আমার ১১ মাসের প্রেমিকা অন্যের সঙ্গে পালিয়ে গেছে
Published: 11th, June 2025 GMT
প্রশ্ন: আমার ১১ মাসের প্রেমিকা অন্যের সঙ্গে পালিয়ে গেছে। এই ১১ মাস সে আমার পরিবারের সঙ্গেও মেলামেশা করেছে। আমাদের বাড়িতেও তার যাতায়াত ছিল। এর মধ্যে এক মাস আগে আমি ঢাকায় আসি চাকরি করতে। এ সময় সে আরেকটি ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে। তার এই দ্বিতীয় প্রেমের কথা তার পরিবারও জানত না। অথচ তার জোরাজুরিতেই আমি চাকরিতে ঢুকেছিলাম।
এখন শুনছি সে ওই ছেলের সঙ্গেও দীর্ঘদিন ধরে প্রেম করেছে। মানে আমাদের সঙ্গে ডাবল টাইমিং করেছে। ছেলেটি তিন বছর পর কোরিয়া থেকে দেশে ফিরেই মেয়েটিকে বিয়ে করেছে বলে জেনেছি। অথচ আমাদের প্রেমের কথা সবাই জানত। আমরা এই ১১ মাসে পাঁচ-ছয়বার ঘনিষ্ঠ হয়েছি। আমি সামাজিকভাবে এখন অপদস্থ হচ্ছি। মেয়েটি আমার সঙ্গে সম্পর্কে থাকা অবস্থায় আনুমানিক ২০ হাজার টাকার মতো নগদ নিয়েছে, তবে সেটা কয়েকবারে। আমি এখন মেয়েটির নামে মামলা করতে পারব? পরামর্শ চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর: আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আপনি জানিয়েছেন, আপনি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। পরে সে আরেকটি ছেলের সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করেছে। বিভিন্ন সময় আপনি প্রেমিকাকে টাকা দিয়েছেন। আইনে প্রেমে প্রতারণাবিষয়ক প্রত্যক্ষ কোনো ধারা বা অনুচ্ছেদ নেই। প্রেম বা বিয়ে যেকোনো ক্ষেত্রে ভাঙন আসতেই পারে। তবে দুই পক্ষের উচিত ছিল সম্মানজনকভাবে সেটি থেকে বেরিয়ে আসা। যদি আপনার মনে হয় মেয়েটি অর্থ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে এবং প্রতারণার মাধ্যমে আপনাকে ঠকিয়েছে, তবে সে ক্ষেত্রে প্রমাণ সাপেক্ষে আইনগত প্রতিকার পেতে পারেন।
আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি প্রতারণামূলক বা অসাধু উপায়ে কোনো ব্যক্তিকে কোনো অর্থসম্পত্তি প্রদানে প্ররোচিত করেন, তাহলে তা হবে প্রতারণা। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তিকে এমন কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত থাকতে প্ররোচিত করেন, যার ফলে ওই ব্যক্তির শরীর, মন বা সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কা থাকে; তাহলে সেটি প্রতারণা হবে।
দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, ‘কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করে তাঁর কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করেন, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা হবে। এ অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে।’
আরও পড়ুনপ্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে আবার ফিরে এসেছেন স্ত্রী২৮ আগস্ট ২০২৪প্রেমিকা আপনার বিশ্বাস অর্জন করে তারপর আপনার অর্থ বা সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছে, আদালতে এ বিষয়টি যদি প্রমাণ করতে পারেন তবে তার জন্য আইনি প্রতিকার রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে মেয়েটি অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার উদ্দেশ্য নিয়েই আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় আদালতেই আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে হলে মানি মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে দাবি করা টাকার অনুপাতে কোর্ট ফি দাখিল করতে হয়। ফৌজদারি আদালতের আশ্রয় নিতে হলে প্রতারণা এবং অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনে সিআর (নালিশি) মামলা করা যায়। এ ছাড়া থানায় এজাহার হিসেবেও মামলা দায়েরের সুযোগ রয়েছে। আদালতে সরাসরি মামলা দায়ের করলে আদালত জবানবন্দি নিয়ে সরাসরি সমন বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন। তবে প্রয়োজন ছাড়া হয়রানিমূলক মামলা না করার পরামর্শ থাকবে।
আশা করি, আপনার উত্তর পেয়েছেন।
