দেশের চার ভাগের এক ভাগ ডেঙ্গু রোগী বরগুনায়। ইতোমধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে জেলায় মারা গেছেন ৭ জন। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫শ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে জেলায়। ১৫৮ জন ভর্তি রয়েছেন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে। 

এ পরিসংখ্যানই বলে দেয় বরগুনা জেলা এখন ডেঙ্গু হটস্পট। তারপরও জেলাটিকে ‘ডেঙ্গু হটস্পট’ ঘোষণা না করা এবং জরুরি ব্যবস্থা না নেওয়ায় রাস্তায় নেমেছে বরগুনার সাধারণ মানুষ।  

মঙ্গলবার (১০ জুন) সকাল ৯টায় প্রেসক্লাব চত্বরে সর্বস্তরের সাধারণ জনগণের ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারী কর্মীরা। পরে সকাল ১১টায় একই স্থানে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বরগুনা সদর উপজেলা বিএনপি।

বরগুনা সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি তালিমুল ইসলাম পলাশের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ বিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ উজ জামান মামুন, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা এবং সাবেক সহ-সভাপতি এ জেড এম সালেহ ফারুক। 

বরগুনার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী নাসরিন আক্তার শিমু বলেন, ‘‘বরগুনার জেনারেল হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা এবং প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে বরগুনায় তাদের সহকর্মী স্থানীয় উদ্যোক্তা মোনালিসা জেরিন এবং কিশোরী উপমাসহ ১০ জনেরও বেশি মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছে। ভয়াবহ পরিস্থিতি ধারণ করেছে ডেঙ্গু। যে কোনো সময় এ পরিস্থিতি আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেতে পারে। যা সামাল দেওয়া রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব হবে না।’’

বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লার কন্যা উপমা এবং সাবেক সংসদ সদস্য জাফরুল হাসান ফরহাদের কন্যা মোনালিসা জেরিনসহ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকজনের অকালমৃত্যুর পরে রাস্তায় নেমেছে সাধারণ মানুষ। 

বরগুনা প্রেসক্লাবের মধ্যস্থতায় স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনের নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে জরুরি ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে বরগুনার জেনারেল হাসপাতালে পর্যাপ্ত ডাক্তার এবং নার্স নিয়োগের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে একাধিক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফোরাম নামে এসব সভা সমাবেশের আয়োজন করে বরগুনা প্রেসক্লাব ও স্থানীয় সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। এসব কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় গত কয়েকদিনে জেলা প্রশাসন, পৌর পরিষদ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করে বরগুনার স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফোরামের নেতৃবৃন্দ।

বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাড.

সোহেল হাফিজ বলেন, ‘‘বাংলাদেশে যেখানে সাড়ে ৪ হাজার রোগী সেখানে শুধু বরগুনা জেলায় দেড় হাজার ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বরগুনার সিভিল সার্জনসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকগণ কিছুতেই ছুটিতে যেতে পারেন না। মাত্র ১০ জন ডাক্তার নিয়ে এমন জরুরি পরিস্থিতি সামলানো হাস্যকর। তাই জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইতোমধ্যেই বরগুনা প্রেসক্লাবের মধ্যস্থতায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফোরাম গঠন করা হয়েছে। করণীয় নির্ধারণে জেলা প্রশাসন স্বাস্থ্য বিভাগ এবং পৌর প্রশাসনের সাথে একাধিক আলোচনা সভা করা হয়েছে। এতেও পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। নজিরবিহীন ডাক্তার ও নার্স সংকটের কারণে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছে না।’’

বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘‘ডেঙ্গু মশার ভয়াবহ উপদ্রব এবং বরগুনার চিকিৎসা সেবার অচল অবস্থার কারণে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বরগুনায়। এভাবে একটি জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চলতে পারে না।’’

কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ উজ জামান মামুন বলেন, ‘‘বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে বরগুনা পৌরসভা, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সকলেরই দায়িত্বহীনতা রয়েছে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য সচিব কেন বরগুনায় আসলেন না? স্বাস্থ্য উপদেষ্টা কেন আসলেন না তার জবাব দিতে হবে জনগণের কাছে।’’

