‘দেশে ভালো-মন্দ দেখার কেউ নেই প্রতিবাদ করলে অপমানিত হতে হয়’
Published: 12th, June 2025 GMT
ঈদের ছুটি শেষে গ্রাম থেকে শহরমুখী মানুষের ঢল নেমেছে। সবাই কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব। যে যেমন করে পারছেন গাড়িতে উঠছেন। কেউ বাসে, কেউ সিএনজিচালিত অটোরিকশায়, আবার অনেকে ট্রাক ভাড়া করেও রাজধানীর দিকে ছুটছেন। তিন চাকার যানে মহাসড়কে চলাচল নিষেধ থাকলেও দেদার চলছে শেরপুর-ময়মনসিংহ সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। শুধু তাই নয়, ব্যাপক গতির সঙ্গে দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছেন চালকরা। এমন পরিস্থিতিতে বেকায়দায় পড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলে ফিরছেন যাত্রীরা।
পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে গত শুক্রবার কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলা সদরের বাড়িতে যান পোশাকশ্রমিক আমিন মিয়া। বাস না পেয়ে তিনি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে প্রথমে ভালুকা পরে ময়মনসিংহ থেকে শেরপুর আসেন। তার অভিযোগ– ময়মনসিংহ থেকে শেরপুরের ভাড়া ১৫০ টাকা। এবার তিনি এসেছেন ২৫০ টাকায়। ছুটি শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার কর্মস্থলে ফেরার সময় একই ভাড়া গুনতে হচ্ছে তাকে। এ নিয়ে বচসা শুরু হলে তাঁকে বেশ নাজেহাল হতে হয় শহরের সদর থানা এলাকার অটোস্ট্যান্ডে চালক ও সুবিধাভোগীদের হাতে। এ সময় আমিন মিয়া দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘অটোরিকশা স্ট্যান্ডে এসে মনে হয়েছে দেশে ভালো-মন্দ দেখার কেউ নেই। যার যা খুশি তাই করছে। প্রতিবাদ করলেও অপমানিত হতে হয়। আমরা কম আয়ের মানুষ। কি আর করবো।’ নিরূপায় হয়ে ২৫০ টাকা দিয়েই রওনা দিতে হয় তাকে।
আমিন মিয়ার মতো অসংখ্য যাত্রী অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। কিন্তু সবাই মুখেই কুলুপ আটা। কেউ কিছু বলছেন না। আকরামুজ্জামান নামে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এক যাত্রী এই প্রতিবেদককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনাদের বলে কোনো লাভ নেই। ঈদুল ফিতরেও একই অবস্থা ছিল। পত্র- পত্রিকায় খবর দেখেছি। কিন্তু কিছুই তো হলো না।’ তার ভাষ্য, অটোরিকশার চালকরা ভাড়া তো বেশিই নিচ্ছে। তা ছাড়া যে গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে তাতে জীবনাটা হাতের মুঠোয় নিয়ে কর্মস্থলে ফিরতে হচ্ছে।
জেলা শহরের রঘুনাথ বাজার থানামোড় ও খোয়ারপাড় এলাকার স্ট্যান্ডগুলোতে গিয়ে দেখা যায় লোকে লোকারণ্য। এর সুযোগ নিচ্ছে চালক ও দালাল শ্রেণি। জানা গেছে, থানামোড় থেকে জামালপুরের দূরত্ব মাত্র ১৫ কিলোমিটার। এ সড়কে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা। খোয়ারপাড় শাপলা চত্বর এসে থামেন ৮টি উপজেলার যাত্রীরা। ঝিনাইগাতী থেকে শেরপুর সদরের দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার, এখানে ৪০ টাকার ভাড়া দিনে ৬০ টাকা, রাতে ৮০ টাকা দিতে হচ্ছে। শ্রীবরদী শহর থেকে যারা আসছেন তাদের ১৭ কিলোমিটার দূরত্বের জন্য গুনতে হচ্ছে ৬০ টাকা। ৮০ টাকাও নিচ্ছেন কেউ কেউ। নালিতাবাড়ি উপজেলা সদর থেকে এসে অনেকেই ভাড়া দিয়েছেন ৮০ টাকা। অথচ বিআরটিএ ২৬ কিলোমিটার সড়কের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে ৫০ টাকা।
জেলা পরিষদ ডাকবাংলোর সামনে থেকে তারাকান্দার দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার। ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩০ টাকা। অটোরিকশার যাত্রী তৌফিকুর রহমান বলেন, আগে ভাড়া ছিল ২০ টাকা। এখন দিতে হচ্ছে ৩০ টাকা।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় অটোরিকশা চালক আক্তার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কি করতাম ভাই, গ্যাস পাম্পে গেলে ৩ ঘণ্টা বইসা থাইকা গ্যাস নিতে হয়। গ্যাসের চেয়ে হাওয়া থাকে বেশি। ১৯০ টাকার গ্যাস ২০০ টাকা দিলে টাকা আর ফেরত দেয় না। তাই ভাড়া বেশি না নিলে পুষে না।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ জানান, ঈদের শুরু থেকে প্রতিদিন অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনের উপস্থিতি যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ সব কিছু ঠিকঠাক থাকে। চলে এলে ফের অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হয়।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দিনাজপুর সীমান্তে গভীর রাতে আলো নিভিয়ে ১৫ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
দিনাজপুরে বিরামপুর সীমান্ত দিয়ে ৯ শিশুসহ ১৫ জন জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে উপজেলার বিনাইল ইউনিয়নের অচিন্তপুর সীমান্ত এলাকা দিয়ে তাঁদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়।
বিজিবির ফুলবাড়ী ২৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ বি এম জাহিদুল করিম প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জাহিদুল করিম জানান, গতকাল রাত আড়াইটার দিকে অচিন্তপুর সীমান্তের ২৮৫ নম্বর সীমানা পিলার এলাকায় হঠাৎ আলো নিভিয়ে দেয় বিএসএফ। এ সময় সেখানে বিজিবি সদস্যরা নিয়মিত টহলে ছিলেন। একপর্যায়ে বিএসএফ সদস্যরা ১৫ জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দেন। পরে বিজিবি ২৯ ফুলবাড়ী ব্যাটালিয়নের আওতায় অচিন্তপুর বিওপি ক্যাম্পের সদস্যরা তাঁদের আটক করে বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে আসেন। আটক ১৫ জনের মধ্যে ৩ জন নারী ও ৩ জন পুরুষ, বাকিরা শিশু। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা সবাই নড়াইলের বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, ভারত থেকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর কয়েকজনের কাছ থেকে ব্যবহৃত মুঠোফোন ও নগদ অর্থ কেড়ে নেন বিএসএফ সদস্যরা।
বিজিবি জানায়, ওই ১৫ জন বর্তমানে অচিন্তপুর বিওপি ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। তাঁদের বিষয়ে পরবর্তী আইনগত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
এর আগে বুধবার রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত সিলেট, সুনামগঞ্জ, লালমনিরহাট ও ময়মনসিংহের সীমান্ত দিয়ে ৮৬ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। সিলেটের জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ, সুনামগঞ্জের ছাতক, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম ও ময়মনসিংহের ধোবাউড়া সীমান্ত দিয়ে তাঁদের ঠেলে পাঠানো হয়। তাঁদের আটক করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। বিজিবির সদর দপ্তর সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ১ হাজার ২১০ জনকে পুশ–ইন করেছে ভারত।