সিরিয়াল পেতে দেরি হওয়ায় ফেনীতে চিকিৎসকের চেম্বার ভাঙচুর করলেন যুবদল নেতা
Published: 14th, June 2025 GMT
ফেনীর সোনাগাজীতে এক চিকিৎসকের চেম্বারে হামলা-ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে ইকবাল হোসেন নামের স্থানীয় এক যুবদলের নেতা ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে। গতকাল শুক্রবার রাতে উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের চক্ষু চিকিৎসক গোলাম রসুলের চেম্বারে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় চিকিৎসকের বোনসহ দুজন আহত হয়েছেন।
অভিযুক্ত ইকবাল হোসেন সোনাগাজী উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও আড়কাইম গ্রামের পাটোয়ারী বাড়ির আবদুল খালেকের ছেলে।
ভুক্তভোগী চিকিৎসক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চক্ষু চিকিৎসক গোলাম রসুল প্রতিদিনের মতো শুক্রবার রাতে বগাদানা ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে নিজ বাড়ির চেম্বারে রোগী দেখছিলেন। এ সময় যুবদল নেতা ইকবাল হোসেন তাঁর সহযোগী রোগী নুর হায়দার রোগী দেখা অবস্থায় চিকিৎসকের চেম্বারে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এতে চিকিৎসকের সহকারী রুবেল একটু অপেক্ষা করতে অনুরোধ করলে ইকবাল হোসেন, তাঁর সহযোগী নুর হায়দার বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে চেম্বারে প্রবেশ করে চিকিৎসকের সঙ্গে অশোভন আচরণের পাশাপাশি চেম্বারের চেয়ার, দরজা, জানালা, সিসিটিভি ক্যামেরা, মনিটর, সিলিং ফ্যানসহ ঘরের আসবাব ভাঙচুর করেন। এ সময় বাড়িতে থাকা চিকিৎসকের বড় বোন বিষ্ণুপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক বিবি মরিয়ম ও চিকিৎসকের সহকারীকে মারধর করেন হামলাকারীরা। একপর্যায়ে যুবদল নেতা ইকবাল হোসেন তাঁর অনুমতি ছাড়া চেম্বার না খুলতে ওই চিকিৎসককে হুমকি দেন।
ক্ষতিগ্রস্ত চিকিৎসক গোলাম রসুল বলেন, ‘মাসখানেক আগে কয়েকজন যুবক চেম্বারে এসে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা দাবি করেন। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার রাতে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই কয়েকজন যুবক আমার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। তাঁরা আমাকে মারতে উদ্যত হন এবং চেম্বার ও বাড়িতে ভাঙচুর-লুটপাট চালান।’
অভিযুক্ত যুবদল নেতা ইকবাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেন৷ তবে রোগীর সিরিয়াল নিয়ে তর্কাতর্কির জের ধরে সহযোগীরা ভাঙচুর করেছেন বলে স্বীকার করেন।
সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বায়েজিদ আকন্দ জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। হামলার ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত চিকিৎসকের পক্ষ থেকে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে। এরপর এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইকব ল হ স ন য বদল ন ত চ ক ৎসক র র কর ন সহয গ
এছাড়াও পড়ুন:
বিহারের ভোটার তালিকা নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট: ‘মৃত’ নন জীবিত এমন ১৫ জনকে হাজির করলে ব্যবস্থা
বিহারে খসড়া ভোটার তালিকায় ‘মৃত’ চিহ্নিত ১৫ জন জীবিতকে হাজির করাতে পারলে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ব্যবস্থা নেবেন। বিহারের ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে মামলাকারীদের আইনজীবীদের এ আশ্বাস দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি সূর্য কান্ত ও জয়মাল্য বাগচী এ আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। গণহারে ভোটার বাদ দেওয়া দেওয়া হলে তাঁরা অবশ্যই পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
আবেদনকারীদের উদ্দেশে দুই বিচারপতি বলেছেন, প্রক্রিয়ায় অনিয়ম বা ত্রুটি পাওয়া গেলে অবশ্যই তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন।
মামলাকারীদের আবেদন মেনে সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য খসড়া ভোটার তালিকা পেশ করার ওপর স্থগিতাদেশ দেননি। তবে ইসিকে তাঁরা বলেছেন, তাদের কাজ গণহারে ভোটার বাদ দেওয়া নয়। তাদের দেখা উচিত যাতে গণহারে ভোটারদের তালিকাভুক্ত করা যায়।
এসআইআর–প্রক্রিয়া অনুযায়ী ভোটার তালিকা সংশোধনের পর খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে ১ আগস্ট। সে লক্ষ্যেই ইসি এগিয়ে চলেছে। ইসি সূত্রে খবর, নিবিড় সংশোধনপ্রক্রিয়ার পর প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে ৬৫ লাখেরও বেশি নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে অন্তত ২২ জন ‘মৃত’, ৩৬ লাখ ‘নিখোঁজ’। এ ছাড়া বেশ কয়েক লাখ ভোটারের নাম বিভিন্ন এলাকার তালিকায় রয়েছে। অর্থাৎ একই ভোটার অন্তত দুই জায়গায় নথিভুক্ত। আগের তালিকা অনুযায়ী বিহারে মোট ভোটারের সংখ্যা ৭ কোটি ৮৯ লাখ। ইসির দাবি, এই তালিকায় বহু ভোটার ভুয়া। তাদের বাদ দিতেই এই নিবিড় সংশোধন।
যে প্রক্রিয়ায় এই খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে, মামলাকারীদের আপত্তি তা নিয়েই। তাঁদের অভিযোগ, ইসি যেভাবে নাগরিকত্বের যাচাই করছে, সে জন্য যেসব নথি পেশ করতে বলা হচ্ছে, তা বহু ক্ষেত্রে সম্ভবপর নয়। তেমন করা তাদের কাজও নয়। সেই কাজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। তাঁদের অভিযোগ, এভাবে বহু দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের ভোটাধিকার ইসি কেড়ে নিচ্ছে।
গত সোমবার ও মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি হয়। মঙ্গলবারের শুনানিতে মামলাকারীদের আইনজীবী কপিল সিব্বাল ও প্রশান্ত ভূষণকে আশ্বস্ত করে বিচারপতিরা বলেন, কমিশনের ত্রুটি–বিচ্যুতি দেখলে তাঁরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন। ভোটার প্রমাণে আধার কার্ড ও ভোটার কার্ডকে নথি হিসেবে গ্রাহ্য করার সুপারিশ বিচারপতিরা জোরের সঙ্গে করেছেন। এই দুই নথি জাল করা সহজ বলে ইসির দাবি নস্যাৎ করে বিচারপতিরা বলেছেন, যে ১১টি নথির ওপর নির্ভর করে তারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সেগুলোর প্রতিটিই জাল করা সম্ভব। কপিল সিব্বাল ও প্রশান্ত ভূষণকে বিচারপতিরা বলেন, খসড়া ভোটার তালিকায় ‘মৃত’ অথচ আসলে জীবিত, এমন ১৫ জনকে আপনারা হাজির করুন। আমরা ব্যবস্থা নেব।
আগামী ১২ ও ১৩ আগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি। তার আগে ৮ আগস্টের মধ্যে মামলাকারীদের বক্তব্য লিখিতভাবে আদালতে পেশ করতে হবে।