বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার অবসানে রূপরেখা দেখা যায় না বাজেটে: জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
Published: 3rd, June 2025 GMT
প্রস্তাবিত বাজেট জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল। তারা বলছে, দেশের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে যে চরম বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা জারি রয়েছে তা অবসানের কোনো রূপরেখা প্রস্তাবিত এই বাজেটে দেখা যায় না।
মঙ্গলবার জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছেন।
গণ–অভ্যুত্থান বৈষম্যহীন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা জাগিয়েছিল উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কর্মসংস্থান, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প ও কৃষি খাতকে অগ্রাধিকার দিতে এসব খাতে অধিক বরাদ্দ বৃদ্ধি দরকার ছিল। মূলত অতীতের বাজেটের ধারাবাহিকতায় এই বাজেট করা হয়েছে। এই কাঠামো অতিক্রম করতে না পারার মূল কারণ শাসকগোষ্ঠীর পরিবর্তন হলেও শাসকশ্রেণির পরিবর্তন হয়নি।
৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ঋণনির্ভর নীতি অনুসরণ করেই করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই বাজেটে অতীতের সরকারের মতোই কালোটাকাকে সাদা করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। উৎপাদন খাতে দেশীয় বড় শিল্পের কাঁচামালের ওপরে ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে দেশের শিল্পবিকাশের গতি শ্লথ করা হয়েছে।
বাজেট প্রস্তাবের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া প্রয়োজন ছিল উল্লেখ করে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল আরও বলেছে, কেননা জাতীয় সংসদের অনুপস্থিতিতে যে বাজেট এখানে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা আরও জনস্বার্থ–সম্পর্কিত হতে পারত।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর
বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!
কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।
চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।
এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)