অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেছেন, মুজিবনগর সরকারে যারা ছিলেন, তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা। তবে মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে বিবেচিত হবেন। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন-২০২২ সংশোধনের জন্য করা অধ্যাদেশে সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে, মুজিবনগর সরকার ও এই সরকার কর্তৃক স্বীকৃত অন্য যেসব বাহিনী রয়েছে, তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন। তারা মানে মুজিবনগর সরকার নিজে এবং তার দ্বারা স্বীকৃত অন্য সব বাহিনীর যারা সশস্ত্রভাবে যুদ্ধ করেছেন, তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন। মুজিবনগর সরকারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী, কামারুজ্জামান এবং খন্দকার মোশতাক ছিলেন। এনারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা। উপদেষ্টা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছে মুজিবনগর সরকার।
এই সরকারের লেজিটিমেসির (বৈধকরণ) কাউকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এই সরকারই তখন এ দেশের স্বীকৃত সরকার। মুক্তিযোদ্ধাদের রেশন কোত্থেকে আসবে, অস্ত্র কোত্থেকে আসবে– এসবই মুজিবনগর সরকার করেছে। এটা ঐতিহাসিক সত্য। এখানে ইতিহাস পরিবর্তনের সুযোগ নেই। এ নিয়ে যে সংবাদ হয়েছে, তা সত্য নয়।
উপদেষ্টা বলেন, মুজিবনগর সরকারের অধীনে যেসব বেতনভোগী কর্মচারী ছিলেন, তাদের বলা হয়েছে ‘সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা’; সরকারকে বলা হয়নি। এমপিএ-এমএনএর মধ্যে যারা সশস্ত্রভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, তারাও মুক্তিযোদ্ধা। শিল্পী ও কলাকুশলীরা মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছেন। সহযোগী হওয়াও কম গৌরবের বিষয় না। যারা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা, তাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হয়নি। তাদের অবদানও অসাধারণ। সেভাবেই ওনাদের সম্মানিত করা হচ্ছে। রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত ভাতা, সুবিধাদির ক্ষেত্রেও কোনো বৈষম্য নেই। সবাই সমান সুবিধা পাবেন।
মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের সনদ দেওয়া হবে কিনা– সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তারা চাইলে তা দেওয়া হবে। এই সনদ পাওয়া তাদের অধিকার। এতে তার মর্যাদার কোনো হেরফের হবে না। পুরোনো সংজ্ঞায় ফিরে যাওয়ার কারণে কতজন মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হয়েছেন– তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে এই সংখ্যা বলা সম্ভব নয়। তালিকা যাচাই করার সময় এটা নিরূপণ করা যাবে।
সত্তরের নির্বাচনে গণপরিষদে থাকা ৪০০ জনপ্রতিনিধির বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, তারা সহযোগী। যারা যুদ্ধ করেননি, তারা মুক্তিযোদ্ধা হবেন না? স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র কিংবা কূটনৈতিকভাবে ভূমিকা রাখাসহ নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধের কাজে ব্যস্ত ছিলেন– তারা সহযোগিতা করেছেন। তারা তো রণাঙ্গনে এসে লড়াই করেননি। মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা আমরা প্রবর্তন করিনি। যে সংজ্ঞা এখন দেওয়া হয়েছে, তা ১৯৭২ সালেই ছিল। বাহাত্তরের সংজ্ঞা ২০১৮ ও ২০২২ সালে পরিবর্তন হয়েছে। এখন আবার ১৯৭২ সালের সংজ্ঞায় ফিরে যাওয়া হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সহযোগীদের সম্মান ও সুবিধা এক, কিন্তু তাদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে কেন– জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, এর একটা কারণ হলো, এটি রণাঙ্গনে লড়াই করা মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি। অনেকে যুদ্ধক্ষেত্রে না থেকে অন্য ব্যাখ্যা দিয়ে নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন। এটি নিয়ে একটা বিতর্ক ছিল।
মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায় কারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন, তা পরিষ্কার করা হয়েছে কিনা– জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, এটি সুস্পষ্টভাবে পরিষ্কার হয়েছে। কেউ যদি এটি টুইস্ট (অন্য অর্থ করা) করতে চায়, তাহলে তো কিছু করার নেই। আমরা ইতিহাসনিষ্ঠভাবে চেষ্টা করছি, যাতে মুক্তিযুদ্ধের সম্মানটা বজায় থাকে; কোনো ধরনের বিতর্ক যেন না হয়।
২০১৮ ও ২০২২ সালে মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায় পরিবর্তনের কারণ হিসেবে উপদেষ্টা বলেন, তখন সবাইকে মুক্তিযোদ্ধা করার জন্য তৎকালীন সরকার করেছিল। যখন মুক্তিযোদ্ধা যাচাই শুরু করলাম, তখন মুক্তিযোদ্ধারা বললেন, যারা সরাসরি যুদ্ধ করেননি, তারা মুক্তিযোদ্ধা নন। মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকাংশ সংগঠনই বলে যে, মুক্তিযোদ্ধাদের আগের সংজ্ঞাই (১৯৭২ সালের সংজ্ঞা) সঠিক ছিল।
