আল্লাহর তাওহিদ বা একত্ববাদ, তাঁর অসীম মহিমা ও পবিত্রতার স্বীকৃতি, মানুষের হৃদয়ে আলো জ্বালায়। তাওহিদের মধ্যে লুকিয়ে আছে আল্লাহর নাম ও গুণাবলির এককতা, যা আমাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় করে এবং জীবনকে অর্থপূর্ণ করে।

তাওহিদে আল্লাহর অসামান্য নাম ও গুণাবলির প্রতি ইমান আনা হয়, যা কোরআন মাজিদ ও রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ থেকে প্রমাণিত। এই বিশ্বাসে কোনো বিকৃতি, অস্বীকৃতি, সীমাবদ্ধতা বা সৃষ্টির সঙ্গে তুলনা নেই। আল্লাহর নাম ও গুণাবলির তাওহিদ হলো তাঁকে তাঁর প্রাপ্য সম্মানে অধিষ্ঠিত করা, তাঁর মহানুভবতার প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ।

একত্ববাদের ভিত্তি

আল্লাহর নাম ও গুণাবলি শুধু কোরআন ও সুন্নাহর উৎস থেকেই গ্রহণ করা যায়। মানুষের কল্পনা বা ধারণা থেকে কোনো নাম বা গুণাবলি আরোপ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন, ‘তাঁর মতো কিছুই নেই, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা শুরা, আয়াত: ১১)

এই আয়াত তাঁর অতুলনীয়তা ও পূর্ণতার ঘোষণা দেয়। তাওহিদের তিনটি মৌলিক ভিত্তি হলো:

এই বিশ্বাসে কোনো বিকৃতি, অস্বীকৃতি, সীমাবদ্ধতা বা সৃষ্টির সঙ্গে তুলনা নেই। আল্লাহর নাম ও গুণাবলির তাওহিদ হলো তাঁকে তাঁর প্রাপ্য সম্মানে অধিষ্ঠিত করা, তাঁর মহানুভবতার প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ।

১.

আল্লাহর নাম ও গুণাবলি শুধু কোরআন ও সুন্নাহর প্রমাণের ভিত্তিতে স্বীকার বা অস্বীকার করা যায়।

২. আল্লাহর নাম ও গুণাবলি সৃষ্টির সঙ্গে কোনোভাবেই তুলনীয় নয়।

৩. তাঁর সব গুণ পরিপূর্ণ, ত্রুটিমুক্ত।

ইমাম মালিকের শিষ্য রবিআহ বলেছেন, ‘ইস্তিওয়া (আল্লাহর আরশে সমাসীন হওয়া) জানা, কীভাবে তা অজানা। আল্লাহর কাছ থেকে আসছে ব্যাখ্যা, রাসুলের কাছ থেকে আসছে প্রচার, আর আমাদের ওপর দায়িত্ব হলো ইমান আনা।’

আরও পড়ুনপ্রতিবেশীকে কষ্ট দিলে জান্নাতে যাওয়া যাবে না১৪ এপ্রিল ২০২৫

কোরআন ও সুন্নাহতে একত্বের প্রমাণ

কোরআনের প্রতিটি সুরায় আল্লাহর নাম ও গুণাবলির প্রতিফলন রয়েছে। সুরা ইখলাস এর সবচেয়ে উজ্জ্বল উদাহরণ। ‘বলো, তিনি আল্লাহ, এক ও অদ্বিতীয়। আল্লাহ স্বয়ংসম্পূর্ণ। তিনি কাউকে জন্ম দেননি, কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।’ এই সুরা আল্লাহর একত্ব, পূর্ণতা ও অতুলনীয়তার সাক্ষ্য বহন করে। এ ছাড়া ‘বলো, আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে অভিভাবক রুপে গ্রহণ করব, তিনিই জীবিকা দেন  কিন্তু তাঁকে কেউ জীবিকা দেয় না।’ (সুরা আনআম, আয়াত: ১৪)

এই আয়াতগুলো তাঁর নিখুঁত পবিত্রতা ও ত্রুটিমুক্ততার প্রমাণ।

হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহর ৯৯টি নাম রয়েছে, যে তা স্মরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (সহিহ বুখারি: ২৭৩৬)

