আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাতে নতুন করে বিনিয়োগ বা ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহী হওয়ার মতো পদক্ষেপ তুলনামূলক কম; বরং নতুন করে বিনিয়োগ বা ব্যবসা বাড়াতে গেলে খরচ বাড়বে। এ ছাড়া গত কয়েক দশকে আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদনে স্থানীয়ভাবে যেসব শিল্প গড়ে উঠেছে, সেগুলোর সুরক্ষায় সমন্বিত কোনো উদ্যোগ নেই। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কিছু খাতে কিছু সুবিধা দেওয়া হয়েছে; কিন্তু সামগ্রিকভাবে স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষার বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হয়নি; বরং স্থানীয় শিল্প কোথাও কোথাও আমদানি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পড়বে।

গত দু-তিন বছরের ব্যবধানে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ফলে স্থানীয় শিল্পের কাঁচামালের আমদানি খরচও ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে; কিন্তু সেই তুলনায় পণ্যের দাম বাড়েনি। এ কারণে বেশির ভাগ স্থানীয় শিল্পের মুনাফা কমে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দরকার ছিল স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষায় সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। কিন্তু বাজেটে তার বাস্তব কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি; বরং কিছু ক্ষেত্রে আমরা বিপরীতমুখী পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি। নারীদের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে সরকার বাজেটে স্যানিটারি ন্যাপকিন বাজারজাতের ক্ষেত্রে পরিবেশক পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা দিয়েছে। স্যানিটারি ন্যাপকিনের মূল্য নির্ধারণপ্রক্রিয়ায় যার প্রভাব ১ থেকে ২ শতাংশ। অন্যদিকে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরির প্রধান কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে উৎপাদন পর্যায়ে ১০ শতাংশ খরচ বেড়ে যাবে। বাড়তি খরচের এই চাপ প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। ফলে পণ্যের দাম কিছুটা হলেও বাড়বে। একদিকে পরিবেশক পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা দিয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিনের দাম কমানোর চেষ্টা দেখছি; অন্যদিকে কাঁচামাল আমদানির শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। তাতে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও সমন্বিত উদ্যোগের অভাবে ভ্যাট অব্যাহতির সুফল পাওয়া যাবে না।

এ ছাড়া এবারের বাজেটে আমরা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য আগ্রহ-উদ্দীপক কার্যকর কোনো ব্যবস্থা দেখতে পাইনি। আমদানি বিকল্প হিসেবে দেশে গত কয়েক দশকে বেশ কিছু টয়লেট্রিজ ও কসমেটিক পণ্য উৎপাদনকারী শিল্প গড়ে উঠেছে। এসব শিল্পের ৮০ ভাগ কাঁচামালই আমদানিনির্ভর। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় কয়েক বছর ধরে এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান চাপে রয়েছে। তাই ডলারের উচ্চ মূল্যের এ সময়ে এসব কারখানার জন্য বিশেষ সুরক্ষার দরকার ছিল।

এ ছাড়া এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে নির্মাণ খাতের বেশ কিছু পণ্যের শুল্ক বাড়ানোর পদক্ষেপ দেখছি। এসব পদক্ষেপের কারণে কিছু নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়তে পারে। সেটি হলে নতুন করে কেউ কারখানা স্থাপন বা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিলে তাতে নির্মাণের খরচ বেড়ে যাবে। ফলে এই পদক্ষেপও ব্যবসা সম্প্রসারণ বা বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করবে।

মালিক মোহাম্মদ সাঈদ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, স্কয়ার টয়লেট্রিজ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পদক ষ প স রক ষ ব যবস আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বিহারের ভোটার তালিকা নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট: ‘মৃত’ নন জীবিত এমন ১৫ জনকে হাজির করলে ব্যবস্থা

