দর্শকে ঠাসা বুয়েন্স আয়ার্সের মনুমেন্টাল স্টেডিয়ামে উত্তেজনাপূর্ণ এক ম্যাচে কলম্বিয়ার সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছে আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধে লুইস দিয়াজের গোলে পিছিয়ে পড়লেও দ্বিতীয়ার্ধে থিয়াগো আলমাদার দুর্দান্ত গোলে সমতা ফেরায় স্বাগতিকরা। ম্যাচের প্রতি পরতে পরতে যোগ হয় রোমাঞ্চ। লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন এনজো ফার্নান্দেজ, ফলে ১০ জন নিয়েই ম্যাচ শেষ করতে হয় আর্জেন্টিনাকে।

প্রথমার্ধ শেষে ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল কলম্বিয়া। তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আক্রমনাত্মক হয়ে ওঠে আর্জেন্টিনা। ৬০ মিনিটে রিচার্ড রিয়োসের শটটি দুর্দান্ত সেভ করেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। পাল্টা আক্রমণে আর্জেন্টিনাও সুযোগ পায়। ৬৩ মিনিটে এনজোর শট পোস্টের উপর দিয়ে যায়। এরপর ৬৮ মিনিটে মেসির ফ্রি কিক থেকে নিকো গনজালেস শট নিলেও তা সাইড-নেটিংয়ে লেগে বাইরে চলে যায়।

৭১ মিনিটে ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। বল দখলের লড়াইয়ে কলম্বিয়ান ক্যাস্তানোর মাথায় লাথি মারেন এনজো ফার্নান্দেজ। রেফারি সঙ্গে সঙ্গে লাল কার্ড দেখান তাকে। এতে ১০ জনের দলে পরিণত হয় আর্জেন্টিনা। কিন্তু এতেও হাল ছাড়েনি স্বাগতিকরা। ৮১ মিনিটে দ্রুত থ্রো-ইন থেকে বল পেয়ে বক্সে ঢুকে বাঁদিকে এগিয়ে গিয়ে নিখুঁত শটে গোল করেন থিয়াগো আলমাদা। স্টেডিয়ামে উল্লাসে ফেটে পড়েন আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা।

৮৬ মিনিটে আবারও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় কলম্বিয়া। লুইস দিয়াজের ক্রসে রিয়োসের হেডার পোস্টে লেগে বাইরে চলে যায়। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময় ও অতিরিক্ত সাত মিনিট খেলা শেষে ১-১ গোলে সমতায় শেষ হয় ম্যাচ।

ম্যাচের শুরুতে দুই দলই পাল্টাপাল্টি আক্রমণে চালায়। চতুর্থ মিনিটেই গোলের সম্ভাবনা জাগান মেসি। ফ্রি-কিক থেকে কলম্বিয়ার ডিফেন্স বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলে আবার আক্রমণে ফেরেন এনজো। তিনি মেসিকে বল বাড়ান, কিন্তু মেসির বাঁ পায়ের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

১৬ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে সুযোগ পেয়েছিল কলম্বিয়াও। হামেস রদ্রিগেজের থ্রু পাস ধরে বক্সে ঢুকে শট নেন মাচাদো, তবে গোলপোস্টের বাইরে দিয়ে যায় বল। ২২ মিনিটে আবার সুযোগ আসে আর্জেন্টিনার সামনে। বক্সের বাইরে থেকে আলভারেজ নেওয়া শট ঠেকিয়ে দেন কলম্বিয়ার গোলরক্ষক।

অবশেষে ২৪ মিনিটে খেলা জমিয়ে দেন লুইস দিয়াজ। বাঁ প্রান্ত থেকে বল নিয়ে একের পর এক তিন জন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে দুর্দান্তভাবে গোলটি করেন তিনি। এমিলিয়ানো মার্টিনেজ কোনোভাবেই রুখে দিতে পারেননি এই গোল। ৩০ মিনিটে সমতা ফেরানোর সুযোগ পেয়েও হতাশ হতে হয় আর্জেন্টিনাকে। প্রথম শটটি ঠেকালেও এনজো ফার্নান্দেজের গোলটি অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায়।

