লাখ লাখ ছায়াপথের ছবি দেখাল সর্ববৃহৎ ক্যামেরা
Published: 24th, June 2025 GMT
প্রসারণশীল মহাবিশ্বজুড়ে অনবরত ছুটে চলা অযুত নিযুত ছায়াপথের একটি মিল্কিওয়ে। এক লাখ থেকে এক লাখ ৮০ হাজার আলোক বর্ষ ব্যাসের এই সর্পিল ছায়াপথের এক বাহুর মধ্যে ছোট্ট জায়গাজুড়ে আমাদের এই সৌরজগতের অবস্থান। তারও মাঝামাঝি এক জায়গায় অবস্থিত এই পৃথিবীতে হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ কৌতূহলে চোখ রেখেছে মহাকাশে। উন্মোচন করার চেষ্টা করেছে তার নানা রহস্য। তারই অংশ হিসেবে এবার মানুষ তৈরি করেছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্যামেরা। আর এই ক্যামেরাতে ধারণ করা প্রথম ছবিতেই ধরা পড়েছে মহাবিশ্বের এমন এক চিত্র, যা শুধু অভূতপূর্ব নয়, মনোমুগ্ধকর। ছবিতে যেমন ধরা পড়েছে লাখ লাখ দূরবর্তী নক্ষত্র, ছায়াপথ, তেমনি অদেখা গ্রহাণু।
চিলির উত্তরাঞ্চলীয় কোকুইম্বো এলাকায় ৮ হাজার ৭৯৯ ফুট উচ্চতার সেরো পাচোনের এল পেনান পর্বত শিখরের মানমন্দিরে বসানো হয়েছে সর্ববৃহৎ এই ক্যামেরা। প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ ভেরা সি রুবিনের নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে এর। এটিকে ক্যামেরার পাশাপাশি লার্জ সিনোপটিক টেলিস্কোপও বলা যায়। এই ক্যামেরাতেই ধরা পড়েছে মহাকাশের অভূতপূর্ব সেই দৃশ্য। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন তাদের ইউটিউব চ্যানেলে এই ক্যামেরায় ধারণ করা দুটি ছবি ও একটি ছোট্ট ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ করেছে।
এই ক্যামেরার প্রথম ছবিটি ৬৭৮টি এক্সপোজারের সমন্বয়ে তৈরি একটি যৌগিক চিত্র, যা মাত্র সাত ঘণ্টায় ধারণ করা হয়েছে। ছবিতে কয়েক হাজার আলোক বর্ষ দূরের উজ্জ্বল গোলাপি আভার পটভূমিতে কমলা-লাল ট্রিফিড নেবুলা ও ল্যাগুন নেবুলাকে দেখা যায়। এ ছাড়া ছবিতে আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথের ভেতর দিকের বিভিন্ন নক্ষত্রকেও দেখা গেছে। আগেও এসব নক্ষত্র ছায়াপথের ছবি বিজ্ঞানীরা টেলিস্কোপের মাধ্যমে ধারণ করেছেন। তবে সেসব ছবি ছিল অস্পস্ট। আবার কোনো কোনো নক্ষত্রকে দেখাও যায়নি। কিন্তু ভেরা রুবিন ক্যামেরায় সেগুলো এখন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আরেকটি ছবিতে ভার্গো নক্ষত্রপুঞ্জের বিস্তৃত দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে।
ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের প্রকাশ করা ভিডিওতে দেখা গেছে ‘কসমিক ট্রেজার চেস্ট’ বা ‘মহাজাগতিক রত্নভান্ডার’। এতে প্রথমে খুব কাছ থেকে দুটি ছায়াপথ দেখা গেলেও পরে পেছনে সরে গিয়ে কোটি কোটি ছায়াপথ দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন ও ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জি অব সায়েন্স যৌথ অর্থায়নে ভেরা সি রুবেন মানমন্দিরটি তৈরি করেছে।
জানা গেছে, এই মানমন্দিরে রয়েছে অত্যাধুনিক ৮ দশমিক ৪ মিটার টেলিস্কোপ এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডিজিটাল ক্যামেরা। পাশাপাশি এতে রয়েছে শক্তিশালী ডেটা প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থা।
