কাজ করিয়ে মজুরি দেননি আড়তদার, চামড়া শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ
Published: 9th, June 2025 GMT
মজুরি না পাওয়ায় চট্টগ্রাম-হাটহাজারী সড়কের এক পাশ অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন চামড়ার আড়তের প্রায় দেড় শ শ্রমিক। তাঁরা সবাই মেসার্স এআই লেদার নামের একটি আড়তে চার দিন ধরে কাজ করেছেন। শ্রমিকদের কেউ ৬ হাজার, কেউ ৮ হাজার টাকা করে পান বলে জানান।
আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় আতুরার হাটহাজারী সড়কের আতুরার ডিপো এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকেরা আড়তের সামনে ড্রাম, চেয়ার ফেলে এক পাশ আটকে রেখেছেন। তাঁরা মজুরির টাকা পরিশোধের দাবিতে নানা স্লোগান দেন। তবে পুলিশের আশ্বাসের পর দুপুর ১২টায় সড়ক থেকে উঠে যান শ্রমিকেরা। এরপর যান চলাচল শুরু হয়।
মোহাম্মদ রাজু নামের এক শ্রমিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেউ তিন দিন, কেউ চার দিন ধরে আড়তে কাজ করছেন। রাতদিন এক করে কাজ করতে হয়েছে। ঈদের আনন্দ করারও সময় পাই নাই। মজুরি দেওয়ার কথা ছিল গতকাল রোববার রাতে। টাকা না দিয়ে ঘোরাচ্ছেন আড়তদার। এ কারণে রাস্তায় নেমেছি।’
আরেক শ্রমিক ফজলে রাব্বি বলেন, ‘গতকাল রাতে টাকা দিতে পারেননি। আজ বেলা ১১টা পর্যন্ত সময় নিয়েছিলেন। সেই কথাও রাখতে পারেননি আড়তদার। টাকা না দিলে কেন কাজে ডেকেছেন, সে জবাব দিতে হবে।’
নোয়াখালীর বাসিন্দা আবদুল কাদের ঢাকায় একটি চামড়ার আড়তে কাজ করেন। অন্য এক ব্যক্তির মাধ্যমে ঈদের চার দিন এআই লেদারে কাজ করার প্রস্তাব পান। চার দিনে ৮ হাজার টাকা পাওয়ার কথা তাঁর। টাকা না পেয়ে তিনি ক্ষুব্ধ। কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদে বাড়িতে না গিয়ে চট্টগ্রামে এসেছিলাম কয়েক হাজার টাকা আয়ের জন্য। এখন টাকা পাব কি পাব না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।’
মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম নামের আরেক শ্রমিক জানান, ঈদ উপলক্ষে প্রায় দেড় শ জন শ্রমিক কাজ করেছেন। চামড়ায় লবণ দেওয়া, পরিষ্কার করা, গাড়ি থেকে নামানোসহ সব কাজই করতে হয়েছে। ঘুমানোর সময়ও পাননি। অথচ মজুরি দেওয়ার বেলায় গাফিলতি করছেন আড়তদার। টাকা না দিলে কেন কাজে ডেকেছেন। এ জবাব দিতে হবে।
শ্রমিকের মজুরি না দেওয়ার বিষয়ে আড়তদার মোহাম্মদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘একজন ঠিকাদারের মাধ্যমে শ্রমিকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। গতকাল শ্রমিকেরা ঠিকমতো কাজ করেননি। এ কারণে চামড়া জমে গিয়েছিল। চামড়া বাঁচাতে আমার কাজ করতে হয়েছে। হিসাব–নিকাশ করতে পারিনি। এখন ঠিকাদার আমাকে শ্রমিকের একটা হিসাব দেবে। সে হিসাব অনুযায়ী মজুরি পরিশোধ করব।’
মোহাম্মদ আলী আরও বলেন, ‘গতকাল আমরা খুব সমস্যায় ছিলাম। আমি কথা বলতে পারছি না। আমার ব্রেনও কাজ করছে না। এ কারণে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য আমি রাতে বাসায় চলে যাই।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ আড়তদ র ক জ কর গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
চামড়ার ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই খুশি নন
ঈদের দিন দুপুর থেকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, সায়েন্সল্যাব, গুলশান-২ ও পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকা থেকে চামড়া সংগ্রহ শুরু করেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। প্রতিবারের মতো এবারও প্রত্যাশিত দাম না পেয়ে হতাশ তারা। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদা মতো চামড়া দাম পাচ্ছি না। গরুর চামড়া মানভেদে ৬০০-৭৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে ছাগলের চামড়া কিনতে আগ্রহ নেই।
শনিবার বিকেলে গুলশান-২ মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এতিমখানার লোকজন ভ্যানে চামড়া এনে জড়ো করছে। চাহিদা মতো দাম না পাওয়া বিক্রি করছেন না তারা।
২০টি চামড়া বেচতে আসা কবির বলেন, একটি বড় গরুর চামড়া কিনে এনেছি ৮০০ টাকা দিয়ে। আর তারা বলছে ৭০০ টাকা। তাহলে কীভাবে বিক্রি করব।
সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ১৫টি কাঁচা চামড়া বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ী জাফর আহমেদ। তিনি বলেন, কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে এসব চামড়া ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে কিনে এনেছি। কিন্তু কোনো আড়তদার বা ট্যানারি প্রতিষ্ঠান ৭৫০ টাকার ওপরে দাম দিতে চায় না। তাই বাধ্য হয়ে ৭৫০ টাকা দরেই সব চামড়া বিক্রি করেছি।
মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকায় থেকে চামড়া ক্রয় করেন মৌসুমি ব্যবসায়ী শেখ বাবুল। তিনি বলেন, বিকেল পর্যন্ত ৬০টির বেশি চামড়া কিনেছেন। প্রতিটি চামড়া গড়ে ৭০০ টাকা পড়েছে।
আরেক ব্যবসায়ী বাবু বলেন, এক হাজার চামড়া আছে। বিক্রি হয়নি। সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে। গতবার তো ৯০০–১০০০ টাকা দিয়েছিল। এবার চরম ক্ষতিতে যাচ্ছি।
আড়তদার চামড়া সংগ্রহ করে লবণ মিশিয়ে তা সংরক্ষণ করেন। পরে লবণ মেশানো চামড়া যায় ট্যানারিতে। ট্যানারি ব্যবসায়ীরা এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় কিনবেন, গত বছর এই দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। আর ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম হবে ৫৫ টাকা ৬০ টাকা গতবছর যা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা ছিল।
এছাড়া সারাদেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২২ থেকে ২৭ টাকা দরে বিক্রি হবে ট্যানারিতে, যা গত বছর ছিল ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা। আর বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুটের দাম ২০ থেকে ২২ টাকা, যা আগের বছর ছিল ১৮ টাকা থেকে ২০ টাকা।