মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে একাধিক নেতার সঙ্গে সৌদি যুবরাজের ফোনালাপ
Published: 23rd, June 2025 GMT
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র উত্তেজনা। ইরানে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর পরিস্থিতি কোনদিকে মোড় নেয় তা বোঝা যাচ্ছে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির বৈঠকের পর বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান রোববার একাধিক টেলিফোন আলাপ করেছেন উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) সদস্য দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর এবং ইসরায়েলের চলমান হামলার প্রেক্ষাপটে এই আলোচনা হয় বলে জানিয়েছে সৌদি প্রেস এজেন্সি।
আলোচনায় অংশগ্রহণকারী জিসিসি নেতারা হলেন– বাহরাইনের বাদশা হামাদ বিন ঈসা আল-খলিফা, ওমানের সুলতান হাইথাম বিন তারিক, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি, কুয়েতের আমির শেখ মিশাল আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান। আলোচনায় উঠে আসে ইরানে মার্কিন হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি, ইসরায়েলের ধারাবাহিক আক্রমণ এবং জবাবে ইরানের সম্ভাব্য কৌশল।
আলোচনায় নেতারা এই সংকটকালে উপসাগরীয় অঞ্চলের ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং জোর দিয়েছেন সংযম বজায় রাখা, আরও উত্তেজনা এড়িয়ে চলা, কূটনৈতিক সমাধানের পথ অনুসরণ করার ওপর। একই দিন সালমানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। এই আলোচনাতেও মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতি, মার্কিন হামলার ফলাফল এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত মতবিনিময় হয়।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ঘটনার পর ইরানের পরিস্থিতি নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব। রোববার সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্স-এ প্রকাশিত বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইরানের ওপর মার্কিন হামলা, বিশেষ করে পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার ঘটনাকে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে সৌদি আরব।’
এর আগে ১৩ জুনের বিবৃতিতেও সৌদি আরব ইরানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছিল। খবর আলজাজিরার।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এবার মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলা
কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের আল-উদেইদ বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে ইরান। ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় মার্কিন হামলার পর দুই দিন না পেরোতেই এই হামলা চালাল তেহরান। ইরান–ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলায় মধ্যপ্রাচ্য সংকট আরও জটিল হলো।
গতকাল সোমবার রাতে কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার কথা জানায় ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কোর (আইআরজিসি)। বিবৃতিতে আইআরজিসি বলেছে, ইরানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার ওপর হামলার জবাব দিতে কোনো পরিস্থিতিতেই ছাড় দেওয়া হবে না।
এ হামলা ‘ভ্রাতৃপ্রতিম’ কাতার বা দেশটির জনগণের বিরুদ্ধে নয় বলে জানিয়েছে ইরানের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিষদ। তারা বলেছে, আবাসিক এলাকা থেকে দূরের মার্কিন ঘাঁটিতে এই হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানের হামলার সময় কাতারে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এ সময় রাজধানী দোহার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শহরের এক বাসিন্দা সিএনএনকে বলেন, ‘হামলার আকস্মিকতায় আমার শিশুরা চমকে ওঠে। তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার সময় বুঝতে পারছিলাম না আমি কী করব। কারণ, নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার বিষয়ে সরকার আগে থেকে কিছু জানায়নি।’
কাতার সরকারের দাবি, হামলায় কেউ হতাহত হননি। আল–উদেইদ বিমানঘাঁটি এলাকায় শনাক্ত হওয়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আকাশে থাকতেই ধ্বংস করা হয় বলে জানান কাতারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ সৌদ বিন আবদুল রহমান। পরে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে জানায়, নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।
আর হামলার নিন্দা জানিয়ে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেন, এই হামলা কাতারের সার্বভৌমত্ব, আকাশসীমা এবং জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন।
গতকাল রাতে বাহরাইনেও সাইরেন বাজানো হয় এবং বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়। হামলার আশঙ্কায় সিরিয়ায় অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটি কাসরাককেও সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়। আকাশসীমা বন্ধ করা হয় কুয়েত, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
ইরানের এই হামলা প্রতীকী বলে মনে করেন দোহা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মুহানাদ সালুম।
আল-জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘আল-উদেইদ বিমান ঘাঁটি থেকে আগেই মার্কিন ও কাতারি সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। আর আমার মনে হয় এই হামলার আগে বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারকে জানিয়েছিল তেহরান। সবকিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে এটি একটি প্রতীকী হামলা।’
