ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার আগে কাতারের আল উদেইদ ঘাঁটি থেকে বিমান ও ভারী সামরিক সরঞ্জাম সরিয়ে সৌদি আরবের বিভিন্ন ঘাঁটিতে নিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘মিডল ইস্ট আই’ কাতারের একজন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, এই পদক্ষেপ থেকে পরিষ্কার ধারণা করা যায়, যুক্তরাষ্ট্র জানে ইরান সৌদি আরবে হামলা চালাবে না।তাছাড়া সমন্বয় করে হামলার বিষয়টিও পরিষ্কার হয়, যাতে হামলার প্রভাব সীমিত রাখা যায়।

ওই কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে হামলা নিয়ে পরোক্ষভাবে সমন্বয় হয়েছে, যেখানে কাতার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছে। রবিবার উভয় পক্ষ কাতারের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছে।

আরো পড়ুন:

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতিতে কাতারের ‘কূটনৈতিক বিজয়’

ন্যাটোর হেগ সম্মেলন: থাকছেন কারা? আলোচ্যসূচিতে প্রধান্য কীসে কীসে

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সরঞ্জাম সৌদি আরবে স্থানান্তর এবং হামলার সময়সুচি ও পরিসর নিয়ে এই সমন্বয়ের খবর ইরানের পক্ষ থেকে উত্তেজনা প্রশমনের ইঙ্গিত দেয়।

হামলার পর বিশ্ববাজারেও এই বার্তা পৌঁছে গেছে। তেলের দাম হঠাৎ করে কমে গেছে। এ থেকে বোঝা যায়, এই সমন্বয়ের ঘটনাকে বাজার নিয়ন্ত্রকরা উত্তেজনা প্রশমনের পদক্ষেপ হিসেবে দেখেছেন।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৫.

৭ শতাংশ কমে ব্যারেলপ্রতি ৭১.১১ ডলারে নেমে এসেছে।

আরব ও মার্কিন কর্মকর্তারা মিডল ইস্ট আইকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহে আল-উদেইদ ঘাঁটি থেকে যুদ্ধবিমান ও রসদ সরিয়ে নেওয়া শুরু করে। এই পদক্ষেপটি ইঙ্গিত দেয়, যুক্তরাষ্ট্র জানত ইরান সম্ভাব্য কোন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে পারে।

আল উদেইদ ঘাঁটিতে প্রায় ১০ হাজার মার্কিন সেনা অবস্থান করছেন এবং এটি মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের (সেন্টকম) আঞ্চলিক সদর দপ্তর হিসেবে কাজ করে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হামলার কয়েক ঘণ্টা পর নিশ্চিত করেন যে. ইরান আগাম সতর্কবার্তা দিয়েছিল, যা বেসামরিক প্রাণহানি এড়াতে সহায়ক হয়েছে। ট্রাম্প এই হামলাকে উত্তেজনা প্রশমনের সুযোগ হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তিনি ইসরায়েলকেও ইরানে হামলা বন্ধ করতে বলেছেন।

ট্রাম্প লিখেছেন, “তারা (ইরান) তাদের ক্ষোভ উগরে দিয়েছে এবং আশা করি, আর কোনো বিদ্বেষ ছড়াবে না। আমি ইরানকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, আগাম সতর্কবার্তা দেওয়ার জন্য, যার ফলে কোনো প্রাণহানি বা আহতের ঘটনা ঘটেনি।”

তিনি আরো বলেন, “এখন ইরান এই অঞ্চলে শান্তি ও সম্প্রীতির পথে অগ্রসর হতে পারে এবং আমি উদ্দীপনার সঙ্গে ইসরায়েলকেও একই কাজ করতে উৎসাহিত করব।”

যুক্তরাষ্ট্রের উপসাগরজুড়ে একাধিক ঘাঁটি রয়েছে।
ইরানের আল-উদেইদকে লক্ষ্যবস্তু করা সম্ভবত একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত, যাতে উপসাগরীয় দেশগুলোর কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া সীমিত রাখা যায়।

কাতার ও ইরান বিশ্বের বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্র সাউথ পার্স ভাগ করে ব্যবহার করে।

দোহা ঐতিহাসিকভাবে ইরানের সঙ্গে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের তুলনায় বেশি সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং নিজেকে আঞ্চলিক সংঘাতের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উপস্থাপন করে।

কেন আল-উদেইদকে লক্ষ্য করল ইরান?
সৌদি আরব ইরানের চেয়ে কাতারের তুলনায় আরো দূরে এবং আকারেও অনেক বড়, যার ফলে সেখানে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালানো কঠিনতর। সৌদি আরব ও ইরান এতদিন ধরে ইয়েমেনসহ বিভিন্ন স্থানে পরোক্ষ সংঘাতে জড়িত ছিল। তবে সম্প্রতি উভয় দেশ ধীরে ধীরে সম্পর্ক উন্নয়নের পথে হাঁটছে।

এই প্রেক্ষাপটে কাতারে যুক্তরাষ্ট্র আল উদেইদকে ইরানের লক্ষ্যবস্তু বানানা থেকে বোঝা যায়, তারা রিয়াদকে প্রতিক্রিয়া থেকে বিরত রাখতে চেয়েছে।

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র ইসর য় ল য ক তর ষ ট র লক ষ য

এছাড়াও পড়ুন:

মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত: ২১ জুলাইকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘শোক দিবস’ পালনের দাবি

