কোরবানি ঈদ এলে শ্রীনন্দের আয় বাড়ে, সংসারে সচ্ছলতা আসে
Published: 4th, June 2025 GMT
শ্রীনন্দ মণ্ডলের বয়স ৩২ পেরিয়েছে। স্মৃতি হাতড়ে জানান, সংসারে অভাবের কারণে মাত্র ১২ বছর বয়সেই লোহা পুড়িয়ে দা-কাঁচি-ছুরি তৈরির মতো তুলনামূলক পরিশ্রমের কাজটি শুরু করতে হয়। ২০ বছর ধরে এ কাজ করেই সংসার চালাচ্ছেন। এতে অভাব দূর হলেও সচ্ছলতা আসেনি। তবে কোরবানির ঈদ এলে শ্রীনন্দের পরিবারে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। কারণ, বছরের এ সময়ে তাঁর দোকানের বিক্রি বৃদ্ধি পায় কয়েক গুণ।
শ্রীনন্দ শরীয়তপুর সদর উপজেলার চরসোনামুখী গ্রামের বাসিন্দা। পরিবারের অন্য ভাই ও স্বজনেরা কাঠমিস্ত্রির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করলেও শ্রীনন্দ বেছে নিয়েছেন কামারের কাজ। পৌরসভার মনোহর বাজারে সড়কের পাশের একটি দোকানই তাঁর কর্মস্থল।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, চরসোনামুখী গ্রামের প্রাণ কৃষ্ণ মণ্ডলের চার ছেলের মধ্যে শ্রীনন্দ সবার ছোট। বাবার আয়ে সংসার চলছিল না। সংসারের অভাবের কারণে পড়ালেখাও করা হয়নি। মাত্র ১২ বছর বয়সে একটি কামারের দোকানে কাজ নেন শ্রীনন্দ। সেখান থেকে লোহা পুড়িয়ে দা, কাঁচি, ছুরি, চাপাতিসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরির কাজ শেখেন। এরপর নিজেই একটি দোকান খুলে বসেন। বছরজুড়ে সেখানে চাপাতি, হাতদা, বডিদা, বিভিন্ন সাইজের ছুরি, কোদাল, কুড়ালসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিস বিক্রি করেন। আর ঈদুল আজহার সময় এসব ধারালো তৈজসপত্রের চাহিদা অনেকাংশে বেড়ে যায়। তখন যেন দম ফেলার সময় পান না শ্রীনন্দ।
শরীয়তপুর পৌরসভার মনোহর বাজার গরুর হাটের ঠিক পাশেই শ্রীনন্দর কামারের দোকান। ঈদের এক মাস আগে থেকে তিনি বিভিন্ন সাইজের চাপাতি ও ছুরি তৈরি করে রাখেন। নতুন জিনিসপত্র বিক্রি ছাড়াও এ সময়ে মানুষ পুরোনো দা, ছুরি ও চাপাতি মেরামত করে থাকেন। এগুলোর জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের মজুরি পান। এ কাজে সহযোগিতার জন্য প্রতিবেশী মনোরঞ্জন গাইনকে এক মাসের জন্য সহযোগী হিসেবে নিয়েছেন।
মনোরঞ্জন গাইন বলেন, তিনি কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন। তবে এখন কাজটিতে মন্দা চলছে। এই সময়ে কামারের দোকানের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন। এক মাসে ৩০ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন। শ্রীনন্দের দোকানের লোহার ধারালো তৈজসপত্রের চাহিদা বেশ ভালো। তাই ক্রেতার ভিড় লেগে থাকে।
শ্রীনন্দের দোকানে তৈরি একেকটি চাপাতির দাম ৮৫০ থেকে ১০০০ টাকা। প্রতি ঈদে তিনি গড়ে ২৫০-৩০০টি চাপাতি বিক্রি করতে পারেন। এতে তাঁর ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা লাভ থাকে। এ অর্থ দিয়ে সংসারের দরকারি কাজ সারেন।
শ্রীনন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মা, স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়া আমার ছোট সংসার। সংসারে তেমন স্বাচ্ছন্দ্য নাই; যা আয় হয়, তা দিয়াই কষ্ট কইরা সংসার চালাই। প্রতিটি ঈদে দেড়-দুই লাখ টাকা বাড়তি আয় করা যায়। সেই টাকার থেইক্যা কিছু সঞ্চয় করি। আর সংসারের ছোটখাটো চাহিদা বা শখ মিটাই। ঈদের মৌসুমে এক মাসের মতন রাত-দিন কাম করতে হয়। অন্য সময় দিনে ৪-৫ ঘণ্টা কামে থাহি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ র নন দ র ক জ কর এক ম স
এছাড়াও পড়ুন:
সিগন্যাল অমান্য করে সেতুতে উঠে অটোরিকশা-মোটরসাইকেলে ধাক্কা ট্রেনের, নিহত ৩
কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা পর্যটক এক্সপ্রেসের ধাক্কায় চট্টগ্রামে তিনজন নিহত হয়েছেন। ট্রেনের ধাক্কায় কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুর পূর্ব প্রান্তে বোয়ালখালী উপজেলায় এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৪ জন।
দুর্ঘটনার বিষয়ে জানালিহাট স্টেশনের দায়িত্বরত স্টেশন মাস্টার মো. নেজাম উদ্দিন সমকালকে বলেন, সেতুর ওপর সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ছিল। সেখানে একটি গাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এ কারণে সব গাড়ি সেতু থেকে নামতে পারেনি। এসময় ট্রেনটি সজোরে গাড়িগুলোকে ধাক্কা দেয়। এতে শিশুসহ তিনজন নিহত হয়। আহত হন অন্তত ৪ জন। সবাইকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ট্রেনচালক সংকেত অমান্য করেছেন কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘নিয়ম হলো ট্রেন পূর্ব প্রান্তে এসে দাঁড়াবে। এরপর লাইনম্যানের সংকেত নিয়ে সেতুতে উঠবে। কিন্তু ট্রেনচালক এ নিয়ম না মেনে দ্রুতগতিতে সেতুতে উঠে যান। একই সময় উল্টো দিক থেকে গাড়ি আসছিল। এ কারণে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন। বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
চান্দগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ আফতাব উদ্দিন সমকালকে জানান, আহত কয়েকজনকে চমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গুরুতর আহতও আছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা লোকমান হোসেন জানান, লাল বাতির সিগন্যাল অমান্য করে ট্রেনটি দ্রুতগতিতে এসে বেশ কয়েকটি অটোরিকশা, মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। সব যানবাহন একেবারে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। এসময় একটি শিশুকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। পরে শুনেছি সে মারা গেছে।
এদিকে রাত আড়াইটার দিকে চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে জানানো হয়, দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিন জন নিহত হওয়ার তথ্য জানা গেছে।