বিহারে খসড়া ভোটার তালিকায় ‘মৃত’ চিহ্নিত ১৫ জন জীবিতকে হাজির করাতে পারলে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ব্যবস্থা নেবেন। বিহারের ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে মামলাকারীদের আইনজীবীদের এ আশ্বাস দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।

সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি সূর্য কান্ত ও জয়মাল্য বাগচী এ আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। গণহারে ভোটার বাদ দেওয়া দেওয়া হলে তাঁরা অবশ্যই পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

আবেদনকারীদের উদ্দেশে দুই বিচারপতি বলেছেন, প্রক্রিয়ায় অনিয়ম বা ত্রুটি পাওয়া গেলে অবশ্যই তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন।

মামলাকারীদের আবেদন মেনে সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য খসড়া ভোটার তালিকা পেশ করার ওপর স্থগিতাদেশ দেননি। তবে ইসিকে তাঁরা বলেছেন, তাদের কাজ গণহারে ভোটার বাদ দেওয়া নয়। তাদের দেখা উচিত যাতে গণহারে ভোটারদের তালিকাভুক্ত করা যায়।

এসআইআর–প্রক্রিয়া অনুযায়ী ভোটার তালিকা সংশোধনের পর খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে ১ আগস্ট। সে লক্ষ্যেই ইসি এগিয়ে চলেছে। ইসি সূত্রে খবর, নিবিড় সংশোধনপ্রক্রিয়ার পর প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে ৬৫ লাখেরও বেশি নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে অন্তত ২২ জন ‘মৃত’, ৩৬ লাখ ‘নিখোঁজ’। এ ছাড়া বেশ কয়েক লাখ ভোটারের নাম বিভিন্ন এলাকার তালিকায় রয়েছে। অর্থাৎ একই ভোটার অন্তত দুই জায়গায় নথিভুক্ত। আগের তালিকা অনুযায়ী বিহারে মোট ভোটারের সংখ্যা ৭ কোটি ৮৯ লাখ। ইসির দাবি, এই তালিকায় বহু ভোটার ভুয়া। তাদের বাদ দিতেই এই নিবিড় সংশোধন।

যে প্রক্রিয়ায় এই খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে, মামলাকারীদের আপত্তি তা নিয়েই। তাঁদের অভিযোগ, ইসি যেভাবে নাগরিকত্বের যাচাই করছে, সে জন্য যেসব নথি পেশ করতে বলা হচ্ছে, তা বহু ক্ষেত্রে সম্ভবপর নয়। তেমন করা তাদের কাজও নয়। সেই কাজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। তাঁদের অভিযোগ, এভাবে বহু দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের ভোটাধিকার ইসি কেড়ে নিচ্ছে।

গত সোমবার ও মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি হয়। মঙ্গলবারের শুনানিতে মামলাকারীদের আইনজীবী কপিল সিব্বাল ও প্রশান্ত ভূষণকে আশ্বস্ত করে বিচারপতিরা বলেন, কমিশনের ত্রুটি–বিচ্যুতি দেখলে তাঁরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন। ভোটার প্রমাণে আধার কার্ড ও ভোটার কার্ডকে নথি হিসেবে গ্রাহ্য করার সুপারিশ বিচারপতিরা জোরের সঙ্গে করেছেন। এই দুই নথি জাল করা সহজ বলে ইসির দাবি নস্যাৎ করে বিচারপতিরা বলেছেন, যে ১১টি নথির ওপর নির্ভর করে তারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সেগুলোর প্রতিটিই জাল করা সম্ভব। কপিল সিব্বাল ও প্রশান্ত ভূষণকে বিচারপতিরা বলেন, খসড়া ভোটার তালিকায় ‘মৃত’ অথচ আসলে জীবিত, এমন ১৫ জনকে আপনারা হাজির করুন। আমরা ব্যবস্থা নেব।

আগামী ১২ ও ১৩ আগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি। তার আগে ৮ আগস্টের মধ্যে মামলাকারীদের বক্তব্য লিখিতভাবে আদালতে পেশ করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