২৫ শতাংশ ডেঙ্গু সংক্রমণ এক জেলায়, কারণ কী
Published: 5th, June 2025 GMT
বরগুনা সদর হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার। এখন রোগী আছেন ছয় শতাধিক। ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে ৫০ শয্যা শুধু এ রোগে আক্রান্তদের জন্য রাখা হয়েছে। সেখানে রোগীর সংখ্যা ১১৯।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রেজোয়ানুর আলম গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বললেন, ‘একের পর এক ডেঙ্গু রোগী আসছেন। কেন এত রোগী বুঝতে পারছি না আমরা। পরিস্থিতি জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় এবং ঢাকাতেও জানানো হয়েছে।’
দেশে এযাবৎ যত ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে প্রায় এক–চতুর্থাংশ রোগী বরগুনায়। কিন্তু দেশের এই একটি জেলায় এত রোগী কেন হচ্ছে তার কারণ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোও জানে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৭৮৩। এর মধ্যে শুধু বরগুনা জেলায় রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ১১৭। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৩ জন। আর এ সময়ে শুধু বরগুনাতেই এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৫২ জন। গত ৭ দিনে দেশের ৪৮১ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। শুধু বরগুনাতেই সাত দিনে রোগী বেড়েছে ২০৪ জন।
জেলায় এত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পেছনে কারণ কী তা জানে না বরগুনার সিভিল সার্জন অফিস। এ কার্যালয়ের কো–অর্ডিনেটর ডা.
আইসিডিডিআরবির সংক্রামক রোগ বিভাগের বিজ্ঞানী মোহাম্মদ শফিউল আলম বলছিলেন, কোন অঞ্চলে মশার প্রকোপ বাড়ছে তা জানা গেলে মশা দমনের কাজটা করা যায়। আবার নতুন কোনো সেরোটাইপ এলেও রোগ বাড়ে। তার অনুসন্ধানও দরকার।
বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি নাজুক হয়ে যাওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে জানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু এর জন্য সেখানে বিশেষ কোনো দল পাঠানো বা কারণ অনুসন্ধান এখনো হয়নি বলে জানান অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর হালিমুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। সেখানে কেন এমন হচ্ছে তা জানা জরুরি। এ বিষয়ে আইইডিসিআর উদ্যোগ নিতে পারে।’
ডেঙ্গুর এসব বিষয় দেখভাল করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘ঠিক কী কারণে বরগুনায় এ পরিস্থিতি তা এখনো পরিষ্কার নয়। আমাদের ল্যাবে হয়তো তথ্য আছে। সেটা এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। নতুন কোনো ধরন এল কি না, তা–ও এখনো পরিষ্কার নয়। তবে বিষয়টি নিয়ে জানার চেষ্টা আছে।’
জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘দেশের এই একটি জেলায় কেন এত ডেঙ্গুর প্রকোপ, এটা জানা জরুরি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো এর কারণ অনুসন্ধান না করে অবজ্ঞা করছে। আইইডিসিআর নিপাহ ভাইরাস বা ইনফ্লুয়েঞ্জার বিষয়ে যেভাবে পর্যবেক্ষণ করে, ডেঙ্গু অনেক ভয়ানক হলেও এর পর্যবেক্ষণ করে না।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বরগ ন
এছাড়াও পড়ুন:
মশা নিধনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে
চট্টগ্রামে এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব গত এক বছরে দ্বিগুণ হয়েছে, আর এর সরাসরি ফল ভোগ করছেন নগরবাসী। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, এবার ডেঙ্গুর চেয়েও চিকুনগুনিয়া ঘরে ঘরে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, যা এক নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। মশা নিধনে কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যোগের অভাবই এ রোগের দ্রুত বিস্তারের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। চট্টগ্রামে এভাবে জনস্বাস্থ্য ভেঙে পড়ার বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, চট্টগ্রাম নগর এডিস মশাবাহিত রোগের জন্য এখন অতি ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগ একই ধরনের জরিপ চালিয়েছিল। এই দুই জরিপের তুলনামূলক চিত্র আমাদের সামনে এক ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরে—এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব দুটিই আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।
২০২৪ সালে চট্টগ্রামে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব (ব্রুটো ইনডেক্স) ছিল ৩৬ শতাংশ, যা এবার আইইডিসিআরের গবেষণায় পৌঁছেছে ৭৫ দশমিক ২৯ শতাংশে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান যেখানে ২০ শতাংশ, সেখানে চট্টগ্রামের এ চিত্র রীতিমতো ভয়াবহ। বাসাবাড়িতেও লার্ভার উপস্থিতি বেড়েছে। গত বছর ৩৭ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেলেও এবার তা প্রায় ৪৮ শতাংশে পৌঁছেছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবার ডেঙ্গুর চেয়ে চিকুনগুনিয়ার রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আবার অনেকের ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া দুটিই হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। চলতি বছরেই ৭৬৪ জনের চিকুনগুনিয়া ও ৭৯৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে এবং ডেঙ্গুতে আটজন প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ছয়জনই মারা গেছেন এই জুলাই মাসে।
সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আইইডিসিআরের সুপারিশগুলো সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ চলছে। সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম দাবি করছেন যে মশকনিধনে ক্রাশ কর্মসূচি চলছে এবং নতুন জরিপ অনুযায়ী হটস্পট ধরে কাজ করা হচ্ছে। তবে প্রশ্ন হলো এ উদ্যোগগুলো কি যথেষ্ট? লার্ভার ঘনত্ব যেখানে তিন-চার গুণ বেশি, সেখানে গতানুগতিক কর্মসূচির ওপর নির্ভর করলে চলবে না।
মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার কোনো বিকল্প নেই। এ কাজে সিটি করপোরেশনকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। বাসাবাড়িতে নানা জায়গায় জমে থাকা স্বচ্ছ পানিও এডিস মশার প্রজননের জন্য যথেষ্ট। ফলে নাগরিকদের সচেতনতা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম শহরকে মশাবাহিত রোগের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে হলে স্থানীয় প্রশাসন, নগর কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে; নগরবাসীকে দ্রুত তৎপর হতে হবে।