অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর ১৯ জুন পর্যন্ত মতামত দেওয়া যাবে। ২২ জুন কেবিনেট বৈঠকে বাজেট অনুমোদন হবে।

আজ বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন। 

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ঈদের পর বাজেটের ওপর কার কী মন্তব্য, সাজেশন থাকবে সেটা নেব। ১৯ জুন পর্যন্ত মতামত দিতে পারবে বাজেটের বিষয়ে। ২২ তারিখ কেবিনেট বৈঠকে বাজেট অনুমোদন হবে।

তিন দিনে কি এটা করা সম্ভব হবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা আগে থেকেই বলেছি মতামত প্রতিনিয়তই আসতে থাকবে। একদিনে তো আর সব মতামত আসবে না। ইতোমধ্যেই মতামত দেওয়া শুরু হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে দরিদ্র মানুষের জন্য তো কোনো সুখবর দেখছি না সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সুখবর আছে, আপনারা বাজেটের কোথায় কোথায় পরিবর্তন হয়েছে সেটা একটু দেইখেন।

এতে সাধারণ মানুষের মনে স্বস্তি ফিরবে বলে মনে করেন কি? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাজেটে স্বস্তি আছে।

এর আগে গত সোমবার ঘোষিত আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং এডিপি ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহম দ প রস ত ব ত মত মত দ

এছাড়াও পড়ুন:

বৈষম্য কমানোর দিকনির্দেশনা নেই

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ তাঁর বাজেট বক্তৃতায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও সর্বস্ব ত্যাগ স্বীকার করা মা-বোনদের কথা স্মরণ করেছেন, শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন চব্বিশের আন্দোলনের শহীদদের কথাও। একাত্তর ও চব্বিশ—দুই সংগ্রামেরই যে উদ্দেশ্য ছিল বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে তোলা, বাজেট প্রস্তাবে তার প্রতিফলন তেমন নেই।

২ জুন অর্থ উপদেষ্টা ২০২৫–২৬ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করলেন, তাতে অনেক ইতিবাচক দিক থাকলেও নীতিকাঠামোগত সাহসী পদক্ষেপ আছে, এটা বলা যাবে না। এই বাজেটে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে, এর মধ্যে অনুন্নয়ন ব্যয় হচ্ছে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এবারের বাজেটেও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে গুরুত্ব না দিয়ে রাজস্ব আয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা হলো রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয় না। এর সঙ্গে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। বাজেটটি করা হয়েছে পুরো অর্থবছরের জন্য। কিন্তু অর্থবছর শেষ হওয়ার আগে যদি নির্বাচন হয়, সে ক্ষেত্রে বাজেটের নীতিপরিকল্পনায় কোনো বদল আসবে কি না, সেই প্রশ্নও আছে।

অর্থ উপদেষ্টা প্রবৃদ্ধির চেয়ে মানবকল্যাণের ওপর জোর দিলেও বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, শিক্ষা বা স্বাস্থ্যের বরাদ্দে, প্রস্তাবে বা পরিকল্পনায় এর প্রতিফলন নেই। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও বরাদ্দ অপ্রতুল। 

বাজেটে গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জন্য ৪০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু তারুণ্যের উৎসবের নামে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তার যৌক্তিকতা আছে কি? বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক কারণে নানা উৎসবের নামে জনগণের করের অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারলে তারা নিজেরাই উৎসব করতে পারবে। 

অর্থ উপদেষ্টা নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে ১০০ কোটি টাকার বিশেষ একটি তহবিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। স্টার্টআপের জন্য আগেও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরাকে এবারের বাজেটের অন্যতম সাফল্য হিসেবে দাবি করেছেন অর্থ উপদেষ্টা। গত ডিসেম্বর মাসের ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ থেকে মূল্যস্ফীতি এপ্রিলে নেমে এসেছে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে। সরকার জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে বলে যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে, সেটা নিয়েও প্রশ্ন আছে। 

এবারের বাজেটের বড় দুর্বলতা হলো দারিদ্র্যবিমোচনে সরকারের সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি না থাকা। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে ২২ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। ২০২২ সালে যা ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। চরম দারিদ্র্যের হারও ৭ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারে, যার মূল কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতিকেই।

২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট বিনিয়োগবান্ধব হয়নি বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাঁরা বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন, শিল্প প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা বৃদ্ধি ও ব্যাংক খাত সংস্কারের জন্য কোনো স্পষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছিলেন। বাজেটে ভবন, ফ্ল্যাট কেনার জন্য টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা আছে। সিপিডি ও টিআইবি একে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছে। 

বাজেট প্রণয়নের চেয়ে বাস্তবায়ন অনেক কঠিন কাজ। আমরা আশা করতে চাই, রাজনৈতিক সরকারের আমলে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যে অপরিমেয় দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপচয় হতো, অন্তর্বর্তী সরকার সেটা পুরোপুরি বন্ধ করতে না পারলেও অনেকখানি কমিয়ে আনতে পারবে। সে ক্ষেত্রে ‘অর্ধেক গ্লাস খালি, অর্ধেক গ্লাস পূর্ণ বাজেট’ থেকেও জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত হতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কোম্পানির ন্যূনতম কর ০.৬০% রাখার সুপারিশ
  • প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অবাস্তব: আইবিএফবি
  • বৈষম্য কমানোর দিকনির্দেশনা নেই
  • ‘সামনে হয়তো আম-ছালা দুটাই যাবে’
  • প্রস্তাবিত বাজেট জনবান্ধব: অর্থ উপদেষ্টা
  • বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন শুরু
  • নারীর অস্বীকৃত কাজের স্বীকৃতি নিয়ে অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্য, স্বাগত জানিয়েছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন
  • বাজেটে পুঁজিবাজার উন্নয়নে সহায়ক নীতিমালা রয়েছে: ডিএসই
  • সরকারি কর্মচারীরা মহার্ঘ ভাতার বদলে বিশেষ প্রণোদনা পেতে পারেন