প্রসারণশীল মহাবিশ্বজুড়ে অনবরত ছুটে চলা অযুত নিযুত ছায়াপথের একটি মিল্কিওয়ে। এক লাখ থেকে এক লাখ ৮০ হাজার আলোক বর্ষ ব্যাসের এই সর্পিল ছায়াপথের এক বাহুর মধ্যে ছোট্ট জায়গাজুড়ে আমাদের এই সৌরজগতের অবস্থান। তারও মাঝামাঝি এক জায়গায় অবস্থিত এই পৃথিবীতে হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ কৌতূহলে চোখ রেখেছে মহাকাশে। উন্মোচন করার চেষ্টা করেছে তার নানা রহস্য। তারই অংশ হিসেবে এবার মানুষ তৈরি করেছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্যামেরা। আর এই ক্যামেরাতে ধারণ করা প্রথম ছবিতেই ধরা পড়েছে মহাবিশ্বের এমন এক চিত্র, যা শুধু অভূতপূর্ব নয়, মনোমুগ্ধকর। ছবিতে যেমন ধরা পড়েছে লাখ লাখ দূরবর্তী নক্ষত্র, ছায়াপথ, তেমনি অদেখা গ্রহাণু।   

চিলির উত্তরাঞ্চলীয় কোকুইম্বো এলাকায় ৮ হাজার ৭৯৯ ফুট উচ্চতার সেরো পাচোনের এল পেনান পর্বত শিখরের মানমন্দিরে বসানো হয়েছে সর্ববৃহৎ এই ক্যামেরা। প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ ভেরা সি রুবিনের নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে এর। এটিকে ক্যামেরার পাশাপাশি লার্জ সিনোপটিক টেলিস্কোপও বলা যায়। এই ক্যামেরাতেই ধরা পড়েছে মহাকাশের অভূতপূর্ব সেই দৃশ্য। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন তাদের ইউটিউব চ্যানেলে এই ক্যামেরায় ধারণ করা দুটি ছবি ও একটি ছোট্ট ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ করেছে।  

এই ক্যামেরার প্রথম ছবিটি ৬৭৮টি এক্সপোজারের সমন্বয়ে তৈরি একটি যৌগিক চিত্র, যা মাত্র সাত ঘণ্টায় ধারণ করা হয়েছে। ছবিতে কয়েক হাজার আলোক বর্ষ দূরের উজ্জ্বল গোলাপি আভার পটভূমিতে কমলা-লাল ট্রিফিড নেবুলা ও ল্যাগুন নেবুলাকে দেখা যায়। এ ছাড়া ছবিতে আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথের ভেতর দিকের বিভিন্ন নক্ষত্রকেও দেখা গেছে। আগেও এসব নক্ষত্র ছায়াপথের ছবি বিজ্ঞানীরা টেলিস্কোপের মাধ্যমে ধারণ করেছেন। তবে সেসব ছবি ছিল অস্পস্ট। আবার কোনো কোনো নক্ষত্রকে দেখাও যায়নি। কিন্তু ভেরা রুবিন ক্যামেরায় সেগুলো এখন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আরেকটি ছবিতে ভার্গো নক্ষত্রপুঞ্জের বিস্তৃত দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে।

ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের প্রকাশ করা ভিডিওতে দেখা গেছে ‘কসমিক ট্রেজার চেস্ট’ বা ‘মহাজাগতিক রত্নভান্ডার’। এতে প্রথমে খুব কাছ থেকে দুটি ছায়াপথ দেখা গেলেও পরে পেছনে সরে গিয়ে কোটি কোটি ছায়াপথ দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন ও ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জি অব সায়েন্স যৌথ অর্থায়নে ভেরা সি রুবেন মানমন্দিরটি তৈরি করেছে।

জানা গেছে, এই মানমন্দিরে রয়েছে অত্যাধুনিক ৮ দশমিক ৪ মিটার টেলিস্কোপ এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডিজিটাল ক্যামেরা। পাশাপাশি এতে রয়েছে শক্তিশালী ডেটা প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থা।

হোয়াইট হাউসের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নীতিবিষয়ক দপ্তরের পরিচালক মাইকেল ক্রাটসিয়স বলেন, রুবিন মানমন্দির আমাদের ভবিষ্যতের জন্য এক বিনিয়োগ। এটি এমন এক জ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করবে, যার ওপর আমাদের সন্তানেরা গর্বের সঙ্গে আগামী দিন গড়বে।

ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের প্রধান বেরিয়ান স্টোন বলেন, এই রুবিন মানমন্দির আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে ইতিহাসের সব অপটিক্যাল টেলিস্কোপের চেয়েও বেশি তথ্য ধারণ করবে বলে আমরা আশা করি। 

