Samakal:
2025-07-31@21:46:13 GMT

বছরে ৬ লাখ অপরিণত শিশুর জন্ম

Published: 16th, June 2025 GMT

বছরে ৬ লাখ অপরিণত শিশুর জন্ম

দেশে বছরে গড়ে জন্ম নিচ্ছে প্রায় ৬ লাখ অপরিণত (প্রিম্যাচিওর) শিশু। জন্মের সময় গর্ভকাল পূর্ণ না হওয়ায় এসব নবজাতকের ঝুঁকি থাকে নানা জটিলতায় পড়ার, এমনকি মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকে বেশি। তাই নবজাতকদের মৃত্যু হ্রাসে অপরিণত নবজাতক জন্ম প্রতিরোধে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। 

সোমবার শহীদ ডা. মিল্টন হলে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিওন্যাটোলজি বিভাগ ও সেভ দ্যা চিলড্রেন আয়োজিত সভায় এই তথ্য জানানো হয়। 

স্বাগত বক্তব্য রাখেন সহযোগী অধ্যাপক ডা.

সাদেকা চৌধুরী মনি। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইসমত জাহান। তিনি বলেন, মা ও অপরিণত নবজাতকদের জীবন রক্ষাকারী প্রকল্প সেভিং উইমেন এন্ড প্রিমেচিউর বেবিজ বা সোয়াপের মাধ্যমে দেশের পাচঁটি হাসপাতাল  মা ও নবজাতক সেবা দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ৬৫ হাজার গর্ভবতী মা ও ৮৭ হাজার নবজাতককে সেবা পেয়েছে। দেড় হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো ভায়ু বাবল সিপ্যাপ, ফ্যামিলি সেন্টার কেয়ার, ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার, নিওনেটালি লাইভ ইত্যাদিকে সফলভাবে প্রয়োগ করে নবজাতকদের জীবন রক্ষায় ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে।

বিএমইউর নিওনাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশে বছরে ৩০ লাখ নবজাতকের জন্ম হয়। যার মধ্যে শতকরা ২০ শতাংশই অপরিণত নবজাতক এবং বিশ্বের মধ্যে এই হার সর্বোচ্চ। সেই হিসেবে বছরে অপরিণত ৬ লাখ শিশু জন্মায়। নবজাতকের মৃত্যুহার হ্রাস পেলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি হাজার জীবিত জন্মে বর্তমানে নবজাতকের মৃত্যুহার ২০ জন থেকে ১২ জনে কমিয়ে আনা। যদিও এই প্রকল্পের কার্যক্রমসহ সামগ্রিক প্রচেষ্টায় নবজাতকের মৃত্যুহার ২০ জনে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

বিএমইউর ফিটোম্যাটার্নাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. তাবাসসুম বলেন, নবজাতকের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হলো অপরিণত নবজাতকের জন্ম দান। বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩০ লাখ নবজাতকের জন্ম হয়। যার মধ্যে শতকরা ২০ শতাংশই অপরিণত নবজাতক এবং বিশ্বের মধ্যে এই হার সর্বোচ্চ। গত ১০ বছর ধরে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়। এটি প্রতিরোধে আমাদের উদ্যোগ নেই। কেনো কমানো যাচ্ছে না এবিষয়েও কোনো গবেষণা হয় না। তবে সচেতনতা, প্রসূতি সেবা এবং মাতৃস্বাস্থ্য কার্যক্রম জোরদার করলে এ সমস্যা অনেকাংশে কমানো সম্ভব। অপরিণত শিশুর জন্মের পেছনে রয়েছে মাতৃস্বাস্থ্যের অবনতি, অপুষ্টি, সময়মতো প্রসবপরিচর্যার অভাব, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও প্রসবকালীন জটিলতা। এ ছাড়া ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত ওষুধ সেবন এবং অল্প বয়সে গর্ভধারণও অন্যতম কারণ।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) এর ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, সোয়াপের মাধ্যমে নবজাতকদের পরিবার কেন্দ্রিক চিকিৎসা (ফ্যামিলি সেন্টারড কেয়ার-এফসিসি) মা ও শিশুর জীবন রক্ষায় বিরাট অবদান রাখছে। এই পদ্ধতিকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বৃহৎ আকারে কাজে লাগাতে পারলে সমগ্র স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর  অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর গবেষণা ও উন্নয়ন অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. আতিয়ার রহমান।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নবজ তকদ র প রকল প র জন ম

