হাজার কোটি টাকার প্রকল্পেও কমছে না মনুতীরের আতঙ্ক
Published: 5th, June 2025 GMT
চার বছর ধরে মনু নদ ঘিরে তীর রক্ষা ও বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা দৃঢ় করতে চলছে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। এত অর্থ আর সময় ব্যয়ের পরেও বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি থেকে স্থানীয়দের মুক্ত রাখতে ব্যর্থ সংশ্লিষ্টরা। চলমান প্রকল্পগুলোর কাজের ধারা এবং স্থানীয়দের তথ্য বলছে, কচ্ছপগতির প্রকল্পের কারণে বাঁধ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলেও ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের ফায়দা হচ্ছে ঠিকই।
চলমান প্রকল্পের কাজ মন্থরগতিতে চলমান। এতে মনুতীরের রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ বর্ষায় দুর্ভোগের আশঙ্কায় আতঙ্কিত। ওই দুই উপজেলার অন্তত ৮টি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় এই আতঙ্কের মাত্রা সবচেয়ে বেশি।
বর্ষা সামনে রেখে এবারও একই ভয় ভর করেছে স্থানীয়দের মাঝে। ভুক্তভোগী এলাকাবাসী ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সাল থেকে মনু নদের উন্নয়নে ৯৯৬ কোটি টাকার উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান। এর মধ্যে রয়েছে তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার, ভাঙন প্রতিরোধে ব্লক বসানো, গাইডওয়াল নির্মাণ, চর খননসহ বিভিন্ন কার্যক্রম। গত চার বছরে এই প্রকল্পের ৫৮ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
মনুপারের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রকল্পের ধীরগতির কারণে রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের একামধু, আদিনাবাদ, উজিরপুর, কান্দিরগুল, হরিপাশা, কামারচাক ইউনিয়নের কালাইকোনা, কুলাউড়ার পৃথিপাশা ইউনিয়নের কলির কোনা, রাজাপুর ও সিকরিয়া এলাকার মানুষ নদীভাঙন ও বন্যাঝুঁকিতে আছেন।
রাজনগরের একামধু এলাকার বাসিন্দা সুলেমান মিয়া জানান, ইদানীং অতিবৃষ্টি ও উজানের ঢলের পানিতে মনু নদ টইটম্বুর। এতে একামধুসহ বিভিন্ন এলাকায় বাঁধের মাটি ধসে পড়তে শুরু করেছে। ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি পানি বাড়লেই বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। এ এলাকার ১১০ মিটার জায়গায় ব্লক বসানোর কাজ না হওয়ায় মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন স্থানীয়রা।
এলাকার ভুক্তভোগী মানুষের অভিযোগে ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি সূত্রে জানা যায়, মনু নদের তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে বেশ কিছু জমি মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয় অধিগ্রহণ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়ায় বসতঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনার দখল ছাড়ছেন না। স্থানীয়রা আরও জানান, কয়েক দিন আগে অবিরাম বৃষ্টির প্রভাবে ও উজানের ঢলের পানিতে মনু নদের পানি বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তখন ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন এলাকার মানুষ রাত জেগে বাঁধ পাহারা দিয়েছেন।
অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন ঝুঁকিপূর্ণ স্থান মেরামতে সকাল-সন্ধ্যা কাজ করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন অলীদ সমকালকে বলেন, বোর্ডের পরিসংখ্যান মতে মনু বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের রাজনগরে দুটি ও কুলাউড়ায় একটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ। বন্যা ও ভাঙন মোকাবিলায় কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তিনি জানান, প্রতিরক্ষা বাঁধের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়ায় অনেকে জমির দখল ছাড়ছেন না। এতে মনুতীরের কিছু স্থানে কার্যক্রম পরিচালনা করতে বিলম্ব হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অন্তরা সরকার সমকালকে বলেন, মনু নদের তীর রক্ষা বাঁধের জন্য অধিগ্রহণ করা জমির মালিকানার সপক্ষে ডকুমেন্টসহ দরখাস্ত করলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ায় বিষয়টি দ্রুত এগোবে। বুধবার সকালে জেলা প্রশাসক ছয়টি চেক হস্তান্তর করেছেন ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প র ত র রক ষ র জনগর এল ক র চলম ন
