হামজা চৌধুরীকে বাংলাদেশে এখন কে না চেনেন! রংপুরের আতিকুর রহমান আজ ঢাকায় এসেছিলেন অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলতে। দিন দশেক আগে যে মাঠে খেলেছিলেন হামজা-শমিতরা, সেই জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ বল পায়ে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন আতিকুর-রিয়াদরা।
বালক বিভাগে ৮০ মিনিটের লড়াইয়ে ২-২ সমতার পর টাইব্রেকারে ময়মনসিংহ বিভাগকে ৪-৩ গোলে হারিয়েছে রংপুর বিভাগ। আর বালিকা বিভাগে ৬০ মিনিটের ম্যাচে ময়মনসিংহ বিভাগকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে প্রথমবার শিরোপা জিতেছে রাজশাহী বিভাগ।
দেশসেরা হওয়ার পর সবার চোখে একটাই স্বপ্ন—জাতীয় দলে খেলা। সেই স্বপ্নের পথে দাঁড়িয়ে আতিকুর জানালেন, হামজাকে কতটা পছন্দ তাঁর। ৪ ও ১০ জুন বাংলাদেশের জার্সিতে ঢাকায় দুটি ম্যাচে খেলেছেন হামজা। অনেক ইচ্ছা থাকার পরও আতিকুর গ্যালারিতে বসে দেখতে পারেননি তাঁর ম্যাচ।
আজ সেই গ্যালারি থেকে আতিকুরদের জন্য গলা ফাটিয়েছেন দর্শক। আগ্রহ যেন এতে আরও বাড়ল। ম্যাচের পর প্রথম আলোকে বললেন, ‘খুব ভালো লাগছে, এখানে এই মাঠে খেলে চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি। হামজা ভাইকে আমার অনেক পছন্দ। তাঁর মতো ফুটবলার হতে চাই।’
শুধু আতিকুর নন, ২ গোল করে বালক বিভাগে সেরা গোলদাতা হওয়া রিয়াদেরও আশা জাতীয় দলে খেলা। ছেলেদের মতো মেয়েরাও অনেক দূর যেতে চান। রাজশাহীর হয়ে ফাইনালে জোড়া গোল করা মৌসুমীর হাতে উঠেছে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার। সেরা হয়ে বেশ আনন্দিত মৌসুমী, ‘আমি খুবই খুশি। আমার ২ গোলে রাজশাহী চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। প্রথমবার ফাইনালে এসেই জিততে পেরেছি। সামনে আরও ভালো করতে চাই, জাতীয় দলে খেলার অনেক ইচ্ছা আমার।’ আর টুর্নামেন্ট–সেরা আলেয়া তো বলেই দিলেন, ঋতুপর্ণা-রিপাদের মতো হতে চান।
মৌসুমী-আলেয়াদেরও খেলা ভালো লেগেছে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমানের। কাল মাঠে বসে ম্যাচ দেখেই কয়েকজনের নাম টুকে নিয়েছেন নিজের নোটবুকে। এরপর জানিয়েছেন তাঁদের নিয়ে ভাবনার কথা, ‘আগস্টে ভুটানে অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপ। সেই টুর্নামেন্টের জন্য আমাদের আরও কিছু ফুটবলার লাগবে।’
এ টুর্নামেন্ট থেকে এরই মধ্যে ক্যাম্পেও ডাক পেয়েছেন দুজন। একজন ঢাকা বিভাগের সাবিনা আক্তার, আরেকজন চট্টগ্রাম বিভাগের মামনি চাকমা। বিবেচনায় আছেন চ্যাম্পিয়ন রাজশাহীর সালেহা, সাদিয়া ও আলেয়া। তাঁদের জন্যও অনূর্ধ্ব-১৭ বা অনূর্ধ্ব-২০ দলের দুয়ার খুলে যেতে পারে।
ক্রীড়া পরিদপ্তর এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ২০১৮ সালে প্রথম হয়েছিল অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট, প্রথমবার শুধু বালক বিভাগের প্রতিযোগিতা হয়। সেবার চ্যাম্পিয়ন হয় রংপুর। ২০১৯ সালে যোগ হয় বালিকা বিভাগের প্রতিযোগিতাও। শুরু থেকে টুর্নামেন্টের নাম ছিল বালক বিভাগে বঙ্গবন্ধু ও বালিকা বিভাগে বঙ্গমাতা ফুটবল। মাঝে ২০২২ সালে টুর্নামেন্ট মাঠে গড়ায়নি। ২০২৩ আসরে সব খেলা শেষ হলেও ফাইনাল পেছাতে পেছাতে শেষ পর্যন্ত আর অনুষ্ঠিতই হয়নি। এর মধ্যেই ২০২৪ সালের জুনে উপজেলা পর্যায় দিয়ে নতুন আসর শুরু হয়ে যায়।
