Samakal:
2025-06-06@10:34:39 GMT

কৃষি হটিয়ে উন্নয়ন!

Published: 5th, June 2025 GMT

কৃষি হটিয়ে উন্নয়ন!

উপকূলীয় উপজেলা কলাপাড়া একসময় ছিল উর্বর কৃষিজমি, নদী-নালা ও প্রাণবৈচিত্র্যের উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি। সেই দৃশ্য এখন অনেকটাই বদলে গেছে। ঘনবসতিপূর্ণ গ্রাম, সবুজ ধানক্ষেত, নদীর ঢেউয়ের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ সবকিছু চাপা পড়ে গেছে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের নিচে। সরকার এই অঞ্চলকে ‘এনার্জি হাব’ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছিল।

এই উন্নয়নের পেছনে লুকিয়ে আছে হাজারো মানুষের চোখের জল, জমি হারানোর বেদনা, স্বাস্থ্যঝুঁকি, বাস্তুচ্যুতি ও পরিবেশ বিপর্যয়। আগে যেখানে বছরে তিনবার চাষ হতো, এখন অনেকে চাষই বন্ধ করে দিয়েছেন। নদী ও প্রকৃতি ধ্বংসের প্রভাবে ইলিশ ও অন্যান্য মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। এমন পটভূমিতে প্রতিবছরের মতো আজ বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। অবশ্য দিনটি জাতীয়ভাবে পালন করা হবে ঈদের পর।

প্রায় ১০ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ, ৬০% কৃষিজমি

২০১৩ সালে পায়রা সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের ঘোষণা আসার পর শুরু হয় জমি অধিগ্রহণ। স্থানীয়দের অভিযোগ, কোনো জনমত যাচাই ছাড়াই হাজার হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ফলে গৃহহীন হন অনেকে, হারিয়ে যায় কৃষিজমি। সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পায়রা সমুদ্রবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৬,৫৬২.

২৭ একর। এর মধ্যে পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ১০০২.৭৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, যার ৮৩২.৭০ একর কৃষিজমি। এখানে স্বীকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ১৩০টি পরিবারকে স্বপ্নের ঠিকানা নামক পুনর্বাসন কেন্দ্রে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। 

পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের (আরএনপিএল) জন্য ৯১৫.৭৪ একর জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। এখানে স্বীকৃত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ২৮১টি। এই সকল পরিবারকে আনন্দপল্লী এবং মায়ানীড় নামক দুটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। 

আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের জন্য ৯২৫.৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এখানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ১৭৫টি। পরিবারগুলোর জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলমান। 

বিএনএস শের-ই-বাংলা নৌ ঘাঁটি নির্মাণের জন্য ৫১৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আরও ৩০০ একর অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসিত করা হচ্ছে না। এ কারণে এই প্রকল্পে কত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে তথ্য পাওয়া যায়নি। 

সবচেয়ে বেশি জমি অধিগ্রহণ হয়েছে কলাপাড়ার লালুয়া ও ধানখালী ইউনিয়নে। লালুয়া ইউনিয়নে ২১টি গ্রাম বসতিশূন্য হয়ে পড়েছে। 

সব মিলিয়ে কলাপাড়ায় ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য ৯ হাজার ৯২৩.২৮ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে সরকার। এছাড়া ৩০০ একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।

স্থানীয় কৃষি অফিস জানিয়েছে, কলাপাড়ায় যে ভূমি অধিগ্রহণ হয়েছে তার মধ্যে ৬০ শতাংশ কৃষিজমি, ২৫ শতাংশ জলাভূমি ও ১৫ শতাংশ বসতি ও সামাজিক অবকাঠামো। 