এছাড়াও পড়ুন:

বারসিকের গবেষণা: রাজশাহীর ৯৯ ভাগ দোকানেই মিলছে নিষিদ্ধ কীটনাশক

রাজশাহীর ৯৯ ভাগ কীটনাশকের দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে নিষিদ্ধ কীটনাশক ও বালাইনাশক। সরকার নিষিদ্ধ করে রাখলেও নানা নামে এসব কীটনাশক বাজারজাত করা হচ্ছে। ফলে পরিবেশ, প্রকৃতি ও জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে। শতকরা ৯৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ ব্যবহারকারীই জানেন না এগুলো নিষিদ্ধ এবং বিপজ্জনক।

চলতি বছর রাজশাহীতে ‘জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব বিষয়ক মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধানমূলক সমীক্ষা’ শীর্ষক এক গবেষণায় এমন চিত্র উঠে এসেছে। সমীক্ষাটি করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক। 

বুধবার (৩০ জুলাই) সকালে রাজশাহী নগরের একটি হোটেলের কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলন করে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়ক শহিদুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজশাহীর আটটি উপজেলার ১৯টি কৃষিপ্রধান গ্রামাঞ্চলে মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ, ভুক্তভোগীদের কেস স্টাডি, স্থানীয় কীটনাশক ডিলার, দোকানদার, পরিবেশক এবং উপজেলা পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে সমীক্ষাটি করা হয়েছে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, নিষিদ্ধ কীটনাশক ব্যবহার করে শতকরা ৬৮ শতাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আর কীটনাশকের ৯৯ ভাগ দোকানেই দেশে নিষিদ্ধ কীটনাশক পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন নামে। এসব নাম দেখে বোঝার উপায় নেই এটি নিষিদ্ধ, বোতলের গায়ে নিচের দিকে জেনেরিক নাম খুব ছোট করে লেখা থাকে। 

বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ যেসব কীটনাশক এখনো পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো হলো- জিরো হার্ব ২০ এসএল (প্যারাকোয়াট), ফুরাডান ৫জি (কার্বোরাইল), এরোক্সান ২০ এসএল (প্যারাকোয়াট), গ্যাস ট্যাবলেট (অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড), কার্বোফোরান ৩ জিএসিআই (কার্বোফোরান), ইঁদুর মারা বিষ (বডিফ্যাকোয়াম) ও তালাফ ২০ এসএল (প্যারাকোয়াট)। এই প্যারাকোয়াট বা ঘাস মারা বিষ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অনেকে এগুলো আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে পান করেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে কিডনি নষ্ট হয়ে তারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাজারে অহরহ এসব নিষিদ্ধ কীটনাশক পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু সরকারের কোনো তদারকি নেই। এসব নিষিদ্ধ কীটনাশক ব্যবহার করে কৃষক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। নিষিদ্ধ কীটনাশক কীভাবে বাজারে বিক্রি হয়, কৃষি বিভাগের দায়িত্ব কী সে বিষয়েও সংবাদ সম্মেলন থেকে প্রশ্ন তোলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে নিষিদ্ধ কিছু কীটনাশকও আনা হয়। এগুলো যে দোকান থেকে কেনা হয়েছে তার রশিদও দেখানো হয়। এসব দেখিয়ে বারসিকের নির্বাহী পরিচালক পাভেল পার্থ বলেন, “এগুলো তো বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। আমরা কিনেছি। রশিদও আছে। এগুলো নিষিদ্ধ। আমরা এগুলো হাজির করতে বাধ্য হয়েছি। এই গবেষণা একটি ফৌজদারি অপরাধকে খুঁজে পেয়েছে।”

সংবাদ সম্মেলনে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে নিষিদ্ধ কীটনাশকের ব্যবহার কঠোরভাবে বন্ধ করা,  কীটনাশক আইন ও বিধি প্রয়োগ করা, কীটনাশক সম্পর্কিত স্বাস্থ্য তথ্য নিবন্ধন করা, কীটনাশকের ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণের জন্য তহবিল গঠন করার সুপারিশ করা হয়।

ঢাকা/কেয়া/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বারসিকের গবেষণা: রাজশাহীর ৯৯ ভাগ দোকানেই মিলছে নিষিদ্ধ কীটনাশক