প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানাপাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: [email protected] (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ডাক ঠিকানা : প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য ১১ ম স আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহী অঞ্চলে কেজি দরে কেউ আম কিনছেন না, চলছে পুরোনো নিয়মে
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে গতকাল বুধবার দিনভর বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, রাজশাহী অঞ্চলে আম বেচাকেনা হবে কেজি দরে। সভায় রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা সম্মত হয়েছিলেন, আমের মণ আর ৪৮ বা ৫২ কেজিতে ধরা হবে না। কেজিতে দেড় টাকা কমিশনে আম বিক্রি হবে। তবে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের মোকাম ঘুরে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের চিত্র দেখা যায়নি।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহীর বড় আমের মোকাম পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা আগের নিয়মেই (ঢলন প্রথায়) বেচাকেনা করছেন। বাজারের কোথাও ৪০ কেজি মণ দরে বা কেজি দরে আম বিক্রির দৃশ্য দেখা যায়নি। স্থানীয় আমচাষি ও ব্যবসায়ী মো. আবুল হোসেন (৪২) বলেন, ৪০ মণ আম বিক্রি করেছেন। ৪৫ কেজিতে মণ দিতে হয়েছে। কেজি দরে আম বিক্রির আইন কেউ মানছেন না।
বানেশ্বরের চাষি ও ব্যবসায়ী আজমল হক (৬২) বলেন, আগের ‘ঢলন প্রথাতেই’ আম বেচাকেনা হচ্ছে। ৪৮ বা ৫২ কেজি—যে যেমন পারছেন, তেমন নিচ্ছেন। কেউ কেজি দরে আম কিনছেন না। বানেশ্বরের নাসিম ফল ভান্ডারে ঢুকে আড়তদারকে পাওয়া গেল না। কয়েকজন কর্মচারী ছিলেন। তাঁরা কেজি দরে আম বেচাকেনার প্রসঙ্গ শুনেই বললেন, ‘আমরা ওসব মানি না।’
বানেশ্বর বণিক সমিতির সভাপতি ওসমান আলী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সভায় ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চাষি ও ব্যবসায়ীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ‘ঢলন প্রথা’ চলবে না। কেজি দরে আম বেচাকেনা করতে হবে। এ জন্য আড়তদারেরা কেজিতে দেড় টাকা কমিশন পাবেন। রাতে বানেশ্বর বাজারে সভা করে সিদ্ধান্ত সবাইকে জানিয়ে দেন। রেজল্যুশনে ব্যবসায়ীদের স্বাক্ষরও নেওয়া হয়েছে। সকালে মাইকিং করা হয়। এরপরও না মানা দুঃখজনক। তিনি বলেন, এখন তাঁদের আর কী করার আছে। চাপাচাপি করলে তাঁরা আম কেনা বন্ধ করে দেবেন। চাষিদের আম পচে যাবে।
দেশের বৃহত্তম আমের বাজার হিসেবে খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট বাজারেও একই চিত্র দেখা গেছে। আজ বেশির ভাগ বেচাকেনা হয়েছে আগের নিয়মেই। হঠাৎ নতুন নিয়মে অভ্যস্ত হতে পারেননি ক্রেতা–বিক্রেতারা। আড়তদারেরা বলছেন, তাঁদের কিছুই করার নেই।
কানসাটের আমচাষি রায়হান আলী (৪৯) বলেন, ‘কেজি দরে আম বিক্রি করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। দরদাম ঠিক করে আড়তে নেওয়ার পর ব্যাপারী বলেছেন, “ছোটগুলো নেব না। ছোটগুলোর দাম দেবেন অর্ধেক। বেচলে বেচ, না বেচলে নিয়ে যাও।” ছোট আমগুলো জুস কোম্পানির কাছে নিয়ে গেলে অর্ধেকও দাম পাব না। আবার ফিরিয়ে নিয়ে গেলে হয়রানি ও সময় নষ্ট হবে। বাধ্য হয়ে ক্ষতি হলেও কম দামে বিক্রি করেছি। আবার আড়তদারকে কমিশনও দিয়েছি। নতুন নিয়ম করে কী লাভ হলো?’
আরও পড়ুনরাজশাহীতে আম পাড়া শুরু, ৪৮ কেজিতে মণ১৬ মে ২০২৫আড়তে থাকা পাবনার সাঁথিয়া থেকে আসা ব্যাপারী জোবায়ের হোসেন বলেন, ছোট বা দাগওয়ালা আম কেন তিনি বড় আমের সঙ্গে মিলিয়ে কিনবেন? আগে যে নিয়ম ছিল, সেটাই বরং ভালো ছিল। এতে বিক্রেতারা কেউই নতুন নিয়মে লাভ মনে করছেন না। লাভ হলে আড়তদারের হতে পারে।
আড়তদার শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আজ আম বিক্রি হয়েছে সব আগের নিয়মে। আমাদের করার কিছু নেই।’ চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যবসায়ী শহিদ মিয়া গতকালের সভায় ছিলেন। মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘একটা হযবরল অবস্থা হয়ে গেছে। কেউ মানছে না। যে যার মতো বেচাকেনা করছে।’
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাট