ফরিদপুরে তেলবাহী লরির সঙ্গে সংঘর্ষে মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত হয়েছেন। গত সোমবার রাতে ফরিদপুর সদরের মুন্সিবাজার বাইপাস সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন– সদর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের সাচিয়া গ্রামের ক্ষিতিশ মজুমদারের ছেলে শ্রীবাস মজুমদার (৩০) ও জালাল মোল্লার ছেলে রাশেদ মোল্লা (২৫)।
জানা গেছে, রাত সাড়ে ৯টার দিকে শ্রীবাস ও রাশেদ মোটরসাইকেলে রাজবাড়ী রাস্তার মোড় থেকে মুন্সিরবাজার এলাকায় যাচ্ছিলেন। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি লরির সঙ্গে বাইপাস সড়কে বরকতের মার্কেটের সামনে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান শ্রীবাস। আহত অবস্থায় রাশেদকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাত ১১টার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। করিমপুর হাইওয়ে থানার ওসি সালাহউদ্দীন চৌধুরী বলেন, এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় ট্রাকচাপায় সাখাওয়াত হোসেন নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। আজ দুপুরের এ ঘটনায় আহত হয়েছেন মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা তাঁর স্ত্রী। নিহত সাখাওয়াত কুমিল্লা নগরীর ধনেশ্বর এলাকার বাসিন্দা।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন সাখাওয়াত। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বুড়িচং উপজেলার সৈয়দপুর ডুবাইরচর এলাকায় দ্রুতগামী একটি ট্রাক তাদের মোটরসাইকেলে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান সাখাওয়াত। তাঁর স্ত্রীকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেলের ভেতর দ্রুতগতির প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডেকোরেশন বোর্ডে ধাক্কা লেগে দু’জন আহত হয়েছেন। আজ বিকেলে টানেলের পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা প্রান্তে আসার সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ডেকোরেশন বোর্ডের ক্ষতি হয়েছে, গাড়িটিও দুমড়েমুচড়ে গেছে।
খাগড়াছড়ির রামগড়ে বাস সড়কের পাশে খাদে পড়ে অন্তত ৯ যাত্রী আহত হয়েছেন। যাত্রীদের দাবি, মঙ্গলবার ভোরে ঘুমের ঘোরের কারণে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে রামগড়-জালিয়াপাড়া সড়কের মাহবুবনগর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা শান্তি পরিবহনের বাসটি খাগড়াছড়ি যাচ্ছিল।
(তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অফিস, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন র এল ক
এছাড়াও পড়ুন:
খেলাপি কারখানা কিনে চালুর উদ্যোগ আকিজ বশির গ্রুপের
চার প্রকৌশলী মিলে ২০১৬ সালে গাজীপুরের শ্রীপুরে গড়ে তোলেন বিদ্যুতের তার ও কেবলস উৎপাদন কারখানা। নাম দেওয়া হয় এমিনেন্স ইলেকট্রিক ওয়্যার অ্যান্ড কেব্লস লিমিটেড। তখন প্রকল্পটির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে ন্যাশনাল ব্যাংকের নেতৃত্বে চার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিলে প্রতিষ্ঠানটিকে অর্থায়ন করে।
তবে ডলারের দামের ঊর্ধ্বগতি ও সময়মতো চলতি মূলধন না পাওয়ায় প্রকল্পটি ব্যবসায়িক উৎপাদনই শুরু করতে পারেনি। উৎপাদন শুরুর আগেই শতকোটি টাকা ঋণখেলাপি হয়ে পড়ে। আর তাতে বিপাকে পড়ে প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করা ন্যাশনাল ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান লংকাবাংলা ফাইন্যান্স।
এখন পুরো ঋণ ও দায়দেনা পরিশোধ করে প্রকল্পটি কিনে নিচ্ছে আকিজ বশির গ্রুপ। এ জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে চার অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান, আকিজ বশির গ্রুপ ও এমিনেন্স ইলেকট্রিক ওয়্যার অ্যান্ড কেব্লস। কারখানাটি কিনে নিতে আকিজ বশির গ্রুপ প্রায় ১১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। ইতিমধ্যে এমিনেন্সকে অর্থায়নকারী চার প্রতিষ্ঠানকে ঋণের একটা অংশ পরিশোধ করে দিয়েছে আকিজ বশির গ্রুপ। আগামী অক্টোবরের মধ্যে পুরো ঋণ শোধ করে কারখানাটির মালিকানা বুঝে নেবে তারা। এর মাধ্যমে আকিজ বশির গ্রুপ দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের পণ্য উৎপাদনে বড় পরিসরে যাত্রা শুরুর পরিকল্পনা করছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রকল্প কিনে আকিজ বশির গ্রুপ নিজেরা লাভবান হয়েছে। পাশাপাশি তারল্যসংকটে পড়া ব্যাংকগুলোও তাতে উপকৃত হয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক এই প্রকল্পে দেওয়া পুরো অর্থ ফেরত পেতে যাচ্ছে। ব্যাংক দুটির কর্মকর্তারা বলছেন, এতে আমানতকারীদের উপকার হবে। ব্যাংক–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আরও বলেন, দেশে একটা নতুন প্রকল্প প্রস্তুত করতেই কয়েক বছর সময় লেগে যায়। কিন্তু এমিনেন্স কিনে নেওয়ার ফলে আকিজ বশির গ্রুপ এখন চাইলেই কয়েক মাসের মধ্যে উৎপাদন শুরু করতে পারবে।
এ বিষয়ে লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়রা আজম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ঋণের একটা অংশ পেয়ে গেছি। পুরো টাকা কয়েক দিনের মধ্যে পেয়ে যাব। এটা খুবই ভালো হয়েছে। এভাবে বড় শিল্প গ্রুপগুলো এগিয়ে এলে কোনো কারখানা বন্ধ হয়ে পড়ে থাকবে না।’
প্রকল্পের অবস্থা
অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোদারচালা এলাকায় এমিনেন্স ইলেকট্রিক ওয়্যারস অ্যান্ড কেবলস লিমিটেড বৈদ্যুতিক তার ও কেবল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠে। উচ্চমানের অ্যালুমিনিয়াম ও কপার বৈদ্যুতিক কেবল, উচ্চ ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক কেবল এবং খোলা কপার কেবল উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়, যার বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা ৬৭ হাজার ১৫০ কিলোমিটার। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ১১২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের নেতৃত্বে রূপালী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও লংকাবাংলা ফাইন্যান্স সিন্ডিকেট করে ৬৯ কোটি টাকা অর্থায়ন করে। বাকি টাকার জোগান দেন উদ্যোক্তারা।
প্রকল্পটি যখন পরিকল্পনা করা হয়, তখন ডলারের দাম ছিল ৮০ টাকা। ২০২১ সালে ডলারের দাম বেড়ে হয় ৮৫ টাকা। এর মধ্যে করোনার প্রকোপ শুরু হলে নির্মাণ ব্যয় আরও বেড়ে যায়। ফলে অবকাঠামো সম্পন্ন করতে আরও ৫ কোটি টাকা প্রয়োজন হয় প্রতিষ্ঠানটির। ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটি ৭৮ লাখ ডলারের যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলে, যা পরে ফোর্সড ঋণে পরিণত হয়। এর মধ্যে ২০২২ সালে ডলারের বিনিময় হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। ফলে ৬৯ কোটি টাকা ঋণ বেড়ে হয় ১১৫ কোটি টাকা। পাশাপাশি চলতি মূলধন না পাওয়ায় বাণিজ্যিক উৎপাদনও শুরু করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এখন কারখানাটি কিনে নিয়ে উৎপাদনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে আকিজ বশির গ্রুপ।
আকিজ বশির গ্রুপের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) মো. খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আগামী নভেম্বর থেকে নতুন এই কারখানায় উৎপাদন শুরু করব। কম ভোল্টেজের তার উৎপাদন দিয়ে শুরু করব। কী নামে এই তার বাজারে আসবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। স্থানীয় চাহিদা বিবেচনা করে বাজারে বড় আকারে আসার পরিকল্পনা আছে আমাদের।’
আকিজ বশির যেভাবে কিনছে
এক বছরের বেশি সময় ধরে এমিনেন্সের উদ্যোক্তারা প্রকল্পটি বিক্রির চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। আকিজ বশির গ্রুপও এই ব্যবসায় আসতে পুরোনো প্রকল্প খুঁজছিল। এর মধ্যে তারা একাধিক তার ও কেব্লস উৎপাদন কারখানা কেনার জন্য আলোচনা করে। শেষমেশ এমিনেন্সের সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত হয়। দুই পক্ষ সমঝোতায় পৌঁছালে ৬ আগস্ট এ নিয়ে চুক্তিও হয়। এই চুক্তির ফলে আকিজ বশির গ্রুপ এখন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের পাশাপাশি এমিনেন্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুবিধা, তাদের সরবরাহকারীদের বিলসহ আরও কিছু দায়দেনা শোধ করবে।
অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটিতে ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ ৮৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংকের ১৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা, লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের ৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা ও এক্সিম ব্যাংকের ঋণ ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ঋণের কিছু অর্থ পেয়ে গেছে অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
এক্সিম ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদা খানম বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ৫ লাখ টাকা পেয়েছি। ৬০ দিনের মধ্যে ঋণের বাকি টাকা পেয়ে যাব। এটা আমাদের জন্য ভালো হয়েছে।’