প্রতিবেশীর হামলা থেকে ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেল বাবার
Published: 24th, June 2025 GMT
কুষ্টিয়ার খোকসায় প্রতিবেশীর মেয়েকে শাসন করাকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় প্রতিপক্ষের হামলা থেকে ছেলেকে রক্ষা করতে গিয়ে গুরুতর আহত হন মহম্মদ আলী (৭৫) নামে এক ব্যক্তি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ মঙ্গলবার তার মৃত্যু হয়।
খোকসা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহত মহম্মদ আলীর মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার ভোরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মহম্মদ আলী মারা যান। নিহতের বাবার নাম আকমত আলী প্রামাণিক।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুরে উপজেলার সাতপাখিয়া গ্রামের মহম্মদ আলীর ছেলে তারিকুল ইসলাম তারিক প্রতিবেশীর এক মেয়েকে রাস্তায় শাসন করেন। এ ঘটনাটি মেয়ের পরিবার জানার পর সন্ধ্যায় তারিকুলের ওপর হামলা চালায়। তখন মহম্মদ আলী ছেলেকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলে প্রতিপক্ষ তার ওপর হামলা চালায়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা আহত বাবা-ছেলেকে উদ্ধার করে প্রথমে খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। রাতে মহম্মদ আলীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এ দিকে প্রতিবেশী সোনাই শেখ পরিবারসহ পলাতক। গোপগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ ও থানা পুলিশের একটি দলকে সোনাই শেখের বাড়ি পাহারা দিতে দেখা যায়।
প্রতিপক্ষের কাউকে পাওয়া না যাওয়ায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে স্থানীয় ইউপি সদস্যের স্ত্রী ফেরদৌসি খাতুন বলেন, ‘সোনাই সেখের মেয়েকে খারাপ কথা বলায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। সোমবার বিকেলে সোনাই সেখ ও তারা লোকজন প্রথমে মহম্মদ আলীর বাড়িতে হামলা করে। পরে দ্বিতীয় দফায় তারা হামলা চালায়।’
তারিকুল ইসলাম তারিক বলেন, ‘সোনাই শেখের স্ত্রীর নির্দেশেই তার মেয়েকে শাসন করেছিলাম। এ নিয়ে বিকেলে ও রাতে দুই দফায় আমার বাড়িতে হামলা চালানো হয়। বাবা আমাকে রক্ষায় এগিয়ে এলে তিনিও হামলার শিকার হন। বাবার হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করব।’
থানার ওসি বলেন, এলাকার পরিস্থিতি শান্ত আছে। নিহতের পরিবার আসছে, রাতেই মামলা হবে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টাও চলছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আশুলিয়ায় প্রাইভেটকার ছিনতাই, জিপিএস ট্র্যাকিংয়ে যেভাবে টঙ্গি থেকে উদ্ধার
প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার বিকেলে আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক কারখানা থেকে তিন কর্মকর্তাকে নিয়ে প্রাইভেটকারে ঢাকায় ফিরছিলেন চালক মনিরুল ইসলাম। বেড়িবাঁধের পঞ্চবটিতে যানবাহনের চাপে ধীরে ধীরে চলছিল গাড়ি। তখন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা। হঠাৎ প্রিমিও ব্রান্ডের প্রাইভেটকারের চালকের আসনের পাশ দিয়ে বাইরে থেকে রড ঢুকিয়ে দেয় এক দুর্বৃত্ত। এর পর গাড়ি সামনের দরজা খুলে আরও দু’জন চালককে মারধর করে বের করে আনেন। গাড়িতে থাকা বাকি তিন আরোহীকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে হামলা করে তারা। এরপর গাড়িটি ছিনতাই করে তারা পালিয়ে যায়।
এ ঘটনার সময় একই সড়কে একই কোম্পানির আরেকটি প্রাইভেটকার অফিসের কর্মকর্তাদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে আসছিলেন। সেই গাড়ির চালক রফিকুল ইসলাম ছিনতাইয়ের ঘটনাটি দেখতে পান। তখন নিজের প্রাইভেটকার রেখে দৌড়ে তিনি ছিনতাই হওয়া গাড়ির সামনের বনেটের ওপর লাফিয়ে উঠেন। তখন ছিনতাইকারী জোরে গাড়ি চালানোর পর বনেট থেকে তিনি ছিটকে পড়েন। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান শারমিন গ্রুপের প্রাইভেটকার ছিনতাইয়ের এমন ঘটনাটি ফোনে চালক ও হামলার শিকার অন্যরা জানান অফিসের অন্য কর্মকর্তাদের। এটি জানার পর কামরুজ্জামান ও সাজিদুল ইসলাম সম্রাট নামে দুই কর্মকর্তা গাড়ির জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করেন। তাদের মধ্যে কামরুজ্জামান ছিলেন আশুলিয়ার কর্মস্থলে। আর সম্রাট উত্তরায় তার বাসার কাছাকাছি।
সম্রাট সমকালকে জানান, ট্র্যাকিং সিস্টেমে দেখা যায়–গাড়িটি বেরিবাঁধ উত্তরার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে গাজীপুরের দিকে যাচ্ছিল। এরপর সম্রাট মোটরসাইকেলে গাড়ির পিছু নেন। এক পর্যায়ে তারা বিষয়টি পুলিশকে জানান। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯–এ কল করেন। গাজীপুরের পুলিশ কমিশনারকে জানানো হয়। এর মধ্যে গ্রামীণ ফোনের সহায়তায় ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে বন্ধ করে দেওয়া হয় গাড়ির ইঞ্জিন। তখন প্রাইভেটকারটি ছিল টঙ্গী কলেজ গেটের কাছাকাছি। ইঞ্জিন বন্ধ হওয়ার পর বিপাকে পড়েন ছিনতাইকারীরা। তারা রাস্তায় পাশে গাড়িটি রেখে পালিয়ে যান। এরপর শারমিন গ্রুপের লোকজন ও পুলিশ গিয়ে রাত সাড়ে ৯টায় গাড়িটি উদ্ধার করে।
শারমিন গ্রুপের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, কোম্পানির কয়েকজন একটি টিম হিসেবে কাজ করে। তারা গাড়ির গতিবিধির ওপর নজর রাখে, পরে তা উদ্ধার করা হয়েছে। গাজীপুরের পুলিশও সহযোগিতা করেছে। উদ্ধারের পর প্রাইভেটকারের মধ্যে চাপাতি, রডসহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র পাওয়া গেছে। এর আগে প্রাইভেটকারে আমাদের প্রতিষ্ঠানের যে তিন কর্মকর্তা ছিলেন তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। ঘটনার পরপরই তাৎক্ষণিকভাবে তুরাগ থানায় জিডি করা হয়েছিল। গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার সব ধরনের সহযোগিতা করেন।