গুপ্তচরবৃত্তি এমন এক পেশা- যে পেশার মানুষ ছদ্মবেশ ধারণ করেন। কখনও কখনও প্রতারণার আশ্রয় নেন। আবার কোনো কোনো গুপ্তচর কাজের প্রয়োজনে নিজের ধর্ম পর্যন্ত পরিবর্তন করে ফেলেন। ইউরোপীয় এক গুপ্তচর মক্কায় ঢুকে প্রয়োজনীয় তথ্য তার দেশে পাঠানোর জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। এবং ইসলাম সম্পর্কে বিস্তর পড়াশোনা করেছিলেন। এই গুপ্তচরের নাম ক্রিশ্চিয়ান সনুক হারখ্রোনয়ে।

১৮৮৪ সালের ২৮শে আগস্ট সনুক জেদ্দায় পৌঁছান। তার দায়িত্ব ছিলো মক্কা সফরে যাওয়া ইন্দোনেশিয়ার আচেহ অঞ্চলের যাত্রীদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা। কারণ ইন্দোনেশিয়া ছিল ডাচদের সবচেয়ে বড় উপনিবেশ। আর সতেরো শতক থেকে বিশ শতকের মাঝে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল ডাচ উপনিবেশ। ডাচরা তাদের উপনিবেশ বিস্তারে বাণিজ্য ও সমুদ্রপথকে সব সময় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতো।

সেই সময় ডাচ সরকার একটা আশঙ্কায় ভুগছিল। তাদের উদ্বেগের বিষয় ছিল ইন্দোনেশিয়া থেকে মক্কায় আসা হজযাত্রীরা।তারা মক্কার আলেমদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের ঔপনিবেশিক আধিপত্য প্রতিরোধ করতে উৎসাহ দিতে পারেন- এই আশঙ্কায় ভুগছিল ডাচ সরকার।

আরো পড়ুন:

প্রথম ফিরতি ফ্লাইটে দেশে ফিরলেন ৩৬৯ হাজি

হজের ফিরতি ফ্লাইট মঙ্গলবার থেকে

ডাচ তরুণ ক্রিশ্চিয়ান সনুক হারখ্রোনয়ের মিশন ছিল সেই হজযাত্রী ও আলেমদের উপর কড়া নজর রাখা এবং ডাচ শক্তিকে বিপন্ন করতে পারে, এমন যে কোনো কার্যকলাপ সম্পর্কে তার দেশের সরকারকে জানানো।

এজন্য মুসলিম আচার-আচরণ শিখে নিয়েছিলেন ক্রিশ্চিয়ান সনুক। এমনকি নিজের নাম পর্যন্ত পরিবর্তন করে নিয়েছিলেন। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে তিনি এতো জ্ঞান অর্জন করেছিলেন যে বিষয়টা এমনভাবে সম্পন্ন করতে চেয়েছিলেন যাতে তিনি তুর্কি কর্তৃপক্ষের আস্থা অর্জন করতে পারেন। সেই সময়ে আরবের হেজাজ (যার মধ্যে মক্কা ও মদিনাও অন্তর্ভুক্ত ছিল) অটোমান সাম্রাজ্যের শাসনাধীন ছিল।

হারখ্রোনয়ে পাঁচ বছর ধরে জেদ্দায় বসবাস করেছিলেন দেজাজি এবং ডাচ সরকারের হয়ে গুপ্তচরের কাজ করতেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর হারখ্রোনয়ে নিজের নাম পরিবর্তন করে ফেলেন। তার নতুন নাম হয়, আব্দুল গফ্ফর ।

তার অভিযান বাস্তবায়িত করার জন্য সৌদি আরবে জেদ্দার বিচারক ও উসমানীয় সাম্রাজ্যের গভর্নর ওসমান পাশার সঙ্গে দেখা করেন তিনি। শেষপর্যন্ত ১৮৮৫ সালের ২১ জানুয়ারি মক্কায় প্রবেশ করেন তিনি।
সেই সময় মক্কায় প্রবেশের বিষয়ে হেজাজের উসমানীয় খিলাফত বেশ কড়া নিয়ম কানুন জারি করেছিল। অনুমতি পাওয়ার বিষয়টা তেমন সহজ ছিল না।কিন্তু জেদ্দার স্থানীয় আলেম ও কর্মকর্তারা হারখ্রোনয়েকে বিশ্বাস করতেন.

তাই মক্কায় প্রবেশ করতে অসুবিধা হয়নি তার।

মক্কায় সাত মাস অবস্থান করে এই সময়ের মধ্যে তিনি  ইন্দোনেশিয়ার জাভায় বসবাসকারী জাতিগত গোষ্ঠী)-দের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনের ওপর ভিত্তি করে তার নিজের পর্যবেক্ষণ নথিভুক্ত করেন।

এই সমস্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বই লেখেন তিনি। তার লেখা বই- ‘‘মক্কা ইন দ্য ল্যাটার পার্ট অফ নাইন্টিন্থ সেঞ্চুরি’’-র দুইটা খণ্ডে প্রকাশ পায়।

সেখানে শুধুমাত্র তার পর্যবেক্ষণের বিষয়ের উল্লেখই নেই, রয়েছে আরও অনেক বিষয়। তার ওই বইগুলো বিরল ফটোগ্রাফ এবং বিরল তথ্যের একটা ঐতিহাসিক ভান্ডার বলে মনে করা হয়।

ক্রিশ্চিয়ান সনুক হারখ্রোনয়ে মন থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন, না কি শুধুমাত্র গুপ্তচরবৃত্তির সুবিধার জন্য ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন, সেই বিষয় নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। তবে কেউ কেউ বলেন, তিনি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মদ্যপান করেননি এবং মৃত্যুর পর তাকে নেদারল্যান্ডসে ইসলাম রীতি মেনে দাফন করা হয়, যা প্রমাণ করে যে তিনি ইসলামের পথ অনুসরণ করতেন।’’

ঢাকা/লিপি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হজ স দ আরব ইসল ম ইন দ ন শ কর ছ ল ন গ প তচর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

কামরাঙ্গীরচরে বাবার ছুরিকাঘাতে ছেলে খুন

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে রাহাবুল ইসলাম (২৫) নামের এক হোটেল কর্মচারি খুন হয়েছেন। শনিবার রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। 

কামরাঙ্গীরচর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ লুৎফর রহমান বলেন, কামরাঙ্গীরচর থানাধীন ঝাউচর এলাকায় হোটেল কর্মচারি রাহাবুল খুন হয়েছেন। পারিবারিক বিরোধের জেরে রাহাবুলকে তার বাবা জুয়েল রানা খুন করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। 

এ দিকে নিহত রাহাবুলের মামা হুমায়ুন বলেন, তার বোন শাহানাজ কাজের সূত্রে জর্ডানে থাকেন। তার ভাগনে রাহাবুল এবং বোনের স্বামী জুয়েল রানা কামরাঙ্গীরচরের যাউচর এলাকায় একটি হোটেলে কাজ করতেন। শনিবার রাতে পারিবারিক বিরোধের জেরে ছুরিকাঘাত করে রাহাবুলকে হত্যা করেন বোনের স্বামী। 

পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত জুয়েল রানাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। কি কারণে ছেলেকে বাবা হত্যা করেছেন সেটিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