ইস্তিওয়া (আল্লাহর আরশে সমাসীন হওয়া) জানা, কীভাবে তা অজানা। আল্লাহর কাছ থেকে আসছে ব্যাখ্যা, রাসুলের কাছ থেকে আসছে প্রচার, আর আমাদের ওপর দায়িত্ব হলো ইমান আনা।রাবিআহ, ইমাম মালিকের (রহ.) শিষ্য

এই নামগুলো কোরআন ও সুন্নাহ থেকে সংগৃহীত এবং কিছু নাম আল্লাহ তাঁর অদৃশ্য জ্ঞানে রেখেছেন, যা শুধু তিনিই জানেন।

নাম ও গুণাবলির প্রভাব

আল্লাহর নাম ও গুণাবলি শুধু বিশ্বাসের বিষয় নয়, এগুলো আমাদের চরিত্র ও আচরণকে রূপান্তরিত করে। শায়খ ইজ্জুদ্দিন ইবনু আবদুস সালাম তাঁর গ্রন্থ শাজারাতুল মা‘আরিফ–এ বর্ণনা করেছেন, কীভাবে আল্লাহর গুণাবলি মানুষের আখলাককে উন্নত করে। উদাহরণস্বরূপ:

আল-কুদ্দুস (পবিত্র): আমাদেরকে ত্রুটি ও দোষ থেকে মুক্ত থাকতে শেখায়।

আস-সালাম (শান্তি): সালাম ছড়িয়ে দেওয়ার প্রেরণা দেয়, যা ইসলামের শ্রেষ্ঠ গুণ।

আল-হালিম (সহিষ্ণু): আমাদেরকে ধৈর্য ও ক্ষমার পথে চলতে উৎসাহিত করে, যদি অপমানিতও হই।

আল-লাতিফ (সূক্ষ্মদর্শী): আমাদেরকে আল্লাহর সর্বজ্ঞতার প্রতি সচেতন করে, যা হৃদয়ে ভয় ও লজ্জার জন্ম দেয়।

এই গুণাবলি আমাদেরকে নৈতিকতার শিখরে নিয়ে যায়, যেখানে আমরা কেবল আল্লাহর জন্যই জীবন গঠন করি।

আরও পড়ুনআল্লাহ যেভাবে গুনাহ ক্ষমা করেন০৮ মার্চ ২০২৫যদি তোমরা সৎকর্মশীল হও, তবে তিনি তাওবাকারীদের জন্য ক্ষমাশীল।’সুরা আল-ইসরা, আয়াত: ২৫

ক্ষমা পাপের ছাড়পত্র নয়

আল্লাহ নিজেকে আল-গাফফার ও আল-গাফুর হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের ওপর অত্যাচার করেছ, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আয-যুমার: ৫৩)

কিন্তু এই ক্ষমা পাপে লিপ্ত হওয়ার ছাড়পত্র নয়। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা সৎকর্মশীল হও, তবে তিনি তাওবাকারীদের জন্য ক্ষমাশীল।’ (সুরা আল-ইসরা: ২৫)

তাই তওবা ও সৎকর্মের মাধ্যমেই এই ক্ষমা অর্জন সম্ভব।

একত্ববাদের আলোয় জীবন

আল্লাহকে এক জানার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর মহিমা ও পবিত্রতার সঙ্গে সংযুক্ত হই। তাঁর নাম ও গুণাবলি আমাদের হৃদয়ে শান্তি, মনে স্থিরতা এবং জীবনে দিকনির্দেশনা দেয়। এটি শুধু বিশ্বাস নয়, বরং একটি জীবনব্যবস্থা, যা আমাদেরকে আল্লাহর নৈকট্যের পথে চালিত করে। তাই আসুন, আমরা তাঁর নাম ও গুণাবলির প্রতি পূর্ণ ইমান রেখে, তাঁর সন্তুষ্টির পথে জীবন গঠন করি।

 সূত্র: আলজাজিরা ডটনেট। অনুবাদ মনযূরুল হক

আরও পড়ুনহিজরি কালপঞ্জি: ইসলামি পরিচয়ের ধারণা২৩ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ন ম ও গ ণ বল র ন ম ও গ ণ বল র প ক রআন ও স ন ন হ আল ল হ আম দ র র ওপর একত ব

