কাতারের ঘাঁটি থেকে সৌদিতে যুদ্ধবিমান ও রসদ সরিয়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্র
Published: 24th, June 2025 GMT
ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার আগে কাতারের আল উদেইদ ঘাঁটি থেকে বিমান ও ভারী সামরিক সরঞ্জাম সরিয়ে সৌদি আরবের বিভিন্ন ঘাঁটিতে নিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘মিডল ইস্ট আই’ কাতারের একজন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, এই পদক্ষেপ থেকে পরিষ্কার ধারণা করা যায়, যুক্তরাষ্ট্র জানে ইরান সৌদি আরবে হামলা চালাবে না।তাছাড়া সমন্বয় করে হামলার বিষয়টিও পরিষ্কার হয়, যাতে হামলার প্রভাব সীমিত রাখা যায়।
ওই কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে হামলা নিয়ে পরোক্ষভাবে সমন্বয় হয়েছে, যেখানে কাতার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছে। রবিবার উভয় পক্ষ কাতারের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছে।
আরো পড়ুন:
ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতিতে কাতারের ‘কূটনৈতিক বিজয়’
ন্যাটোর হেগ সম্মেলন: থাকছেন কারা? আলোচ্যসূচিতে প্রধান্য কীসে কীসে
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সরঞ্জাম সৌদি আরবে স্থানান্তর এবং হামলার সময়সুচি ও পরিসর নিয়ে এই সমন্বয়ের খবর ইরানের পক্ষ থেকে উত্তেজনা প্রশমনের ইঙ্গিত দেয়।
হামলার পর বিশ্ববাজারেও এই বার্তা পৌঁছে গেছে। তেলের দাম হঠাৎ করে কমে গেছে। এ থেকে বোঝা যায়, এই সমন্বয়ের ঘটনাকে বাজার নিয়ন্ত্রকরা উত্তেজনা প্রশমনের পদক্ষেপ হিসেবে দেখেছেন।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৫.
আরব ও মার্কিন কর্মকর্তারা মিডল ইস্ট আইকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহে আল-উদেইদ ঘাঁটি থেকে যুদ্ধবিমান ও রসদ সরিয়ে নেওয়া শুরু করে। এই পদক্ষেপটি ইঙ্গিত দেয়, যুক্তরাষ্ট্র জানত ইরান সম্ভাব্য কোন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে পারে।
আল উদেইদ ঘাঁটিতে প্রায় ১০ হাজার মার্কিন সেনা অবস্থান করছেন এবং এটি মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের (সেন্টকম) আঞ্চলিক সদর দপ্তর হিসেবে কাজ করে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হামলার কয়েক ঘণ্টা পর নিশ্চিত করেন যে. ইরান আগাম সতর্কবার্তা দিয়েছিল, যা বেসামরিক প্রাণহানি এড়াতে সহায়ক হয়েছে। ট্রাম্প এই হামলাকে উত্তেজনা প্রশমনের সুযোগ হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তিনি ইসরায়েলকেও ইরানে হামলা বন্ধ করতে বলেছেন।
ট্রাম্প লিখেছেন, “তারা (ইরান) তাদের ক্ষোভ উগরে দিয়েছে এবং আশা করি, আর কোনো বিদ্বেষ ছড়াবে না। আমি ইরানকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, আগাম সতর্কবার্তা দেওয়ার জন্য, যার ফলে কোনো প্রাণহানি বা আহতের ঘটনা ঘটেনি।”
তিনি আরো বলেন, “এখন ইরান এই অঞ্চলে শান্তি ও সম্প্রীতির পথে অগ্রসর হতে পারে এবং আমি উদ্দীপনার সঙ্গে ইসরায়েলকেও একই কাজ করতে উৎসাহিত করব।”
যুক্তরাষ্ট্রের উপসাগরজুড়ে একাধিক ঘাঁটি রয়েছে।
ইরানের আল-উদেইদকে লক্ষ্যবস্তু করা সম্ভবত একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত, যাতে উপসাগরীয় দেশগুলোর কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া সীমিত রাখা যায়।
কাতার ও ইরান বিশ্বের বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্র সাউথ পার্স ভাগ করে ব্যবহার করে।
দোহা ঐতিহাসিকভাবে ইরানের সঙ্গে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের তুলনায় বেশি সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং নিজেকে আঞ্চলিক সংঘাতের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উপস্থাপন করে।
কেন আল-উদেইদকে লক্ষ্য করল ইরান?