উপজেলা পর্যায়ে অংশ নিয়েছিল মোট ১ লাখ ১০ হাজার ২৬৪ জন খেলোয়াড়। জেলা ও বিভাগীয় প্রতিযোগিতা শেষ হয় এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, টুর্নামেন্টের প্রতিভাবান ৪০ জন বালক ও ৪০ জন বালিকা বাছাই করে দেশ ও দেশের বাইরে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব লক ব ভ গ ফ ইন ল ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
৪০ ওভার শেষে টাই, প্রথম সুপার ওভার টাই, দ্বিতীয় সুপার ওভারও টাই, তৃতীয় সুপার ওভারে ঐতিহাসিক জয়
গ্লাসগোয় কাল বাংলাদেশ সময় রাতে নতুন ইতিহাসের জন্ম হলো। ছেলেদের পেশাদার ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো দেখা গেল তিনটি সুপার ওভারের ম্যাচ, যেখানে নেপালকে হারিয়ে জিতেছে শেষ পর্যন্ত নেদারল্যান্ডস।
স্কটল্যান্ডে চলছে ত্রিদেশীয় টি–টোয়েন্টি সিরিজ। সেখানে কাল দ্বিতীয় ম্যাচে টস হেরে নেদারল্যান্ডসকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠায় নেপাল। বিক্রমজিৎ সিংয়ের ২৯ বলে ৩০ ও তেজা নিদামানুরুর ৩৭ বলে ৩৫ রানে ৭ উইকেটে ১৫২ রানে থেমেছে ডাচদের ইনিংস। তাড়া করতে নামা নেপালের জয়ের জন্য শেষ ওভারে ১৬ রানের প্রয়োজন ছিল। সন্দ্বীপ লামিচাঁনে ও নন্দন যাদব মিলে তুলতে পারেন ১৫ রান। দুই দলের ইনিংস মিলিয়ে মোট ৪০ ওভার শেষে ম্যাচটি টাই হওয়ায় খেলা গড়ায় সুপার ওভারে।
আরও পড়ুন৬০০ শুধুই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি ও আর যত রেকর্ড৫২ মিনিট আগেপ্রথম সুপার ওভারে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ১ উইকেটে ১৯ রান তোলে নেপাল। মূল ম্যাচে ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান দেওয়া ডাচ স্পিনার ড্যানিয়েল ডোরামকে সুপার ওভারে দুটি ছক্কা ও একটি চার মারেন নেপালের কুশল ভুরতাল। তাড়া করতে নেমে ডাচ ওপেনার মাইকেল লেভিট নেপাল পেসার করন কেসির প্রথম বলেই ছক্কা মারেন। কিন্তু পরের তিনটি বলে মাত্র ৩ রান দেন করন। এরপর শেষ দুই বলে ছক্কা ও চার মেরে প্রথম সুপার টাই করেন ম্যাক্স ও’ডাউড।
দ্বিতীয় সুপার ওভারে নেদারল্যান্ডস আগে ব্যাট করে ১ উইকেটে ১৭ তুলেছে। তাড়া করতে নামা নেপালের হয়ে রোহিত পৌডেল প্রথম তিন বলেই ১১ রান তুলে ফেলেন। কিন্তু পরের দুটি বল ডট করেন ডাচ পেসার কাইল ক্লেইন। শেষ বলে দীপেন্দ্র সিং ছক্কা মারায় দ্বিতীয় সুপার ওভারও টাই হয়।
আরও পড়ুনঅশ্বিন ও তাঁর দলের বিরুদ্ধে রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগ১০ ঘণ্টা আগেটি-টোয়েন্টি ও লিস্ট এ মিলিয়ে ছেলেদের পেশাদার ক্রিকেটে খেলা প্রথমবারের মতো তৃতীয় সুপার ওভারে গড়ানোর পর রীতিমতো ট্র্যাজেডির শিকার হয় নেপাল। তৃতীয় সুপার ওভারে আগে ব্যাট করতে নেমে নেপাল যে কোনো রানই করতে পারেনি! ডাচ স্পিনার জ্যাক-লায়ন ক্যাচেটের করা প্রথম চার বলেই ২ উইকেট হারিয়ে অলআউট হয় নেপাল। নেদারল্যান্ডসের লেভিট এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে সন্দ্বীপ লামিচাঁনের প্রথম বলেই ছক্কা মেরে অবিশ্বাস্য ও রোমাঞ্চকর জয় এনে দেন।
এর আগে মূল ম্যাচে ডাচদের ১৫২ রান তাড়া করতে নেমে ৩৫ বলে ৪৮ রান করেন নেপালের অধিনায়ক রোহিত। ২৩ বলে ৩৪ এসেছে ওপেনার ভুরতালের ব্যাট থেকে। রুপেশ সিং করেন ১৪ বলে ১৯।