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এই দিনটিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘শোক দিবস’ হিসেবে পালন করার দাবি জানিয়েছে হতাহত ব্যক্তিদের পরিবার। এ ছাড়া তারা বলেছে, নিহত সবাইকে শহীদের মর্যাদাসহ প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।

দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবার আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায়।

হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে আছে—ঘটনার সঠিক তদন্ত করতে হবে। দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হেলথ কার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। নিহত ব্যক্তিদের কবর সংরক্ষণ করতে হবে। নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে উত্তরায় একটি মসজিদ নির্মাণ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে দাবিগুলো তুলে ধরেন দুর্ঘটনায় নিহত নাজিয়া ও নাফির বাবা আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর যখন বাচ্চাদের পেয়েছেন, তখন তাঁরা তাদের চিনতে পারেননি। অনেক দিন হলো তাঁরা ঘরে রান্না করতে পারেন না। তাঁর স্ত্রী বিছানা থেকে উঠতে পারেন না, কারও সঙ্গে দেখা করেন না।

নিহত সবাইকে শহীদের মর্যাদা দেওয়ার দাবির প্রসঙ্গে আশরাফুল ইসলাম বলেন, শুধু পাইলট আর শিক্ষক শহীদ হতে পারেন না। সবাই শহীদ। সবাই ইউনিফর্ম পরা ছিল। শিক্ষার্থীরা কেন বৈষম্যের শিকার হবে?

নিহত তাসমিয়া হকের বাবা নাজমুল হক লিখিত বক্তব্যে বলেন, সন্তানদের মধ্যে যারা আহত, তাদের অনেকের অবস্থা এতটাই খারাপ যে তারা আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে কি না তা তাঁরা জানেন না। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁরা খুবই উদ্বিগ্ন। আবার অনেকে আছে, যাদের দীর্ঘ সময় চিকিৎসার মধ্যে থাকতে হবে। কয়েকজন আহত শিক্ষক আছেন, যাঁরা আর কখনো কর্মক্ষেত্রে ফিরতে পারবেন না, অথচ তাঁদের ছিল উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।

আরও পড়ুনমাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত: দগ্ধ দুই শিশু চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছে২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বলে, তারা অবর্ণনীয় ট্রমার মধ্য দিয়ে দিন পার করছে। অনেকের জীবন-জীবিকা থমকে গেছে। বর্তমানে স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাড়া আর কেউ তাদের খোঁজখবর নিচ্ছে না। প্রধান উপদেষ্টা তিনজন শিক্ষকের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি।

রেজাউল করিমের ছেলে সামিউল এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়। এই বাবা বলেন, তাঁরা ভালো নেই। দুই মাস ধরে তাঁরা ঘুমাতে পারেন না। এ দেশে এত মানুষ, তবু পাশে কি কাউকে তাঁরা পাবেন না? এই মুহূর্তে তাঁদের স্কুলের বারান্দায় থাকার কথা ছিল। কিন্তু এখন এখানে। সরকার তাঁদের পাশে আসেনি। চোখের সামনে ছেলেকে লুটিয়ে পড়তে দেখেছেন তিনি, যা ভুলতে পারেন না।

সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রেজাউল করিম। তিনি বলেন, লাশের সঙ্গে একটা কপি পেয়েছেন। এরপর আর কারও কোনো যোগাযোগ নেই।

আরও পড়ুনমাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত: নিহত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে১১ আগস্ট ২০২৫

সানজিদা বেলায়েতের মেয়ে জায়ানা মাহবুব এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। এই মা বলেন, ‘আমার মেয়েটা পরিপাটি ছিল। হাতে মেহেদি দিত, ব্রেসলেট পরত। ওর হাত পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সে বলে, হাত জম্বির মতো হয়ে গেছে। ওর প্রশ্নের উত্তর আমি কী দেব? এই বাচ্চাগুলোকে সমাজ কোন চোখে দেখবে? কারও হাতে কলম উঠবে না।’

সানজিদা বেলায়েত আরও বলেন, আরেক বাচ্চা বসতে পারে না। তার ফিজিওথেরাপি দরকার। সেই বাচ্চার বাবা নেই। সে কার কাছে যাবে? আবিদুর রহিম নামের এক বাচ্চা কী যে কষ্ট পাচ্ছে। তার শরীরে আর কোনো জায়গা নেই যে চামড়া নেবে। একটা বাচ্চা মানসিক সমস্যা নিয়ে আবার ভর্তি হয়েছে। শব্দ শুনলে সে চিৎকার দেয়। অনেকে কানেও শোনে না। কয়েকজন শিক্ষকও আহত। তাঁরা কি কর্মজীবনে ফিরতে পারবেন?

আরও পড়ুনবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় যা যা জানা গেল২১ জুলাই ২০২৫

আহত শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান সানজিদা বেলায়েত। তিনি আহত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর দাবি জানান।

আহত রায়ান তৌফিকের বাবা সুমন বলেন, তাঁদের কান্না শুকিয়ে গেছে। সরকারের কাউকে তাঁরা পাশে পাননি। তাই বাধ্য হয়ে এখানে এসেছেন।

গত ২১ জুলাই উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসের হায়দার আলী ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় যুদ্ধবিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামসহ অন্তত ৩৪ জন নিহত হন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২৭ জনই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ছিল। আহত হয় অনেকে।

আরও পড়ুনউত্তরায় মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা তদন্তে সরকারের কমিশন গঠন২৭ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