এর আগেও রুবিন মানমন্দির থেকে ২ হাজার ১০৪টি গ্রহাণু আবিষ্কার করা হয়েছে। যার মধ্যে পৃথিবীর কাছাকাছি অবস্থিত সাতটি গ্রহাণুও রয়েছে, যা আমাদের সৌরজগতে আগে কখনও দেখা যায়নি। খবর সিএনএনের। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ব ন ম নমন দ র এই ক য ম র ছ য় পথ র আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

সৌরজগতের গ্রহাণু বলয় হারিয়ে যাচ্ছে

বৃহস্পতি ও মঙ্গল গ্রহের মাঝখানে থাকা গ্রহাণু বলয় থেকে ধীরে ধীরে বিভিন্ন উপাদান হারিয়ে যাচ্ছে। মহাকর্ষীয় শক্তি ও ঘন ঘন সংঘর্ষের কারণে এই মহাজাগতিক অঞ্চলটি ছোট হয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন উরুগুয়ের ইউনিভার্সিড্যাড দে লা রিপাবলিকার জুলিয়ো ফার্নান্দেজের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী। এই ক্ষয় পৃথিবীর অতীত ও ভবিষ্যতের উল্কাপিণ্ডের আঘাতের ঝুঁকির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করছেন তাঁরা।
নতুন এক গবেষণায় জানা গেছে, মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মাঝখানের গ্রহাণু বলয় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার উপাদান হারাচ্ছে। ৪৬০ কোটি বছর আগে সৌরজগতের জন্মের সময় এই অঞ্চলে একটি গ্রহ তৈরির সম্ভাবনা থাকলেও, তা হয়নি। মূলত বৃহস্পতি গ্রহের শক্তিশালী মাধ্যাকর্ষণের কারণে তা সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতি গ্রহ মহাজাগতিক বস্তুকে একত্র হওয়ার সুযোগ না দিয়ে উল্টো সংঘর্ষ ঘটিয়ে সেগুলোকে ভেঙে ফেলে।

বর্তমানে এই গ্রহাণু বলয়ে চাঁদের ভরের মাত্র প্রায় ৩ শতাংশ উপাদান অবশিষ্ট আছে। বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে এসব উপাদান। বৃহস্পতি, শনি ও মঙ্গল গ্রহের মহাকর্ষীয় প্রভাবের কারণে এই মহাজাগতিক শিলার কক্ষপথ ক্রমেই প্রভাবিত হচ্ছে। কিছু শিলা সৌরজগতের ভেতরের দিকে থাকা পৃথিবীর কক্ষপথের কাছে চলে আসছে। আবার কিছু শিলা বৃহস্পতির দিকে ছিটকে যাচ্ছে। কিছু শিলা সংঘর্ষের ফলে ধুলায় পরিণত হচ্ছে।

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, বলয়টি প্রতিবছর প্রায় শূন্য দশমিক শূন্য শূন্য ৮৮ শতাংশ হারে ছোট হচ্ছে। এই হিসাব শুধু বলয়ের সেই অংশের জন্য, যেখানে এখনো সংঘর্ষ ঘটছে। এই হার ছোট মনে হলেও শত শত কোটি বছর ধরে এর বিশাল প্রভাব তৈরি হচ্ছে। হারিয়ে যাওয়া উপাদানের প্রায় ২০ শতাংশ অপেক্ষাকৃত বড় খণ্ড হিসেবে ছিটকে যায়। সেসব বড় খণ্ডকে আমরা কখনো কখনো পৃথিবীর কক্ষপথে প্রবেশ করতে দেখি উল্কাপিণ্ড হিসেবে। অবশিষ্ট ৮০ শতাংশ সূক্ষ্ম ধুলায় পরিণত হয়। সেই ধুলার কারণে সূর্যাস্তের পরে বা সূর্যোদয়ের আগে আমাদের পৃথিবীর আকাশে এক ক্ষীণ আভা সৃষ্টি হয়।

আরও পড়ুনসৌরজগতের শেষ সীমানায় কী আছে১১ আগস্ট ২০২৫

গ্রহাণু বলয়কে আমাদের সৌরজগতের একটি স্থায়ী অংশ মনে হলেও নতুন গবেষণা বলছে, এটি ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এই গবেষণায় সেরেস, ভেস্টা ও প্যালাসের মতো বড় ও স্থিতিশীল গ্রহাণুকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বলয় এলাকার চলমান ক্ষয়ের প্রক্রিয়া বোঝার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর অতীত ইতিহাস নিয়ে আরও ভালোভাবে গবেষণা করার সুযোগ পাচ্ছেন।

সূত্র: এনডিটিভি

আরও পড়ুনপৃথিবী কি সত্যিই সৌরজগৎ থেকে বেরিয়ে যাবে২৩ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সৌরজগতের গ্রহাণু বলয় হারিয়ে যাচ্ছে