৩৯ মিনিটে আবারও গোলের কাছাকাছি গিয়েছিল স্বাগতিকরা। আলভারেজের সামনে ছিল পরিষ্কার সুযোগ, কিন্তু সানচেজ সময় মতো ব্লক করে সেই চেষ্টা ব্যর্থ করে দেন। যদিও ম্যাচ শেষের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বল দখল ও আক্রমণে এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনাই। মেসিদের দখলে বল ছিল ম্যাচের ৬৪ শতাংশ সময়, আর কলম্বিয়া বল দখলে রেখেছে ৩৬ শতাংশ সময়। তবে গোলবারে শট বেশি ছিল কলম্বিয়ার। রদ্রিগেজরা ১১ শটের ৫টিই গোলমুখে রেখেছে। অন্যদিকে আর্জেন্টিনা ১০ শটের মধ্যে মাত্র ৩টি গোলমুখে রাখতে পেরেছে। ঘরের মাঠে দীর্ঘদিন পর ফিরে মেসিও ছিলেন নিষ্প্রভ। ৭৮ মিনিট মাঠে থেকে মাত্র ৪টি শট নিয়েছেন আর্জেন্টিনার এই ‘ফুটবল রাজা’।

এই ড্রয়ের পরও পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষেই থাকছে আর্জেন্টিনা। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আর জ ন ট ন কলম ব য় আর জ ন ট ন কলম ব য় র

এছাড়াও পড়ুন:

ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ক্ষমা চাওয়ার পরই খেলতে রাজি হয়েছিল পাকিস্তান

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে টসের আগ পর্যন্ত দারুণ নাটকীয়তায় ঘেরা ছিল পাকিস্তানের ড্রেসিং রুম। ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্টকে দায়িত্ব থেকে সরানোর দাবি তোলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তবে আইসিসি সে দাবি আমলে নেয়নি। শেষ পর্যন্ত নিজের ভুল স্বীকার করে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আগা ও দলের ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান পাইক্রফ্ট। এরপরই মাঠে নামতে রাজি হয় পাকিস্তান দল।

ঘটনার সূত্রপাত ১৪ সেপ্টেম্বরের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকে। টসের সময় দুই অধিনায়কের করমর্দন হয়নি। আরও বড় বিতর্ক তৈরি হয় ম্যাচ শেষে। জয়ী ভারতের ক্রিকেটাররা করমর্দন এড়িয়ে দ্রুত ড্রেসিং রুমে ফিরে যান। সালমান আলী আগার নেতৃত্বে পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেও সূর্যকুমার যাদব, শিভাম দুবেসহ পুরো ভারতীয় দল সেই শিষ্টাচার মানেনি।

আরো পড়ুন:

আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান, যে ম্যাচে ঝুলছে বাংলাদেশের ভাগ্য

আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

এমন ঘটনার প্রতিবাদে পাকিস্তান অধিনায়ক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বর্জন করেন। পরে আইসিসির কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানায় পিসিবি। তাদের দাবি ছিল, ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ইচ্ছাকৃতভাবেই দুই অধিনায়কের হাত মেলানো আটকান, যা আইসিসির আচরণবিধি ও ক্রিকেটের স্পিরিটের পরিপন্থী।

যদিও আইসিসির ব্যাখ্যা ছিল ভিন্ন। তারা জানায়, এসিসির কর্মকর্তাদের নির্দেশেই কাজ করেছেন পাইক্রফ্ট। কিন্তু পাকিস্তান নড়েচড়ে বসে। এমনকি জানিয়ে দেয়, পাইক্রফ্ট দায়িত্বে থাকলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামবে না তারা। এই হুমকির কারণে ম্যাচের শুরুর সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় আয়োজকরা।

লাহোরে রমিজ রাজা, নাজাম শেঠিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। পরে সমঝোতার পথ খোঁজা হয়। অবশেষে পাইক্রফ্ট স্বীকার করেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণেই পরিস্থিতি এতদূর গড়ায়, এবং তিনি পাকিস্তান অধিনায়ক ও ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান। তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান দল।

বুধবার রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের সেই শেষ ম্যাচে আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে সুপার ফোরে ভারতের সঙ্গী হয় সালমান-শাহীনরা। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভারে ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় আরব আমিরাত।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