প্রতিষ্ঠানের অজান্তে যেভাবে খালাস হয় ৪৩ হাজার কেজি এলপি গ্যাস
Published: 6th, June 2025 GMT
স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) কাছ থেকে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) কিনে ব্যবসা করে মেসার্স সাগরিকা এজেন্সি নামের একটি পরিবেশক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির বিস্ফোরক পরিদপ্তর থেকে নেওয়া লাইসেন্সের মেয়াদ পাঁচ বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে। নিয়ম অনুযায়ী, মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সধারী পরিবেশকের কাছে গ্যাস সরবরাহ করার সুযোগ নেই। কিন্তু এসএওসিএলের এলপিজি বিভাগের কর্মকর্তারা সেই নিয়ম মানেননি।
প্রথম আলোর অনুসন্ধান এবং এসএওসিএলের অভ্যন্তরীণ তদন্তে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে সাগরিকার নামে খালাস হয়েছে ৩০ হাজার কেজি গ্যাস।
একই ধরনের অনিয়ম হয়েছে মেসার্স ডিভি গ্যাস সাপ্লাই নামের আরেক পরিবেশকের ক্ষেত্রেও। এ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এরপরও তাদের নামে খালাস হয়েছে ১৩ হাজার ৬২৫ কেজি এলপিজি গ্যাস। অর্থাৎ দুই প্রতিষ্ঠানের নামে খালাস হয়েছে ৪৩ হাজার ৮১৩ কেজি গ্যাস।
এসএওসিএলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব গ্যাস সরবরাহ করেছেন প্রতিষ্ঠান দুটির মালিকদের অজান্তেই। এসএওসিএল বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। ১৯৬৫ সালে এটি যাত্রা শুরু করে। শুরুতে এখানে যানবাহনের ইঞ্জিন অয়েল উৎপাদিত হতো। পরে বিটুমিন, এলপিজি, ফার্নেস তেল ও ডিজেল বিপণনের দায়িত্বও দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানটিকে।
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর প্রথম আলোর শেষ পাতায় ‘পরিবেশক জানেন না, তাঁদের নামে খালাস হয় এলপি গ্যাস’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর এসএওসিএল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। গত ২২ মে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে প্রথম আলোর প্রতিবেদনের তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সধারী দুই প্রতিষ্ঠানের নামে সিলিন্ডার খালাসে অর্থের লেনদেন হয়েছে। ফলে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত করা উচিত। পাশাপাশি কোম্পানির আরও কেউ জড়িত ছিলেন কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা উচিত।আখতার কবির চৌধুরী, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদকতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাগরিকা এজেন্সির লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এরপর ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের নামে ১০৬টি ইনভয়েসের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয় ২ হাজার ৪১৫টি এলপিজি-ভর্তি সিলিন্ডার। প্রতিটি সিলিন্ডারে গ্যাসের পরিমাণ ছিল সাড়ে ১২ কেজি। সব মিলিয়ে সরবরাহ করা হয় ৩০ হাজার ১৮৭ কেজি গ্যাস।
অন্যদিকে ডিভি গ্যাস সাপ্লাইয়ের নামে ৫০টি ইনভয়েসের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয় ১ হাজার ৯০টি সিলিন্ডার, যার পরিমাণ ১৩ হাজার ৬২৫ কেজি গ্যাস।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে কোম্পানির এলপিজি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইনভয়েস অনুমোদনের ঘরে স্বাক্ষর করেছেন। কিছু ইনভয়েসে আবার কোনো স্বাক্ষরই ছিল না। এমনও দেখা গেছে, কর্মকর্তার উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও ইনভয়েসে স্বাক্ষর করেছেন একজন কর্মচারী।
তদন্ত প্রতিবেদনে ছয়টি ইনভয়েস নম্বর ও অনুমোদনকারীর তথ্য নমুনা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি খালাস হওয়া ইনভয়েস নম্বর ১০৭৩-এর অনুমোদন দেন এসএওসিএলের সহকারী ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) আবদুস সালাম মীর। একই দিনে ইনভয়েস নম্বর ১০৭৬-এর অনুমোদন দেন কোম্পানির কর্মচারী হযরত আলী। ওই বছরের ৩০ এপ্রিল ২২৪৫ নম্বরের একটি ইনভয়েস অনুমোদন করেন কনিষ্ঠ বিক্রয় সহকারী কায়ছার হামিদ।
এসএওসিএলের দুই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সধারী পরিবেশকের নামে গ্যাস সরবরাহ করার কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু এ নিয়ম ভেঙে গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। তবে যাঁদের নামে গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে, সেই পরিবেশকেরা এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না। ওই দুই কর্মকর্তা বলেন, এলপিজি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত তৎকালীন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পছন্দের পরিবেশককে সুবিধা দিতে অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে এই অনিয়ম করেছেন।
মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সধারী পরিবেশকের নামে গ্যাস সরবরাহ করার কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু এ নিয়ম ভেঙে গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। তবে যাঁদের নামে গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে, সেই পরিবেশকেরা এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না।ঘটনার পর সহকারী ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) আবদুস সালাম মীরকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত কমিটির কাছে কোনো বক্তব্য দেননি আবদুস সালাম মীর। একই বিষয়ে জানতে গত মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় এই প্রতিবেদক আবদুস সালাম মীরকে ফোন করেন। তিনি পরিচয় জানার পর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসএওসিএলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসী মাসুম প্রথম আলোকে বলেন, কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন তিনি পেয়েছেন। কোম্পানির বোর্ডের পরামর্শে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একটি উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।
গ্যাস সিলিন্ডার খালাসের এই অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সধারী দুই প্রতিষ্ঠানের নামে সিলিন্ডার খালাসে অর্থের লেনদেন হয়েছে। ফলে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত করা উচিত। পাশাপাশি কোম্পানির আরও কেউ জড়িত ছিলেন কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা উচিত।
আরও পড়ুনপরিবেশক জানেন না, তাঁদের নামে খালাস হয় এলপি গ্যাস০৮ ডিসেম্বর ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ স স ল ম ম র প রথম আল কর মকর ত ড স ম বর খ ল স হয় ব যবস থ র তদন ত কর ছ ন এলপ জ
এছাড়াও পড়ুন:
২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭% কমতে পারে, বাংলাদেশে কেন কমছে না
চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে দাম কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, চলতি বছরে সামগ্রিকভাবে পণ্যমূল্য ৭ শতাংশ কমবে। আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালে পণ্যমূল্য আরও ৭ শতাংশ কমবে। এ দাম হবে ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব নেই। দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখনো ৮ শতাংশের ঘরে। যদিও একসময় তা দুই অঙ্ক ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে। দেশের মানুষকে এখনো বাড়তি দামেই পণ্য ও সেবা কিনতে হচ্ছে। আগামী বছর নিত্যপণ্যের দাম কমবে কি না, সেই নিশ্চয়তাও নেই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশে এর প্রভাব কম।
বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক অক্টোবর ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। যার মূল কারণ হিসেবে তারা চিহ্নিত করেছে জ্বালানির দাম কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে আরও কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে তারা। সেগুলো হলো চীনে তেলের চাহিদা বৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া এবং বিশ্ববাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় তেলের দামে বড় ধরনের পতন ঘটা। খাদ্যপণ্যের দাম বছরের শুরু থেকে ধীরে ধীরে কমতে থাকে, কিন্তু বছরের প্রথমার্ধে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পানীয় পণ্যের দাম হঠাৎ অনেকটা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। মূলত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে মানুষ সোনার দিকে ছুটেছেন।
বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য নির্ধারণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে জ্বালানি তেলের দাম। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে জ্বালানির দাম আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে আরও ১০ শতাংশ কমবে। ২০২৭ সালে তা আবার প্রায় ৬ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ২০২৬ সালে কৃষিপণ্য, খাদ্য ও কাঁচামালের দাম কমবে। চলতি বছরেও এসব পণ্যের দাম কমেছে।
জ্বালানি তেলবিশ্বব্যাংকের ২০২৬ সালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়ায় গ্যাসের দাম কিছুটা বাড়লেও তেলের দাম কমে যাবে এবং সেই প্রভাবকে ছাপিয়ে যাবে। ২০২৫ সালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম হতে পারে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬৮ ডলার; ২০২৪ সালের ৮১ ডলারের তুলনায় যা বেশ কম। ২০২৬ সালে এই দাম আরও কমে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬০ ডলারে নামতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
এই পূর্বাভাস অনুযায়ী, তেলের ব্যবহার বৃদ্ধির হার আরও কমবে—মূলত চীনের চাহিদা কমে যাওয়া, বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির দ্রুত প্রসার ও বৈশ্বিক তেল সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
২০২৫ সালে বৈশ্বিক তেলের বাজারে সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২৬ সালে তা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২০ সালের সর্বোচ্চ মাত্রার তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি হবে এ সরবরাহ।
