খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) নাগরিক সেবা প্রদানে উদাসীনতার অভিযোগ তুলে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি। কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতায় অসমাপ্ত রাস্তার কাজ দ্রুত শেষ করা, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও অবৈধ ইজিবাইক প্রবেশ বন্ধ হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির নেতারা।

গতকাল সোমবার রাতে খুলনা বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৭ এপ্রিল এসব দাবিতে বিবৃতি দেওয়া হলেও কেসিসি কর্তৃপক্ষ কোনো দায়িত্বশীল কার্যক্রম পরিচালনা করেনি। সিটি করপোরেশনের জবাবদিহি না থাকার কারণে নগরীর অধিকাংশ সড়ক বেহাল এবং এর ফলে যানজট নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

গতকালের বিবৃতিদাতারা হলেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম (বকুল), তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম (মনা), জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান (মন্টু), মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম (তুহিন) ও জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোমরেজুল ইসলাম।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বর্ষা মৌসুমের আগেই প্রাণঘাতী ডেঙ্গু নির্মূলে গত বছরগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছিল। মশকনিধনে ফগার মেশিন থেকে সৃষ্ট ধোঁয়ার কুণ্ডলীর মধ্যেই শত শত মশার জীবন্ত ওড়াউড়ি প্রমাণ করে দেয় যে কেসিসির ছিটানো স্প্রে মশকনিধনে কেবল অকার্যকরই নয়, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের সততারও অভাব রয়েছে।

বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতার কারণে খুলনা মহানগরীতে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশার ছড়াছড়ি। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে এসব বাহন চলাচলের কারণে রাস্তায় বিশৃঙ্খলা ও মোড়ে মোড়ে মারাত্মক যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। বেপরোয়া চলাচলের কারণে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। খুলনা সিটি করপোরেশন মাত্র দুই হাজার ইজিবাইক চলাচলের অনুমোদন দিলেও বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার ইজিবাইক চলাচল করছে। একইভাবে লাইসেন্সকৃত রিকশার সংখ্যা ১৭ হাজার হলেও চলাচল করে প্রায় ৩০ হাজার রিকশা।

বিএনপি নেতারা বলেন, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিরবচ্ছিন্ন নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রশাসক শুধু অফিসে বসে দাপ্তরিক কাজ করেন, যা নাগরিক সেবা নিশ্চিতে বড় অন্তরায়। তাঁরা প্রশাসককে আরও দায়িত্বশীল হয়ে নিয়মিত নগর ঘুরে ঘুরে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে সড়কগুলো দ্রুত মেরামত, ডেঙ্গু নির্মূলে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নাগরিক সেবা নিশ্চিতের দাবিও জানানো হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র

এছাড়াও পড়ুন:

ক্রমশ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছেন খামেনি

ইরানের ৮৬ বছর বয়সী সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ক্রমশ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছেন। মঙ্গলবার এক বিশেষ প্রতিবেদনে রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সাথে পরিচিত পাঁচজন ব্যক্তির মতে, খামেনি তার প্রধান সামরিক ও নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হতে দেখেছেন, যা তার অভ্যন্তরীণ বৃত্তে বড় ধরনের শূন্য স্থান তৈরি করেছে এবং কৌশলগত ভুলের ঝুঁকি বাড়িয়েছে।

খামেনির সাথে নিয়মিত বৈঠকে যোগদানকারী এই সূত্রগুলির মধ্যে এক জন তেহরানের প্রতিরক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার বিষয়ে ইরানের ভুল গণনার ঝুঁকিকে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ বলে বর্ণনা করেছেন।

শুক্রবার থেকে বেশ কয়েকজন সিনিয়র সামরিক কমান্ডার নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছে ইরানের অভিজাত সামরিক বাহিনী রেভুলিউশনারি গার্ডের সামগ্রিক কমান্ডার হোসেইন সালামি, এর মহাকাশ প্রধান আমির আলী হাজিজাদেহ যিনি ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি রয়েছেন।

সূত্র অনুসারে, এই ব্যক্তিরা সর্বোচ্চ নেতার অভ্যন্তরীণ বৃত্তের অংশ ছিলেন যাদের মধ্যে রক্ষী বাহিনীর কমান্ডার, ধর্মগুরু এবং রাজনীতিবিদরা ছিলেন। এই তিনজন ব্যক্তি প্রধান বিষয় নিয়ে নেতার সাথে বৈঠকে যোগ দিতেন এবং দুজন ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা এসব বৈঠকে নিয়মিত উপস্থিত থাকতেন।

এই দলটি খামেনির কার্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করতেন। তারা ইসলামী প্রজাতন্ত্রের আদর্শের প্রতি অটল অনুগত ছিলেন।

ইরানের সরকার ব্যবস্থার অধীনে খামেনি সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ড, যুদ্ধ ঘোষণা করার ক্ষমতা রাখেন এবং সামরিক কমান্ডার ও বিচারকসহ ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের নিয়োগ বা বরখাস্ত করতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে খামেনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন, যদিও তিনি পরামর্শকে মূল্য দেন, বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং প্রায়শই তার পরামর্শদাতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত তথ্য খোঁজেন।

ওয়াশিংটনের মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউট থিঙ্ক-ট্যাঙ্কের ইরান প্রোগ্রামের পরিচালক অ্যালেক্স ভাতাঙ্কা বলেন, “খামেনি সম্পর্কে আপনি দুটি কথা বলতে পারেন: তিনি অত্যন্ত একগুঁয়ে কিন্তু অত্যন্ত সতর্ক। তিনি অত্যন্ত সতর্ক। এ কারণেই তিনি এতোদিন ধরে ক্ষমতায় আছেন। খামেনি মৌলিক খরচ-সুবিধা বিশ্লেষণ করার জন্য বেশ ভালো অবস্থানে আছেন যা আসলে মৌলিকভাবে অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ের দিকে নিয়ে যায়: শাসনব্যবস্থার টিকে থাকা।”

ইসরায়েলি হামলা সেসব বিপ্লবী গার্ড কমান্ডারদের ধ্বংস করে দিয়েছে যাদেরকে খামেনি ১৯৮৯ সালে সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার পর থেকে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছিলেন। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক কৌশল উভয়ের জন্যই তিনি এদের উপর নির্ভর করেছিলেন।

ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বিপজ্জনক মুহূর্তে খামেনি এই অঞ্চলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টাদের হারানোর কারণে নিজেকে আরো নিঃসঙ্গ মনে করে থাকতে পারেন। কারণ ইরানের ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ জোট ইসরায়েলের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ, যিনি ব্যক্তিগতভাবে ইরানি নেতার ঘনিষ্ঠ ছিলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন এবং ডিসেম্বরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে বিদ্রোহীরা উৎখাত করেন।

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