অভিনেতা ইমরান খানের বলিউড দুনিয়ায় টেনে এসেছিলেন তাঁর মামা বলিউড সুপারস্টার আমির খান। নিজেই প্রযোজনা করেছিলেন ভাগনের অভিষেক সিনেমা ‘জানে তু ইয়া জানে না’। তারুণ্যনির্ভর গল্পের এই সিনেমার জন্যই এক চটপটে তরুণীর সন্ধানে ছিলেন আমির। শেষমেশ তাঁর আতশ কাচের নিচে ধরা পড়েছিলেন জেনেলিয়া ডি’সুজা নামের তরুণী, যে বলিউডে পা রাখার আগেই দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমায় অভিনয় করে দর্শক মনোযোগ কেড়েছিলেন। মিষ্টি মুখ, নিষ্পাপ অভিব্যক্তি, সাবলীল অভিনয় থেকে শুরু করে ‘জানে তু ইয়া জানে না’ সিনেমার অদিতি চরিত্রের জন্য আমির যেমন অভিনেত্রী চেয়েছিলেন, তার সবকিছু খুঁজে পেয়েছিলেন জেনেলিয়ার মাঝে।
নায়িকা নির্বাচনে আমির যে ভুল করেননি, তা অনিন্দ্য অভিনয় দিয়ে প্রমাণ করেছিলেন জেনেলিয়া নিজেও। যার সুবাদে ২০০৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘জানে তু ইয়া জানে না’ অগণিত দর্শকের প্রিয় সিনেমার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।
এখন প্রশ্ন করতেই পারেন, হঠাৎ এ সিনেমা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরুর কারণ কী? কারণ, দর্শককে চমকে দিতে আরও একবার জেনেলিয়াকে নতুনভাবে পর্দায় নিয়ে আসছেন আমির। এবার ভাগনে ইমরান নয়, আমির নিজেই তাঁর সিনেমার জন্য নতুন সফরসঙ্গী বেছে নিয়েছেন জেনেলিয়াকে।
আগামী ২০ জুন মুক্তি পাচ্ছে তাদের নতুন সিনেমা ‘সিতারে জমিন পার’। যার সুবাদে তিন বছর পর সিনেমা পর্দায় দেখা মিলতে যাচ্ছে ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’খ্যাত অভিনেতা আমিরের। একইভাবে জেনেলিয়াকেও অনেক দিন পর দেখা যাবে বলিউড সিনেমায়। এরই মধ্যে সিনেমাটি নিয়ে ইতিবাচক ও নেতিবাচক নানারকম কথা শোনা যাচ্ছে। ক’দিন আগে কিছু মানুষ এ সিনেমা বয়কটের ডাকও দিয়েছিলেন। তবে কোনো কিছুকে পাত্তা না দিয়ে সিনেমাটি মুক্তি দিতে বদ্ধপরিকর আমির ও তাঁর সিনেমার সহপ্রযোজক অপর্ণা পুরোহিত।
এদিকে স্ক্রিনিংয়ের পর চলচ্চিত্র সমালোচকরাও এ সিনেমা নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছেন। তাদের মতে, এ সিনেমার সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হলো এর গল্প। যেখানে দেখা যাবে এক বাস্কেটবল কোচ, একটি টুর্নামেন্টের জন্য বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নিয়ে একটি দল তৈরিতে লেগে পড়েন। এ কাজটি করতে গিয়ে একে একে জন্ম নিতে থাকে নানা ঘটনা। যে ঘটনাগুলো দারুণভাবে মনকে নাড়া দেবে। গল্প ছাড়াও সিনেমার শিল্পী নির্বাচনে আমির ও পরিচালক আরএস প্রসন্নের প্রশংসা করতেও দ্বিধা করেননি চলচ্চিত্র সমালোচকরা। আমির খান ও জেনেলিয়া দেশমুখের [অভিনেতা রিতেশ দেশমুখের সঙ্গে বিয়ের পর ডি’সুজা পদবি বদলে দেশমুখ হয়েছেন] পাশাপাশি এ সিনেমায় নতুন যে দশটি মুখের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেই আরুষ দত্ত, গোপীকৃষ্ণ বর্মা, সাম্বিত দেশাই, বেদান্ত শর্মা, আয়ুশ ভানসালি, আশিষ পেন্ডসে, ঋষি শাহানি, ঋষভ জৈন, নমন মিশ্র এবং সিমরান মঙ্গেশকর সবাই দারুণ অভিনয় করেছেন বলে তাদের অভিমত। যে কারণে স্প্যানিশ সিনেমা ‘ক্যাম্পিওনিজ’-এর অনুপ্রেরণায় নির্মিত ‘সিতারে জমিন পার’ যে দর্শক মনে দাগ কাটবে– তা নিয়ে সংশয় নেই কারও মনে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।