ইরাকে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয়কাতারে হামলার সময় গতকাল ইরাকে মার্কিন আইন আল-আসাদ বিমান ঘাঁটিতেও আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে বলে জানায় রয়টার্স। পরে ইরাকের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে কাতারে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। তবে ইরাকে হামলা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
যদিও ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম জানিয়েছিল, কাতারের সঙ্গে ইরাকেও হামলা চালিয়েছে ইরান। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও শুরুতে ইরাকে হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছিল।
১৩ জুন থেকে ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। পরে ২১ জুন রাতে ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ওই হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি আগেই দিয়েছিল তেহরান। এরই মধ্যে গতকাল এক সতর্কবার্তায় কাতারে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছিল মার্কিন দূতাবাস। হামলার আগেই আকাশসীমা বন্ধ করেছিল কাতারও।
কাতারে হামলার পর বিবিসির খবরে বলা হয়, মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন জানিয়েছে, কাতারের আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে ইরান। একজন মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, এখন পর্যন্ত হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিকের হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি এখনো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
এদিকে গতকাল রাতে হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
হামলার নিন্দামার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
নিন্দা জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, কাতারের সঙ্গে পূর্ণ সংহতি রয়েছে তাদের।
কাতারের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি বলেছেন, সব পক্ষকে সংযত থাকার এবং সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছেন তিনি। একই সঙ্গে সবাইকে আলোচনার টেবিলে ফেরার কথা বলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের যত ঘাঁটিকয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের সামরিক ঘাঁটি পরিচালনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এই অঞ্চলে সবচেয়ে বড় ঘাঁটি হলো কাতারের আল–উদেইদ। ৬০ একর জায়গার ওপর এই ঘাঁটিটি দোহার দক্ষিণ–পশ্চিমে অবস্থিত। ১৯৯৬ সালে কাতারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রতিরক্ষা চুক্তির মাধ্যমে ঘাঁটিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেখানে প্রায় ১০ হাজার মার্কিন সেনা অবস্থান করেন।
মধ্যপ্রাচ্যে ইরাক, বাহরাইন, কুয়েত, সৌদি আরব, সিরিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতেও মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে। এসব ঘাঁটিতে স্বাভাবিক সময়ে প্রায় ৩০ হাজার মার্কিন সেনা থাকেন। কিন্তু বড় কোনো অভিযানের সময়ে তা কয়েক গুণ বাড়ানো হয়। যেমন ২০০৩ সালে ইরাকে হামলার পর ২০০৭ সালের মধ্যে এসব ঘাঁটিতে মার্কিন সেনাসংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি।
ইসরায়েলে দিনের বেলা বড় হামলাগতকাল সংঘাতের ১১তম দিনে ইসরায়েলে ইরানের হামলা ছিল ব্যতিক্রম। সাধারণত রাতে হামলা চালায় ইরান। গতকাল বড় হামলা চালানো হয় দিনের বেলায়। আইআরজিসি জানায়, ইসরায়েলের তেল আবিব, সাফাদ, আশকেলন, আশদদ ও বেইসান শহরে তাদের ছোড়া রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। এর বাইরে হামলা চালানো হয় পশ্চিম জেরুজালেমেও।
ইরানের হামলার সময় মধ্য ও দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রায় ৩৫ মিনিট ধরে সাইরেন বাজে ও বিস্ফোরণে শব্দ শোনা যায় বলে জানান সেখানকার বাসিন্দারা। একটি ভিডিওতে আশদদ শহরে রাস্তার ধারে বিকট বিস্ফোরণ হতে দেখা যায়। হামলার সময় পশ্চিম জেরুজালেমে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটের আইনপ্রণেতারা আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যান। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দক্ষিণ ইসরায়েল।
এদিকে গতকালও ইসরায়েলকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই সাজা দিতে হবে। আর ইরানের পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী সাইদ খতিবজাদেহ আল-জাজিরাকে বলেন, নিজেদের রক্ষার জন্য ইরান কত সময় ধরে লড়তে পারে, তার উদাহরণ ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত চলা ইরাক-ইরান যুদ্ধ। শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে প্রস্তুত তেহরান।
আইআরজিসির ১০ সদস্য হত্যা, বিমানবন্দরে হামলাইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, ২২ জুন রাতে প্রায় ২০টি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ইরানের পশ্চিমাঞ্চল ও তেহরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। এ হামলার লক্ষ্য ছিল পশ্চিমাঞ্চলের কেরমানশাহ প্রদেশে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও রাডার-সংশ্লিষ্ট স্থাপনা। হামলা হয় তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণব্যবস্থায়। এই রাতে তেহরানের কাছে পারচিন এলাকাতেও হামলা হয় বলে জানিয়েছে ইরানের গণমাধ্যমগুলো।
