তাপপ্রবাহ কিছুটা কমল, বাড়তে পারে বৃষ্টি
Published: 11th, June 2025 GMT
গত শনিবার শুরু হওয়া তাপপ্রবাহ আজ বুধবার কিছুটা কমেছে। আজ দেশের ২১ জেলায় মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় আজ তাপমাত্রা গতকাল মঙ্গলবারের চেয়ে কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র বলছে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। সেই সঙ্গে বাড়তে পারে বৃষ্টি। আজ রাতে রাজধানীতে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো.
গতকাল দেশের ৩৫ জেলায় তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। আজ সেখানে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে ২১ জেলায়। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ বাদ দিয়ে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সর্বত্র এবং টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ফেনী, বাগেরহাট, যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে জানান ওমর ফারুক।
রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে মোট জেলার সংখ্যা ১৬টি। এর মধ্যে একটি বাদ দিয়ে ১৫টি এবং বাকি ছয় মিলিয়ে ২১ জেলায় আজ তাপপ্রবাহ বইছে।
আজ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় রাজশাহীতে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় নীলফামারীর ডিমলায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার মতো আজ রাজধানীর তাপমাত্রাও কমেছে। আজ রাজধানীর তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল এ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি কমে গেছে।
তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকলে, তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে, তা মাঝারি তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়। তাপমাত্রা ৪২–এর বেশি হলে, তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে গণ্য হয়।
গতকাল ও এর আগের দিন দেশের কিছু কিছু এলাকায় মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। আজ তাপমাত্রা এতটা বাড়েনি কোথাও।
এর মধ্যে বৃষ্টিও শুরু হয়েছে কিছু এলাকায়। গতকাল রাজধানীতে রাত ৯টার পর বৃষ্টি শুরু হয়। এ ছাড়া নোয়াখালী, নরসিংদী, টাঙ্গাইল ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কিছু এলাকায় বৃষ্টি হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের জরুরি বার্তায় বলা হয়েছে, আজ বেলা সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, বরিশাল, খুলনা, যশোর ও সাতক্ষীরা জেলার কিছু স্থানে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।
আগামীকাল বৃষ্টি বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক। তিনি বলেন, আজ রাতে রাজধানীতেও বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। আগামীকাল দেশের কয়েকটি স্থানে বৃষ্টি হতে পারে। আর তাতে তাপমাত্রা আরও কমে আসতে পারে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স লস য় স দশম ক গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।
মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?
তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।
সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?
সরকারের পক্ষ থেকে রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।
যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।
এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন, সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।
এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!
এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।
যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]