কৃষক হায়দার আলীদের কান্না 

একসময় ধানখালীর বিস্তীর্ণ মাঠে দাঁড়িয়ে হায়দার আলী দেখতেন, পাকা ধান ঝুঁকে পড়ছে বাতাসে। দূরে দেখা যেত তাঁর গাভি ঘাস খাচ্ছে, পাশে ছোট নাতি পা ভিজিয়ে খেলছে খালের পানিতে। সেই দৃশ্য আজ শুধুই স্মৃতি। এখন সেখানে দাঁড়ালে দেখা যায়, চওড়া সড়ক, ধুলায় ঢেকে থাকা ইট-বালু আর লোহার স্তূপ। মাঝেমধ্যে হুঁইসেলের শব্দে কেঁপে উঠে বাতাস, আর ধোঁয়ায় ঢেকে যায় আকাশের মুখ। অভিমানী কণ্ঠে হায়দার আলী বলেন, ‘জমি ছিল। ক্ষেত ছিল। ঘর ছিল। এখন কিছুই নাই।’

তাঁর দুই একর জমি গেছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে। বিনিময়ে পেয়েছেন এককালীন ক্ষতিপূরণ, যা দিয়ে শহরের উপকণ্ঠে একটা আধা-পাকা ঘর তুলেছেন। কিন্তু জীবিকা? বলেন, ‘জমি তো ছিল আমার ব্যাংক, আমার বাঁচার রাস্তা। এখন কই যাই?’ হায়দার আলী বলেন, ‘আমার নাতি একদিন জানতে চাইবে–দাদা, তুমি জমি হারাইলা কেন? আমি কী বলব তখন?’ 

এই প্রশ্ন হায়দার আলীর একার নয়। এ প্রশ্ন হাজারো বাস্তুচ্যুত মানুষের, যারা উন্নয়নের নাম শুনেছে, কিন্তু তার আলো পায়নি। ২০১৩ সালে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বিদ্যুৎ প্রকল্পের ঘোষণা আসার পর থেকে পাল্টাতে শুরু করে কলাপাড়ার মানুষের জীবন। 

বাপ-দাদার পেশা কৃষিকে আঁকড়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন ছিল আনিছুর রহমানের। কলাপাড়ায় বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে তাঁর কৃষিজমি অধিগ্রহণ করা হয়। 

একপর্যায়ে দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে ভিটেমাটি রেখে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয় এ কৃষক পরিবারটি। আনিছুর রহমানের কৃষিজমি ছিল পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার পশ্চিম সোনাতলা গ্রামে। এখন তিনি স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে চট্টগ্রামে থাকেন। স্যানিটারি মিস্ত্রির কাজ করেন।

নুরুল ইসলামের মতো পাশের আদমপুর গ্রামের খলিলুর রহমানও চার বছর আগে কৃষিকাজ ছেড়েছেন। খলিলুরের ভাষ্য, বিদ্যুৎকেন্দ্রের পর থেকে ফলন কমে গেছে। ধান চিটা হয়ে যায়, তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। এখন তিনি কৃষিকাজ বাদ দিয়ে কলাপাড়া উপজেলা শহরে স্যানিটারি মিস্ত্রির কাজসহ দিনমজুরি করে সংসার চালান। খলিলুর রহমানের ভাষ্যের সত্যতা মিলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় গড় তাপমাত্রা বেড়েছে অন্তত সাড়ে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কলাপাড়ার চম্পাপুরের বাসিন্দা মাহফুজুর রহমানের আড়াই একর জমির বেশির ভাগই অধিগ্রহণে নিয়েছে আশুগঞ্জ পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। ক্ষতিপূরণ বাবদ পাওয়া টাকা ইতোমধ্যে নানা খাতে খরচ হয়েছে। এখন রুজি-রোজগারের ব্যবস্থা নেই। তিনি বলেন, ‘সব শেষ করে আধা কানি (৮০ শতক) জমি অবশিষ্ট আছে। জমিটা পাওয়ার প্লান্টের (বিদ্যুৎকেন্দ্র) পাশে হওয়ায় আগের মতো ধান হয় না। দেখা যায়, গাছ কুঁকরিয়ে গেছে বা ধানের শিষ ঠিকমতো বের হচ্ছে না। কয়টা কলাগাছ লাগাইছিলাম, কলার ছড়া বের হইছে কিন্তু কলা নাই।’