এছাড়াও পড়ুন:
মৌলভীবাজারে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, পানিবন্দি ৫ হাজার মানুষ
মৌলভীবাজারে কমেছে বৃষ্টি। ধীরে ধীরে কমছে নদীর পানি। স্বস্তি ফিরছে নদীপাড়ের মানুষের জীবনে। তবে, নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতার কারণে পানিবন্দি হয়ে আছেন ৫ হাজার মানুষ।
কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জুড়ী, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও রাজনগরে দেখা দেয় আকস্মিক বন্যা। অন্যান্য উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও রাজনগর উপজেলার কামারচাক ও টেংরা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা।
দুর্গতরা বলেছেন, মনু ও ধলাই নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এতে নদীপাড়ের মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। তবে, ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আমাদের এলাকায় যে জলাবদ্ধার সৃষ্টি হয়েছে, তা সহজে যাচ্ছে না। মানবসৃষ্ট নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে ছোট খাল ও নালা দিয়ে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের মশাজান, মৌলভীরচক, কড়াইয়া, ইসলামপুর, আদমপুর, জাঙ্গালী ও পঞ্চানন্দপুর এলাকার নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। টেংরা ইউনিয়নের দত্তগ্রাম, ইলাশপুর, দাসপাড়া ও টেংরা এলাকায় রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে সদ্য তোলা বোরো ধান নিয়ে বিপাকে আছেন চাষিরা। রোদের দেখা না পাওয়ায় ধান শুকাতে পারছেন না তারা। দুর্গত এলাকায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
কামারচাক ইউনিয়নের মৌলভীরচক গ্রামের আবদুল হান্নানের রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেছেন, নদীর পানি নামতে শুরু করেছে। এতে আমাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। সাত-আটটি গ্রাম এখনো জলমগ্ন আছে। প্রায় ৫ হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দি আছেন।
মশাজান গ্রামের শামসুল ইসলাম বলেছেন, নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। কিন্তু, আমাদের এলাকার নিম্নাঞ্চলের রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। গ্রামীণ জনপদের মানুষ দুর্ভোগে আছেন।
টেংরা ইউনিয়নের দাসপাড়া গ্রামের শহিদ মিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, আখালি নদীর পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় আমরা জলাবদ্ধতার শিকার। রাস্তা ডুবে যাওয়ায় স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারছি না।
টেংরা ইউনিয়নের একামধু গ্রামের মনু নদীর পাড়ের সোলেমান আহমদ বলেছেন, আমরা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি। আতঙ্কে ছিলাম নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে। পানি কমতে শুরু করায় স্বস্তি ফিরেছে।
কামারচাক ইউনিয়নের মৌলভীরচক গ্রামের ইউপি সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেছেন, উজানের পানি নামলেও নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা আছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন ওয়ালিদ রাইজিংবিডিকে বলেছেন, জলাবদ্ধতার কারণ মানবসৃষ্ট। ছোট ছড়া ও নালা দিয়ে পানি নিষ্কাশনে প্রাকৃতিক প্রবাহকে মানুষ বাধাগ্রস্ত করে। এতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এসব রোধ করতে হলে কমিউনিটি লিডারদের এগিয়ে আসতে হবে। রাজনগর উপজেলার আখালিয়া ছড়া খননের প্রকল্প পক্রিয়াধীন আছে।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা বলেছেন, সাম্প্রতিক বন্যায় রাজনগর উপজেলায় ৩ হাজার ১৫ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে অনেক স্থানে শুকনো খাবার দিয়েছি। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।
ঢাকা/আজিজ/রফিক