ব্যর্থতার দায় নিয়ে তাদের পদত্যাগ দাবি করেন তিনি।

ইমরান//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ র স পর স থ ত বরগ ন য ল ইসল ম বরগ ন র

এছাড়াও পড়ুন:

আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিলেন ইশরাক হোসেন

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে ঈদের বিরতির পর ফের অবস্থান নিয়েছেন সংস্থাটির কর্মচারীরা। এর সঙ্গে ঢাকাবাসীর ব্যানারে নগরভবনে একত্রিত হয়েছেন ইশরাকের অনুসারীরা। সেখানে উপস্থিত হয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ইশরাক হোসেন।

আজ রোববার সকাল থেকে ইশরাকের অনুসারীরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগরভবনে একত্রিত হয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করলেও। সকাল ১১ টার দিকে নগরভবনে প্রবেশ করেন ইশরাক হোসেন এবং আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তিনি।

ইশরাক হোসেন বলেন, সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করেন। তাহলে অচল অবস্থা কেটে যাবে। এই সমস্যা সুরাহা না করা পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এই আন্দোলন চলমান থাকবে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা সংবিধান লংঘন করেছেন। আন্দোলন চলমান থাকবে। এখান থেকে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই। এই লড়াই থেকে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই। প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানাবো, তিনি যেন বিষয়টি সরাসরি নিজে তত্ত্বাবধান করেন। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনায় বিশ্বাস করি। এখন আমাদের আন্দোলন যেভাবে চলছে কোনো অবস্থাতেই আমরা এখান থেকে ফিরে যেতে পারি না। আদালতের রায় জনগণের রায়কে আপনারা মেনে নিন। 

ইশরাক বলেন, আমরা যদি এখান থেকে পেছনের দিকে চলে যাই, তাহলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। সরকারকে আহ্বান জানাবো, আপনারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটা নিষ্পত্তি করেন। নইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এই সংকটে চলবেই। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের যেসব দৈনন্দিন কার্যক্রম চলবে, জনগণের জন্য ভোগান্তি না হয়। এগুলো আমাদের তত্ত্বাবধানে চলমান থাকবে।

এদিকে তারা ‘শপথ শপথ শপথ চাই, ইশরাক ভাইয়ের শপথ চাই’, ‘মেয়র নিয়ে তালবাহানা, সহ্য করা হবে না’, ‘চলছে লড়াই চলবে, ইশরাক ভাই লড়বে’, ‘নগর পিতা ইশরাক ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’- এমন নানা স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। তাদের স্লোগানে উত্তাল ছিল পুরো নগরভবন। তাদের আন্দোলনের ফলে বিরতির আগে ১৫ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত নগর ভবন থেকে দেওয়া সব নাগরিক সেবা বন্ধ ছিল। ঈদের ছুটির পর আজ থেকে ফের তারা আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন ইশরাকের অনুসারীরা।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। সে সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয়; সেজন্য গত ১৪ মে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে গত ১৫ মে থেকে আন্দোলন নামেন ইশরাক সমর্থকরা। তাদের আন্দোলনের কারণে ডিএসসিসি নগর ভবন কার্যত অচল হয়ে পড়ে। কিন্তু আইনি জটিলতার কথা বলে ইশরাকের শপথের আয়োজন থেকে বিরত থাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

এরপর এ রিট মামলার ওপর কয়েক দফা শুনানির পর তা খারিজ করে আদেশ দেন হাইকোর্টের বেঞ্চ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাগরিকেরা কেন সেবাবঞ্চিত থাকবেন
  • ইরানে হামলা কি মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেবে
  • মহাসমাবেশে পঞ্চাশ হাজার লোক নিয়ে উপস্থিত হব ইনশাআল্লাহ :  মুফতি মাসুম বিল্লাহ
  • নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করলেন মুফতি আমির হামজা
  • বিসিএস ক্যাডার এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যে তুলনা কেন?
  • বিসিএস ক্যাডার ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যে তুলনা কেন?
  • লন্ডন বৈঠকে কারও দায়মুক্তির প্রসঙ্গ ছিল না: সালাউদ্দিন আহমেদ
  • ইরানের শাসকদের ক্ষমতাচ্যুত করার আহ্বান সাবেক শাহের পুত্রের
  • আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন ইশরাক হোসেন
  • আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিলেন ইশরাক হোসেন