এছাড়াও পড়ুন:

আল্লাহর নামের ওপর ইমান আনতে হয় কেন

আল্লাহর তাওহিদ বা একত্ববাদ, তাঁর অসীম মহিমা ও পবিত্রতার স্বীকৃতি, মানুষের হৃদয়ে আলো জ্বালায়। তাওহিদের মধ্যে লুকিয়ে আছে আল্লাহর নাম ও গুণাবলির এককতা, যা আমাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় করে এবং জীবনকে অর্থপূর্ণ করে।

তাওহিদে আল্লাহর অসামান্য নাম ও গুণাবলির প্রতি ইমান আনা হয়, যা কোরআন মাজিদ ও রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ থেকে প্রমাণিত। এই বিশ্বাসে কোনো বিকৃতি, অস্বীকৃতি, সীমাবদ্ধতা বা সৃষ্টির সঙ্গে তুলনা নেই। আল্লাহর নাম ও গুণাবলির তাওহিদ হলো তাঁকে তাঁর প্রাপ্য সম্মানে অধিষ্ঠিত করা, তাঁর মহানুভবতার প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ।

একত্ববাদের ভিত্তি

আল্লাহর নাম ও গুণাবলি শুধু কোরআন ও সুন্নাহর উৎস থেকেই গ্রহণ করা যায়। মানুষের কল্পনা বা ধারণা থেকে কোনো নাম বা গুণাবলি আরোপ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন, ‘তাঁর মতো কিছুই নেই, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা শুরা, আয়াত: ১১)

এই আয়াত তাঁর অতুলনীয়তা ও পূর্ণতার ঘোষণা দেয়। তাওহিদের তিনটি মৌলিক ভিত্তি হলো:

এই বিশ্বাসে কোনো বিকৃতি, অস্বীকৃতি, সীমাবদ্ধতা বা সৃষ্টির সঙ্গে তুলনা নেই। আল্লাহর নাম ও গুণাবলির তাওহিদ হলো তাঁকে তাঁর প্রাপ্য সম্মানে অধিষ্ঠিত করা, তাঁর মহানুভবতার প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ।

১. আল্লাহর নাম ও গুণাবলি শুধু কোরআন ও সুন্নাহর প্রমাণের ভিত্তিতে স্বীকার বা অস্বীকার করা যায়।

২. আল্লাহর নাম ও গুণাবলি সৃষ্টির সঙ্গে কোনোভাবেই তুলনীয় নয়।

৩. তাঁর সব গুণ পরিপূর্ণ, ত্রুটিমুক্ত।

ইমাম মালিকের শিষ্য রবিআহ বলেছেন, ‘ইস্তিওয়া (আল্লাহর আরশে সমাসীন হওয়া) জানা, কীভাবে তা অজানা। আল্লাহর কাছ থেকে আসছে ব্যাখ্যা, রাসুলের কাছ থেকে আসছে প্রচার, আর আমাদের ওপর দায়িত্ব হলো ইমান আনা।’

আরও পড়ুনপ্রতিবেশীকে কষ্ট দিলে জান্নাতে যাওয়া যাবে না১৪ এপ্রিল ২০২৫

কোরআন ও সুন্নাহতে একত্বের প্রমাণ

কোরআনের প্রতিটি সুরায় আল্লাহর নাম ও গুণাবলির প্রতিফলন রয়েছে। সুরা ইখলাস এর সবচেয়ে উজ্জ্বল উদাহরণ। ‘বলো, তিনি আল্লাহ, এক ও অদ্বিতীয়। আল্লাহ স্বয়ংসম্পূর্ণ। তিনি কাউকে জন্ম দেননি, কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।’ এই সুরা আল্লাহর একত্ব, পূর্ণতা ও অতুলনীয়তার সাক্ষ্য বহন করে। এ ছাড়া ‘বলো, আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে অভিভাবক রুপে গ্রহণ করব, তিনিই জীবিকা দেন  কিন্তু তাঁকে কেউ জীবিকা দেয় না।’ (সুরা আনআম, আয়াত: ১৪)

এই আয়াতগুলো তাঁর নিখুঁত পবিত্রতা ও ত্রুটিমুক্ততার প্রমাণ।

হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহর ৯৯টি নাম রয়েছে, যে তা স্মরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (সহিহ বুখারি: ২৭৩৬)