হোয়াইট হাউসের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নীতিবিষয়ক দপ্তরের পরিচালক মাইকেল ক্রাটসিয়স বলেন, রুবিন মানমন্দির আমাদের ভবিষ্যতের জন্য এক বিনিয়োগ। এটি এমন এক জ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করবে, যার ওপর আমাদের সন্তানেরা গর্বের সঙ্গে আগামী দিন গড়বে।
ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের প্রধান বেরিয়ান স্টোন বলেন, এই রুবিন মানমন্দির আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে ইতিহাসের সব অপটিক্যাল টেলিস্কোপের চেয়েও বেশি তথ্য ধারণ করবে বলে আমরা আশা করি।
এর আগেও রুবিন মানমন্দির থেকে ২ হাজার ১০৪টি গ্রহাণু আবিষ্কার করা হয়েছে। যার মধ্যে পৃথিবীর কাছাকাছি অবস্থিত সাতটি গ্রহাণুও রয়েছে, যা আমাদের সৌরজগতে আগে কখনও দেখা যায়নি। খবর সিএনএনের।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ব ন ম নমন দ র এই ক য ম র ছ য় পথ র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
সৌরজগতের বাইরে থেকে আসা ধূমকেতুর ছবি তুলল হাবল টেলিস্কোপ
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ধূমকেতু ৩আই/অ্যাটলাসের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে চমৎকার ছবিটি প্রকাশ করেছে। এ ধূমকেতুটি এসেছে আমাদের সৌরজগতের বাইরের এক নক্ষত্রমণ্ডল থেকে। ৭ আগস্ট নাসা ও ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ইসা) হাবল টেলিস্কোপের তোলা এই অভূতপূর্ব ছবিগুলো প্রকাশ করেছে।
ঘণ্টায় প্রায় ২ লাখ ৯ হাজার কিলোমিটার বেগে ছুটে আসা এ ধূমকেতুটি গত মাসে চিলির এক শক্তিশালী টেলিস্কোপে প্রথম ধরা পড়ে। এটি এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত মাত্র তৃতীয় আন্তনাক্ষত্রিক বস্তু, যা আমাদের সৌরজগৎ অতিক্রম করছে। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, এর বরফমণ্ডিত কেন্দ্র বা আইসি কোরের ব্যাস ১০ কিলোমিটারের বেশি হতে পারে। কিন্তু হাবলের নিখুঁত পর্যবেক্ষণ বলছে, এর আকার ৫ দশমিক ৬ কিলোমিটারের বেশি নয়।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, অক্টোবরের শেষ দিকে এটি সূর্যের সবচেয়ে কাছে পৌঁছাবে। তবে চিন্তার কিছু নেই, তখন এটি পৃথিবী থেকে যথেষ্ট নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করবে। অবশ্য ধূমকেতুটি কোথা থেকে এসেছে বা কী দিয়ে তৈরি, তা নিয়ে এখনো গবেষণা করে যাচ্ছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
হাবল স্পেস টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণ দলের প্রধান ডেভিড জুয়িট বলেন, এখন অবধি কেউ জানে না যে ধূমকেতুটি কোথা থেকে এসেছে। এটি রাইফেল থেকে নির্গত বুলেটের গতি পর্যবেক্ষণ করার মতো। সেকেন্ডের হাজার ভাগের এক ভাগ সময়ের তথ্য দিয়ে ধূমকেতুটির প্রাথমিক যাত্রার ইতিহাস অনুধাবন প্রায় অসম্ভব।
সূত্র: এনডিটিভি, লাইভ সায়েন্স