পায়রা সমুদ্রবন্দরের জন্য কলাপাড়ার ধুলাসর ইউনিয়নে সমুদ্রতীর থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে নিচু আবাদি জমি ভরাটের কাজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে বালুর সঙ্গে নোনাপানি প্রবেশ করে। পানি নিষ্কাশনের কালভার্ট বন্ধ থাকায় এ নোনাপানি ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের আবাদি জমিতে। ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আবাদি জমির ফসল। নোনাপানিতে ডুবে যায় পুকুর, মাছের ঘেরসহ ডোবা। 

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরাফাত হোসেন জানান, ২০১৪ সালে কলাপাড়ায় চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল ৩৫ হাজার হেক্টর। ২০২৪ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টরে। 

তিনি বলেন, উর্বর জমিতে ধানের ফলন ছিল একরে ১০০ থেকে ১২০ মণ। একরে তরমুজের ফলন হয় ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার। আউশ ও আমন ধান, তরমুজ, ডাল, মরিচ, সূর্যমুখী, গম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল হতো। 

স্থানীয় কৃষি অফিসে জানিয়েছে, ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত কলাপাড়ায় ধান উৎপাদন কমেছে ৩০ শতাংশ। আগের চাষচক্র ছিল বছরে ৩ বার। এখন একবার কিংবা অনিয়মিত চাষ হয়। 

জীবিকা হারানো কৃষকের দুঃখগাথা

কলাপাড়ার প্রকল্প এলাকায় যেসব কৃষকের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, সেসব পরিবারের সদস্যরা কেমন আছেন? তা সরেজমিন ঘুরে জানার চেষ্টা করেছে সমকাল। ধানখালী গাজী সফিউর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে কথা হয় সালমা বেগমের সঙ্গে। দুই ছেলে ও এক মেয়ের সংসার। ৪০ বছর ধরে তারা এ এলাকায় বসবাস করছেন। কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে তাদের ১২ কাঠা বসতভিটা ও কৃষিজমির পুরোটাই দিয়ে দিতে হয়েছে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে পেয়েছেন ১৭ লাখ টাকা। এ জন্য স্থানীয় দালাল আজিজুর রহমানকে দিতে হয়েছে তিন লাখ টাকা। জমি-বসতভিটা হারিয়ে তারা এখন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। সালমা বেগমের স্বামী আব্দুর রহমান কৃষিকাজ ছেড়ে এখন মুদি দোকান দিয়েছেন।

এখানেই কথা হয় চম্পা বেগমের সঙ্গে। চম্পা তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া ৪৫ শতাংশ জমিতে ঘরবাড়ি তুলে বসবাস করছিলেন। স্বামী কৃষিকাজ করতেন। সুখেই কাটছিল সংসার। হঠাৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ তাদের বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেয়। ঘরের জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ না দিলেও বাড়ির গাছপালা, পুকুরের জন্য ছয় লাখ টাকা পাওয়া গেছে। সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে তাদের ঠাঁই হয়নি। বাধ্য হয়ে তারা রাস্তার পাশে ছয় শতাংশ জমি কিনে মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়েছেন।

‘জমিই ছিল আমার জীবন’– বললেন মুজিবুর রহমান নামে একজন বাস্তুচ্যুত, যার ২১ দশমিক ৭৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে পায়রা সমুদ্রবন্দরের জন্যে। শুধু ধান চাষ করেই মুজিবুর বছরে পাঁচ লাখ টাকা আয় করতেন। তাঁর ক্ষতিপূরণ পাওয়া অনিশ্চিত, কারণ তাঁর জমির মালিকানা নিয়েও রয়েছে বিরোধ। 