সৌদি আরব ইরানের চেয়ে কাতারের তুলনায় আরো দূরে এবং আকারেও অনেক বড়, যার ফলে সেখানে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালানো কঠিনতর। সৌদি আরব ও ইরান এতদিন ধরে ইয়েমেনসহ বিভিন্ন স্থানে পরোক্ষ সংঘাতে জড়িত ছিল। তবে সম্প্রতি উভয় দেশ ধীরে ধীরে সম্পর্ক উন্নয়নের পথে হাঁটছে।
এই প্রেক্ষাপটে কাতারে যুক্তরাষ্ট্র আল উদেইদকে ইরানের লক্ষ্যবস্তু বানানা থেকে বোঝা যায়, তারা রিয়াদকে প্রতিক্রিয়া থেকে বিরত রাখতে চেয়েছে।
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র ইসর য় ল য ক তর ষ ট র লক ষ য
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত ও পাকিস্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন খেলা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের দৃশ্যত উন্নতি এবং ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লি সম্পর্কের অবনতি নিয়ে পাকিস্তানে ব্যাপক উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু উদ্দীপনার পাটাতন কি যথেষ্ট শক্তিশালী এবং সেটি কত দিন টিকবে? কিছু বিশ্লেষক এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের এই পরিবর্তনকে ‘জোটের পুনর্বিন্যাস’ এবং ‘দিক পরিবর্তন’ বলতে শুরু করেছেন। কিন্তু এই জোটের ‘পুনর্বিন্যাস’ অর্থ যদি হয় চীনের কাছ থেকে পাকিস্তানের সরে আসা, তাহলে আমার মনে হয়, এই বিশ্লেষকেরা সম্ভবত ঠিক বলছেন না।
এর কারণ হলো, চীন পাকিস্তানের জন্য নির্ভরযোগ্য অংশীদার ও মিত্র। পাকিস্তান অনেক জায়গায় অর্থনৈতিক প্রয়োজন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ পাকিস্তান।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ক্রমে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠা হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার দিল্লিতে ক্ষমতায় রয়েছে। তারা অব্যাহতভাবে তাদের সাম্প্রদায়িক সমর্থক গোষ্ঠীর মধ্যে পাকিস্তানবিরোধী মনোভাব উসকে দিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ঠেকাতে হলে পারমাণবিক প্রতিরোধী ব্যবস্থার সঙ্গে সামরিক সরঞ্জামও প্রয়োজন।
এটা বলতেই হবে যে পাকিস্তানের জন্য কিছু সুযোগ এসেছে, যেটা জিরো সাম গেমের বা একজন জিতলে আরেকজন হারবে, এমন খেলার অংশ নয়। যুক্তরাষ্ট্র যেমন পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে তার সম্পর্ককে ‘হয় আমার পক্ষে, না হয় আমার বিরুদ্ধে’ এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখে, চীন এ রকমভাবে দেখে না; বরং চীনের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বেশি সূক্ষ্ম ও বাস্তববাদী। এর কারণ হলো চীন এখন অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বাণিজ্যকে মূল মনোযোগের কেন্দ্রে রেখেছে।
পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলো প্রায়ই চীনের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে; কিন্তু চীন মাত্র ৪০ বছরের মধ্যে কীভাবে ৮০ কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনল, এ বিষয়টিতে তারা নীরব থাকে। আমরা এখন দেখছি যে গাজায় যে জাতিগত নির্মূল যজ্ঞ চলছে, তাতে প্রায় সমগ্র পশ্চিমা ‘গণতন্ত্র’ ইসরায়েলের দুষ্কর্মের দোসর হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।
এখনকার বাস্তবতায় দুটি বিষয় পাকিস্তানের পক্ষে গেছে। প্রথমত, ইসলামাবাদ সঠিকভাবে ট্রাম্পের আত্মমুগ্ধতাকে গুরুত্ব দিয়েছে। ট্রাম্পের নাম শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছে। ২০২১ সালের আগস্টে কাবুল বিমানবন্দরের ‘অ্যাবি গেট’ বোমা হামলার একজন অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ করেছে। এতে ‘কঠোর নেতা’ হিসেবে ট্রাম্পের ভাবমূর্তি শক্তিশালী হয়েছে। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র যখন তড়িঘড়ি করে কাবুল ত্যাগ করছিল, তখন ওই হামলায় ১৩ জন মার্কিন সেনা এবং ২০০ আফগান নিহত হয়েছিলেন।
চীনকে মোকাবিলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে সামনে ঠেলে দিচ্ছে। ভারত এখন কোয়াডেরও সদস্য। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এই জোটের অন্য দুই সদস্য হলো অস্ট্রেলিয়া ও জাপান। এ কারণেই ব্রিকসে ভারতের সদস্যপদকে এশিয়ায় পশ্চিমা কৌশলগত কাঠামোর সঙ্গে অসাঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ভারত এমন একটি পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছে, যেখানে নিজেদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে; কিন্তু ভারতকে এখন এক পক্ষ বেছে নিতে চাপ দেওয়া হচ্ছে।এরপর গত বছরের মে মাসে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে একটি সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত যখন পাকিস্তানি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়। এরপর যুক্তরাষ্ট্র উভয় পক্ষকে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানায়। মার্কিন সূত্র জানায়, ইসলামাবাদ দ্রুত ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানায় এবং আত্মমুগ্ধ নেতা ট্রাম্পকে একটি ‘জয়’ উপহার দেয়। ট্রাম্প নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে উপস্থাপন করতে কখনো ক্লান্ত হন না। এ ঘটনায় তাঁর অহং ব্যাপকভাবে তৃপ্ত করেছিল।
অন্যদিকে মনে করা হয় যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এমন দুটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন যা ট্রাম্পকে রাগিয়ে তোলে। প্রথমটি হলো, ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারে ছিলেন, তখন মোদি তাঁর যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় ট্রাম্পের সঙ্গে একটি বৈঠক বাতিল করেছিলেন। এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে ট্রাম্পের যে বিশাল অহংবোধ তাতে নিশ্চিতভাবেই আঘাত করবে।
ভারতের জন্য আরেকটি অস্বস্তিকর ঘটনা ঘটে মে মাসে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের সময়। সংঘাত যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায় তার জন্য মার্কিন নেতারা টেলিফোনে যোগাযোগ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছিলেন। দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই দেশ হোয়াইট হাউসকে জানায়, তারা উত্তেজনা প্রশমন করবে; কিন্তু ভারত থামেনি।
পাকিস্তান শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধেই সংযম দেখিয়েছে