জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের জরুরি বিভাগে জরুরি সেবা চলছে। তাই হাসপাতালে আসা সব রোগীকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে হাসপাতালে আসা অনেক রোগীকে চিকিৎসা ছাড়াই ফেরত যেতে হচ্ছে। ফলে তাঁরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। আজ বুধবার সকাল দশটা থেকে হাসপাতালে অবস্থান করে এই চিত্র দেখা গেছে।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে সীমিত পরিসরে বহির্বিভাগ চালুর বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলম।

দুই সপ্তাহ ধরে দেশের সবচেয়ে বড় এই বিশেষায়িত চক্ষু হাসপাতালে অচলাবস্থা চলছে। গত ২৮ মে জুলাই আহতদের সঙ্গে সাধারণ রোগী ও হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংঘর্ষ-মারামারির পর হাসপাতালে সব ধরনের সেবা বন্ধ হয়ে যায়। গত বুধবার থেকে হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে সীমিত পরিসরে চিকিৎসাসেবা (জরুরি সেবা) চালু হয়। কিন্তু এখনো অচলাবস্থা পুরোপুরি কাটেনি।

আজ জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার এই বিভাগ থেকে ৮৬ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ছাড়া ৯ রোগীর অস্ত্রোপচার করা হয়। এখন জরুরি বিভাগের অধীন ২৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। হাসপাতালের অন্যান্য বিভাগ বন্ধ থাকায় জরুরি বিভাগের অধীন চিকিৎসাধীন রোগীদেরও বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। প্রতিদিনই কিছু রোগী ভর্তি ও কিছু রোগীকে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে।

সকালে হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের অধীন ভর্তি থাকা ২৯ রোগীর মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রয়েছেন।

জরুরি সেবার প্রয়োজনীয়তা না থাকা রোগীদের হাসপাতাল থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলে জানান জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ও নার্সরা।

মাদারীপুর থেকে আসা মো.

ইয়াকুব আলী বলেন, সংঘর্ষের জেরে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ হওয়ার ঘটনা তিনি জানেন। সম্প্রতি সীমিত পরিসরে চিকিৎসাসেবা চালুর খবর পেয়ে চিকিৎসার আশায় তিনি হাসপাতালে এসেছেন। কিন্তু জরুরি বিভাগ থেকে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।

ইয়াকুব আলী বলেন, ‘চোখের যন্ত্রণা আর সহ্য হয় না। এত দূর থেকে এসেছি। এখন অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। আগামীকাল কিছু চিকিৎসা চালুর কথা শুনেছি। কোথাও গিয়ে আজকে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসা ছাড়া ফেরত গেলে আবার আসতে হবে। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার মতো সক্ষমতা আমার নেই।’

জরুরি বিভাগ ছাড়া হাসপাতালে কিছু সাধারণ রোগী এখনো ভর্তি আছেন। তাঁদের সংখ্যা অন্তত পাঁচজন। গত ২৮ মের পর তাঁরা চিকিৎসার আশায় হাসপাতালে থেকে গেছেন।

ঈদের ছুটির আগে হাসপাতালে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ৫৪ জন ভর্তি ছিলেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন ছাড়া বাকি সবাই ঈদের আগে বাড়ি চলে গেছেন। তবে গতকাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথম আলোকে জানিয়েছে, তাঁদের কেউ হাসপাতালের ছাড়পত্র নিয়ে যাননি।

সরকারের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের ছাড়পত্র দিতে বলেছে। ঈদের ছুটি শেষে তাঁরা আবার হাসপাতালে ফিরে এলে পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ঠিক কতজন এখন হাসপাতালে অবস্থান করছেন, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি চিকিৎসক ও নার্সরা। যাঁরা এখন আছেন, তাঁরা হাসপাতালের বিশেষায়িত কেয়ার ইউনিটে অবস্থান করছেন। আজ সকালে গিয়ে প্রবেশ করা যায়নি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সকালে জুলাই আহতদের একজন এসে পাঁচজনের খাবার নিয়ে গেছেন।

হাসপাতালের চতুর্থ তলার বিশেষায়িত এই ইউনিটের ফটকে সকালে গিয়ে দেখা যায়, ভেতর থেকে তালা লাগানো।

সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের দিকে কয়েকজন নার্স ইউনিটে গিয়ে জুলাই আহতদের খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে ভেতর থেকে কারও সাড়া না পেয়ে তাঁরা ফিরে যান।

এই নার্সদের কেউ গণমাধ্যমে তাঁদের নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি। তাঁরা বলেন, গত কয়েক দিন বিশেষায়িত ইউনিটের ভেতরে জুলাই আহতরা তালা লাগিয়ে অবস্থান করছেন। শুধু খাবারের সময় হলে তাঁদের একজন এসে খাবার নিয়ে যান। আজ সকালে পাঁচজনের খাবার সংগ্রহ করেছেন একজন।

