খুলনায় নাগরিক সেবায় সিটি করপোরেশনের উদাসীনতা, বিএনপির উদ্বেগ ও ক্ষোভ
Published: 17th, June 2025 GMT
খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) নাগরিক সেবা প্রদানে উদাসীনতার অভিযোগ তুলে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি। কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতায় অসমাপ্ত রাস্তার কাজ দ্রুত শেষ করা, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও অবৈধ ইজিবাইক প্রবেশ বন্ধ হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির নেতারা।
গতকাল সোমবার রাতে খুলনা বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৭ এপ্রিল এসব দাবিতে বিবৃতি দেওয়া হলেও কেসিসি কর্তৃপক্ষ কোনো দায়িত্বশীল কার্যক্রম পরিচালনা করেনি। সিটি করপোরেশনের জবাবদিহি না থাকার কারণে নগরীর অধিকাংশ সড়ক বেহাল এবং এর ফলে যানজট নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
গতকালের বিবৃতিদাতারা হলেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম (বকুল), তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম (মনা), জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান (মন্টু), মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম (তুহিন) ও জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোমরেজুল ইসলাম।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বর্ষা মৌসুমের আগেই প্রাণঘাতী ডেঙ্গু নির্মূলে গত বছরগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছিল। মশকনিধনে ফগার মেশিন থেকে সৃষ্ট ধোঁয়ার কুণ্ডলীর মধ্যেই শত শত মশার জীবন্ত ওড়াউড়ি প্রমাণ করে দেয় যে কেসিসির ছিটানো স্প্রে মশকনিধনে কেবল অকার্যকরই নয়, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের সততারও অভাব রয়েছে।
বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতার কারণে খুলনা মহানগরীতে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশার ছড়াছড়ি। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে এসব বাহন চলাচলের কারণে রাস্তায় বিশৃঙ্খলা ও মোড়ে মোড়ে মারাত্মক যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। বেপরোয়া চলাচলের কারণে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। খুলনা সিটি করপোরেশন মাত্র দুই হাজার ইজিবাইক চলাচলের অনুমোদন দিলেও বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার ইজিবাইক চলাচল করছে। একইভাবে লাইসেন্সকৃত রিকশার সংখ্যা ১৭ হাজার হলেও চলাচল করে প্রায় ৩০ হাজার রিকশা।
বিএনপি নেতারা বলেন, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিরবচ্ছিন্ন নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রশাসক শুধু অফিসে বসে দাপ্তরিক কাজ করেন, যা নাগরিক সেবা নিশ্চিতে বড় অন্তরায়। তাঁরা প্রশাসককে আরও দায়িত্বশীল হয়ে নিয়মিত নগর ঘুরে ঘুরে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে সড়কগুলো দ্রুত মেরামত, ডেঙ্গু নির্মূলে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নাগরিক সেবা নিশ্চিতের দাবিও জানানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র
এছাড়াও পড়ুন:
কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ শুরু হচ্ছে শনিবার মধ্যরাতে
তিন মাস দুই দিন পর কাপ্তাই হ্রদে শুরু হচ্ছে মৎস্য আহরণ। শনিবার (২ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরতে পারবেন জেলেরা।
কাপ্তাই হ্রদে পর্যাপ্ত পানি থাকায় কয়েক বছরের মধ্যে এবার নির্দিষ্ট সময়ে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে জেলা প্রশাসন। অন্যান্য বছর ২-৩ দফা সময় বাড়িয়ে প্রায় চার মাস পর মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হতো। কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, প্রজনন এবং অবমুক্ত করা মাছের বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেয় জেলা প্রশাসন।
এদিকে, মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর শুধু জেলে পাড়া নয়, কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে জেলার সবচেয়ে বড় মৎস্য অবতরণকেন্দ্র বিএফডিসি ঘাট। মাছ পরিবহন ও সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ড্রাম, বরফ ভাঙার মেশিন। দীর্ঘ ৯২ দিনের কর্মহীন জীবনের অবসান ঘটাতে প্রহর গুনছেন জেলেরা। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)।
বিএফডিসি সূত্র বলছে, কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন, অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য ১ মে থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়। এ সময়ে হ্রদে প্রায় ৬০ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় ২৬ হাজার জেলে।
রাঙামাটির শহরের পুরান পাড়া জেলা পল্লীর বাসিন্দা নেপাল দাশ জানিয়েছেন, মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞাকালে যে সরকারি সহায়তা পাওয়া যায়, তাতে পরিবার নিয়ে চলা কঠিন। দীর্ঘ তিন মাস পর মাছ ধরতে নামতে পারব, এতে খুশি আমরা।
নতুন পাড়ার জেলে অমর কান্তি দাশ বলেছেন, হ্রদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। তবে, পানিতে ঢেউ থাকায় শুরুতে বেশি মাছ পাওয়া যাবে না। পানি কিছু কমে আসলে ও স্থির হলে ভালো মাছ পাব, আশা করি। হ্রদে নামার জন্য যা যা প্রস্তুতি, সবকিছু শেষ করেছি। জাল ও নৌকা মেরামত করা হয়েছে। এখন শুধু লেকে নামার অপেক্ষা।
রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি উদয়ন বড়ুয়া বলেছেন, এবার নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকে পর্যাপ্ত বৃষ্টির ফলে কাপ্তাই হ্রদে যথেষ্ট পানি থাকায় মাছ প্রথম থেকেই প্রজনন এবং বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আশা করছি, এবার পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যাবে। ব্যবসায়ীরা সব প্রস্ততি নিয়েছেন। রবিবার সকাল থেকে বিএফডিসি ঘাটে মাছ আসবে।
বিএফডিসির রাঙামাটি অঞ্চলের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. ফয়েজ আল করিম বলেছেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন আমাদের উপকেন্দ্রগুলোর যেসব অবকাঠামো সংস্কারের প্রয়োজন ছিল, সেসব আমরা শেষ করেছি। অন্যান্য যেসব প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন, সেসবও শেষ হয়েছে। আশা করছি, গত বছরের মতো এবছরও ভালো মাছ পাওয়া যাবে।
ঢাকা/শংকর/রফিক