ইস্তিওয়া (আল্লাহর আরশে সমাসীন হওয়া) জানা, কীভাবে তা অজানা। আল্লাহর কাছ থেকে আসছে ব্যাখ্যা, রাসুলের কাছ থেকে আসছে প্রচার, আর আমাদের ওপর দায়িত্ব হলো ইমান আনা।রাবিআহ, ইমাম মালিকের (রহ.) শিষ্য

এই নামগুলো কোরআন ও সুন্নাহ থেকে সংগৃহীত এবং কিছু নাম আল্লাহ তাঁর অদৃশ্য জ্ঞানে রেখেছেন, যা শুধু তিনিই জানেন।

নাম ও গুণাবলির প্রভাব

আল্লাহর নাম ও গুণাবলি শুধু বিশ্বাসের বিষয় নয়, এগুলো আমাদের চরিত্র ও আচরণকে রূপান্তরিত করে। শায়খ ইজ্জুদ্দিন ইবনু আবদুস সালাম তাঁর গ্রন্থ শাজারাতুল মা‘আরিফ–এ বর্ণনা করেছেন, কীভাবে আল্লাহর গুণাবলি মানুষের আখলাককে উন্নত করে। উদাহরণস্বরূপ:

আল-কুদ্দুস (পবিত্র): আমাদেরকে ত্রুটি ও দোষ থেকে মুক্ত থাকতে শেখায়।

আস-সালাম (শান্তি): সালাম ছড়িয়ে দেওয়ার প্রেরণা দেয়, যা ইসলামের শ্রেষ্ঠ গুণ।

আল-হালিম (সহিষ্ণু): আমাদেরকে ধৈর্য ও ক্ষমার পথে চলতে উৎসাহিত করে, যদি অপমানিতও হই।

আল-লাতিফ (সূক্ষ্মদর্শী): আমাদেরকে আল্লাহর সর্বজ্ঞতার প্রতি সচেতন করে, যা হৃদয়ে ভয় ও লজ্জার জন্ম দেয়।

এই গুণাবলি আমাদেরকে নৈতিকতার শিখরে নিয়ে যায়, যেখানে আমরা কেবল আল্লাহর জন্যই জীবন গঠন করি।

আরও পড়ুনআল্লাহ যেভাবে গুনাহ ক্ষমা করেন০৮ মার্চ ২০২৫যদি তোমরা সৎকর্মশীল হও, তবে তিনি তাওবাকারীদের জন্য ক্ষমাশীল।’সুরা আল-ইসরা, আয়াত: ২৫

ক্ষমা পাপের ছাড়পত্র নয়

আল্লাহ নিজেকে আল-গাফফার ও আল-গাফুর হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের ওপর অত্যাচার করেছ, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আয-যুমার: ৫৩)

কিন্তু এই ক্ষমা পাপে লিপ্ত হওয়ার ছাড়পত্র নয়। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা সৎকর্মশীল হও, তবে তিনি তাওবাকারীদের জন্য ক্ষমাশীল।’ (সুরা আল-ইসরা: ২৫)

তাই তওবা ও সৎকর্মের মাধ্যমেই এই ক্ষমা অর্জন সম্ভব।

একত্ববাদের আলোয় জীবন

আল্লাহকে এক জানার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর মহিমা ও পবিত্রতার সঙ্গে সংযুক্ত হই। তাঁর নাম ও গুণাবলি আমাদের হৃদয়ে শান্তি, মনে স্থিরতা এবং জীবনে দিকনির্দেশনা দেয়। এটি শুধু বিশ্বাস নয়, বরং একটি জীবনব্যবস্থা, যা আমাদেরকে আল্লাহর নৈকট্যের পথে চালিত করে। তাই আসুন, আমরা তাঁর নাম ও গুণাবলির প্রতি পূর্ণ ইমান রেখে, তাঁর সন্তুষ্টির পথে জীবন গঠন করি।

 সূত্র: আলজাজিরা ডটনেট। অনুবাদ মনযূরুল হক

আরও পড়ুনহিজরি কালপঞ্জি: ইসলামি পরিচয়ের ধারণা২৩ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