উপদেষ্টা বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ পুনর্গঠন হচ্ছে। যখন আমরা যাচাই-বাছাইয়ে যাব, তখন একটা ইনডেমনিটি দেওয়ার ইচ্ছা আছে সরকারের। যারা অমুক্তিযোদ্ধা হয়েও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন, তারা যেন চলে যান। ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যমে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা নিয়ে সংবাদ হয়েছে। আমরা সেই সংখ্যাটা এখনই বলতে চাচ্ছি না। নিয়মনীতি অনুসরণ করে যাচাই-বাছাই শেষে এই সংখ্যা প্রকাশ করা হবে।
উপদেষ্টা বলেন, কোনো মুক্তিযোদ্ধার বিষয়ে আপত্তি থাকলে মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ফরম পূরণ করে আবেদন করলে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) মাধ্যমে যাচাই করা হবে। যাচাইয়ের মাধ্যমে আমরা সত্যনিষ্ঠ তালিকা করতে চাই। মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য আদালত থেকে রিট হয়ে আসা মামলাগুলো জামুকা নিষ্পত্তি করছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা করতে চাই।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম জ বনগর সরক র সব ই ম ক ত য দ ধ ব ব চ ত হব ন য দ ধ কর উপদ ষ ট সরক র র র সহয গ ক র কর
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন আজ বিকেলে, ক্লাস ১৩ নভেম্বর
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক (পাস) প্রোগ্রামে ভর্তি কার্যক্রম আজ মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টা থেকে শুরু হচ্ছে। আবেদন করা যাবে আগামী ১৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত। এ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে ১৩ নভেম্বর থেকে। গত রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন যেসব শিক্ষার্থী
২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালের এসএসসি বা সমমান এবং ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালের এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন ভর্তির জন্য। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি (ভোকেশনাল), এইচএসসি (বিজনেস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি) ও ডিপ্লোমা-ইন-কমার্স উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারবেন। এ-লেভেল, ও-লেভেল ও বিদেশি সনদধারীদের ক্ষেত্রে নির্ধারিত নিয়মে সরাসরি ডিন অফিসে বা ই–মেইলে আবেদন করতে হবে শিক্ষার্থীদের।
যেসব শিক্ষার্থী গত দুই শিক্ষাবর্ষে (২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪) স্নাতক (সম্মান), স্নাতক (সম্মান) প্রফেশনাল বা স্নাতক (পাস) প্রোগ্রামে ভর্তি হয়ে রেজিস্ট্রেশন কার্ড পেয়েছেন, তাঁরা এই শিক্ষাবর্ষে নতুন করে ভর্তি হতে পারবেন না। তবে পূর্ববর্তী ভর্তি বাতিল করে নতুন শিক্ষাবর্ষে আবেদন করতে পারবেন। একই সঙ্গে কোনো শিক্ষার্থী দ্বৈত ভর্তি হলে তাঁর উভয় ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশন বাতিল হবে।
আবেদন ফি ৪০০ টাকা
ভর্তি ফি হিসেবে প্রাথমিক আবেদন ফি ৪০০ টাকা, যার মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ ২৫০ টাকা এবং কলেজের অংশ ১৫০ টাকা। ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার পর রেজিস্ট্রেশন ফি ৭২০ টাকা জমা দিতে হবে। কলেজ কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীর তথ্য যাচাই করে অনলাইনে নিশ্চয়ন করবে। তবে নিশ্চয়ন ছাড়া কোনো আবেদনকারীকে মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। আবেদন ফি ১৯ অক্টোবরের মধ্য জমা দিতে হবে।
আরও পড়ুনবাংলাদেশ বিমানে ইন্টার্নশিপ, দৈনিক হাজিরায় সম্মানী ৬০০ টাকা৪ ঘণ্টা আগেআবেদনকারীদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে প্রতিটি কলেজের জন্য আলাদাভাবে কোর্সভিত্তিক মেধাতালিকা প্রণয়ন করা হবে। একই মেধা নম্বরপ্রাপ্ত হলে এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ (৪০: ৬০ অনুপাতে) এবং প্রয়োজনে মোট নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম নির্ধারণ করা হবে। এরপরও সমতা থাকলে বয়স কম শিক্ষার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ভর্তি কার্যক্রম ধাপে ধাপে প্রথম মেধাতালিকা, দ্বিতীয় মেধাতালিকা, কোটার মেধাতালিকা এবং প্রথম ও দ্বিতীয় রিলিজ স্লিপের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। তবে এবারও তৃতীয় রিলিজ স্লিপে আবেদন করার সুযোগ থাকবে না।
বিস্তারিত দেখুন এখানে
আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ, সুযোগ পাবেন ৪৮ জেলার যুবরা১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫আরও পড়ুন১২ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে সরকারি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