কলাপাড়ার বাসিন্দা ফরিদ তালুকদার জানান, বাবা ও চাচার পরিবার মিলিয়ে তারা ৪০ একর জমির মালিক ছিলেন। পুরোটাই তিন ফসলি জমি। ফরিদ উদ্দীনের অভিযোগ, সরকারের তরফ থেকে জমির দাম বাবদ দেড় গুণ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় সেটি পাচ্ছেন না। দালালদের তৎপরতা ও মামলার কারণে সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্য টাকা যেমন পাচ্ছেন না, তেমনি তাদের বিকল্প আবাসস্থলের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা থাকলেও মিলছে না সেই আবাসনও। কৃষি একমাত্র জীবিকা হওয়ায় এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাদের জীবন।

বিপন্নের পথে ইলিশ

কলাপাড়ার রামনাবাদ নদী, আন্ধারমানিক নদী ও সংলগ্ন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকারীরা বলছেন, এই অঞ্চলে ডলফিন, মাছরাঙা, লাল কাঁকড়া, এমনকি কয়েক প্রজাতির বন্য বাঘরোলের উপস্থিতি ছিল। মেগা প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকে শিল্প বর্জ্যে নদী-নালা এখন ক্রমেই দূষিত হচ্ছে।

কলাপাড়ার জেলে মো. জালাল হোসেন বলেন, আগে দিনে ৮-১০ কেজি মাছ উঠত। এখন ২-৩ কেজি পেলেই খুশি হই। পানি কেমন যেন গন্ধ করে, মাছও কমে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইলিশের বড় আশ্রয়স্থল আন্ধারমানিক, পায়রা, রামনাবাদ ও টিয়াখালী নদী। ওই অঞ্চল ঘিরে বড় বড় প্রকল্পের কারণে ইলিশের বসতি পড়েছে ঝুঁকিতে। প্রকল্প ঘিরে নদীগুলোতে বেড়েছে জাহাজ চলাচল। নদীতে পড়ছে গরম পানি ও বর্জ্য। এতে বঙ্গোপসাগর থেকে আসা ইলিশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওই প্রবেশপথ আটকে গেছে।

ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, ওই এলাকায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাও উচ্চ ঝুঁকিতে আছে। ইলিশ মাছের সাইজ ছোট হয়ে যাচ্ছে। প্রজননের পথ পরিবর্তন করে ফেলছে। 

ইলিশ গবেষক আনিসুর রহমান বলেন, কলাপাড়া এলাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ যেসব অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে বা হচ্ছে, তার প্রভাব অবশ্যই ইলিশের ওপর পড়বে। ইলিশ খুব দূষণ সংবেদনশীল প্রাণী। ইতোমধ্যে সেখানে ইলিশ কমে গেছে বলেও জানান তিনি।

প্রশ্নবিদ্ধ ইআইএ

পরিবেশবাদীরা বলছেন, এই প্রকল্পগুলোতে প্রতিবেশগত প্রভাব নিরূপণের (ইআইএ) ক্ষেত্রে জনমত যাচাই, স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত প্রভাব যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। জমি অধিগ্রহণের আগে ইআইএ প্রতিবেদন তৈরির কথা থাকলেও জমি অধিগ্রহণের পরে শুধু প্রতিবেদন করা প্রয়োজন তাই করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণকে না জানিয়ে, তাদের মত না নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে কিছু লোকজন জড়ো করে তাদের মতামতকে জনগণের মতামত হিসেবে প্রকাশ করে প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। তাড়াহুড়া করে প্রকল্প অনুমোদন, রাজনৈতিক প্রভাব, দালালচক্রের দৌরাত্ম্যও প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমিকা রেখেছে।

এ ছাড়া ইআইএ প্রতিবেদনে প্রাণ-প্রকৃতি ও স্থানীয় মানুষের সুরক্ষার জন্য যে সব পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রস্তাব রাখা হয়েছিল সে সব প্রস্তাব যথাযথভাবে মানা হয়নি। 

প্রকল্পের অসংগতি, ক্ষতিকর প্রভাব ও ভূমি অধিগ্রহণে অনিয়মের বিষয়ে বিদ্যুৎ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করেছে সমকাল। এ বিষয়ে কেউই কথা বলতে চাননি। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক প্রকল্পে আমরা আপত্তি জানালেও ওপরের চাপের কারণে ছাড় দিতে হয়েছে।’

