্ট মিনিস্ট্রি’ গঠন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, রংপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন, বিসিক শিল্পনগরী-২ স্থাপন, রংপুর বিভাগের শিল্পায়নের জন্য ট্যাক্স হলি ডের মেয়াদ ১৫ বছর করা ও ‘আলাদা বাজেট বরাদ্দের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত ছিল বলে রংপুর চেম্বার মনে করে। তাই রংপুর চেম্বার সংশোধিত বাজেটে রংপুর অঞ্চলের দারিদ্র্য নিরসন ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বৃহৎ শিল্প-কলকারখানা স্থাপনের লক্ষ্যে মেঘা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখার দাবি জানান।
প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি কমিয়ে বেসরকারি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে প্রাণ ফেরানো ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা কিভাবে ফিরিয়ে আনা যায় সে ব্যাপারে অর্থের সুষম বণ্টন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক কর্মসূচি ও কৌশল এমনভাবে প্রনয়ণ করতে হবে যাতে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র বিমোচনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক সুফল বয়ে আনতে পারে রংপুর চেম্বার সে কামনা করে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রস ত ব ত ব জ ট ব জ ট ২০২৪ ২৫ র প র চ ম ব র মন প রস ত ব ত ব জ ট প রব দ ধ র লক ষ য বর দ দ র ব যবস য় র জন য আমদ ন সরক র র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া’
ভারতীয় বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীনন্দা শঙ্কর। সৃজিত মুখার্জির ‘এক যে ছিল রাজা’, সুমন ঘোষের ‘বসুপরিবার’-এর মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন এই তারকা। বলা যায়, টলিউডের প্রথম সারির সব নির্মাতার সঙ্গেই কাজ করেছেন এই নৃত্যশিল্পী।
গত কয়েক বছর ধরে কলকাতা ছেড়ে মুম্বাইয়ে বসবাস করছেন শ্রীনন্দা। সেখানে সংসার, কাজ নিয়ে সময় কাটছে তার। তবে অভিনয়ে নেই। অভিনয় থেকে দূরে থাকার কারণ কী? ফের কী অভিনয়ে ফিরবেন না শ্রীনন্দা?
ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে আলাপকালে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শ্রীনন্দা। এ অভিনেত্রী বলেন, “টলিউডে যাদের সঙ্গেই কাজ করেছি, তাদের সঙ্গে এখনো আমার খুব ভালো সম্পর্ক। ভীষণ ভালো অভিজ্ঞতাও বলা চলে। মুশকিল হলো, বাংলা সিনেমায় তেমন বাজেট থাকে না। সত্যিই যদি খুব ভালো সিনেমা হয় বা এমন কোনো পরিচালক আমাকে অফার দেন যেখানে কোনো ভাবেই ‘না’ করব না। আমি নিশ্চয়ই আবার অভিনয়ে ফিরব।”
আরো পড়ুন:
কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি অভিনেত্রী
পরিচালকের আপত্তিকর মন্তব্য নিয়ে মুখ খুললেন শোলাঙ্কি
কিছু কিছু লোকের সঙ্গে কাজ করতে গিয়েও মাঝপথে থেমে গিয়েছেন শ্রীনন্দা। কারণ, তাদের সঙ্গে মানসিকভাবে মেলেনি। তার ভাষায়—“মুম্বাই, কলকাতা বা সাউথ ইন্ডাস্ট্রি যেখানেই হোক না কেন, আমি ভালো মানুষের সঙ্গে কাজ করতে চাই। কেউ এমন চরিত্রে সুযোগ দেন, যেখানে প্রয়োজনে টাকাটা ভুলে গিয়ে শুধু পরিচালকের নাম দেখেই কাজটা করব।”
কিছুটা ইঙ্গিপূর্ণভাবে শ্রীনন্দা বলেন, “কাজের পাশাপাশি আমার সংসারও রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই পেতে হবে, যার জন্য সংসারটা ইগনোর করার কথা ভাবব। অর্থাৎ মনে হবে সংসার ফেলে এই সিনেমাটা আমাকে করতেই হবে। এই বয়েসে একটু কফি খেতে যাবেন? কাজ দেবেন? এগুলো করতে পারব না। সবাই তো চেনেই আমাকে। কাজ দিতে হলে দেবেন।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব শ্রীনন্দা। অনেকে ভেবেছিলেন, এ মাধ্যমে কাজ করে টাকা আয় করে থাকেন। তাদের উদ্দেশে শ্রীনন্দা বলেন, “অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা এটাও আমার পেশা। এখান থেকে অনেক টাকা উপার্জন করা যায়। আমি নিজেও আগে বিষয়টা জানতাম না। পোস্ট করতে করতে বুঝেছি। আমি এখন মুম্বাইয়ে মায়ের সঙ্গে পুরোদমে নাচের স্কুল চালাচ্ছি। এখন মোট ছয়টা ব্রাঞ্চ এবং ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও নেহাতই কম নয়। সব মিলিয়ে ভালো আছি।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রলের শিকার হন শ্রীনন্দা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া হয়ে গিয়েছে। কয়েকদিন আগে আমাকে একজন বলেছিলেন, ‘রিল মামনি’। আমি আর মা এটা শুনে হেসে গড়িয়ে পড়েছি। মাঝেমধ্যে এসব বেশ মজাও লাগে। তবে যে পরিমাণ ভালোবাসা পাচ্ছি, সেটা খুব মন থেকেই ভক্তরা দিচ্ছেন বলে আমার বিশ্বাস। আমি মনে করি, এটা আমার জীবনে আশীর্বাদ।”
ঢাকা/শান্ত