হাসপাতালে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। আনসার সদস্য মোক্তারুল ইসলাম বলেন, যাঁদের জরুরি সেবা প্রয়োজন, শুধু তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ফলে অনেক রোগী সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জুলাই আহতদের বেশির ভাগ বাড়ি চলে গেছেন। তবে তাঁদের কয়েকজন এখনো হাসপাতালে অবস্থান করছেন। তাঁরা বিশেষায়িত ইউনিট থেকে বের হন না।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলম প্রথম আলোকে বলেন, এ মুহূর্তে জরুরি সেবা চালু আছে। সেখান থেকে যতটুকু সম্ভব চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পুরোপুরি সেবা চালু না থাকায় অনেক রোগীকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পুরোদমে চালুর বিষয়ে জানতে চাইলে জানে আলম বলেন, ‘আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে সীমিত পরিসরে আমরা বহির্বিভাগ চালু করব। সব ঠিক থাকলে আগামী শনিবার থেকে হাসপাতালের সব সেবা পুরোদমে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।’

আরও পড়ুনচক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি জুলাই আহতদের ছাড়পত্র দিতে বলেছে কমিটি২ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অবস থ ন করছ ন জ ল ই আহতদ র অবস থ ন কর ছ ড়পত র চ ক ৎসক ইউন ট

এছাড়াও পড়ুন:

কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ৮৯তম একাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে সার্বিকভাবে আসন সংখ্যা কমানোসহ অর্গানোগ্রামে আরো ১৮টি নতুন বিভাগের অন্তর্ভুক্তি, চারটি ইনস্টিটিউট চালু এবং ১২টি বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। 

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।  

ল্যাবভিত্তিক বিভাগগুলোতে আসন সংখ্যা ৪০টি এবং ল্যাববিহীন বিভাগগুলোতে ৫০টি আসন রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। নতুন ১৮টি বিভাগ অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো—পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, জৈব রসায়ন ও আণবিক জীববিজ্ঞান বিভাগ এবং জৈবপ্রযুক্তি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো—সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জনসংখ্যা বিজ্ঞান বিভাগ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ। কলা ও মানবিক অনুষদভুক্ত গুলো হলো—ইসলামিক স্টাডিজ ও সংস্কৃতি বিভাগ, ইতিহাস বিভাগ এবং দর্শন বিভাগ। ব্যবসায় অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো— পর্যটন ও আতিথেয়তা ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ব্যবসায়িক তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ, আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগ এবং লজিস্টিক ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ। প্রকৌশল অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো— বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগ, রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগ, পুরকৌশল বিভাগ এবং যন্ত্রকৌশল বিভাগ। আইন অনুষদভুক্ত বিভাগটি হলো— অপরাধবিদ্যা বিভাগ। 

পাশাপাশি চারটি ইনস্টিটিউট গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। সেগুলো হলো—আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত গবেষণা কেন্দ্র এবং একাডেমিক মান বৃদ্ধি কেন্দ্র। এগুলোর গঠন কাঠামোও সুপারিশ করা হয়েছে। 

এর মধ্যে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের জন্য পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক, নিয়মিত অধ্যাপক দুইজন, তিনজন সহযোগী অধ্যাপক, সেকশন অফিসার বা ম্যানেজার একজন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা একজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট একজন, অফিস সহায়ক দুইজন এবং একজন ক্লিনার। 

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত গবেষণা কেন্দ্র এবং একাডেমিক মান বৃদ্ধি কেন্দ্রের জন্য পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক, একজন অতিথি অধ্যাপক, অতিরিক্ত পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক অথবা সহযোগী অধ্যাপক, সেকশন অফিসার অথবা ম্যানেজার হিসেবে একজন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা একজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট একজন, অফিস সহায়ক দুইজন এবং ক্লিনার একজন। 

১২টি বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগে ন্যূনতম ২৬ জন করে শিক্ষক রাখার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেছেন, “আমরা মিটিংয়ে এগুলো সুপারিশ করেছি। অর্গানোগ্রাম অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় ডিপার্টমেন্টের জন্য ছাড়পত্র চায়, তারপর কমিশন (ইউজিসি) যদি অনুমোদন দেয়, তখন সেটা অর্গানাগ্রামে যুক্ত হয়। অর্গানোগ্রামে থাকলেই যে বিভাগ হয়ে যাবে, এমন না। একটা অনুমোদন দিয়ে রাখে। এই অনুমোদনের আলোকে আবার যখন দরখাস্ত দেওয়া হয়, তখন কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেবে।”

তিনি আরো বলেন, “ইউজিসি আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে আসন সংখ্যা কমাতে, যাতে কোয়ালিটি এডুকেশনের নিশ্চিত হয়। তারা ল্যাববেজড বিভাগের জন্য ৪০টি আসন এবং ল্যাববিহীন বিভাগের জন্য ৫০টি আসন বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।”

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেছেন, “অনেকগুলো সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে। তবে, এখনই না দেখে বলা যাচ্ছে না। রেজ্যুলেশন পাস হলে বিস্তারিত বলতে পারব।”

ঢাকা/এমদাদুল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • খুবি শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় দুরপাল্লার শিক্ষা সফর বাতিল ঘোষণা
  • সাজেকে চান্দের গাড়ি খাদে পড়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নিহত
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