বিশেষজ্ঞের বক্তব্য

বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ ও জনসুরক্ষা ফোরামের সমন্বয়কারী শুভংকর চক্রবর্তী বলেন, কলাপাড়ায় সকল জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। কৃষকের জমি কৃষককে ফিরিয়ে দিতে হবে। পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নের যথাযথ প্রয়োগ দরকার। বন, নদী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য বিশেষ আইন ও কার্যকর তদারকি করতে হবে। 

একশনএইড বাংলাদেশের জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন টিমের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, রাষ্ট্রের উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠস্বর যুক্ত না হলে তা একতরফা সিদ্ধান্তই থেকে যাবে। সময় এসেছে সেসব প্রকল্প মূল্যায়নের, যেখানে মানুষ ও প্রকৃতি উভয়কেই মর্যাদা দেওয়া হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ছাইফুল আলম বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে দেশের অন্যতম শস্যভাণ্ডার কলাপাড়ায় কৃষিতে বড় আঘাত পড়েছে। আমরা সেই আঘাত থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। জমি কমলেও কৃষকদের উচ্চফলনশীল (উফশী) জাতের আবাদে উৎসাহী করছি। আধুনিক প্রযুক্তি কৃষকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব শ ব দ য ৎ প রকল প র রহম ন র প রকল প র কল প ড় য় র কল প ড় কল প ড় র ত পর ব র র র জন য স রক ষ এল ক য় পর ব শ সরক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

আইনজীবীকে ‘আওয়ামী দোসর’ বানিয়ে প্রচারণা, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

খুলনার কয়রা উপজেলার একজন আইনজীবী অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে তাঁকে ‘আওয়ামী দোসর’ বানিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করছে একটি চক্র। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে কয়রা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন কয়রার বাসিন্দা ও খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য মো. আবু বকর সিদ্দিক।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘কয়রার এক বহিষ্কৃত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাসহ আওয়ামী ঘরানার একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া তথ্য, ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে আমাকে “আওয়ামী দোসর” বলে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি পেশাগতভাবে সাত বছর ধরে খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হিসেবে সততা ও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছি।’

আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘কয়রায় আমার এক সহকর্মী আইনজীবী আওয়ামী লীগের শাসনামলে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে আমাকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়, আমি একজন আইনজীবী হিসেবে সেখানে উপস্থিত হই। অথচ সেই অনুষ্ঠানের একটি সাধারণ ছবি ব্যবহার করে আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজনৈতিক অপপ্রচারের লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে।’

ছাত্রজীবনে কখনো আওয়ামী লীগ বা তাদের সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না দাবি করে আবু বকর সিদ্দিক আরও বলেন, ‘বরং আমি ২০০৭ সালে ছাত্রশিবিরের কয়রা কপোতাক্ষ কলেজ শাখার সভাপতি ছিলাম। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে যেসব পরিবার পুলিশি হয়রানির শিকার হয়েছে, বিনা পয়সায় তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। সম্প্রতি জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পরও একইভাবে নিপীড়িতদের আইনগত সহায়তা দিচ্ছি। বর্তমানে কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আওয়ামী ঘরানার লোকজনের বিরুদ্ধে করা ২৬টির বেশি মামলায় আমি আইনজীবী হিসেবে কাজ করছি।’

আজ শুক্রবার সকালে আবু বকর সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে নিয়ে একের পর এক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি আপত্তিকর ভিডিও নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। যার নম্বর ৩৫৯, তারিখ ৯ এপ্রিল ২০২৫। এর আগেও এ বিষয়ে সাইবার ক্রাইম ইউনিটে অভিযোগ দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করেছিল। কিন্তু প্রতিহিংসাপরায়ণ মহল আবারও সেটি ছড়িয়ে আমাকে মানসিক ও পেশাগতভাবে হয়রানি করছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