পবিত্র ঈদুল আজহা দোরগোড়ায়। ঈদের আনন্দে মাতবে দেশ। কিন্ত আনন্দ যেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরিণত না হয়, সে বিষয়েও আমাদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কী খাচ্ছি, কতটুকু খাচ্ছি, শরীরে বিভিন্ন খাবারের কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তার দিকেও একটু নজর দেওয়া দরকার।

লাল মাংস খাওয়া কি খারাপ

গরু বা খাসির মাংস প্রোটিন, আয়রন, জিংক, ভিটামিন বি১২ ও বি৬–এর সমৃদ্ধ উৎস। বিশেষ করে যাঁরা পর্যাপ্ত প্রোটিন খান না, তাঁদের জন্য এ সময় মাংস পুষ্টিগুণের উৎস হতে পারে। মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হলো, এর পরিমাণ নির্ধারণ, প্রক্রিয়াজাত করা ও খাওয়ার ধরন। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের জন্য দৈনিক ৫০ থেকে ৭৫ গ্রাম রান্না করা লাল মাংস যথেষ্ট। কিন্তু কোরবানির ঈদে দিনে একাধিকবার অনেকটা মাংস খাওয়া হয়ে যায়। এ ছাড়া অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত মাংস, তেল ঝাল-মসলাযুক্ত রান্না শরীরে সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই জানতে হবে, মাংস খাওয়ার স্বাস্থ্যসম্মত নিয়ম কী।

পরিমাণ: প্রতিবারের খাবারে ৫০ থেকে ৭৫ গ্রাম রান্না করা মাংস যথেষ্ট। অতিরিক্ত খেলে পেট ভার হয়ে যায়, গ্যাস বা অ্যাসিডিটি হতে পারে। চর্বি বাদ: মাংসের গায়ে দৃশ্যমান চর্বি কেটে বাদ দিতে হবে।

রান্নার পদ্ধতি: কম তেল-মসলা দিয়ে ঝোল বা সেদ্ধজাতীয় রান্না হজমে সহায়ক। সবজি বা সালাদের সঙ্গে মিলিয়ে খেলে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ ও হজমে সাহায্য করে। প্রতিদিন অন্তত এক বেলার খাবারে সবজি রাখুন।

শর্করা কমান: অনেকে মাংসের সঙ্গে বেশি ভাত, পোলাও বা পরোটা খেয়ে ফেলেন। এতে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করা হয়। তাই শর্করা কমান।

রোগীদের জন্য সতর্কতা

ঈদের সময়ে হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা আছে এমন ব্যক্তিদের জন্য অতিরিক্ত লাল মাংস খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। ডায়াবেটিসের রোগীদের ক্যালরি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। হৃদ্‌রোগীদের জন্য চর্বিহীন সেদ্ধ বা গ্রিলড মাংস ভালো। কিডনির রোগীদের উচ্চ প্রোটিন গ্রহণ ক্ষতিকর।

সংরক্ষণে সচেতনতা

মাংস সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণেও সচেতনতা জরুরি। মাংস ঠিকভাবে না ধুয়ে বা রক্ত না ঝরিয়ে সংরক্ষণ করলে তা পচে যেতে পারে বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটাতে পারে। ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে, পানি ঝরিয়ে ‘ফুড গ্রেড’ প্যাকেটে রেফ্রিজারেটরে রাখতে হবে। কাটাকাটির পর দুই ঘণ্টার ভেতর রেফ্রিজারেট করতে পারলে ভালো। ফ্রোজেন মাংস রান্নার আগে ভালোভাবে গরম করতে হবে যাতে জীবাণু ধ্বংস হয়। রান্নার সময় হাত ধোয়া, কাটার বোর্ড ও ছুরি জীবাণুমুক্ত রাখা জরুরি।

পানীয় ও হজমে সহায়ক

ঈদের সময় ‘রিচ ফুড’ খাওয়ার ফলে অনেকেই গ্যাস্ট্রিক, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য বা বুক জ্বালাপোড়ায় ভোগেন। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে কিছু অভ্যাস কাজে আসতে পারে। প্রচুর পানি পান করুন। লেবুপানি, ইসবগুলের ভুষি, টক দই হজমে সহায়ক। জিরা, আদা, পুদিনা বা ধনিয়া পাতা দিয়ে তৈরি পানীয় পেটের সমস্যা কমায়। ভরপেট না খেয়ে ছোট ছোট ভাগে কয়েকবার খাওয়া উচিত।

ডা.

গুলজার হোসেন: সহকারী অধ্যাপক, রক্তরোগ বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (সাবেক বিএসএমএমইউ)

আগামীকাল পড়ুন

যেসব খাবার ঈদের সময়ই খাওয়া হয় 

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র জন য র সময় সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।

ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে। 

আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন। 

আরো পড়ুন:

ভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্নের ঘোষণা ট্রাম্পের

ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন। 

অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। 

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।

ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”

প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।

মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”

তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”

মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলি অভিযান সমর্থন করেছিলেন।

গ্যালাপের মতে, মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন দিয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