গতকাল ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, এদিন তেহরানের কেন্দ্রে ইরানের সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আইআরজিসির বাসিজ বাহিনীর প্রধান কার্যালয়, আইআরজিসির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাবিষয়ক প্রধান কার্যালয়, ফিলিস্তিন স্কয়ার ও এভিন কারাগার।
ইরানের ছয়টি বিমানবন্দরেও হামলার কথা জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মেহরাবাদ, মাশহাদ ও দেজফুল বিমানবন্দর। হামলায় ইরানের ১৫টি যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার ধ্বংসের দাবি করেছে ইসরায়েল। এ ছাড়া গতকাল হামলার সময় কারাজ, সিরাজ ও তাবরিজ শহরে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে। কাজ শহরের একটি হাসপাতালেও হামলার খবর পাওয়া যায়।
গতকাল ইরানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, আগের দিন রোববার ইয়াজদ শহরে ইসরায়েলের হামলায় আইআরজিসির অন্তত ১০ সদস্য নিহত হন। এ ছাড়া গতকাল কেরমানশাহ প্রদেশে হামলায় এক নারী ও তাঁর শিশুসন্তান নিহত হয়। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় ইরানে সামরিক বাহিনীর বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ও সদস্য, পরমাণুবিজ্ঞানী ও বেসামরিক নাগরিকসহ প্রায় ৫০০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
পরমাণুকেন্দ্রে হামলায় কতটা ক্ষয়ক্ষতি২১ জুন রাতে ইরানের তিনটি পরমাণুকেন্দ্রে বোমা হামলার পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমে বলেছিলেন, ওই কেন্দ্রগুলো ‘নিশ্চিহ্ন’ হয়ে গেছে। পরদিন ২২ জুন অবশ্য তিনি জানান, ‘স্যাটেলাইট থেকে ধারণ করা ছবি অনুযায়ী, ইরানের সব পরমাণুকেন্দ্রে চরম ক্ষতি হয়েছে।’ ছবিতে ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পরমাণুকেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক বোমা হামলার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তবে ওই ছবিগুলো থেকে তিনটি পরমাণুকেন্দ্রে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। জাতিসংঘের সংস্থা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রসি গতকাল জানিয়েছেন, ফর্দো পরমাণু কেন্দ্রে বোমার আঘাতে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এতে সেখানে ‘উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি’ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নাতাঞ্জেও পরমাণু সমৃদ্ধকরণ প্লান্টে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
এরই মধ্যে গতকাল আবার ফর্দো পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার এক দিন পর ফর্দো পরমাণু কেন্দ্রে যাওয়ার সড়কগুলো ‘অকার্যকর করতে’ এই হামলা চালানো হয়।
নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের আহ্বানচলমান সংঘাতের মধ্যে গতকাল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মস্কোয় সাক্ষাৎ করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। এ সময় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ও প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শুভেচ্ছা পুতিনের কাছে পৌঁছে দেন তিনি। রুশ প্রেসিডেন্টকে আরাগচি বলেন, রাশিয়া ‘ইতিহাসের সঠিক পক্ষে’ রয়েছে। এ সময় পুতিন বলেন, তাঁর দেশ ইরানের জনগণকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত। ইরানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগে আগ্রাসন চালানো হচ্ছে, তা ‘ভিত্তিহীন’।
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর ২২ জুন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি অধিবেশন ডাকার অনুরোধ জানায় ইরান। এ নিয়ে এদিনও নিরাপত্তা পরিষদে প্রথম দফায় অধিবেশন বসে। সেখানে অবিলম্বে শর্তহীন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব করার জন্য ১৫ সদস্যের পরিষদকে আহ্বান জানায় রাশিয়া, চীন ও পাকিস্তান। গতকাল দ্বিতীয় দফায় পরিষদের অধিবেশন বসার কথা ছিল।
ট্রাম্পের সুর বদলইরানের পরমাণু কেন্দ্রে হামলার পর সংবাদমাধ্যম সিবিএসকে ২২ জুন ট্রাম্প বলেছিলেন, তেহরানকে জানানো হয়েছে ইরানের সরকার পরিবর্তনের লক্ষ্যে এ হামলা চালানো হয়নি। তবে ওই দিন তিনি আবার সুর বদলে বলেন, ‘তেহরানের বর্তমান সরকার যদি ইরানকে আবার মহান করে তুলতে সক্ষম না হয়, তাহলে সেখানে কেন সরকার পরিবর্তন হবে না?’
একই ভাষ্য হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট। গতকাল ফক্স নিউজকে তিনি বলেন, ‘ইরান সরকার যদি শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক সমাধানে রাজি না হয়, তাহলে কয়েক দশক ধরে ইরানিদের দমনকারী এই সহিংস সরকারের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার অধিকার জনগণের থাকা কি উচিত নয়?’ তবে তিনি এ–ও বলেন, ‘ইরান নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনো কূটনীতিতে আগ্রহী।’
ইরানের সরকার পরিবর্তনের পরিণতি ভালো হবে না বলে মনে করেন আইএইএর ভেরিফিকেশন অ্যান্ড সিকিউরিটি পলিসি কো–অর্ডিনেশনের সাবেক প্রধান তারিক রউফ। আল-জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘যদি ইরানের বর্তমান সরকারের পতন হয়, এর ফল কী হবে, তা অজানা। ইরাক ও লিবিয়ায় কী হয়েছে, তা আমরা দেখেছি। দীর্ঘ দিন ধরে ক্ষমতায় থাকা একটি সরকারের পতনের পর দেশটিতে কে ক্ষমতায় আসবে, পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, সেখানে গৃহযুদ্ধ শুরু হবে কি না, তা বাইরের দেশ থেকে কেউ নিশ্চয়তা দিতে পারে না।’