কৃষিপণ্যবিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, কৃষিপণ্যের মূল্যসূচক ২০২৫ সালে স্থিতিশীল আছে। ২০২৬ সালে তা সামান্য ২ শতাংশ ও ২০২৭ সালে আরও ১ শতাংশ কমবে।
খাদ্যপণ্যের দাম, যেমন শস্য, তেল, প্রোটিনজাত খাবারসহ অন্যান্য খাদ্যের দাম সাম্প্রতিক সীমার কাছাকাছি থাকবে। তবে মাঝেমধ্যে সামান্য কিছুটা ওঠানামা থাকবে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রধান ফসলগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির হার আবার দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতায় ফিরে আসছে।
২০২৫ সালের বাকি সময়ে সয়াবিনের দাম কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের যে সয়াবিন সাধারণত চীনে রপ্তানি হয়, তা এবার কম দামে অন্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে হতে পারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্রে হচ্ছে এই সয়াবিন। চীন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সয়াবিন কিনছে না। ফলে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে এই পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্ববাজারে দাম কমে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিন চাষের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে, তবে ব্রাজিল তার সয়াবিন আবাদ আরও বাড়ানোর পথে রয়েছে। পানীয় পণ্যের দাম ২০২৬ সালে ৭ শতাংশ ও ২০২৭ সালে প্রায় ৫ শতাংশ কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এদিকে চলতি বছর সারের দাম সামগ্রিকভাবে ২১ শতাংশ বাড়তি। চাহিদা বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা ও কিছু অঞ্চলে সরবরাহ–ঘাটতির কারণে এ দাম বেড়ে যাওয়া। ২০২৬ ও ২০২৭ সালে দাম প্রায় ৫ শতাংশ কমতে পারে। তবু ২০১৫-১৯ সালের গড় দামের তুলনায় তা অনেক বেশি থাকবে। এর কারণ হলো উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, রপ্তানি সীমাবদ্ধতা ও চলমান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা।
চীন ইতিমধ্যে নাইট্রোজেন ও ফসফেট সার রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। অন্যদিকে পটাশ সরবরাহকারী বড় দেশ বেলারুশ এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে। রাশিয়া ও বেলারুশ—উভয় দেশই সারের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপিত নতুন শুল্কের সম্মুখীন।
দেশে কেন দাম বেশিবিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজার দাম না কমার অন্যতম প্রধান কারণ ডলারের দামের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। গত তিন বছরে ডলার দাম অনেকটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে দেশের অনেক আমদানি পণ্যে শুল্ক বেশি বলে মনে করেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে দাম কমছে না। বাজারে চাহিদা কত বা কখন কোন পণ্য আমদানি করতে হবে, সে বিষয়ে যথাযথ তথ্যের ঘাটতি আছে। ফলে সময়মতো পণ্য আমদানি হয় না।
আরেকটি বিষয় হলো দেশে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, তার অনেক কিছু উৎপাদিতও হয়। কিন্তু বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এসব পণ্যের সরবরাহে টান পড়েছে। বাজারের পণ্যমূল্যে তার প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন মোস্তাফিজুর রহমান।
তিন বছর আগে দেশে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। এখন তা বেড়ে ১২২ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক মাস ধরে আমদানির ঋণপত্র খোলাও কমেছে। এতে আমসদানিতে চাপ পড়ছে।
দেশের বাজার উচ্চ মূল্যের কারণ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সেলিম রায়হান বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি, কৃষি ও খাদ্যপণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। জ্বালানি ও পরিবহন ব্যয়, শুল্ক ও করের চাপ ও বাজার ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার কারণে দাম কমছে না। পাইকারি থেকে খুচরা পর্যন্ত অতি মুনাফা ও অস্বচ্ছ বাণিজ্যিক শৃঙ্খলের কারণেও বাজারে কৃত্রিমভাবে উচ্চমূল্য বিরাজ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টাকার অবমূল্যায়ন। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক মূল্যহ্রাসের সুফল ভোক্তাপর্যায়ে পড়ছে না।
সেলিম রায়হান আরও বলেন, এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কারণ ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীরা নতুন ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। পণ্য পরিবহন ও আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সরবরাহ শৃঙ্খল দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে পণ্যের ঘাটতি ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
দেশে তিন বছর ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। সম্প্রতি তা কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত আগস্ট মাসে এই হার ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।