জাতিগত সহিংসতায় বিপর্যস্ত উত্তর ভারতের রাজ্য মণিপুরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। চরমপন্থী একটি গোষ্ঠীর কয়েক সদস্যকে গ্রেপ্তারের ঘটনার পর এ বিক্ষোভ শুরু হয়। আর ঘটনার পর রাজ্য সরকার ইন্টারনেট বন্ধ ও কারফিউ জারি করেছে বলে আজ রোববার পুলিশ জানিয়েছে।
উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুর রাজ্যে দুই বছরের বেশি সময় ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু মেইতেই ও প্রধানত খ্রিষ্টান কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে একের পর এক সহিংস সংঘর্ষ হয়ে আসছে। এসব সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ২৫০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন।
সর্বশেষ সহিংসতা শুরু হয় গতকাল শনিবার। চরমপন্থী মেইতেই গোষ্ঠী ‘আরামবাই তেংগোল’-এর পাঁচ সদস্য গ্রেপ্তার হওয়ার খবরের পরই এ সংঘর্ষ শুরু হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে একজন কমান্ডারও রয়েছেন।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ জনতা তাঁদের মুক্তির দাবিতে এক পুলিশ পোস্টে হামলা চালান, একটি বাসে আগুন লাগান এবং ইম্ফলের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা অবরোধ করেন।
মণিপুর পুলিশ ইম্ফল পশ্চিম, বিষ্ণুপুরসহ পাঁচটি জেলায় কারফিউ জারি করেছে ‘বিপজ্জনক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির’ কারণে।
পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নাগরিকদের অনুরোধ করা হচ্ছে, এ নির্দেশনার সঙ্গে সহযোগিতা করুন।’
আরামবাই তেংগোলের বিরুদ্ধে কুকি সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ আছে। এ ঘটনার পর তারা উপত্যকার জেলাগুলোয় ১০ দিনের ‘বন্ধ্’ ঘোষণা করেছে।
রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উত্তপ্ত জেলাগুলোয় পাঁচ দিনের জন্য ইন্টারনেট ও মোবাইল ডেটা পরিষেবা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে, যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
২০২৩ সালে সহিংসতার সূচনালগ্নে মণিপুরে মাসের পর মাস ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। ওই সময় সরকারি হিসাবে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন।
আজও হাজার হাজার মানুষ চলমান সংঘাতের কারণে ঘরে ফিরতে পারছেন না।
মেইতেই ও কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিরোধের মূল কারণ হলো জমি ও সরকারি চাকরিসংক্রান্ত বিষয়।
মানবাধিকারকর্মীরা অভিযোগ করছেন, স্থানীয় নেতারা রাজনৈতিক স্বার্থে জাতিগত বিভাজনকে আরও উসকে দিচ্ছেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় চরমপন্থী নেতা লিপটন ৩ সহযোগীসহ গ্রেপ্তার, পিস্তল-গুলি অস্ত্র উদ্ধার
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আলোচিত চরমপন্থী সংগঠন গণমুক্তি ফৌজের শীর্ষ নেতা জাহাঙ্গীর কবির ওরফে লিপটনকে তিন সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নের দুর্বাচারা গ্রামে জাহাঙ্গীর কবিরের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কাগজে–কলমে জাহাঙ্গীর কবির নাম হলেও তিনি পুলিশের তালিকা ও এলাকায় লিপটন (৪৮) নামে পরিচিত। দুর্বাচারা গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে তিনি। গতকাল রাতে সেনাবাহিনী তাঁর বাড়িতে পাঁচ ঘণ্টা অভিযান চালায়। এ সময় আশপাশের এলাকার কয়েক শ নারী-পুরুষ ওই বাড়ির সামনে হাজির হয়ে লিপটনের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। অভিযানে ওই বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ দেশি–বিদেশি অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী।
গ্রেপ্তার হওয়া অন্যরা হলেন একই গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ রাকিব (৩৮), জহির ইসলামের ছেলে লিটন হোসেন (২৬) ও আবদুল মজিদের ছেলে সনেট হাসান (৪৫)।
সেনা, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাতে সেনাবাহিনীর ৩০–৪০ জন সদস্য লিপটনের বাড়িতে অভিযানে অংশ নেন। তাঁদের সঙ্গে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা-পুলিশের একটি দলও পরে যোগ দেয়। রাত থেকে শুরু হওয়া অভিযান চলে আজ শুক্রবার সকাল আটটা পর্যন্ত। এর মাঝে তিন সহযোগীসহ আটক করা হয় লিপটনকে। এ সময় তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৬টি বিদেশি পিস্তল, ১টি লং ব্যারেলগান, ১০টি ম্যাগাজিন, ১৪০টি গুলি, ৮টি শিল্ড, ৬টি বল্লমসহ অন্যান্য সরঞ্জাম।
পুলিশ জানিয়েছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর পালিয়ে বিদেশে অবস্থান করছিলেন জাহাঙ্গীর কবির লিপটন। এরপর গোপনে আবার দেশে ফিরে আসেন।
পুলিশ ও সেনা সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ ও সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের ছত্রচ্ছায়ায় নানা অপকর্ম করে আসছিলেন লিপটন। সরকার পতনের পর কিছুদিন গা ঢাকা দেন তিনি। এর মধ্যে নিজের এলাকায় বাড়ি জেলা বিএনপির এক নেতার সঙ্গে ‘মামা সম্পর্ক’ স্থাপন করে সখ্য গড়ে তোলেন। ওই নেতার নাম ভাঙিয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছিলেন লিপটন। এসব অভিযোগে কয়েক মাস ধরে তাঁর গতিবিধির ওপর নজর রাখছিল সেনাবাহিনীর একটি গোপন দল। গতকাল রাতে বাড়িতে অবস্থান করছেন, এমন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী।
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, লিপটন পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তাঁর নামে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, চাঁদাবাজির ঘটনায় মামলা আছে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে শতাধিক জিডি আছে।